বিজ্ঞানের আবিষ্কার এ পর্যন্ত আমাদের সামনে যে সকল তথ্য ও তত্ত্ব পেশ করেছে তা থেকে এ বিষয়ের উপর নিঃসন্দেহে পূর্ণ বিশ্বাস জন্মে যে, মানুষ যে পরিবেশে বসবাস করে ও বিভিন্ন কাজকর্ম করে তাতে তার কণ্ঠস্বর, ছবি, গতিবিধির ছাপ চারপাশের পদার্থের অণুপরমাণুর উপর মুদ্রিত, প্রতিবিম্বও সংরক্ষিত হয়ে থাকে। আবার উহার প্রত্যেকটি জিনিসকেই অনুরূপ আকার-আকৃতিতে, ধ্বনিতে বা আওয়াজে পুনরায় এমনভাবে উপস্থাপন করা যেতে পারে, যাতে আসল-নকলের মধ্যে কোনো দিক দিয়েই বিন্দুমাত্র পার্থক্য থাকে না। মানুষ যদি আল্লাহর প্রদত্ত সীমিত জ্ঞান-বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে আবিষ্কৃত উপায় উপকরণ যেমন: রেড়িও, টেলিভিশন, মোবাইল, টেলিফোন, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট, ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডার, রেকর্ডার, সিসি টিভি ও আধুনিক প্রযুক্তির অনন্য অবদান স্যাটেলাইটসহ ইত্যাদি নানাবিধ উপকরণের মাধ্যমে উক্ত কাজ করতে পারে, তবে মানুষ ও এ পৃথিবী তথা এই মহাবিশ্বের মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাক অসীম ক্ষমতার মালিক হয়ে কেন পারবেন না তাঁর ফেরেস্তাদের দ্বারা দুনিয়ার বুকে সংঘটিত ঘটনাবলী ও মানুষের যাবতীয় কর্মকান্ডের রেকর্ড সংরক্ষণ করতে এবং পরকালে মহাসমাবেশ বা হাশরের দিন আবার তা হুবুহু উপস্থাপন করতে?
সেদিন তো মানুষ নিজের কানেই নিজের কন্ঠস্বর এবং দুনিয়ার জীবনে বলা সব কথাবার্তা শুনতে পারবে। কারণ এসব তাকে শোনানো হবে। একইভাবে তার নিজের চোখে নিজের যাবতীয় কাজেকর্মের চলমান ছবি এমনভাবে দেখতে পাবে যে, তার সত্যতা, যথার্থতা ও নির্ভুলতাকেও কারও পক্ষে অস্বীকার করা সম্ভব হবে না। মানুষের নিজ দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং তার পরিবেশস্থ প্রত্যেকটি জিনিসই যে টেপ রেকর্ডার ও ফিল্মের কাজ করবে।
এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন,
“তাদের সকলকেই তো সেদিন আমার সামনে উপস্থিত করা হবে।” (সূরা ইয়াছিন, আয়াত: ৩২)
“আজ আমি এদের মুখ বন্ধ করে দিচ্ছি। এদের হাত আমার সাথে কথা বলবে, আর এদের পা গুলো সাক্ষ্য দিবে এরা দুনিয়ায় কি কি কাজ করছিল তার।” (সূরা ইয়াছিন, আয়াত: ৬৫)
“তারা যেন সেদিনটি ভুলে না যায়, যেদিন তাদের নিজেদের জিহ্বা, নিজেদের হাত ও নিজেদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য প্রদান করবে। সেদিন আল্লাহ তাদেরকে সেই প্রতিদান পুরোপুরি দিবেন, যা তারা পাওয়ার যোগ্য। আর তারা জানতে পারবে যে, আল্লাহই সত্য এবং সত্যকে সত্য হিসেবে প্রকাশ করেন।” (সূরা নূর, আয়াত: ২৪, ২৫)
“কাজেই এ লোকেরা যেসব কথা বলে তা যেন তোমাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ ও দুঃখ ভারাক্রান্ত না করে। তাদের প্রকাশ্য ও গোপন সব কথাই আমি জানি।” (সূরা ইয়াছিন, আয়াত: ৭৬)
“যে দিন মানুষ সেসব কিছু দেখবে যা তার দুটি হাত আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে এবং কাফেররা বলে উঠবে, হায়! আমি যদি মাটি হতাম!” (সূরা নাবা, আয়ত: ৪০)
“সেদিন সে (পৃথিবী) তার নিজের উপর যা কিছু ঘটেছে সেই সব অবস্থা বর্ণানা করবে।” (সূরা যিলযাল, আয়াত: ৪)
“সহসা এবং নিজেদের চোখে (যে সব বিষয়ে খবর দেওয়া হয়েছে সবকিছুই) দেখতে পাবে। তখন এরা বলবে, ‘হায়! আমাদের দুর্ভোগ, এইতো বিচারের দিন, এইতো সেই ফায়সালার দিন, যাকে তোমারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করছিলে।” (সূরা আস সাফ্ফাত, আয়াত: ১৯ – ২১)
আলী ওসমান শেফায়েত
শিক্ষক ও গবেষক