ঢাকাসোমবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ

ইভ‌টি‌জিং : বর্তমান সম‌য়ের আ‌লো‌চিত যৌন সন্ত্রাস

প্রতিবেদক
Sub Editor
৩০ নভেম্বর ২০২৩, ৭:৪৭ অপরাহ্ণ

Link Copied!

“বোরকা পরা মেয়ে আমায় পাগল করেছে” চট্টগ্রামের এক অভিজাত শপিং মলের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকজন বখাটে যুবক এ গানটি গাইতে লাগল। সে সময় তাদের সামনে দিয়ে নেকাপ ও বোরকা পরা এক যুবতী মেয়ে শপিং মলের দিকে যেতে লাগল, তাদের সামনে আসতেই বখাটে যুবকগুলি গানের আওয়াজ আরো বাড়িয়ে দিল এবং গানের পাশপাশি অভিনয় ও নাচতে লাগল। তখন ক্ষোভে অপমানে যুবতী দাঁড়িয়ে গেল। তখন যুবকদের মধ্যে কেউ কেউ শিষ দিতে লাগল, কেউ কেউ চোখ মারতে লাগল, আবার কেউ কেউ চুমুর অভিনয় করতে লাগল। তখন প্রতিবাদী যুবতী বলতে লাগল তোমাদের কি মা বোন নেই? তখন তারা সমস্বরে বলে উঠল সবাই মা বোন হলে প্রিয়তমা কে হবে? আদরের পাত্র কে হবে? ইত্যাদী ইত্যাদী অনেক কথা শুনিয়ে দিল। তখন ক্ষুব্ধ যুবতী পায়ের জুতা খুলতে চেষ্ঠা করলে বখাটে যুবকগুলি ধর ধর জঙ্গি ধর বলে যুবতীর দিকে তেড়ে গেল, যুবতী ভয়ে শপিং মলে ঢোকে গেল। গণ পিঠুনির ভয়ে যুবকগুলি শপিংমলে ঢোকেনি। তবে তারা সেই যুবতীর জন্য বাইরে অপেক্ষা করতে লাগল। তখন বখাটে যুবকদের একজন বলতে লাগল শালিনীর তেজ কত? গণধর্ষন করে তার তেজটাকে ঠান্ডা করে দেয়া দরকার। তখন সবাই সমস্বরে ঠিক ঠিক বলে চিৎকার দিয়ে উঠল। যুবতী তখন ভয়ে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল। হয়ত ভূলে এ পথে আবার আসলে তাকে সেই প্রতিশোধের গণধর্ষনের শিকার হতে হতো। সবচেয়ে বড় আশ্চর্যের কথা হল আশে পাশে অসংখ্য মানুষ থাকা সত্ত্বেও কেউ প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসেনি। কি বিচিত্র দেশ !!

এ হল আমাদের দেশের বর্তমানে রাস্তা ঘাট সহ শপিংমলের বাস্তব অবস্থা। দেশের সর্বত্র আজ ইভটিজিংএ শিকার হচ্ছে নারীরা। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র অঙ্গনগুলোও এ থেকে মুক্ত নয়। স্কুল ও কলেজের সামনে মজনু সেজে আজকাল সর্বত্র বখাটেদের উৎপাত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বখাটেদের উৎপাতে নারীদের, যুবতীদের বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আর রাজনৈতিক মদদপুষ্ট বখাটেদের কারণে এ উৎপাত আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। যা আতংকিত করেছে দেশের সচেতন মানুষদের। বর্তমান সময়ে এটি আমাদের দেশের মারাত্বক সামাজিক ব্যাধিতে পরিনত হয়েছে। ইভটিজিং এখন ফ্যান্কেস্টাইনের দানবে পরিণত হয়েছে। ইভটিজিং নামক এ ফ্যান্কেস্টাইনের দানবের শিকারে ক্ষত বিক্ষত আমাদের প্রিয় স্বদেশ। অকালে কেড়ে নিচ্ছে সম্ভবনাময়ী যুবতীদের প্রাণ, প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে মা-বাবা, ভাই, শিক্ষক ও আত্বীয় স্বজন। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেও তাদের দমানো যাচ্ছে না। তাই এখনই প্রয়োজন একে কঠোর হস্তে দমনের তা না হলে আমাদের প্রিয় এ স্বদেশ নারী সমাজের জন্য শ্মশানে পরিনত হবে। এটি এখন টিজিং শব্দটির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বর্তমানে এটি ভয়ংকর যৌন সন্ত্রাসে পরিনত হয়েছে। আর ইভটিজিং পরিনত হচ্ছে বখাটে যুবকদের বিনোদন বা যৌন আনন্দের বস্তু হিসাবে।

