ঢাকাবুধবার , ১২ মার্চ ২০২৫
  1. সর্বশেষ
  2. সারা বাংলা

জেলা কারাগার ডান্ডাবেরীর বাণিজ্য চরমে
জেলার আবু মুছার হাতে বন্দি কক্সবাজার জেলা কারাগার, বন্দিদের জীবন দুর্বিষহ!

প্রতিবেদক
নিউজ ভিশন
১১ মার্চ ২০২৫, ৮:১৪ অপরাহ্ণ

Link Copied!

নিজস্ব প্রতিবেদক:  কক্সবাজার জেলা কারাগার এখন সংশোধনাগার নয়, বরং দুর্নীতি আর নির্যাতনের কারাগার! জেলার আবু মুছার নেতৃত্বে এখানে টাকাই ন্যায়বিচার নির্ধারণ করে। ভালো সিট, মানসম্মত খাবার, এমনকি স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ—সবই কিনতে হয় মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে। আর যার টাকা নেই? তার জন্য অপেক্ষা ভয়াবহ নির্যাতন, ডান্ডাবেরীর শেকল, কিংবা ‘বুট-ছোলা চোর’ অপবাদ! কারা হাসপাতালও আর চিকিৎসার জায়গা নয়, বরং প্রভাবশালী ইয়াবা কারবারিদের বিলাসবহুল বিশ্রামাগার। অসুস্থ বন্দিরা ন্যূনতম চিকিৎসার আশায় ছটফট করলেও, তাদের কপালে জোটে অবহেলা আর অবর্ণনীয় কষ্ট।আইনের শাসন এখানে কেবলই এক অলীক কল্পনা, বাস্তবে চলছে নিষ্ঠুর বাণিজ্য। অসহায় বন্দিরা টাকার বাজারে বিক্রি হচ্ছে, আর কর্তৃপক্ষ নির্বিকার! কারাগারের এই অন্ধকার গলিপথে মানবাধিকারের আলো কি কখনো পৌঁছাবে? এমন প্রশ্ন বন্দিদের।সম্প্রতি অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এই কারাগারের ভয়ংকর এক বাস্তবতা।

চুরির অপবাদে ৬ হাজতির ওপর বর্বর নির্যাতন:

গত ৩ মার্চ, কারাগারের ভেতরে নির্মম এক ঘটনার জন্ম দেয় জেলার আবু মুছা। বুট ও ছোলা চুরির অপবাদ দিয়ে ছয়জন হাজতিকে ক্যাশ টেবিলে ডেকে নিয়ে বেদড়ক মারধর করেন তিনি। সদ্য মুক্তি পাওয়া হাজতি শাহারিয়ার (হাজতি নম্বর ৫৯৭৯) জানান, অভিযুক্তরা সম্পূর্ণ নির্দোষ হলেও তাদের নির্মমভাবে প্রহার করা হয়। মারধরের শিকার আসামিরা হলেন—মাতামুহুরী ২ নম্বর ওয়ার্ডের সুদে আলম, প্রকাশ লালু, আনোয়ার, মো. আলম, সৈয়দ আলম, নুরুল আমিন ও লতিফ। তারা এখনো কারাগারে বন্দি, যেকোনো সময় সত্যতা যাচাই করা সম্ভব।

