মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এসময় প্রতিটি মুসলমানের ঘরে ঘরে বয়ে যায় ঈদ আনন্দ।প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পশু কোরবানি করা হয়। সেগুলো গরীব-দুখী, পাড়া-প্রতিবেশী
ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বিলিয়ে ও একে অপরের বাড়িতে গিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করা হয়। এই সময়টাতে দীর্ঘ অপেক্ষার পর মেডিকেল শিক্ষার্থীরা অল্প কিছুদিন ছুটি পেয়ে থাকেন। অন্য সকল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের থেকে মেডিকেল শিক্ষার্থীরা ছুটি কম পায়। এবারের ঈদুল আজহা এর ঈদ আনন্দ তুলে ধরেছেন ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী হাসান মাহমুদ শুভ।
“নোটিশ বোর্ডে ঈদ বার্তা”
দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আসে ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিশেষ আনন্দঘন উৎসব। কোরবানি, আত্মত্যাগ, সংহতি ও মানবিকতার শিক্ষা দেয় এই দিনটি।
আমাদের দেশে এই ঈদ কোরবানির ঈদ নামেই পরিচিত। যার মূল আনুষ্ঠানিকতা পশু কোরবানির মাধ্যমে আদায় হয়। ঈদুল আজহার ছুটির দুই/তিন সাপ্তাহ আগ থেকেই চোখ থাকে নোটিশ বোর্ডে! যার একমাত্র উপলক্ষ ‘ছুটি’ নামট প্রশান্তির বার্তা। এই ছুটির বার্তার প্রতিটা মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য ভীষণ আনন্দের। সচারাচর ঈদ ছাড়া ছুটি থাকে না। তাই এই সময়টাকে ঘিরে বিশেষ আগ্রহ।
দৈনন্দিন জীবনের সব ক্লান্তি, ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে বাবা মায়ের কাছে ছুটে যাওয়ার আবেগের আয়োজন। প্রতিটি ঈদুল আজহা তথা পশু কেনার সময় বাবা আমার বাসায় ফেরার প্রহর গুনে। বাসায় যাওয়ার পর বাবা ছেলে হাটে গিয়ে কোরবানির জন্য পশু কেনা। সে কী আনন্দ। এই আনন্দ শব্দ, বর্ণের মাধ্যমে প্রকাশ করা অসম্ভব প্রায়। বয়স বৃদ্ধির সাথে দায়িত্ব বাড়ে, কমে ঈদ আনন্দ। তবুও পরিবারের সাথে ঈদ ভীষণ আনন্দের। এবারের ঈদও বেশ দারুণ কেটেছে।
হাসান মাহমুদ শুভ
শিক্ষার্থী,ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর।
“ঈদ আনন্দে ভাগ বসায় পরীক্ষার বেদনা”
সবার ঈদ থেকে মেডিকেল শিক্ষার্থী হিসেবে ঈদুল আযহা একটু ব্যতিক্রম।কেননা পশু কুরবানী দেওয়া পর পশুর দেহের বিভিন্ন অংশগুলো যেমন হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, লিভার এগুলো দিয়ে একাডেমিক জীবনে এনাটমি পড়ার সাথে একটু মিলিয়ে নেওয়া যায়।এতেই অন্যদের থেকে ব্যতিক্রম হয়ে উঠে ঈদের আনন্দ। ঈদ ছাড়া তেমন ছুটি পাওয়া যায় না।কিন্তু ঈদের পর পরীক্ষা।এটা নিয়ে একটু মন খারাপ।
ঈদ আনন্দে ভাগ বসায় পরীক্ষার বেদনা।তবুও মেডিকেল জীবনের শত কষ্টের পর বাবা-মা,ভাই-বোন, প্রতিবেশীদের সাথে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পেরেছি এতেই খুশি।
রবিউল হাসান
শিক্ষার্থী, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ, চাঁদপুর ।
“বছরের ক্লান্তির মাঝে একটুখানি স্বস্তি ”
মেডিকেলে পড়া মানেই এক অসম যুদ্ধ
নিরন্তর,নিরব,আত্মত্যাগের গল্প।
বিসর্জন দিতে হয় কত শত উৎসব, বন্ধুদের আড্ডা, মায়ের হাতের রান্না, এমনকি নিজের ভালো লাগাগুলোও।
নিত্যনৈমিত্তিক ক্লাস, ওয়ার্ড, আইটেম সব মিলিয়ে জীবনের প্রতিটা দিন যেন এক একটা যুদ্ধক্ষেত্র
ঠিক সেই মুহূর্তেই ঈদ আসে এক চিলতে শান্তির আলো হয়ে।
ঈদের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, বন্ধুদের সঙ্গে নির্ভার আড্ডা, এলার্মহীন সকাল
এই ছোট ছোট সুখের মুহূর্তগুলোতেই লুকিয়ে থাকে ঈদের আসল আনন্দ। সারা বছরের ক্লান্তির মাঝে এই একটুখানি স্বস্তিই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
নজির নোবেল
শিক্ষার্থী, ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ।
দীর্ঘদিনের পরীক্ষাপ্রস্তুতি,অটো কবে হবে এসব নিয়ে বাক বিতণ্ডা,টিচারদের সাথে কুটনৈতিক তৎপরতা আর টার্ম পরীক্ষায় নিয়ম রক্ষার অংশগ্রহণ শেষে ৪ তারিখ বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিই,১৮ জুন থেকে ভাইভা হবার কথা থাকায় পুস্তকের মোটামুটি রিজার্ভ নিয়ে বাসায় এসে উপস্থিত হই। ঈদের জামাত ছিল ৭ টায়,তাকবীর বলতে বলতে যাওয়াটা সুন্নত হিসেবে স্মরণ করে আদায় করাটা ছিল অন্যরকম এক ভালো লাগার অনুভূতি। গাজায় ইসরাইলি সন্ত্রাসীদের নির্বিচার মুসলিম হত্যার কথা মনে পড়লে অবশ্যই খারাপ লাগে, নামাজ শেষে তাদের জন্য দোয়া হয় ( আল্লাহ তাদের জান,মাল,ইমান হেফাজত করুন)।কুরবানী করেছি বাসার সদস্যদের সাথে নিয়ে । শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুস্তক অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে, চাঁদরাতে পটকাবাজি করেছি,তবে কোথাও ঘুরতে যাই নি। কুরবানীর গোশত আত্মীয় স্বজনের কাছে পৌঁছে দেয়া, তাদের টা নেয়া, প্রতিবেশীদের কাছে দেয়া, তাদের টা নেয়া,যারা কুরবানী করতে পারেনি তাদের দেয়া এসবও ঈদের সংস্কৃতিতে যোগ করে বাড়তি আনন্দ।পরিশেষে, ঈদুল আজহার এই উৎসবে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথেই অংশগ্রহণ করেছি বলে আমার বিশ্বাস।
মুমতাজুল হাসান
শিক্ষার্থী, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, বগুড়া।