নিউজ ডেস্ক :
বাংলাদেশে রাজনীতিতে ইদানীং বেশ জমে উঠেছে ‘ভারত ইস্যু’, বিশেষ করে বিরোধী দল বিএনপি ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে অনেক রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্ক চলছে। ভারত নিয়ে প্রকাশ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের রেশ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।
পাশাপাশি নির্বাচনের পর থেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-বিরোধী কয়েকটি দলের তৎপরতায় শুরু হওয়া ভারতীয় পণ্য বর্জনের যে ক্যাম্পেইন, সেটিও সামাজিক মাধ্যমে আরো আরো সক্রিয়।
আবার ভারত বিরোধী এই প্রচারণা নিয়ে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে অনেকে একে ‘ট্র্যাডিশনাল ভারত বিরোধী রাজনীতি’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ রোববার (২৪ মার্চ) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘বাজারকে অস্থিতিশীল করে পণ্যের দাম বাড়ানো’।
‘সব ভারতীয় পণ্য বাদ দিয়ে বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থা কখনো ঠিক রাখা যাবে?’, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আবার বলেছেন, ভারত নিয়ে ‘জনমনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বলেই’ এটি রাজনৈতিক আলোচনায় এসেছে।
‘নির্বাচন এলেই ভারত কোনো রাখঢাক না করেই সক্রিয় হয় বলেই মানুষ ভোট দিতে পারেনি বা বঞ্চিত হয়েছে। সে বঞ্চনা থেকেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। মানুষের ক্ষোভ কমানোর কাজ তো বিএনপির না,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এটি বিএনপির ‘আজন্ম ভারতবিরোধী রাজনীতির ধারাবাহিকতা’।
‘তারা এটি করছে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য কিন্তু মানুষ তা প্রত্যাখ্যান করছে,’ মন্তব্য করেন তিনি।
ভারত নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের কারণ সম্পর্কে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলেন, ‘বিএনপি বা সমমনা দল বা দলের নেতারা কেউ কেউ যখন ভারতীয় পণ্য বর্জন বা ভারত বিরোধিতাকে মাঠে নিয়ে আসেন তখন রাজনৈতিক কারণেই আওয়ামী লীগ তার কাউন্টার দিয়ে ভারতের ভূমিকার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে চাইছে।’
কেন এই তর্ক-বিতর্ক?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত সবসময় গুরুত্বপূর্ণ এবং বর্তমান বাস্তবতাতেও তাদের ভূমিকা আছে।
‘ফলে বিএনপি বা তাদের সমমনা কেউ যখন ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেয় কিংবা ভারতবিরোধিতা করে কথা বলতে থাকে তখন রাজনৈতিক কারণেই আওয়ামী লীগকে তার কাউন্টার বা পাল্টা জবাব দিতে হয়,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।
তার মতে, দল দুটির রাজনীতিতেও ভারতের প্রভাব আছে।
‘যেহেতু বিএনপি মানুষের সেন্টিমেন্টকে উস্কে দিচ্ছে সে কারণে আওয়ামী লীগকে তার যে ভারতের সাথে সুসম্পর্ক আছে, সে জায়গা থেকে কথা বলতে হচ্ছে।’
‘বিএনপি চায় মানুষকে উস্কে দিয়ে ভারতবিরোধিতার নামে আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করতে। সে কারণেই আওয়ামী লীগের দিক থেকেও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে,’ বলেন তিনি।
জোবাইদা নাসরীন অবশ্য মনে করেন সামনে যেহেতু ভারতের নির্বাচন, বিরোধী দলগুলোর ভারতবিরোধিতায় জোর দেয়ার সেটিও একটি কারণ হতে পারে।
‘ভারতের নির্বাচনে বাংলাদেশের সেই অর্থে প্রভাব নেই। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বাতচিতও তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ না।’
‘কিন্তু বিএনপির মধ্যে নরেন্দ্র মোদিবিরোধী ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তাই ভারতের নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে মোদিবিরোধী মনোভাব আরো উস্কে দেয়ার সুযোগটা হয়তো বিরোধীরা নিতে চাইছে। এসব কারণে ভারত ইস্যু রাজনীতির মাঠে সামনে চলে এসেছে,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।
এদিকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যেই ‘বয়কট ইন্ডিয়ান প্রোডাক্টস’ নামে ফেসবুক গ্রুপ খুলে ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন এই প্রচারণার সমর্থকদের একটি অংশ। সেখানে নানা পোস্টে মতামত দিচ্ছেন অসংখ্য মানুষ।
সেখানেই ইরফান আহমেদ নামে একজন লিখেছেন, ‘দেশি পণ্য ক্রয় করে নিয়ে আসলাম। আমি আমার জায়গা থেকে ভারতীয় পণ্য বয়কট করেছি।’
আবার আহমেদ ইমরান নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘মানুষ কই ঘুরবে, কই খাবে, কই চিকিৎসা নিবে এইটা নিয়েও এত যন্ত্রণা?’
‘পৃথিবীর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের দেশ ভারত। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে খুব অল্প খরচেই সেখানে ভ্রমণ করতে পারি। মানুষের সব কিছুতে নাক গলানো বাদ দেন।’
সূত্র : বিবিসি