* পরিস্থিতির ভয়াবহতা ঃ-

দেশে ইভটিজিং এক ভয়ংকর যৌন সন্ত্রাসে পরিনত হয়েছে। রুপ নিয়েছে মহামারীর। দৈনিক আমার দেশে এ প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় – ১০ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের ৯০ শতাংশই ইভটিজিংয়ের শিকজার হচ্ছে। তারা নির্বিঘ্নে স্কুল কলেজে বা ইউনিভার্সিটিতে যেতে পারছে না। যেতে পারছে না অন্য কোথাও। ঘরে বাইরে বেরোনো মাত্র প্রেমের ডালি নিয়ে হাজির হচ্ছে কুলাঙ্গাররা। নানা ইঙ্গিত করছে, গান গাইছে, বাজে প্রস্তাব দিচ্ছে, ইন্টারনেট অথবা আধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে ছবিকে বিভিন্ন বিকৃত করে অথবা নগ্ন ছবির সাথে সংযোজন করে এবং বিভিন্ন পুরুষের ছবির সাথে যোগ করে দিয়ে ব্ল্যাকমেইলের অস্ত্র বানানো হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে ক্ষোভে দুঃখে অভিমানে আত্মহননের পথ বেঁচে নিচ্ছে নারীরা। নারায়গঞ্জের চারুকলার ছাত্রী সিমির পথ ধরে এ মহা মিছিলে আরো যোগ দিয়েছেন রিমি, মাহিনা, ফাহিমা, তৃষা, রিনি, পিংকি এবং ইলোরার মতো সম্ভবনাময় অনেক তরুনী। কোথাও কোথাও কথিত প্রেমিকের হাতে মারা যাচ্ছে কিশোরীরা। ২১ অক্টোবর ২০১০ সালে চট্টগ্রামে মারা গেছে মিধাত নামের এক তরুনী। তার সঙ্গে ঘাতকের নাকি বাল্য প্রেম ছিল এবং সে নাকি ইদানীং প্রেম অস্বীকার করছিল, এজন্যই প্রেমিকাকে সোজা খুন করেছে প্রেমিক-এতটাই ভালবাসা ছিল ওই ঘাতকের বুক জুড়ে! সব মিলিয়ে ইভটিজিংয়ের যৌন সন্ত্রাস এমন এক ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, পিতা মাতারা অল্প বয়সেই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করছেন। ফলে ব্যাপক হারে বাড়ছে বাল্য বিবাহ। অন্যদিকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ জানাতে গিয়েও প্রান হারাতে হচ্ছে। নাটোরের লোকমানপুর কলেজের প্রভাষক মিজানুর রশিদ প্রতিবাদ করায় ইভটিজিং সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছে। গত অক্টোবর দু’জন সন্ত্রাসী তাকে পিঠিয়ে শরীর থেতলে দিয়েছে। তার চোখে লোহার রড ঢুকিয়েছে। ১০ দিন বিএসএমইউ হাসপাতালে লাইফ সার্পোটে রাখার পর তার মৃত্যু হয়। ইভটিজিং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সোচ্চার ছিলেন প্রভাষক মিজানুর রশিদ। দু’দিন আগেও তিনি ওই যুবক দু’জনকে তিরস্কার করেছিলেন। কিন্তু নিজেদের শোধরানোর পরিবর্তে ওরা প্রতিবাদী শিক্ষককে হত্যা করেছে। নাটোরের পর এবার ফরিদপুরে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বখাটেদের হাতে নিহত হয়েছে এক স্কুল ছাত্রীর মা চাঁপা রানী ভৌমিক। মোটর সাইকেলের চাকায় পিষে মেরেছে বখাটে যুবক দেবশীষ সাহা রনি। এ রক্তের দাগ শুকাতে না শুকাতেই ঢাকায় নাতীকে ইভটিজিং এর প্রতিবাদ করার কারণে নাতীর সামনে ৭০ বছরের বৃদ্ধ নানাকে গলাটিপে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেছে বখাটেরা। এভাবে হত্যার মিছিল ভারী হতে লাগল। পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত তিন বছরে ইভটিজিংয়ের ঘটনায় আত্মহত্যা করেছে ১৫০ জন। গত বছর ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে ৩৩ নারী আত্মহত্যা