ঢাকাশনিবার , ৫ জুলাই ২০২৫
  1. সর্বশেষ
  2. সারা বাংলা

আজও বাস্তবায়ন হলোনা চন্ড্রিডহর সেতু। থমকে গেছে চার উপজেলার মানুষের যাতায়াতের উন্নত ব্যবস্থা।

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
১৭ মে ২০২৫, ৭:০৫ অপরাহ্ণ

Link Copied!

ওবায়দুল মুন্সী,সুনামগঞ্জ ||

সুনামগঞ্জ জেলার,শান্তিগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা ও জগন্নাথপুর নামক চার উপজেলার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র স্থান এই ‘চণ্ড্রিডহর’। প্রতিদিন অগণিত মানুষ এই স্থান দিয়ে যাতায়াত করেন। একটাই মাত্র বাহন,খেয়া নৌকা! এতে অনেক সময় লেগে যায়।

বিশেষ করে দূরপাল্লার যাত্রিগণ এতে চরম ভোগান্তির শিকার হন। বর্ষাকালে কয়েক গ্রামের স্কুল ছাত্রছাত্রীদের নৌকাডুবির আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন থাকেন অভিভাবকগণ।

বিগত সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল এই সেতুটি নির্মাণ করে দেওয়ার। কয়েকবছর পূর্বে এ নিয়ে কয়েক দফায় পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেও এখনও কোনো সুরাহা আসেনি। আওয়ামীলীগ সরকারের দুই প্রতাপশালী নেতা,পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও এমপি জয়া সেনের রাজনৈতিক বিরোধের কারণে মুখ তুবড়ে পড়েছিল এই চণ্ড্রিডহর সেতু প্রকল্প।

অনেকেই বলছেন-এই সেতুর নামকরণ নিয়ে নাকি ঝামেলা ছিল। সেতুর নাম ‘মান্নান সেতু’ হবে, নাকি ‘সুরঞ্জিত সেতু’ এটাই ছিল মূল সমস্যা। যদিও অনেকেই ধারণা করেছেন এই বিরোধের মিটমাট হয়ে ‘চণ্ড্রিডহর সেতু’ নামেই হওয়ার কথা। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের দুই নেতার কারসাজিতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাইকাপন গ্রামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান-‘মান্নান সাব শিক্ষিত মানুষ আর মন্ত্রী অইলে কিতা অইবো, বেটার মনের মাঝে ইংশায় ভরা। এই এলাকায় আমরা হখল জেলে-চাষা। এর লাগি, ইকানোর মাইনষের কোনও উন্নতি অউক ইতা তাইন চাইছইন না!
যার খারণে সেতুটা অইয়াও অইছে না।

তবে,সুনামগঞ্জ জেলার অনেখ বড় বড় কাজ তাইন খরছইন,ইতা খেউ অস্বীকার খরচও নায়। দুক্ক অইলো,আমরার এই ছোটোমোটো কাম, চাইলেই তাইন খরতে ফারতা!’

আমাদের চোখের সামনেই দৃশ্যমান আছে অনেক মেগা প্রকল্পের কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করেছেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান মহোদয়। তিনি চাইলেই এই ‘চণ্ড্রিডহর সেতু’ হয়ে যেত। কিন্তু তিনি সেটা করেননি!

এ নিয়ে কথা বলি, দিরাই উপজেলার সিকন্দরপুর গ্রামের মুহতামিম হযরত মাওলানা কামরুজ্জামান সাহেবের সাথে। তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন-‘
চণ্ড্রিডহর সেতু বিষয়ে প্রথম যিনি কথা বলেছিলেন-তিনি বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তাঁর নির্বাচনী এলাকা দিরাই-শাল্লা। তিনিও শুধু বলেই গেলেন, কিন্তু সেতুটি আর হলো না!
তারপর আসলেন,দিরাই-শাল্লা থেকে জয়া সেন,শান্তিগঞ্জ-জগন্নাথপুর আসন থেকে এমএ মান্নান মহোদয়। তাঁরাও একের পর এক আশ্বাস দিয়েছেন-সেতুটি হবে, হবে,হবে বলে। এনিয়ে এলাকার গণ্যমান্য অনেকেই উদ্যোগ নিয়েছিলেন বটে। কিন্তু তাদের উদ্যোগও এখনও কোনো আলোর মুখ দেখেনি! তার পিছনে কী কারণ ও রহস্য ছিল এলাকার সচেতন মানুষ সেটা বুঝে গেছেন। সবাই শুধু আশ্বাসই দিয়ে গেলেন কিন্তু লাখো মানুষের কাঙ্খিত সেতুটি বাস্তবায়ন করে গেলেন না।’

শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাইকাপন গ্রামের কৃতিসন্তান মাসুদুল হাসান দুলন বলেন-‘প্রস্তাবিত স্থানে সেতু নির্মাণ হলে শান্তিগঞ্জ দিরাই শাল্লা এই তিন উপজেলার মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে বলে আমি মনে করি। যা অত্র এলাকার বাসিন্দাদের জীবনে মান উন্নয়নে ও প্রভূত উন্নতি হবে!’

