আব্দুল মুনতাকিন জুয়েল
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি:
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ইট ভাটা মালিকরা। আইনের প্রতি কোন প্রকার তোয়াক্কা না করে তারা ক্ষমতার জোরে অবৈধ ভাবে ইট ভাটা চালিয়ে যাচ্ছে।
এসব ইটভাটা মালিকরা ইট তৈরীতে ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি পাচারের মহাউৎসব চালাচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উপজেলার ২০টি পয়েন্টের বিভিন্ন এলাকায়অবাধে ভেকু দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি কাটার ফলে ফসলি জমি ডোবায় পরিনত হচ্ছে।
এতে যেমন ফসলি জমির আবাদ পড়েছে হুমকির মুখে ঠিক তেমনি হ্রাস পাচ্ছে ফসলি জমি। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের নূরুলের বিল সাপমারা ইউনিয়নের বাল্যে ও মাল্লা পৌর এলাকার বড় সাতাইল বাতাইল গ্রামের খত্রিপাড়া, ফুলবাড়ি ইউনিয়নের সাপগাছি হাতিয়াদহ, ছাতারপাড়া, শাখাহার ইউনিয়নের কোগারিয়া,রাখালবুরুজ ইউনিয়নের ঘিডাঙ্গা, হরিরামপুর ইউনিয়নের রামপুরা,
ক্রোড়গাছা, কামারদহ ইউনিয়নের চাঁদপাড়াসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি (টপসয়েল) পাচার হচ্ছে। এসব টপসয়েল ব্যবহার হচ্ছে ইট তেরী সহ নানা কাজে।
অভিযোগ উঠেছে, অবৈধ ড্রেজার ও মাটি ব্যবসায়ীরা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ও ভূমি অফিসসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরদের ম্যানেজ করে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
তাই অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার মিলছেনা।উপজেলার রামপুরা গ্রামের রমজান আলী জানান, মাটি পরিবহন কাজে নিয়োজিত মাহিন্দ্র ও ট্রাক্টর চলাচলের জন্য জমির মাঝ দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। মাটি ভর্তি এসব অবৈধ ট্রাক্টর টলির ভারী চাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কাঁচা-পাকা সড়ক উপজেলার বাল্যে গ্রামের ফারুক মিয়া জানান, এলাকার কিছু প্রভাবশালী আইনের তোয়াক্কা না করে এক্সকেভেটর ও ড্রেজার দিয়ে ফসলি জমি ধ্বংস করে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে মাটি বিক্রির রমরমা ব্যবসা। তাছাড়া দালালরা জমির মালিকদের অতিরিক্ত টাকার লোভ দেখিয়ে ফসলি জমির টপসয়েল বা উপরিভাগের মাটি নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটায়।উপজেলা কৃষি অফিসার সৈয়দ রেজা-ই-ংমাহমুদ জানান, টপসয়েলকে ফসলি জমির প্রাণ বলা হয়। এখানে থাকে মাটির জৈব পদার্থ। টপসয়েল কর্তন করা হলে ঐ জমি উর্বর শক্তি হারায় এবং দীর্ঘমেয়াদী ফসল উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়।
এছাড়ারাও মাটি সংগ্রহের জেলা প্রশাসনের অনুমতি তোয়ক্কা করছেনা। আনেক ইট ভাটা বিদ্যালয় সংলগ্ন কিংবা আবাসিক এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে। এতে ওই সব এলাকার ফসলে আনেক প্রভাব পরেছে। স্থানীয় এলাকাবাসী বলছেন ভাটা চলাকালে তাদের আম,কাঠাল,নারিকেল ,কলাসহ নানা ফল ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। আনেক ফল গাছের ফল পাচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ইট ভাটার ধোয়ায় তাদের স্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মাবুদ লিটন বলেন পরিবেশ আইনে পৌর এলাকায় ভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ হলেও তা আমান্য করে আনেক গুলো ভাটা গড়ে উঠেছে। এসব ভাটা মালিকের আনেকেই আইনের তোয়াক্কা করছেনা। ইট পড়াতে কাটের ব্যবহার করছে,যত্রতত্র থেকে উর্বর মাটি কেটে ইট ভাটায় ব্যবহার করছে। এসব ভাটার অনেকেরই নেই পরিবেশের ছাড়পত্র,ভাটার লাইসেন্স। দ্রæত এসব ইট ভাটার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা
গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রাসেল মিয়া বলেন, জেলা প্রশাসকের অনুমতি ব্যতীত কোন ব্যাক্তি জমির শ্রেণী পরিবর্তন কিংম্বা জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি অন্যত্রে বিক্রি করতে পারবেনা। এই নিয়মের বাইরে গিয়ে কেউ জমির মাটি কেটে বিক্রি করেন তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।