ঢাকারবিবার , ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ

বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যায় জড়িত গডফাদারদের আইনের আওতায় আনা জরুরিঃ

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:২৯ অপরাহ্ণ

Link Copied!

মোহাম্মদ মন্‌জুরুল আলম চৌধুরী।

দিবালোকে আলোচিত এবং চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যার দৃশ্য এখনো মানুষের হৃদয় এবং মানস-পট থেকে বিস্মৃত হয়ে যায়নি। বলছি ২৫ জুন’১৯ সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করার ঘটনার কথা। পাশাপাশি গত ২ জুলাই’১৯ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১ নম্বর আসামি নয়ন বন্ড ক্রসফায়ারে নিহত হয়। হত্যাকাণ্ডে সাব্বির ওরফে নয়ন বণ্ড, রিফাত ফরাজী, রিফাতের ভাই রিশান ফরাজী আর তাঁদের অদূরে দাঁড়িয়েছিল রিশানের সহযোগী টিকটক হৃদয়, রায়হান, মুহাইমিনুল ইনলাম ওরফে সিফাত, তানভীর হোসেন এবং সোনালী পাড়ার রিফাত সহ অনেকেই। নিহত রিফাত শরীফের বাবা গত ২৭ জুন’১৯ সকালে সাব্বির, রিফাত, রিশান সহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। এই ঘটনার পর থেকেই স্থানীয় জনসাধারণ অভিযোগ করে আসছিলো যে নয়ন বন্ড স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার অনুসারী। সেই প্রভাবশালী ব্যাক্তির কারণে মাদক নিয়ে পুলিশকে ধরিয়ে দেয়ার পর তিনি তাঁকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রিফাতের খুনির সাথে আ.লীগের দুই নেতার ঘনিষ্ঠতার বিষয় বরগুনার মানুষের মুখে মুখে যদিও উনারা তা অস্বীকার করে চলেছেন। “বরগুনার ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা প্রথম আলোকে বলেছেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান তিন আসামির দুজন বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের আপন ভায়রার ছেলে এবং নয়ন বন্ড জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সুনাম দেবনাথের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত। সুনাম দেবনাথ বরগুনা সদর আসনের সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে”। {সূত্রঃ প্র/ আলো, ৩০ জুন’১৯}।

