ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৯ জুনe ২০২৫
  1. সর্বশেষ

ইসলামের রাষ্ট্রীয় ভিত্তি গড়ে ওঠা পবিত্র শহর

প্রতিবেদক
রফিকুল ইসলাম জসিম
১৯ জুন ২০২৫, ১১:২৫ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

ইসলামি ইতিহাসে মদিনা শুধু একটি শহরের নাম নয়; এটি এক আদর্শ সমাজব্যবস্থার প্রতীক—বিশ্বাস, ভালোবাসা ও শান্তির অনন্য উপমা। বিশ্ব মুসলিমের কাছে এটি পরিচিত ‘নবীর শহর’ হিসেবে। হিজরতের মাধ্যমে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এখানেই ইসলামের রাষ্ট্রীয় ভিত্তি স্থাপন করেন।

ইয়াসরিব থেকে মদিনাতুন্নবী

মহানবীর (সা.) আগমনের পূর্বে এই শহরের নাম ছিল ‘ইয়াসরিব’। হিজরতের (৬২২ খ্রিষ্টাব্দ) পর নবীজি (সা.)-এর আগমনে এই শহর পরিচিতি পায় ‘মাদীনাতুন্নবী’ নামে—অর্থাৎ ‘নবীর নগরী’। ধীরে ধীরে সংক্ষেপে এটি ‘মদিনা’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে।

‘মদিনা’ শব্দটি এসেছে আরবি মাদীনাহ (المدينة) থেকে, যার অর্থ ‘নগরী’। শুধু একটি ভূগোলিক অবস্থান নয়, নবীজির (সা.) আগমনের মাধ্যমে এই নগরী পরিণত হয় ইসলামী মূল্যবোধ ও সহাবস্থানের রোল মডেলে।

ইয়াসরিব: ইতিহাসের উৎসে

‘ইয়াসরিব’ নামটির উৎস সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। এক মতে, এটি নবী নুহ (আ.)-এর এক পুত্র ইয়াসরিবের নামানুসারে নির্ধারিত হয়েছিল। তিনি তার বংশধরদের নিয়ে এখানে বসতি স্থাপন করেন। যদিও ‘ইয়াসরিব’ শব্দের একটি অর্থ ‘ধমক দেওয়া’ বা ‘অভিযোগ তোলা’, দীর্ঘকাল এ নামটিই ব্যবহৃত হয়েছে।

মদিনার অন্য নামসমূহ

মদিনার অন্য এক পরিচিত নাম হলো ‘তাইবাহ’, যার অর্থ ‘পবিত্র’ বা ‘স্নিগ্ধ’। এটি এসেছে ‘তিব’ শব্দ থেকে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে মদিনাকে ‘তাইবাহ’ ও ‘তাবাহ’ নামেও উল্লেখ করা হয়েছে। শহরটি ‘দারুল হিজরাহ’ (হিজরতের আবাসভূমি) নামেও পরিচিত—যেখানে নবীজি (সা.) ইসলামের রাজনৈতিক ভিত্তি স্থাপন করেন।

প্রথম অধিবাসী ও গোত্রসমূহ

মদিনার প্রাথমিক ইতিহাসে দুটি কাবিলা বিশেষভাবে উল্লিখিত—বানু মাতরাওলিল ও বানু হাওফ। ধারণা করা হয়, তারা নবী নুহ (আ.)-এর পুত্র শামের বংশধর।

পরে ইয়েমেনি উৎসভিত্তিক দুটি প্রভাবশালী গোত্র—বানু আওস ও বানু খাযরাজ—এখানে বসতি স্থাপন করে। পরবর্তীতে এই দুটি গোত্রই নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান এবং নেতা হিসেবে স্বীকার করে নেন। এই গ্রহণযোগ্যতাই ইয়াসরিবকে রূপান্তর করে ‘মাদীনাতুন্নবী’-তে।

মদিনা সনদ: শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দিকনির্দেশনা

মদিনায় আগমনের পর মহানবী (সা.)-এর অন্যতম যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল মদিনা সনদ প্রণয়ন। এটি ছিল ইতিহাসের প্রথম লিখিত সংবিধান, যেখানে মুসলমান, ইহুদি, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের পারস্পরিক অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়। এই সনদের মাধ্যমে ধর্মীয় স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

ইসলামী খেলাফতের রাজধানী

নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবদ্দশায় এবং পরবর্তী প্রথম চার খলিফা—আবু বকর, উমর, উসমান ও আলী (রাযি.)—এর শাসনামলে মদিনা ছিল ইসলামী খেলাফতের রাজধানী। এখান থেকেই ইসলামের দাওয়াত ও শাসনব্যবস্থা বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।

উমাইয়া খেলাফতের সময় (Muawiyah ইবনে আবু সুফিয়ান-এর সময় থেকে) রাজধানী সরিয়ে নেওয়া হয় সিরিয়ার দামেস্কে। এরপরও মদিনার মর্যাদা কমে না; বরং এটি যুগে যুগে মুসলিম হৃদয়ের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকে।

মদিনা শুধু এক পবিত্র শহরের নাম নয়, এটি মুসলমানদের আত্মপরিচয়, ঐক্য, ও শান্তির অনন্য প্রতীক। নবীজির (সা.) জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, ইসলামের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠা এবং আন্তধর্মীয় সম্প্রীতির মূল ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে এই শহর থেকেই। তাই মদিনার ইতিহাস জানা মানেই হলো—ইসলামের প্রারম্ভিক যুগের রূপরেখা অনুধাবন করা।

49 Views

আরও পড়ুন

ইসলামের রাষ্ট্রীয় ভিত্তি গড়ে ওঠা পবিত্র শহর

২০২৬ সালের হজের রোডম্যাপ ঘোষণা করল সৌদি আরব

নাফনদীতে জেলের ছদ্মবেশে মাদক পাচারকালে১লাখ২০হাজার ইয়াবাসহ দুই মিয়ানমার নাগরিক আটক

সন্ধান মিলছে না মাদ্রাসা শিক্ষার্থী লাবিবের

বরকলে বাহাদুর খাঁন চৌধুরী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ইছালে ছাওয়াব মাহফিল

মৌলভীবাজার জামায়াতের সাবেক আমীরের ইন্তিকালে ডা. শফিকুর রহমানের শোকবার্তা

জার্মানিতে বেড়েছে ইসলামবিদ্বেষ

বাংলাদেশ স্কাউটস চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক সমাজ উন্নয়ন ওয়ার্কশপ সম্পন্ন

নিজেস্ব অর্থায়নে জবি ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ারের পানির ফিল্টার স্থাপন

স্থানীয় সরকার নির্বাচনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চায় জামায়াত

প্রতিরোধের ক্ষমতা ফুরিয়ে আসছে ইসরায়েলের

মহানবী (সা.) এর জীবদ্দশায় যে পরাশক্তির সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছিল (পারস্য) ‘ইরান’