ডান্ডাবেরীর ভয়ংকর বাণিজ্য

সম্প্রতি বিনা অপরাধেও কয়েদীদের ডান্ডাবেরী পরানোর নজির রয়েছে! ফেব্রুয়ারি মাসে কারা ক্যান্টিনের লভ্যাংশের হিসাব গরমিল থাকার অজুহাতে ক্যান্টিনের চিফ রাইটারসহ ছয়জনকে ডান্ডাবেরী পরিয়ে সেলে আটকে রাখেন জেলার। এদের কাছ থেকে আদায় করা হয় দশ লাখ টাকা! অথচ, ডান্ডাবেরী দেওয়া হয় সাধারণত দাগী আসামিদের, কিন্তু কক্সবাজার কারাগারে এটি পরিণত হয়েছে চাঁদাবাজির অস্ত্রে! ডান্ডাবেরী পড়ানো হয়েছিল—ক্যান্টিন ইনচার্জ মুন্না, খাইরুল আমিন, রহমান, শফি আলম, জাফর, পিসি ইনচার্জ সাদেক ও হাবিবকে। পরে পাঁচজনের শেকল খুলে দেওয়া হলেও সাদেক ও হাবিব এখনো শেকলে বন্দি। এখানে টাকার বিনিময়ে সব সুবিধা মিললেও, টাকা না থাকলে বন্দিদের ভাগ্যে জোটে নির্মম নির্যাতন।অভিযোগ আছে,কারাগারে হাসপাতালের সিট, খাবার, ফোনে কথা বলার সুযোগ—সবই এখন টাকার ওপর নির্ভরশীল। ওয়ার্ডে প্রথমবার ভর্তি হলে দিতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা, আর প্রতিদিনের সরকারি মোবাইল ডিউ ছাড়া কথা বলতে হলে গুনতে হয় ৫০০ টাকা প্রতি ১০ মিনিটে! নগদ টাকা থাকলে কক্সবাজার কারাগারে প্রতিদিনই কথা বলার সুযোগ পাওয়া যায়।

কারা হাসপাতালে জেলারের নীরব সিট বাণিজ্য ও চিকিৎসা সেবা ব্যাহত:

কারা হাসপাতালে অসুস্থ আসামি বা রোগী রাখার নিয়ম থাকলেও কক্সবাজার জেলা কারাগারে বাস্তবতা ভিন্ন। এখানে হাসপাতালকে বানানো হয়েছে ইয়াবা কারবারি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের জন্য বিশেষ সেবা কেন্দ্র। কারারক্ষী মিজান জেলার আবু মুছার কাছ থেকে মাসিক চুক্তিতে কারা হাসপাতাল পরিচালনা করছেন। হাসপাতালের আসন দখল করে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের রাখা হয় এবং প্রতিজনের কাছ থেকে মাসিক ১৫-২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। বর্তমানে কারা হাসপাতালে ৪০-৪৫ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছেন, যাদের থেকে প্রথমবার ভর্তি হওয়ার জন্যও ২০ হাজার টাকা নেওয়া হয়।
সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক মামলায় আসা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম চলছে। বড়-ছোট নেতাদের ক্ষেত্রে ২০-৫০ হাজার টাকা ভর্তি ফি নেওয়া হয় এবং পরে মাসিক সিট ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১৫-২০ হাজার টাকা। যাদের সামর্থ্য কম, তারা ফ্লোরে থাকতে বাধ্য হন এবং সেখানেও মান্থলি ১০ হাজার টাকা দিতে হয়।চিকিৎসার দোহাই দিয়ে বন্দিদের সঙ্গে চরম অবহেলা করা হয়, যার ফলে প্রায়ই বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু ঘটে এ কারাগারে। অভিযোগ রয়েছে, কারা হাসপাতালে কোনো স্থায়ী চিকিৎসক নেই। একমাত্র ফার্মাসিস্টই বন্দিদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। বন্দিরা কখনো চিকিৎসকের দেখা পান না, শুধু ব্যথানাশক ওষুধ বা ইনজেকশন দেওয়া হয়।সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া এক বন্দি গণসংযোগকে বলেন, “আমি কিডনির সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছিলাম। তিন দিন কারা হাসপাতালে থাকলেও কোনো চিকিৎসক পাইনি, শুধু ফার্মাসিস্ট ব্যথানাশক ইনজেকশন ও ট্যাবলেট দিতেন।”অন্য এক ভুক্তভোগী মেহেদী হাসান বাবু বলেন, “অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে জেলার আবু মুছাকে অনুরোধ করলাম, স্যার আমাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠান। তিনি আমাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, ‘মৃত্যুর আগে কোনো অসুস্থ বন্দি জেলখানার বাইরে যাবে না, কারণ এতে কারাগারের গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে।’”কারা হাসপাতালের সামনে থাকা কারা ক্যান্টিনেও দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে। ন্যায্যমূল্যে খাবার সরবরাহের নিয়ম থাকলেও সেখানে ৫-১০ গুণ বেশি দামে খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করা হয়, যা বন্দিদের জোরপূর্বক কিনতে বাধ্য করা হয়।তবে প্রথম রমজানে কারা ক্যান্টিনে টাকা দিয়ে খাবার জুটেনি।

