চবি প্রতিবেদক
১৯৭৫ সালে দেশের সংকটকালীন সময়ে সাধারণ জনতার আস্থা ও ভরসার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। সেসময় জনতা নেতা হিসেবে খুঁজে নিয়েছেন মেজর জিয়াউর রহমানকে। তিনি সমতার ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি ঘোষণা করেন। শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিকে সমৃদ্ধ করতে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সার্কের মতো একটি আঞ্চলিক জোট গঠন করেন। তিনি দেশ ও দেশের জনগণকে সবসময় প্রাধান্য দিয়ে কাজ করতেন।
ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী পরিবারের উদ্যােগে আলোচনা সভা ও সেমিনারের আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম নগরী বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন এসব কথা বলেন। রবিবার (২৩ নভেম্বর) বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স অনুষদ মিলনায়তনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মীর হেলাল বলেন, ১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশের সব রাজনীতিবিদ তাদের নৈতিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে তখনকার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন অফিসার নিজের জীবন বিপন্ন করে, পরিবারের কথা চিন্তা না করে দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন। তিনি শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা আর যুদ্ধ শেষে আবার সেনাবাহিনীর কাজে ফিরে গেলেন।
তিনি আরও বলেন, বাকশাল তৈরির মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ করা হলেও জিয়াউর রহমান দেশের হাল ধরে সব দলের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেন, যেখানে ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামী লীগও ছিল। অথচ দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে আওয়ামীলীগ দেশকে ভারতের করদরাজ্যে পরিণত করেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশের ছাত্র-জনতা তাদের আন্দোলনের তোপে হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপর শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য পুত্র তারেক রহমানকে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে তিনি তা নাকচ করে দেন।
তিনি আরও বলেন, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীই হলো নারী। তাদেরকে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে অংশীজন না করে দেশের জিডিপি নিয়ে কাজ করলে আদতে দেশের উন্নয়ন হবে না। দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে। আমরা আবেগের জায়গা থেকে অনেক কিছুই বলতে পারি। ১৯৭৫ সালের গণ-অভ্যুত্থানে, ৯০ এর গণ-অভ্যুত্থানে এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে জনগণ তাদের অধিকার ফিরে পেয়েছে। তিনি আরো যোগ করেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের প্রার্থীরা যথেষ্ট ভালো ফলাফল করেছে। ক্যাম্পাসের প্রতিটি অঙ্গনে যদি আমাদের শিক্ষার্থী ভাইয়েরা নিজেদের দায়িত্বশীল ও কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে পারে, তবে আগামী দিনে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রতিটি পদে জাতীয়তাবাদী শক্তির ভাইয়েরা আরও ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারবে।
অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক ও চবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আল-আমিন, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সেক্রেটারি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহিদুর রহমানসহ জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও অতীশ দীপঙ্কর হলের প্রভোস্ট এ. জি. এম. নিয়াজ উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। ৭ নভেম্বর : জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন। প্রবন্ধে তিনি বলেন, শহিদ জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সূচনা হয়। যার উত্তরসূরি হিসেবে আমরা এখনো কাজ করছি। ৭ নভেম্বরের মাধ্যমে শহিদ জিয়া নতুন সম্ভাবনার সূচনা করেন।
৭ নভেম্বর থেকে ৫ই আগস্ট: অভ্যুত্থানের প্রতিচ্ছবি শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) আইয়ুবুর রহমান তৌফিক। প্রবন্ধে তৌফিক বলেন, জনতা এবং সেনার সমষ্টিতে একটি জাতির আকাঙ্ক্ষা প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিপ্লব এবং ২৪ এর ৫ই আগস্ট একই সূত্রে গাঁথা। ২৪ সালে আমরা যে সংস্কার প্রস্তাবনা দিচ্ছি তার বীজরোপন করেছিল শহিদ জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা ছিল।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াছিন।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মেরিন সাইন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, জাতীয় বিপ্লব ও জাতীয় সংহতি দিবস বাংলাদেশিদের জীবনে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সেই বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছিল দেশের সাধারণ জনতা ও সিপাহি সৈনিকরা। স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া দেশের হাল ধরে দেশকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। তার সেই দেখানো পথেই আমাদেরকে চলতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-আমিন। তিনি বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পরিবারের জন্য একটি সফলতা। আজকের অনুষ্ঠান সফল করার জন্য আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।