স্টাফ রিপোর্টারঃ
অসীম সম্ভাবনার এক নাম এখন নাদিরা তালুকদার ইমা। হাওরের বুক চিরে উঠে আসা এই মেয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে। আগামীকাল (৩০) জুন সোমবার চীনে অনুষ্ঠিতব্য অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকিতে অংশ নিতে বাংলাদেশ নারী হকি দলের সঙ্গে চীনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবেন সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাঁক ইউনিয়নের ঢালাগাঁও গ্রামের সন্তান নাদিরা তালুকদার ইমা।
ইমা বাংলাদেশের জাতীয় ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন প্রতিশ্রুতিশীল হকি খেলোয়াড় হিসেবে। এ বছর সেখান থেকে তিনি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তার জার্সি নম্বর ১৬।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, মুসলিম তালুকদার ও মাজেদা তালুকদারের নয় সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ইমা। ইমা ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। পড়ালেখার পাশাপাশি খেলায় যে এমন পারদর্শিতা দেখাতে পারেন, তা প্রথম থেকেই আঁচ করেছিলেন পরিবার। আর তাই ইমার আগ্রহ দেখে তাকে ভর্তি করানো হয় বিকেএসপিতে। সেখান থেকেই শুরু হয় তার ক্রীড়াজীবনের মূল যাত্রা।
২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রথমবারের মতো দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন ইমা। ওই বছর সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এএইচএফ কাপ হকিতে বাংলাদেশ দল রানার্সআপ হয়, যেখানে ইমা দলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এরপর একই বছর ডিসেম্বরে ওমানে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে বাংলাদেশ দশটি দলের মধ্যে নবম স্থান অর্জন করে।
চলতি অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দল ৪ জুলাই জাপান, ৫ জুলাই উজবেকিস্তান ও ৭ জুলাই হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচ খেলবে। গ্রুপ পর্বের বাধা পার করলে ৯ জুলাই সেমিফাইনাল ও ১৩ জুলাই ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। ১৪ জুলাই দেশে ফেরার কথা রয়েছে দলের।
ইমার বড় ভাই হোসাইন আহমদ বলেন, ইমা ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা পছন্দ করত। আমরা কখনো তার পছন্দকে দমন করিনি, বরং উৎসাহ দিয়েছি। আজ সে শুধু আমাদের পরিবারের নয়, পুরো সুনামগঞ্জ জেলার গর্ব।
নাদিরা তালুকদার ইমা বলেন, আমি এখনও অনেক কিছু শিখছি। প্রতিদিন নতুন কিছু জানতে, বুঝতে চেষ্টা করছি। বিকেএসপির সহায়তায় আমার খেলোয়াড়ি জীবন এগিয়ে চলছে। আগামীকাল দেশের হয়ে চীনে খেলতে যাচ্ছি—এটা আমার জীবনের অনেক বড় অর্জন। আমি চাই, দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে পারি। সবার দোয়া ও ভালোবাসা কামনা করছি।
ইমার এই অর্জন কেবল তার একার নয়, এটি শান্তিগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত হাওরবেষ্টিত জনপদের গর্ব এবং দেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য এক উজ্জ্বল বার্তা। সুযোগ পেলে, অবকাঠামো থাকলে এবং পরিবারের সমর্থন পেলে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও উঠে আসতে পারে বিশ্বমানের খেলোয়াড়। ইমা তার জীবনের গল্প দিয়ে সেটাই যেন প্রমাণ করলেন।