কারাগারে পরিদর্শক এলে বন্দিরা মেডিকেল থেকে পালিয়ে যান কেন?

কারা হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা কারারক্ষী মিজান জেলার আবু মুছার অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যক্তি। যেসব ইয়াবা ব্যবসায়ী কারা হাসপাতালে থাকেন, তাদের কাছ থেকে প্রতিজন অগ্রিম ২০-৫০ হাজার টাকা এবং মাসিক ১৫-২০ হাজার টাকা কারারক্ষী মিজানের নেতৃত্বে আদায় করা হয়। ফলে প্রকৃত অসুস্থ বন্দিরা হাসপাতালে জায়গা পান না।কারাগারে সরকারি কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা কারা মহাপরিদর্শক পরিদর্শনে আসলে, এসব ইয়াবা ব্যবসায়ী বন্দিদের হাসপাতাল থেকে সরিয়ে কিছু সময়ের জন্য অন্য ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। ফলে পরিদর্শকদের কাছে কারা হাসপাতালের অবৈধ কার্যক্রম ধরা পড়ে না।কারারক্ষী মিজানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি জেলার আবু মুছার সব অপকর্মের প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ও জেলারের ডান হাত নামে পরিচিত।

বন্দিদের বেচাকেনার হাট: আমদানি ওয়ার্ড ও সেল

কারাগারের আমদানি ও সেল ওয়ার্ড বন্দিদের বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র। এখানে বন্দিদের অবস্থান নির্ধারিত হয় টাকার ভিত্তিতে। টাকা দিলেই মিলবে আরামদায়ক জীবন, না দিলে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়।সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হওয়া হাজতি হোসনে মোবারক (হাজতি নং ৫৬/২৪) গণসংযোগকে জানান, “জেলার আবু মুছা কারাগারকে নগদ টাকার কারখানায় পরিণত করেছেন। কারাগারের অভ্যন্তরে নগদ টাকার মাধ্যমে বন্দিরা নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারেন এবং প্রভাবশালী বন্দিরা জেলারের টেবিলে বসেই মোবাইলে কথা বলার সুযোগ পান।”
সাধারণ বন্দিদের টাকার অভাবে এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। আমদানি ও সেলে থাকার জন্য বন্দিদের প্রতি সপ্তাহে ৩-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়, যা নগদ বা বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।

জেলার আবু মুছার অপকর্মের ফিরিস্তি:

জেলার আবু মুছা কক্সবাজার কারাগারে যোগদানের পর থেকে কারাগারের নিয়ম-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। দেশের সকল কারাগারে দীর্ঘদিন যাবত মহিলা দর্শনার্থীদের জন্য অফিস কল বন্ধ থাকলেও কক্সবাজার কারাগারে নিজের উদ্যোগে মহিলা দর্শনার্থীদের জন্য অফিস কল চালু করেছেন জেলার আবু মুছা। তবে এটি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে, শুধু ইয়াবা কারবারিদের আত্মীয়-স্বজনদের জন্য।বর্তমানে এই কারাগারে হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা,গাঁজাসহ মরণনেশা আইস ও নানা রকমের মাদকদ্রব্য। রাতের অন্ধকারে মুছার সিন্ডিকেটের কয়েকজন কারারক্ষী দিনে ও রাতে মাদকের চালান আসামিদের হাতে প্রকাশ্যে তুলে দিচ্ছে, বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের উৎকোচ।গত বছরের ২ই ডিসেম্বর কারারক্ষী এমদাদ কারারক্ষী (৩০৯২) ডিউটিবিহীন অবস্থায় মাদকের চালান নিয়ে রাত ২:৪৪ মিনিটের সময় কারাগারে প্রবেশ করেন, যা সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে। তিনি নিরাপদে হাজতিদের হাতে মাদক তুলে দেন। পরে এই মাদক বিক্রি করতে কয়েদি-হাজতিদের মধ্যে দরকষাকষি চলাকালে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি জানতে পেরে জেলার গোপনে মাদকগুলো নিজের হেফাজতে নিয়ে “বিস্কুট” বলে চালিয়ে দেন।