এলাকার সাধারণ মানুষ শঙ্কা প্রকাশ করেন যে, নয়ন বন্ডকে জীবিত না ধরে ক্রসফায়ারে দেয়া হয়েছে স্থানীয় কথিত প্রভাবশালী নেতাদের রক্ষার জন্য। সন্দেহের ঢাল পালা আরও বিস্তার লাভ করে যখন নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকাকে রিফাত হত্যা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার করা হয়। এ বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার আগ বাড়িয়ে সাংবাদিকদের আয়শার এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা বলেন। জানা যায়, ‘১ সেপ্টেম্বর’১৯ বরগুনার আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে আয়শাকে ৭ নম্বর আসামি করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছে পুলিশ’। যদিও প্রাথমিক তদন্ত এবং এজাহারে তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল না বরং সে ছিল এ ঘটনার এক নম্বর প্রত্যক্ষ সাক্ষী। পুলিশ একটি সিসি টিভি ফুটেজ দেখে আয়শাকে হত্যাকান্ডের সহযোগী হিসেবে আসামি করে। আমাদের দেশের পুরুষ-শাসিত সমাজ ব্যবস্থায় কতিপয় নির্লজ্জ, নৈতিকতা, মানবিকতা বিবর্জিত পুরুষ সবসময় নারীদেরকে নানানভাবে দোষী, হেয়, হত্যাকারী, চরিত্রহীনা, কলঙ্কিনী ইত্যাদি ইত্যাদি বিশেষণে আখ্যায়িত করার অপতৎপরতায় লিপ্ত হতে দেখা যায়। রিফাতের বাবার দাবি ছিল, রক্তাক্ত রিফাত একাই হাসপাতালে যান। রিফাতের বাবা বার বার অভিযোগের আঙ্গুল আয়শার দিকে তোলার প্রেক্ষিতে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। বরগুনার আদালত আয়শাকে কয়েকবার আবেদন করা সত্ত্বেও জামিন নামঞ্জুর করেন। ফলশ্রুতিতে আয়শা উচ্চ আদালতের শরাণপন্ন হতে বাধ্য হন এবং জামিন পেতে অনেক কাটখড় পোড়াতে হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্ট নিম্ন আদালত থেকে বিভিন্ন নথি তলব করেন। এবিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপারের আয়শাকে গ্রেপ্তারের পর ঘটনার দায় স্বীকার করে সে জবানবন্দী দিয়েছে মর্মে সংবাদ সম্মেলন করায় বরগুনার পুলিশ সুপারের কর্মকাণ্ডের ওপর মহামান্য হাইকোর্ট বিরক্তি এবং অসন্তোষ প্রকাশ করেন। মিডিয়ার সাথে কোন কথা না বলা সাপেক্ষে গত ৩ সেপ্টেম্বর’১৯ আয়শাকে জামিন মঞ্জুর করেন মহামান্য হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর’১৯ বরগুনার চাঞ্চল্যকর এবং আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের আরেকটি ভিডিও পাওয়া গেছে। “নতুন ভিডিওতে দেখা যায়, ২৬ জুন’১৯ সকাল ১০টা ২১মিনিটে আয়শা একাই একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় করে রক্তাক্ত ও অচেতন রিফাতকে বুকে আগলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে নিয়ে আসেন। এ সময় সেখানে দাঁড়ানো এক যুবক রিকশার দিকে দৌড়ে যান। তিনি হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে একটি স্ট্রেচার নিয়ে রিকশার পাশে আসেন। সেখানে উপস্থিত অনেকেই তখন এগিয়ে আসেন। এরপর অচেতন রিফাতকে রিকশা থেকে নামিয়ে স্ট্রেচারে করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। {সূত্রঃ প্র/ আলো, ১৭ সেপ্টেম্বর’১৯ }। এদিকে গত ১৩ জুলাই’১৯ বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম শরীফ বলেছিলেন, ‘রিফাতকে ধরে নেওয়ার সময় আয়শা নির্লিপ্ত ছিল। কুপিয়ে জখম করার পর আয়শা রিফাতকে হাসপাতালে নেওয়ার বদলে নিজের জুতা খুঁজছিল এবং হামলাকারীদের একজন তার হাতব্যাগ তুলে দিচ্ছিল। রিফাত রক্তাক্ত অবস্থায় একাই রিকশা করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে যায়। এরপর রিফাতকে অ্যাম্বুলেন্সে বরিশাল নেওয়ার সময়ও আয়শা তার সঙ্গে যায়নি’। এখন তিনি বলছেন, ‘রিফাতকে কোপানোর পর সে (রিফাত) একাই রিকশায় হাসপাতালে আসছিল। কিছু দূর আসার পর মিন্নি (আয়শা) রিফাতের রিকশায় উঠে’। পাশাপাশি আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালের সামনের ভিডিও আমি পেয়েছি। আয়শা যে রিফাত শরীফকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে, তা কলেজের সামনের ভিডিও এবং হাসপাতাল প্রাঙ্গণের ভিডিওতে সুস্পষ্টভাবে দেখা গেছে। আমি শুরু থেকেই বলে এসেছি আমার মেয়ে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত নয়। আমার মেয়েকে ষড়যন্ত্র করে আসামি করা হয়েছে’। নতুন ভিডিও প্রকাশ পাওয়ার পর মামলাটি নতুন মোড় নিতে পারে বলে মন্তব্য করছেন জ্যেষ্ট আইনজীবী জেড আই খান পান্না। এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘মূলত আয়শাকে আসামি করা হয়েছে সন্দেহের বশে। এর পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল। সেটা হচ্ছে অন্য আসামিদের রক্ষা করা। রিফাতের বাবা আব্দুল হালিম এত দিন এ হত্যার সঙ্গে আয়শাকে জড়িয়েছিলেন। এখন নতুন ভিডিও প্রকাশের পর তাঁর সেই দাবি ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে। ফলে মামলাটি নতুন মোড় নিতে পারে’। {সূত্রঃ প্র/ আলো, ১৮ সেপ্টেম্বর’১৯ }। তিনি আরও বলেন, যেহেতু পুলিশ দ্বিতীয় দফায় প্রকাশিত একটি ভিডিও ও কথোপকথন ধরে আয়শাকে প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি করার ব্যাপারে এগিয়েছে। তাই তাঁরাও নতুন ভিডিওটি নিয়ে এগোবেন। এ মামলায় পুলিশের অভিযোগপত্র গত ১৮ সেপ্টেম্বর’১৯ আমলে নেন বরগুনার জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম সিরাজুল ইসলাম গাজী। জানা যায়, এ হত্যা ঘটনার এখন পর্যন্ত তিনটি ভিডিও ছড়িয়েছে, যার মধ্যে কেবল দ্বিতীয় ভিডিওটি আলামত হিসেবে জমা দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু হামলার প্রথম ও তৃতীয় ভিডিওটি আলামত হিসেবে জমা দেওয়া হয়নি। বিষয়টিকে দুরভিসন্ধি হিসেবে দেখছেন নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকার বাবা মোজাম্মেল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই এই অভিযোগপত্র মানি না। একটি প্রভাবশালী মহল থেকে আয়শাকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পুলিশকে প্রভাবিত করা হয়েছে। আমরা এই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব’। {সূত্রঃ প্র/ আলো, ১৯ সেপ্টেম্বর’১৯}।