‘চণ্ড্রিডহর সেতু’ নিয়ে সেচ্ছায় ব্যক্তিগতভাবে যাঁরা উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে জগন্নাথপুর উপজেলার তেলিকোনা গ্রামের বাসিন্দা মাস্টার কুতুব উদ্দিন অন্যতম একজন। আমি সরাসরি তাঁর সাথে হুসেনপুর বাজারে গ্রাম ডাক্তার খায়রুল আলমের ফার্মেসিতে সাক্ষাৎ করে এব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন-‘পরিকল্পনা মন্ত্রী ক্ষমতায় থাকাকালীন আমরা কয়েকজন মিলে ‘চণ্ড্রিডহর সেতু’র জন্য সরাসরি দরখাস্ত দিই। দরখাস্ত পাঠ করে তিনিই আমাদের বলেন-‘চিন্তা করবেন না! এই সেতুটি করার জন্য আমার প্রাণপণ চেষ্টা থাকবে।’ কিছুদিন পর ঢাকা থেকে সত্যিই একজন প্রকৌশলী আসলেন কয়েকজন অফিসার সাথে নিয়ে আমাদের চড্রি’পারে। তাঁরা কয়েক জায়গার মাটি পরীক্ষা করলেন। আমি যখন প্রকৌশলীকে জিজ্ঞেস করলাম-‘স্যার কী অবস্থা!আমাদের ‘চণ্ড্রিডহর সেতুটি কী হবে? তখন প্রকৌশলী বলেছিলেন-‘আমাদের সাথে পরিকল্পনা মন্ত্রী স্যারের কথা হয়েছে। কিছুদিন পর এঁর ফলাফল আপনারা দেখতে পারবেন।’
আরেকদিন আমি ব্যক্তিগত কাজে মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করি। তখনও ‘চণ্ড্রিডহর সেতু’ নিয়ে আবারও বলি-‘মন্ত্রীসাব আপনি ক্ষমতায় থাকতে দয়াকরে আমাদের সেতুটি করে দেন। এত বড় ‘রানিগঞ্জ সেতু’ যেহেতু করতে পেরেছেন তাহলে সামান্য এই চণ্ড্রিডহর সেতুও আপনার জন্য কিছুই না! আপনার সদিচ্ছা থাকলে চণ্ড্রিডহর সেতুও দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারবেন।’
সেখানে শান্তিগঞ্জ, দিরাই ও জগন্নাথপুর এলাকার অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সামনে মন্ত্রী মহোদয় বলেছিলেন-‘মাস্টারসাব,চিন্তা নেই!অনেক মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন যখন করতে পেরেছি, আপনাদের সেতুও করে দেবো।’
কিন্তু আজ মন্ত্রীর কথা,কথাই থেকে গেল! চণ্ড্রিডহর সেতু’র বাস্তবায়ন আর হলো না।

সুদূর অতীতে সুনামগঞ্জ জেলার অনেক বিজ্ঞ রাজনীতিকের জন্ম হয়েছিল । যাঁরা এখান থেকেই নির্বাচন করে জাতীয় সংসদের নেতা হয়েছিলেন। সুনামগঞ্জ ৩ আসনে অনেক বিখ্যাত রাজনীতিক ছিলেন কিন্তু কেউই এই অবহেলিত জনপদের প্রতি সুদৃষ্টি দেননি।

তারপর, আমলা থেকে হঠাৎই রাজনীতির মঞ্চে উপবিষ্ট হলেন এম এ মান্নান। তিনি,আওয়ামীলীগ সরকারের অধিনে সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে কয়েকদফা নির্বাচন করে এমপি থেকে মন্ত্রীও হয়েছিলেন। আধামন্ত্রী থেকে পূর্ণ মন্ত্রীত্ব পাওয়ার পরে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান তাঁর হাতেই বাস্তবায়ন হচ্ছিল। সেই হিশেবে চলমান উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিকতায় এই চণ্ড্রিডহর সেতুও ছিল। কিন্তু তাঁর অমনযোগিতা ও অবহেলার কারণে চণ্ড্রিডহর সেতুটি আজ হয়ে ওঠেনি।

566 Views

আরও পড়ুন

চকরিয়ায় বনভূমিতে তৈরিকৃত সেমিপাকা ঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে বন বিভাগ

শান্তিগঞ্জে ৬ দিন ধরে ব্যবসায়ী নিখোঁজ,সন্ধানে মানববন্ধন, প্রশাসনকে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম

চকরিয়া উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডে শোভা বর্ধনে নান্দনিক উদ্যোগ

চকরিয়ায় হাইওয়ে পুলিশের উদ্যেগে সচেতনতামূলক কর্মশালা

অজ্ঞাতনামা এক ব্যাক্তির লাশ উদ্ধার চকরিয়াতে

চকরিয়া থানা পুলিশের অভিযানে আসামী গ্রেফতার- ৫

শেখ হাসিনাকে‘পলাতক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী’ বলে আখ্যায়িত ভারতীয় মিডিয়ার

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানালেন মধ্যনগর উপজেলা বি এন পির যুগ্ম আহ্বায়ক মোসাহিদ তালুকদার

এম এ মান্নানের ভ্যানগার্ড নুর হোসেন কারাগারে

দোয়ারাবাজার সীমান্তে ৪ বাংলাদেশি নাগরিকসহ ২ মানব পাচারকারী আটক

জুলাই-আগস্টের শহীদ ও আহতদের স্মরণে পলাশে জামায়াতের আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠিত

আদালত অবমাননা : শেখ হাসিনার ৬ মাসের কারাদণ্ড