শুধু তাই নয়, বর্তমানে কারাগারের প্রধান ফটকের চাবির দায়িত্বে রয়েছেন (১২২৯৮) নম্বর কারারক্ষী আব্দুল গফুর। তিনি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে মাদকসহ আটক হয়ে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু জেলার আবু মুছা অবৈধ মাদক ও কারাগারে নিষিদ্ধ জিনিসপত্র প্রবেশে সহযোগিতা করতে অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে তাকে গুরুত্বপূর্ণ প্রধান ফটকের চাবি সংরক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছেন কারারক্ষী আব্দুল গফুরের কাছে। ফলে কারাগার অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।

কারাগারে কয়েদি ও হাজতীদের ওপর নির্যাতন ও ডান্ডাবেরী পড়ানোর নিয়ম আছে কিনা এ বিষয়ে আইন ও শালিশ কেন্দ্রের প্রাক্তন প্রধান ও মহাসচিব নুর খান লিটন বলেন,বিনা অপরাধে কারাগারে কয়েদি বা হাজতী কে মারধর করা সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল। যদি কোন কয়েদী আসামি গুরুতর কোন অপরাধ বা দাঙা হাঙামা সংগঠিত করে সে ক্ষেত্রে কারাগারের জেল সুপার জেলকোড অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন।তবে শারীরিকভাবে আঘাত করা যাবেনা।কেউ শারীরিকভাবে আঘাত করলে সেটা মানবাধিকার লঙ্ঘন। জেলকোড অমান্য করার শামিল।

এ বিষয়ে কক্সবাজার কারাগারের জেলার আবু মুছাকে তার সরকারি মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলে ও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তার সরকারি মোবাইল নাম্বার ০১৭৬৯৯৭০৩৪১ নাম্বারে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলে ও কোন সদুত্তর দেননি।

37 Views

আরও পড়ুন

সুনামগঞ্জ সাহিত্য সংসদ গণপাঠাগার হতে শেখ একেএম জাকারিয়াকে অব্যাহতি

মাদারগঞ্জে চকলেটের লোভ দেখিয়ে ৪ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কলারোয়া উপজেলা শাখার উদ্যোগে রমজান ও যাকাতের গুরুত্ব শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

জেলা কারাগার ডান্ডাবেরীর বাণিজ্য চরমে
জেলার আবু মুছার হাতে বন্দি কক্সবাজার জেলা কারাগার, বন্দিদের জীবন দুর্বিষহ!

কবিতা:- ছোবল

রংপুরে হত্যা মামলায় ৪ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

পর্যটন নগরীর নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের কঠোর নজরদারি, ফিরছে পর্যটকদের আস্থা

ছাতকে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে মসজিদের ইমাম আটক

তা’মীরুল মিল্লাতে দাখিল ২৪ ও আলিম ২৬ ব্যাচের ‘ইনতিফাদা ইফতার মাহফিল’ অনুষ্ঠিত

চকরিয়ায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া এলাকা পরিদর্শন করেন শহর জামায়াতের আমীর ফারুক

বাংলাদেশ ফরেস্টার্স অ‍্যাসোসিয়েশন (বিএফএ) চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটি গঠন

নারী নির্যাতন ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে বক্তারমুন্সী শেখ শহীদুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের মানববন্ধন