নিজস্ব প্রতিবেদক
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্য রুরাল পুয়র – ডর্প এর উদ্যোগে তামাক বিরোধী ক্যাম্পেইনে তরুণ প্রতিনিধিদের অ্যাডভোকেসি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশিক্ষণের আজ ২য় দিনে দিনব্যাপী এই কর্মশালায় বিভিন্ন তামাকজাত পণ্যকে রুখে দিতে নানান গঠনমূলক আলোচনা ও অংশগ্রহণকারী যুবদের নিয়ে আগামী তিন মাসের কর্মকাণ্ডের তালিকা করা হয়। সারা মাসব্যাপী আরও পাঁচদিন ধরে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রশিক্ষণ কর্মশালাটিতে ২৫ এর অধিক তরুণের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সিটিএফকে বাংলাদেশ এর প্রোগ্রামস ম্যানেজার জনাব আব্দুস সালাম মিয়া বলেন, আগে অতিথি আপ্যায়নের অংশ হিসেবে ডালায় সাজিয়ে জর্দা দিয়ে পান, হুকা, এবং বিড়ি-সিগারেটের মতো তামাকজাত দ্রব্য পরিবেশন করা হতো। আজ, মানুষ এই প্রথা থেকে সরে এসেছে, যা একটি ইতিবাচক পরিবর্তন। তবে এখনও বিভিন্ন অফিস এবং রেস্টুরেন্টে স্মোকিং জোন বিদ্যমান, এবং এই স্থানগুলো থেকে নির্গত ধোঁয়া অধূমপায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে। জনস্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে এই নির্ধারিত ধূমপান স্থানগুলো বিলুপ্ত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ক্যাম্পেইন তিনটি মূল লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হচ্ছে: চেইন স্মোকারদের ধূমপানের অভ্যাস কমানো, ধূমপানে আগ্রহ সৃষ্টির যে কোনো প্ররোচনা বন্ধ করা এবং নারী, শিশু ও অন্যান্য অধূমপায়ীদের তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করা। এই লক্ষ্যগুলো অর্জন করা অনেক সহজ হবে যদি আমরা দেশের উচ্চপর্যায়ের কর্তৃপক্ষ, যেমন প্রধান উপদেষ্টা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাগণ, এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আমাদের কৌশলগুলো কার্যকর করতে পারি।
প্রকল্প উপদেষ্টা জনাব মো. আজহার আলী তালুকদার মন্তব্য করেন, শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনের মাধ্যমে যে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে, তা গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক দলগুলো অর্জন করতে পারেনি।
তাই আমি তরুণদের প্রতি আন্তরিক আহ্বান জানাই, তামাকবিরোধী এই ক্যাম্পেইনকেও সফল করতে হবে। তরুণ সমাজকে তামাকের ভয়াবহ কব্জা থেকে রক্ষা করা শুধু প্রয়োজনই নয়, এটি দেশের ভবিষ্যৎ অগ্রগতির নিশ্চয়তার পূর্বশর্ত।
তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর রুবিনা ইসলাম প্রশিক্ষণপ্রার্থী তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, গ্যাটস ২০১৭ রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ মানুষ তামাক ব্যবহার করে, যা উদ্বেগজনক। এই সংখ্যাটি দেশের জনস্বাস্থ্য সংকটের দিকে ইঙ্গিত করে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোরভাবে কার্যকর না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। প্রতিদিন তামাকজনিত রোগে ৪৪২ জনেরও বেশি মানুষ মারা যাবে। এই মৃত্যুর হার রোধ করতে, সরকারের উচিত ডরপের প্রস্তাবিত তামাকজাত পণ্যের উপর কর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং তামাকের মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা, যাতে এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
সভায় তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য এফসিটিসি এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রণীত খসড়ার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, সকল প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট, ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট আমদানি, উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা, তামাক পণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কতার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন গুরুত্ব আরোপ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, ডর্প বিগত ১৯৮৭ সাল থেকে দেশব্যাপী বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচির সাথে জড়িত এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রবর্তনকারী সংস্থা হিসেবে সমধিক পরিচিত। এখন পর্যন্ত ডর্প সারাদেশে ৫ টি বিভাগে ৩০ টি জেলায় ৭৪ টি উপজেলায় বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ডর্প বর্তমানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও তামাক কর বৃদ্ধি বিষয়ে কাজ করছে এবং সরকারের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।