করেছে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৮ অভিভাবক খুন হয়েছেন এবং বখাটেদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন ১৮ তরুণী। র্যাবের হিসাব মতে, গত এক বছরেই ইভটিজিংয়ের শিকার হয়েছে ১৩৮ কিশোরী ও তরুণী এবং গ্রেফতার হয়েছে ১২৬ জন। তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারণে ৪২ নারী হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ২০১০ সালে দেশে ইভটিজিংয়ের ঘটনায় খুন-খারাবি, অভিভাবকের ওপর হামলা ও তরুণীদের হাত-পা কেটে নেয়ার মতো লোমহর্ষক ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায়। প্রতিবাদকারীরাও রোষাণলে পড়েন। বখাটেদের হামলায় নাটোরের কলেজ শিক্ষক মিজানুর রহমান এবং ফরিদপুরে এক কিশোরীর মা চাঁপা রানী ভৌমিকের মৃত্যু তোলপাড় সৃষ্টি করে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের রির্পোটে বলা হয়- গত ১১ মাসে ইভটিজিংয়ের কারণে ক্ষোভে দুঃখে অপমানে ২৭ জন নারী আত্মহত্যা বা হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বখাটেদের হাতে প্রান হারিয়েছে ১১ জন প্রতিবাদী পুরুষ। ফরিদপুরের চাঁপারানী হত্যাকান্ডের খবর শেষ হতে না হতেই সিরাজগঞ্জে ইভটিজিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে রুপালী রানী বরাতি টুনি নামক আরেক ছাত্রীর নিহত বা আত্মহননের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া চাঁদপুরে ইভটিজিংয়ে প্রতিবাদ করায় স্কুল শিক্ষিকাকে অপহরণ, বেগম গঞ্জে ছাত্রীর বাড়িতে বখাটেদের হামলা ও যশোরে স্কুল ছাত্রীর গায়ে মোটর বাইক তুলে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ইভটিজিং নামক এ যৌন সন্ত্রাসে শুধু ছাত্র বা যুব সমাজ জড়িয়ে পড়ছে তা নয় অনেক ক্ষেত্রে জাতির কান্ডারী শিক্ষকরাও এ নোংরা কাজে জড়িয়ে পড়ছে। ভ্রাম্যমান আদালত এ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য বখাটে যুবকদের সাথে অনেক শিক্ষককেও কারাদন্ড প্রদান করেছে। গত বছর অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় এক ছাত্রীকে উক্ত্যক্ত করার অপরাধে ইউনিভার্সিটি রেসিডেন্সিয়াল স্কুলেএন্ড কলেজের এক প্রভাষককে ১ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। এছাড়া অধিকাংশ ইভটিজিংয়ের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন সরকারের যুব ও ছাত্র সংগঠন জড়িত বলে মিডিয়ায় প্রকাশ পাচ্ছে। ফলে অতি সহজে ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে বখাটেরা পার পেয়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে ইভটিজিং ক্রমেই ভয়াবহ ক্যান্সারের মতো সমাজের রন্ধে রন্ধে ছড়িয়ে পড়ছে। এ ব্যাধি নিরাময়ে সরকারি ভাবে জোরালো কোনো উদ্যোগ না থাকায় কিশোর কিশোরীসহ সব শ্রেনীর নারীরা আজ নিদারুন নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। প্রতিদিনিই দেশের বিভিন্ন স্থানে ইভটিজিং হচ্ছে। অনেকে লজ্জায় অপমানে আত্মহত্যা করছে, আবার অনেকে সন্ত্রাসী -বখাটেদের ভয়ে গৃহবন্দী হয়ে দিস কাটাচ্ছে। কিশোরীরা নির্বিঘ্নে স্কুল কলেজেও যেতে পারছে না। এ অবস্থায় অবসান না হলে দেশ ভয়াবহ এক পরিনতির দিকে চেলে যাবে বলে আশংকা করছেন বিশিষ্টজনেরা।

