ফারুক আজম :
নির্বাচন শেষ হতে না হতেই ঘের দখলের প্রতিযোগিতা শুর কক্সবাজারের চকরিয়ায়। অশান্ত হয়ে উঠেছে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চকরিয়ার চিংড়িজোন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর হতেই এ চিংড়িজোনে শুরু হয়েছে ঘের দখল ও ডাকাতির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।
সর্বশেষ আজ বুধবার ভোররাতে বিশাল একটি চিংড়িঘের দখলে নিতে গিয়ে ব্যাপক গুলি বর্ষণ করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ সময় বাঁধা দিতে গেলে অসংখ্য গুলিতে নিহত হয় ঘের সংলগ্ন বাড়ির সামনে।
খবর পেয়ে আজ দুপুর বারোটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে চকরিয়া থানার একদল পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে- ঘটনাস্থল থেকে গুলিতে নিহতের লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
নিহত মোহাম্মদ হোসেন (৫৬) রামপুর সমবায় কৃষি- উপনিবেশ সমিতির ৬৬৮ নম্বর সদস্য এবং কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়ার আবুল খায়েরের ছেলে। সে দীর্ঘ বছর ধরে রামপুর এলাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছিল।
রামপুর সমবায় কৃষি-উপনিবেশ সমিতির পরিচালক শহীদুল ইসলাম জানান, সাহারবিলের রামপুর মৌজায় ৫হাজার ১শত ১২ একরের বিশাল চিংড়িঘের রয়েছে। তন্মধ্যে কিছু কিছু ঘেরে সমিতির নিয়ন্ত্রণও নেই। দখলে থাকা চিংড়িঘের দখলে নিতে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে চকরিয়ায়র দুই প্রভাবশালী উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর-মেয়রের মদদপুষ্ট চিংড়ি জোনের একাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী মহড়া দিতে থাকে। এ সময় তারা সমিতির সদস্যদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে কয়েকশত রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। তাদের কথামতো বাড়িঘর ছেড়ে চলে না যাওয়ায় আজ ভোররাতে সমিতির সদস্য মোহাম্মদ হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে।
নিহত মোহাম্মদ হোসেনের স্ত্রী রশিদা বেগম জানান- সমিতির অধিভূক্ত সদস্য হিসেবে তাঁর স্বামী মোহাম্মদ হোসেন স্বপরিবারে চিংড়িঘেরের পাশেই বসতি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিলেন দীর্ঘ সাতবছর ধরে। একইভাবে শত শত সদস্য স্ব-পরিবারে এখানে বসবাস করেন। এতদিন ধরে তারা এখানে নিরাপদে বসবাস করলেও নির্বাচনের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে অর্ধশত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বৃষ্টির মতো ছুঁড়া গুলির মুহুর্মূহ শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে আতঙ্কিত হয় সাধারণ মানুষ।
‘মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য এখানে বসবাসকারী সদস্যদের নির্দেশ দিলেও কেউ যাননি। তাই আজ বুধবার ভোররাতে চিংড়িঘের দখলে নিতে চাইলে বাঁধা দিতে যান স্বামী মোহাম্মদ হোসেন। এ সময় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করে।’
একইভাবে গত ৩ দিনে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে পেকুয়া উপজেলার মগনামা,রাজাখালী ও সদরে বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও মগনামার ইউপি চেয়ারম্যানের মদদপুষ্ট লোকেরা। এসমস্ত লোকের হামলায় গুরুতর আহত হয়,সদরের পূর্ব মেহের নামার উলা মিয়ার ছেলে ও ছাত্রলী নেতা ইমরান হোসেন,একই এলাকার শাহাব উদ্দিন,রাজাখালী দশের ঘোনার মৃত নাছিরের ছেলে শাহাদত ও মগনামা মটকাভাঙ্গার ইমরান মাহমুদ রুবেল। এরা সবাই ট্রাক প্রতীক তথা সাবেক এমপি জাফর আলমের সমর্থক ছিল।
এ ব্যাপারে চকরিয়া সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারি পুলিশ সুপার মো. রকীব উর-রাজা বলেন, একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতের বিষয়টি জেনেছি। আমি এবং থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী জানান,খবর পেয়ে রামপুর চিংড়িজোনে পুলিশ গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হবে। নিহতের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’