নেত্রকোনা প্রতিনিধি
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০০৫ অনুয়ায়ী এনটিআরসিএ-তে নিবন্ধিত নয় এমন শিক্ষক দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বন্ধ করা হয়েছে। এই আইনের ১০(২) ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে, “কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত শিক্ষকদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত, নিবন্ধিত ও প্রত্যয়নকৃত না হইলে কোন ব্যক্তি কোন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য যোগ্য বিবেচিত হইবেন না”। কলেজ পর্যায়ের প্রভাষক পদের নিবন্ধন সনদ নাই, স্কুল পর্যায়ের সহকারী শিক্ষক নিবন্ধন সনদকে কলেজ পর্যায়ের প্রভাষক নিবন্ধন সনদ হিসেবে উপস্থাপন করে ২০১৫ সালে অবৈধভাবে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের প্রমাণ মেলেছে নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর আলহাজ্ব মাফিজ উদ্দিন তালুকদার কলেজের অধ্যক্ষ মোছা. কামরুন্নাহারের বিরুদ্ধে। কলেজ অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে নূন্যতম বিষয়ভিত্তিক প্রভাষক হিসেবে নিবন্ধন আবশ্যক। নতুন কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রভাষক হিসেবে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা বা অভিজ্ঞতাহীন নিয়োগপ্রাপ্ত প্রভাষক হিসেবে কাম্য যোগ্যতা আবশ্যক। অথচ মোছা. কামরুন্নাহারের কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকতার কোনো অভিজ্ঞতাও ছিলো না ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানাকূটকৌশলে তিনি অধ্যক্ষ বনে যান। তাছাড়া মোছা. কামরুন্নাহারের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের ইন্টারভিউ ফলাফলের ছকেও অনিয়ম প্রকাশ পেয়েছে। ওইসময় তিনি সর্বমোট ৩৩ নম্বর প্রাপ্ত হয়ে প্রথম স্থান লাভ করেন, কিন্তু নম্বরপত্রে ৩ নং ক্রমিকের প্রার্থীর সর্বমোট নম্বর ৩২ দেখানো হয়েছে, যাতে যোগফল ভুল রয়েছে। ভুল সংশোধন করলে ৩ নং ক্রমিকের প্রার্থী ৩৪ নম্বর প্রাপ্ত হয়ে
১ম স্থান অর্জন করে বিধায় মোছা. কামরুন্নাহার বাস্তবে ২য় স্থান করেছেন। জানা গেছে কলেজটির গভর্ণিং বডির সভাপতি তার স্বামী প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা ফারুক আহমেদ তালুকদার। স্থানীয় বেশকয়েকজন কলেজ শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এসকল অনিয়মের মূলহোতা তার স্বামী ফারুক আহমেদ তালুকদার ।
গত ১০ নভেম্বরে সুসং দুর্গাপুর দুর্নীতি ও নিপীড়ন বিরোধী ভার্সিটিয়ান মঞ্চের পক্ষে আহ্বায়ক কাজী আশফিক রাসেল কর্তৃক একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দেওয়া হলে গঠিত হয় তদন্তকমিটি। তারই সূত্র ধরেই আলহাজ্ব মাফিজ উদ্দিন তালুকদার কলেজের অধ্যক্ষ মোছাঃ কামরুন্নাহারের কলেজ পর্যায়ে প্রভাষক পদে কোনো নিবন্ধন সনদ না থাকার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে তদন্ত কমিটির আহবায়ক উপজেলা কৃষি অফিসার জনাব নিপা বিশ্বাস বলেন, “হ্যাঁ, আমরা ওনার নিবন্ধন সনদ নাই এই অভিযোগেরও প্রমাণ পেয়েছি। ঘটনা সত্য।”
কলেজ পর্যায়ের নিবন্ধন সনদ নাই, অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কামরুন্নাহার কি উপায়ে আওয়ামী লীগের আমলে নেত্রকোনা জেলার শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ হয়েছিলেন জানতে চাইলে নেত্রকোনা জেলা শিক্ষা অফিসার জনাব মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, “এটাকে আমি অযৌক্তিক ও অন্যায় হিসেবে দেখি। এটা ঠিক হয় নাই। আমি তো সে সময় ছিলাম না চার্জে। আমি নতুন আসছি। সে দায়ভার আমার না”।