মোঃ আবু সঈদ,স্টাফ রিপোর্টারঃ
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে “পরিবেশ, হাওর ও জলাভূমি রক্ষায় যুবদের ভূমিকা” শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কর্মশালায় তথ্য অধিকার আইন, হাওর সংরক্ষণ ও অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ প্রতিরোধের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। এই কর্মশালায় জেলার ১২টি উপজেলার যুব প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯ ঘটিকায় শান্তিগঞ্জ উপজেলার স্হানীয় এফআইভিডিবি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে “অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট” (এএলআরডি) এবং স্থানীয় সহযোগী সংগঠন এসভিডিএস, আরডিএসএ ও পদ্মার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত কর্মশালার উদ্বোধনীতে এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, “হাওর শুধু একটি ভৌগোলিক অঞ্চল নয়, এটি আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা, জীববৈচিত্র্য এবং জলবায়ু সহনশীলতার ভিত্তি। যুব সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এই সম্পদ রক্ষা সম্ভব নয়।”
কর্মশালায় পদ্মার নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুর রহমানের সঞ্চালনায় কর্মশালায় তিনটি মূল থিম নিয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপনা করেন এএলআরডি’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার সানজিদা খান রিপা। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত হাওর ও জলাভূমি সুরক্ষা আইন পরিবেশবান্ধব পর্যটন, নেচার-বেজড সল্যুশন, গবেষণা ও ডাটাবেইজ তৈরির কথা বললেও এতে গুরুতর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আইন ভঙ্গের দায়বদ্ধতা ও শাস্তির ধারা অস্পষ্ট, উন্নয়ন প্রকল্পের সংজ্ঞা অনুপস্থিত এবং হাওর-জলাশয় সুরক্ষায় নিয়মিত টহল,প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা বা র্যাপিড রেসপন্সের কোনো উল্লেখ নেই।
তিনি আরও বলেন,পাঁচটি অধ্যায়ের ২৪ ধারার কোথাও হাওরের বাঁধ নির্মাণের বিষয় নেই। অপরিকল্পিত রাস্তা, কালভার্ট, স্লুইসগেট ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের অভিযোগ বহুদিনের হলেও আইনে এর কোনও উল্লেখ নেই। জলমহাল নীতিমালা ২০০৯-এও নানা গ্যাপ রয়েছে। প্রভাবশালী গোষ্ঠী প্রাকৃত মৎস্যজীবীদের বাদ দিয়ে ইজারা দখল করছে।
উপস্হাপনায় আরো অংশগ্রহণ করেন আরডি এসএ’র নির্বাহী পরিচালক মিজানুল হক সরকার ও হাওর ও নদী রক্ষা আন্দোলনের যুগ্ম আহবায়ক ওবায়দুল হক মিলন।
প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.আরশাদ উল আলম, মৌলভী বাজার ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ”পরিবেশবিদ সৈয়দ মহিবুল ইসলাম,শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোঃ আজিজুর রহমান ও হাওর গবেষক কবি ইকবাল কাগজী।
কর্মশালায় প্যানেল আলোচকরা হাওরের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা তুলে ধরেন। তারা বলেন, রামসার সাইট ঘোষণার পরও জীববৈচিত্র্য রক্ষা কার্যকর হয়নি। সুনামগঞ্জ শহরের অধিকাংশ খাল বিলুপ্ত, দুর্নীতির কারণে প্রকৃত কৃষক ও জেলেরা বঞ্চিত। অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ ও বাঁধ উঁচু করার কারণে মাছের চলাচল ও প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটনের ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। পাখি ও মাছের জন্য অভয়াশ্রম গড়ে তোলা ও পর্যটন চাপ কমানো জরুরি। বড় স্কেলের ড্রেজিং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। ছোট আকারের ড্রেজিং, ফিশ-পাস খোলা রাখা, নন-ফিশিং জোন এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও কৃষি উৎপাদনে অনিশ্চয়তা। নতুন রোগবালাই এবং হাওরের মৎস্য খাতে চায়না জাল, কারেন্ট জাল, প্লাস্টিকের খাচা ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ব্যবহার হুমকি সৃষ্টি করছে। পিআইসি গঠনে অনিয়ম এবং গণশুনানির অভাবের বিষয় তুলে ধরেন।
মুক্ত আলোচনায় যুব প্রতিনিধিরা হাওরের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরেন। তারা বলেন, হাওরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য।