* ইভটিজিংয়ের এ ভয়াবহতার কারণ ঃ-

১. সাংস্কৃতিক বিপর্যয় ঃ সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের কারণে মূলত ইভটিজিংয়ের মতো যৌন সন্ত্রাসের জন্ম নিচ্ছে। মূলত পর্ণো আগ্রাসন, স্যাটেলাইট আগ্রাসন ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের ফলশ্রুতিতে সমাজে নানা অপরাধের উৎপত্তি হচ্ছে। আমেরিকায় এক গবেষনায় দেখা যায়-৮৬ শতাংশ ধর্ষনকারী বা অপরাধকারী স্বীকার করেছে যে, তারা নিয়মিত বিভিন্ন চ্যানেল, অশ্লিল রচনা, চিত্র ইত্যাদী ব্যবহার করে এবং ৫৭ শতাংশ স্বীকার করেছে তারা ধর্ষনের বা অনুরুপ যৌন অপরাধের সময় চ্যানেলে প্রচারিত বিভিন্ন ছবির অনুকরণে করে থাকে। পৃথিবীর অপরাধ বিশেষহজ্ঞদের এক কনফারেন্সে বলা হয় য়ে, পৃথিবীর সকল অপরাধ সংস্কৃতির মূলে টিভি চ্যানেল গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন-অনেক চলচ্চিত্র ও নাটকে দেখানো হয় মেয়েদের হয়রানীর করার মাধ্যমে প্রেমের শুরু -এটি একটি মারাত্মক ক্ষতিকর প্রবণতা। এর মাধ্যমে ছেলেরা ইভটিজিং করার প্রাথমিক অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকে। নাটক বা চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু নিয়ে ভাবার সময় এসেছে আমাদের এখন।

২. রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতা ঃ দেশের অধিকাংশ ইভটিজিং হয়ে থাকে ক্ষমতাসীন যুব ও ছাত্র সংগঠনের দ্বারা। বর্তমানে যুব ও ছাত্র সংগঠনগুলো চাঁদাবাজী, টেন্ডরবাজীসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে এবং তাদেরই অবসরের বিনোদনে পরিণত হয়েছে ইভটিজিং বা যৌন সন্ত্রাস। এক্ষেত্রে বিএনপির চেয়ে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে এ তৎপরতার ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ইভটিজিংয়ের এ অপ্রতিরোধ্যতা তারই বাস্তব প্রমাণ। ৭৩’ এর ২১ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাতে শহীদ মিনারে ফুল দিতে এসে ছাত্রলীগের বীর পুরুষদের দ্বারা শামসুন্নাহার ও রোকেয়া হলের ছাত্রীরা লাঞ্জনার শিকার হন, গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারীতে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে ছাত্রী লাঞ্জনা, ২০০০ সালে ১ লা বৈশাখের মধ্য রাতে রাজু স্মৃতি ভাস্করের সামনে বাঁধন নামক এক মেয়ের বস্ত্র হরন, গত বছরের ১লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে শতাধিক ছাত্রী লাঞ্জনা, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের ধর্ষনের সেঞ্চুরী পালন আর সাম্প্রতিক সময়ের ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজে ছাত্রী লাঞ্জনার কোনটির এ পর্যন্ত তদন্ত ও শাস্তি হয় নাই। তাই রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতায় ইভটিজিং সহ নানা যৌন সন্ত্রাস প্রতিযোগিতার লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলছে।

