©রক্তধারা, চাঁদপুর। ফাইল ছবি।
আজ ৮ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে চাঁদপুর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে মুক্তি লাভ করে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করার পর ৮ ডিসেম্বর পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর এলোপাতাড়ি আক্রমণে চাঁদপুর থেকে পলায়ন করতে বাধ্য হয়।
১৯৭১ সালের ৭ই এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী বিমান যোগে প্রথম চাঁদপুর আক্রমণ করে। আক্রমণের প্রথম দিনে চাঁদপুর পুরান বাজার এলাকায় এক প্রমিলা পথচারী নিহত হোন। ৮ ই এপ্রিল ২নং সেক্টরের মুক্তিবাহিনীগণ বিক্ষিপ্ত ভাবে পাকবাহিনীর উপর হামলা করলেও তেমন ফলপ্রসূ লাভ হয়নি। চাঁদপুর শহরের চেয়ারম্যান ঘাট এলাকার পাশে কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে পাকবাহিনী প্রথম অস্থায়ী ক্যাম্প গঠন করে। পরবর্তীতে মেঘনা নদীর পার্শ্ববর্তী চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেড এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনী টর্চার সেল গঠন করে। যেখানে সড়ক, নৌ ও রেলপথে আসা মানুষদের সন্দেহের বশেই অমানবিক নির্যাতন, ধর্ষণ এবং হত্যা করে নদীতে ফেলে দিতো। যার নির্মম স্মৃতি পদ্মা-মেঘনার খরস্রোতা ঢেউ এখনও বহন করে চলছে।
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর কুমিল্লার লাকসাম-মুদাফফরগঞ্জ এলাকা মুক্ত হওয়ার পর পাকবাহিনী ক্রমন্নয়ে চাঁদপুরের দিকে অগ্রসর হয়। পরে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল এলাকায় মুক্তিবাহিনী দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। ৬ ডিসেম্বর থেকে ৭ডিসেম্বর গভীর রাত পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৬ ঘন্টা পাকবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর মাঝে তুমুল যুদ্ধ হয়। প্রবল আক্রমণে দিশে না পেয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর ৩৯নং অস্থায়ী ডিভিশনের কমান্ডিং অফিসার মেজর আব্দুর রহিম নৌপথে ঢাকার উদ্দেশ্যে পালানোর চেষ্টা করে। পথেই মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে তিনি গুরুতর আহত হন এবং সঙ্গরত অন্যান্য পাকবাহিনীর নদীপথেই চির সমাধির সৃষ্টি হয়। ফলে চাঁদপুর জেলার পুরো এলাকা মুক্তিবাহিনীর আয়ত্ত্বে চলে আসে। ১৯৭১ সালের ৮ডিসেম্বর চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের তৎকালীন মহকুমা কার্যালয় এবং চাঁদপুর সদর থানা প্রাঙ্গণে স্বাধীন জেলা হিসেবে বিএলএফ কমান্ডার মরহুম রবিউল আউয়াল কিরণ প্রথম স্বাধীন দেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগের স্মৃতি রক্ষার্থে চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেড এলাকায় ‘রক্তধারা’ বদ্ধভূমি স্মৃতিচিহ্ন নির্মিত হয়। এছাড়া হাসান আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখে দৃশ্যত ভাসমান নন্দিত মুক্তিসৌধ ‘অঙ্গীকার’, ট্রাক রোডে চাঁদপুরের প্রথম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সুশীল, শংকর ও খালেকের স্মরণে ‘মুক্তিসৌধ’, পাঁচ রাস্তার মোড়ে চাঁদপুর জেলার শহীদদের নাম সম্বলিত ‘শপথ চত্বর’ মুক্তিবাহিনী স্মৃতি স্মারক হিসেবে নির্মিত হয়। তাছাড়া ১৯৯২ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে হাসান আলী বিদ্যালয়ের মাঠ প্রাঙ্গনে প্রতি ডিসেম্বর মাসে বিজয় মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। যার ধারাবাহিকতায় এ বছরও ইতিমধ্যে বিজয় মেলা শুরু হয়েছে।