নিউজ ডেস্ক :
অবশেষে খুলেছে রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত সাংবাদিক ‘অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর’ ধর্ম পরিচয় নিয়ে সৃষ্ট জটের।
তার ছোট বোন জানিয়েছেন, সম্প্রতি তার বড় বোন বৃষ্টি খাতুন ‘অভিশ্রুতি শাস্ত্রী’ নামে ফেসবুক আইডি খুলেছিলেন এবং এই নামেই সাংবাদিকতা করতেন।
অভিশ্রুতি শাস্ত্রী দ্য রিপোর্ট নামে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করতেন। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বেতবাড়ীয়া ইউনিয়নের পশ্চিম বনগ্রাম এলাকায়। পরিবার বলছে, তার নাম বৃষ্টি খাতুন।
রাজধানীর রমনা কালি মন্দিরের সভাপতি উৎপল সাহা সাংবাদিকদের বলেন, প্রায় আট মাস ধরে অভিশ্রুতির সঙ্গে তাদের পরিচয়। এই আট মাসে মেয়েটি তাদের মন্দিরে অনেকবার এসেছে।
এদিকে শুক্রবার (১ মার্চ) বিকেলে অভিশ্রুতির গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের সঙ্গে কথা বলবেন, তাই হন্নে হয়ে নিজের ফোন খুঁজছেন মা বিউটি বেগম। কখনও ফোনের জন্য চিৎকার করে সারা বাড়ি মাতম করে ফিরছেন। ফোন পেলেই মেয়ে বৃষ্টি খাতুনের কাছে ঢাকায় যাবেন। ছোট মেয়ে বর্ষা মাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। প্রতিবেশীরা যেনও শোকে পাথর হয়ে গেছেন। নিহতের মাকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা হারিয়েছেন প্রতিবেশীরাও।
গ্রামের বাড়ি থাকেন মা বিউটি বেগম ও ছোট বোন দশম শ্রেণির ছাত্রী বর্ষা। নিহত সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর বাবা শাবলুল আলম সবুজ রাজধানী ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন।
দরিদ্র বাবার তিনটিই কন্যা সন্তান। বৃষ্টি খাতুন সবার বড়। মেজো মেয়ে শারমিনা সুলতানা ঝর্ণা রাজবাড়ী সরকারি কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ছোট মেয়ে বর্ষা পড়ে দশম শ্রেণিতে। বৃষ্টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়েছেন গ্রামের বিদ্যালয়ে। উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকার ইডেন কলেজে দর্শন শাস্ত্র নিয়ে পড়ছেন। উচ্চ শিক্ষা শেষ করার আগে বিসিএস কোচিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তিনি।
নিহতের ছোট বোন শারমিনা সুলতানা ঝরনা জানায়, বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মায়ের সঙ্গে বৃষ্টির শেষবার মুঠোফোনে কথা হয়। বৃষ্টি সাংবাদিকতা করলেও বাড়ি থেকে মা টাকা পাঠাতেন। বড় বোনের মৃত্যুতে তাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।
ঝরনা আরও জানায়, দুই মাস আগে অভিশ্রুতি সর্বশেষ গ্রামের বাড়ি এসেছিলেন। তবে তার বোন হিন্দু ধর্মে গ্রহণ করেছিলেন এমন প্রশ্নে সে বলে, ‘এটা হতেই পারে না। আমার বোন মনে প্রাণে একজন মুসলিম। সে কখনই নিজ ধর্ম ত্যাগ করেনি। তবে সম্প্রতি তিনি অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে ফেসবুক আইডি খুলেছিলেন এবং ওই নামেই সাংবাদিকতা করতেন।
বেতবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, ওই বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করেন বৃষ্টি। স্বাধীনচেতা ছিল। ছোটবেলা থেকে সে সরকারি বড় চাকরির স্বপ্ন দেখতো। বৃষ্টির ধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয়টি তিনিও অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, মাস দুয়েক আগে ওর সঙ্গে রাজধানীর ফার্মগেটে দেখা ও কথা হয়। তার দাবি ধর্মান্তরের যে কথাটি বলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে মনে করেন তিনি।