ফেনী প্রতিনিধি :
ফেনী-৩(সোনাগাজী-দাগনভুঞা) আসনের সাবেক এমপি হাজী রহিম উল্যাহকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। শনিবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী পারভিন আক্তার।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-২ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) শিহাব করিম।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগষ্ট ফেনী শহলের পুরাতন জেলা কারাগারের সামনে টমটম চালক জাফর আহম্মদ হামলার শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুত্যুবরণ করেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার স্ত্রী আছিয়া বেগম বাদি হয়ে ফেনী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২০৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১৫০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। গ্রেপ্তাকৃত হাজী রহিম রহিম উল্যাহ এজহারের ৬ নম্বর আসামী । এ মামলার প্রধান আসামী ফেনী-৩ আসনের সাবেক এমপি জেনারেল(অব:) মাসুদ উদ্দিন ছৌধুরী। ফেনী সদরের সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী সহ মামলার অপর আসামীরা জেলার আওয়ামীলীগ যুবলীগ ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের পদধারী নেতাকর্মী।
স্বামীকে নির্দোষ দাবী করে হাজী রহিম উল্যার স্ত্রী পারভিন আক্তার বলেন, হত ১৫ বছর নিজাম হাজারী সিন্ডিকেটের অন্যায় অনিয়ম ও দুর্ণীতির বিরুদ্ধে আমার স্বামী সবসময় স্বোচ্ছার ছিলেন। যার কারনে নিজাম হাজারীর অনুগত সন্ত্রাসীরা আমার স্বামীর উপর একাধিকবার হামলা চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। জাতীয় সংসদে দাড়িয়ে আমার স্বামী নিজাম হাজারীর বিচার দাবী জানালেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বরং তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের সোনাগাজীর সোনাপুরের বাড়িতে দুইবার বোমা হামলা চালিয়ে আমার স্বামীকে ফের হত্যার চেষ্টার করেন। নিজাম হাজারী ভয়ে আমার স্বামী গত ১০ বছর ফেনী শহরে যেতে পারেনি। অথচ আমার স্বামীকে নিজাম হাজারীর সাথে হত্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে। তিনি কান্নাজনিত কন্ঠে মিথ্যা মামলায় স্বামীকে হয়রানীর জন্য আল্লার কাছে বিচার প্রার্থনা করেন।
প্রসঙ্গত, জেদ্দা মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি হাজী রহিম উল্যাহ ২০০৭ সালে স্থগিত হওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-৩ আসনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করে এমপি নির্বাচিত হয়। ওই নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী ছিলেন মাহাজোটের জাতীয় পার্টি মনোনীত সাংবাদিক রিন্টু আনোয়ার।
নির্বাচিত হওয়ার পর সোনাগাজী ও দাগনভুঞাতে নিজাম হাজারী অনুগত আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের অনিয়ম দুর্ণীতির বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ শুরু করেন।
এ নিয়ে হাজী রহিম উল্যাহ ও নিজাম হাজারীর অনুগতদের মধ্যে বহুবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। একাধিকবার নিজাম হাজারীর অনুগতরা গাড়িবহর ও বাড়িতে হামলা চালিয়ে হাজী রহিম উল্যাহ হত্যার চেষ্টা চালায়। ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মৎস খামারে। নিজাম হাজারীর প্রভাবে জেলা উপজেলার আওয়ামীলীগের কোন কমিটিতে ঠাই হয়নি হাজী রহি উল্যার।
চলিত বছরের ৭ জানুয়ারীর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন। নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। ভোটের দিন নিজাম হাজারীর অনুগত সব কেন্দ্রে দখল করে নিলে হাজী রহিম উল্যাহ নির্বাচন বর্জন করেন।