ঢাকামঙ্গলবার , ৫ নভেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ
  2. বিশেষ সংবাদ

শীতের সম্ভাষণে অতিথি পাখি-সুমন দাস

প্রতিবেদক
জুবায়েদ মোস্তফা
৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩:০১ অপরাহ্ণ

Link Copied!

“ঋতু রঙিন, পূর্ণতায় প্রকৃতি; আঁখি জুড়ানো, হৃদয়-মন্দির প্রসন্নে;
ফিরছে মাঝির তরী-
বাংলার আলয়ে, গোধূলি ক্ষণে;
শুভ্রনীলাম্বর পানে, সহস্র কোটি দৃষ্টি;
অতিথি পাখির লাগি।”–সুমন দাস

বাংলাদেশ সবুজ শস্য- শ্যামলা, নদী-নালা, খাল- বিল, হাওর-বাঁওড় ইত্যাদি প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের মানবকুল এবং প্রাণীর মুগ্ধতার লীলাভূমি। এই নদীমাতৃক দেশে প্রকৃতির সময়ের পালাবদলে ষষ্ঠ ঋতুর আবির্ভাব ঘটে। শীতকাল ঋতুর আগমনে প্রকৃতি যেন তাঁর স্বকীয়তা হারিয়ে কুয়াশার চাদরের আড়ালে নিস্তব্ধ রথের সারথি রুপে লুকিয়ে পড়ে। দূর-দূরান্ত থেকে উড়ে আসা রঙ-বেরঙয়ের অতিথি পাখিরা শীতের সম্ভাষণকে আলিঙ্গনের তরে মুখরিত করে নেয় কলকাকলিতে। সোনার বাংলা খুঁজে পায় তাঁর যুগ যুগ ধরে চিরচেনা জীবন্ত শঙ্খের বিকেল।

শীতকালে শীতের হাত থেকে নিজেদেরকে বাঁচানো এবং খাবারের তাগিদে নিজ দেশের চেয়ে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ অঞ্চলে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে যে সব পাখি দলবেঁধে ছুটে আসে তাদেরকে পরিযায়ী বা অতিথি পাখি বলা হয়। শীত প্রধান দেশ রাশিয়ার সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, চীনের জিনজিয়াং ও ভারত মহাসাগর থেকে এসব সহস্রাধিক অতিথি পাখি নাতিশীতোষ্ণ বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য জলাশয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক, বোটানিক্যাল গার্ডেন, চলন বিল ও নদী-নালা ইত্যাদি বিভিন্ন অঞ্চলে বিচরণে প্রতি বছর নভেম্বর থেকেই ভোরে কুয়াশা আর সন্ধ্যা রাতে শিশিরে ভেজা হিমেল হাওয়া শীতের আগমন বার্তা নিয়ে আসে। শীতের শুরুতে লাল-সাদা-দীঘির জলে অতিথি পাখির বিচরণ জলাশয়ের সৌন্দর্য এবং পাখিপ্রেমীদের মুগ্ধতা বৃদ্ধি করে থাকে।

পৃথিবীতে প্রায় ৫ লাখ প্রজাতির পাখি রয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ৬২৮ প্রজাতির পাখি আছে। এদের মধ্যে ২৪৪ প্রজাতির পাখি আমাদের দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করে না। প্রতি বছর কম-বেশি সরালি, ছোট জিড়িয়া, বামুনিয়া হাঁস ও বক জাতীয় পাখির সংখ্যা বেশি লক্ষ করা
যায়। এছাড়াও পর্চাড, ফাইফেচার, গার্গেনি, লাল মুড়ি, মুরহেন, নর্দান পিনটেইল, জলপিপি, নকতা, চিতাটুপি, কোম্বাডাক, বালিহাঁস, খয়রা, চকাচকি, কারিউ, হেরন, নিশাচর, কাদাখচা, গায়ক রেনপাখি, পাতিকুট, গ্যাডওয়াল ও নরদামসহ রয়েছে ধূসর ও গোলাপি রাজহাঁস, চিতি, পেরিভূতি, নীলশীর পিয়াং, রাঙামুড়ি, গিরিয়া, পানিমুরগি, নর্তগিরিয়া, পাতি বাটন, কমনচিল, কটনচিল, বৈকাল, পাস্তমুখী, লেনজা প্রভৃতি অতিথি পাখিদের বিচরণ জলাশয়ে দেখা যায়।
কিছু কিছু অতিথি পাখি ২২ হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে চলে যায় দূরদেশে। অতিথি পাখি মূলত নিজেদের শীত প্রধান দেশে প্রচন্ড শীত পড়ায় প্রয়োজনীয় খাবার এবং ছোট ছোট উদ্ভিদ জন্মায় না। ফলে আত্মরক্ষা এবং খাদ্য সংকট এর কবল থেকে বাঁচতে আমাদের দেশসহ দূরদেশে পাড়ি জমায়। আবার যখন মার্চ-এপ্রিল মাসে নিজ দেশে বরফ গলতে শুরু করে তখন অতিথি পাখিগুলো সাবলীল ধারায় দলবেঁধে ছুটে চলে অস্তিত্বের ঠিকানায়। তখন যেন বাংলার প্রকৃতি তাঁর মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যের ছন্দ হারিয়ে ফেলে এবং রঙিন দিনগুলোর স্মৃতির দেয়ালে পাখিপ্রেমীদের অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়।

আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অতিথি পাখির গুরুত্ব রয়েছে। পাখিপ্রেমিরা “বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস” পালন করা শুরু করে। ২০০৬ থেকে এই দিবসটি পালিত হচ্ছে। সে বছর ৯ এপ্রিল কেনিয়ার লাইকিপিয়াতে দিবসটি জাঁকজমকের সঙ্গে পালন করা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানে ৪৬টিরও বেশি দেশ অংশ নিয়েছিল। ২০০৭ সালের ১২ থেকে ১৩ মে এই দিবসটি পালন করা হয়। ‘বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব’ নামের একটি সংগঠন দেশের বিভিন্ন স্থানে পাখি মেলা বা পাখি উৎসবের আয়োজন করে আসছে বেশ কিছু দিন ধরে। ইতোমধ্যেই তারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, মিরপুর সিরামিক লেক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, হাকালুকি হাওর ও বাইক্কা বিল প্রভৃতি স্থানে এই মেলা ও উৎসবের আয়োজন করেছে। এই উৎসবের উদ্দেশ্য হচ্ছে, অতিথি পাখিদের ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করা।

প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় জলাশয়ে যে উদ্ভিদ এবং প্রাণী জন্মে সেগুলো অতিথি পাখি খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। যদি পাখিরা না আসতো তাহলে বেশি উদ্ভিদ জন্ম নেওয়ায় পুকুরের জলের উপরিভাগে চলাচল করা প্রয়োজনীয় অক্সিজেন মাছ গ্রহন করতে পারতো না। ফলে মাছ বেঁচে থাকার সংকটে নুয়ে পড়তো। এছাড়া পোকামাকড় বেড়ে গিয়ে মানুষের ক্ষতি করতো। অতিথি পাখিরা এইভাবে জলাশয়ের উদ্ভিদ এবং প্রাণী খেয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখে। অতিথি পাখির কারণে পর্যটকদের পাখিদের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখার আনাগোনা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। তবে, অতন্ত্য দুঃখের বিষয় এই যে:- আমাদের দেশের কিছু অসাধু পাখি ব্যবসায়ী মানুষ রয়েছে, যারা শীতের শুরু থেকে এই অতিথি পাখি শিকার করে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে এবং পাশাপাশি নিজেদের মাংসের চাহিদা পূরণ করে। ফলে প্রতি বছর অতিথি পাখির সংখ্যা কমতে শুরু করে এই অসাধু পাখি ব্যবসায়ীদের জন্য। যদি অসাধু পাখি ব্যবসায়ীদের দ্রুত পরিহার না করা হয়, ইতিমধ্যে এই অতিথি পাখির মধ্যে কিছু পাখি নেই বল্লেই চলে ও কিছু পাখি বিলুপ্ত প্রায় পাখির কাতারে নুয়ে পড়েছে। এছাড়া প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হবে এবং পর্যটকদের আনাগোনা বিছিন্নতায় পর্যবসিত হবে। তাই অতিথি পাখিদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আমাদের দেশের মানুষদেরকে সচেতন করার পাশাপাশি অসাধু পাখি ব্যবসায়ী নামক পাখি নিধনকারীদের আটক ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রতি জোড়ালো দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

আসুন আমরা আমাদের এই সোনার বাংলার জলাশয় অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তুলি। তাদের কলকাকলীতে পূর্ণ করি এই লীলাভূমি। অতিথি পাখি বাঁচলে, বাঁচবে পাখিপ্রেমী, মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ হবে বাংলাদেশ।

লিখেছেন:- সুমন দাস
সাবেক শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

14 Views

আরও পড়ুন

বুটেক্সে ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন আইপিই

শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা মামলায় গ্রেফতার ১

বুক রিভিউ:সময়ের ছবি ‘নীরব কোলাহল’

মৌলভীবাজারে সোনার বাংলা আদর্শ ক্লাবের ৬ষ্ঠ মেধা যাচাই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

হাওরের জনপদ এখন উচ্চশিক্ষায় আরো এগিয়ে যাবে–ড. মোঃ আবু নঈম শেখ

রাবিতে গ্রীন ভয়েস এর নেতৃত্বে মাহিন-সিরাজুল

ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় মনিরকে

নাইক্ষ্যংছড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় গৃহবধূর লাশ উদ্ধার !!

আগামী দিনের রাজনীতি হবে তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গড়ার রাজনীতি: নাজমুল মোস্তফা আমিন

নাটোরে অস্ত্রসহ আওয়ামীলীগ নেতা ও তার সহযোগী আটক

দুর্লভ নিদর্শনে সমৃদ্ধ এশিয়াটিক সোসাইটি ঐতিহ্য জাদুঘর

রাবিতে ছাত্র উপদেষ্টার আহবানে গাছ থেকে পেরেক অপসারণ