৩. পারিবারিক আশ্রয় প্রশয় ঃ পারিবারিক আশ্রয় প্রশ্রয় ছেলেমেয়েদের বিপদগামীতার প্রধান কারণ। জেনারেশন গ্যাপের কারণে পিতা-মাতা ও ছেলে মেয়েদের মধ্যে একটা গ্যাপ তৈরি হয়। এ গ্যাপটিই সন্তানদের বিপতে পরিচালনা করে। অন্যান্য অপরাধের মতো বখাটেরা ও পারিবারিক আশ্রয় প্রশ্রয় পেয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে বখাটের ‍বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ আনলে এই শ্রেনীর বাবা মা সন্তানের পক্ষ নিয়ে অভিযোগ কারীর বিরুদ্ধে এক হাত দেখে নিতে উৎসাহিত ও প্ররোচিত করেন।

৪. পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা ঃ আমাদের দেশে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ইভটিজিংকে সাধারণ বিষয় হিসাবে মেনে নেয়া হতো। সবাই ভাবত ছেলেরা এমনটাই করতেই পারে। কিন্তু সেই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। মেয়েরা এখন সচেতন হচ্ছে। তারা প্রতিবাদ করছে। পুরুষদের অন্যায় কর্তৃত্ব মানছে না। উক্ত্যক্তকারীরা এটি মেনে নিতে পারছে না। নিজেদের পরাজিত মনে করছে। ফলে তারা আরও বেশি ভয়ানক হয়ে উঠছে।

৫. বেকারত্ব ঃ “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা” এ অলস মাথা ওয়ালারাই সমাজে নানা সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। বেকারত্বের কারণেিই এ অলস মাথাগুলোর জন্ম হচ্ছে সমাজে। স্বাধীনতার পর থেকেই বেকারত্ব দূরীকরণে কোন সরকারই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। শুধু মাত্র দলবাজি, বিরোধীদের দমন, দলীয় করণ, দূর্নীতি, রাজনৈতিক দূবৃত্তায়নসহ নানা অবাজে সময় ব্যয় করছে। ফলে বেকারত্ব দেশে হু হু করে বেড়েই চলছে। শিক্ষিত বেকারদের সংখ্যাও বাড়ছে ব্যাপকহারে। আর বেকার যুবকরাই ইভটিজিং সহ সমাজে নানা অপরাধের জন্ম দিচ্ছে। এছাড়া সামাজিক অস্থিরতা, সহিংসতা, সামাজিক অবক্ষয়, বিনোদনের জন্য ব্যবস্থা না থাকা, মাদকাসক্ত ইত্যাদীসহ নানা কারণে সমাজে ইভটিজিংয়ের ভয়াবহতা ব্যাপক বিস্তার ঘটছে।

* ইভটিজিং প্রতিরোধে করনীয় ঃ

১. ইভটিজিং প্রতিরোধ করার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন ইভটিজিং সহ নানা যৌন সন্ত্রাসে উদ্বৃদ্ধকারী উপকরণ সমূহ নিষিদ্ধ করতে হবে। সাংস্কৃতিক বিপর্যয় রোধ করে সুস্থ ও নির্মল দেশীয় সাংস্কৃতিক চর্চায় দেশের রাষ্ট্রযন্ত্রকে পরিচালিত করতে হবে। সুস্থ ও নির্মল চরচ্চিত্র জগৎই পারে যুব সমাজকে এ অভিশপ্ত কাজ থেকে ফেরাতে।