আলোচিত রিফাত হত্যা ঘটনার পর পরই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং এ হত্যাকাণ্ডের সাথে যদি কোন প্রভাবশালী কেউ জড়িত থাকে তবে তাঁদেরকেও বিচারের আওতায় আনার নির্দেশনা দেন তিনি। পুলিশের ভুমিকা এবং প্রধান সাক্ষী শরীফ রিফাতের স্ত্রী আয়শাকে ৭ নম্বর আসামি করার মধ্যে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করছেন সরকারী দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বাঁচানোর জন্য এ হত্যা কান্ডের ঘটনাকে অন্যখাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা লক্ষ্য করেছি ফেনীর সোনাগাজীর নিহত মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান হত্যা মামলায় প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরকেও বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। তাই বরগুনাবাসী এবং দেশবাসীর প্রত্যাশা রিফাত হত্যা মামলার বিচার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে খুনি ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করা হোক। পাশাপাশি সারদেশে গড়া উঠা বিভিন্ন কিশোর গ্যাঙদের পেছনের বড় ভাই তথা গড ফাদারদের মুখোশ সমাজে উন্মোচন করা খুব জরুরি। দেশের কিশোর এবং যুব সমাজকে যে বা যারা পথভ্রষ্ট, দিকভ্রান্ত, নীতিভ্রষ্ট করছে, নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা ও ব্যাক্তি-স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করছে জাতির সামনে তাঁদের মুখোশ উন্মোচন করা খুব জরুরি। পাশাপাশি তরুণ ও যুবকদের মাদক সেবন, ইভটিজিং, নারী শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন বন্ধের জন্যেও। অন্যায়কারীরা যদি আইনের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে অথবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রভাবশালীদের মদদে শাস্তি না পায় তবে তা দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি দেশের অব্যাহত উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং স্মৃদ্ধির পথে বিরাট অন্তরায় হয়ে উঠবে।

273 Views

আরও পড়ুন

আ.লীগ দেশটাকে গোরস্থানে পরিণত করেছিল : জামায়াত আমির (ভিডিও সহ)

বিএনপির সাথে ১২ দলীয় জোটের বৈঠক

শেরপুরের পানিহাতায় ঘুরতে গিয়ে ভোগাই নদীতে ডুবে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু 

শান্তিগঞ্জে বিপুল পরিমান ভারতীয় পণ্যসহ গ্রেফতার ২

টঙ্গী’তে বাতিঘর ফাউন্ডেশন এর আয়োজনে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত

টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে সাদ পন্থীদের হামলায় ৪ হত্যার প্রতিবাদে ইসলামপুরে মানববন্ধন 

শান্তিগঞ্জে জয়কলস ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড বিএনপি’র কর্মীসভা

নাটোরে সড়কের পাশ থেকে অজ্ঞাত যুবকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার

রাবিতে পার্বতীপুর উপজেলা সমিতির নেতৃত্বে আব্দুর রহমান-মুশফিকুর

নির্বাচন শেষে নিয়মিত কাজে ফিরে যাব–ড. ইউনুস

ক্ষমতায় গেলে নারীদের রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দেব- আমীরে জামায়াত

সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে দূর্ঘটনায় নিহত তিন,আহত দুই