২. অপরাধের রাজনৈতিক দূবৃত্তায়ন বন্ধ করতে হবে। তা না হলে আইন আদালত অকার্যকর দিয়ে কিছুই হবে না। রাজনীতিতে নীতি ও নৈতিকতার চর্চা বাড়াতে হবে। রাজনীতিতে ছাত্র ও যুব সমাজের অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

৩. ধর্মীয় বিধি বিধান পালনে যত্নবান হতে হবে। রাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ একমাত্র ধর্মীয় বিধি বিধান চর্চায় ছাত্র ও যুব সমাজের সকল ধরণের অবক্ষয় নির্মূল সম্ভব।

৪. পারিবারিক আশ্রয় প্রশ্রয় বন্ধ না হলে এ অপরাধ কর্মকান্ড কখনও বন্ধ হবে না। একমাত্র মা-বাবার স্নেহ মমতায় পারে সন্তনাকেই সকল পাপাচার থেকে ফেরাতে। সেক্ষেত্রে অতিআদর বা অতি শাসন কোনটাই কাম্য নয়।

৫. পুরুষতান্ত্রিক মন মানসিকতার পরিবর্তন ঃ পুরুষতান্ত্রিক মন মানসিকতা ঝেড়ে ফেলতে হবে। দেশের উন্নয়নের অর্ধেক শক্তি নারী জাতিকে অবহেলা করে কিছু করা যাবে না। নারীদের সম্মান ও শ্রদ্ধা দেখানোর প্রবনতা পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে সৃষ্টি করতে হবে। বেকারত্ব দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৫. আইনগত পদক্ষেপ ঃ আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। আইন আদালতকে দলীয়করণ বন্ধ করতে হবে। বিচারকদের প্রভাবমুক্ত থেকে আইনের ভিত্তিতেই রায় দান করতে হবে। ইভটিজিং যুব সমাজের এক মানসিক ব্যাধি। এ ব্যাধি নির্মূলে মনো বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং নারী পুরুষদের সমঅধিকার ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এভাবেই নারী পুরুষের কর্মতৎপরতায় সৃষ্টিশীল কর্মযজ্ঞে অচিরেই গড়ে উঠবে সোনার বাংলা
লেখক: মুহাম্মদ ছানাউল্লাহ
সাংবা‌দিক, কলা‌মিস্ট ও ইউ‌টিউভার
sanaullahcoxs62@gmail.com

225 Views

আরও পড়ুন

আইডিইবির ৫৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আধুনগর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের র‌্যালি ও আলোচনা সভা

দোয়ারাবাজারে এফআইভিডিবি’র স্বাস্থ্য সামগ্রী বিতরণ

বোয়ালখালীর নব যোগদানকৃত শিক্ষা অফিসার হারুন উর রশীদকে বরণ

জামালপুরে মৃত আইনজীবী হলেন অতিরিক্ত জিপি

তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদ্রাসা, সাইনবোর্ড শাখার বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন

সাইফুল ইসলামের কবিতা : শীতের আমেজ

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ইসলামি বক্তা আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

পাবনার হেমায়েতপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ : নিহত ১

কাপাসিয়ায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপির বিশাল শোভাযাত্রার আয়োজন

কাপাসিয়ায় ইসলাম শিক্ষা শিক্ষক পরিষদের উদ্যোগে সিরাতুন্নবী উপলক্ষে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন

কক্সবাজারের ঈদগাহতে ফুলকুঁড়ি আসরের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন

জবিস্থ শরীয়তপুর জেলা ছাত্রকল্যাণের নেতৃত্বে সৌরভ – মনির