ঢাকাসোমবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ

ইহুদী সম্প্রদায় : নিপী‌ড়িত থে‌কে নিপীড়‌কের নেতৃ‌ত্বে!!

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
২৭ নভেম্বর ২০২৩, ৬:৫৯ অপরাহ্ণ

Link Copied!

সাম্প্রতিক সম‌য়ে গাজায় বর্বর হত‌্যাকান্ড০০ ও গাজাকে ধ্বংস স্তু‌পে প‌রিণত কর‌তে ইসরাঈল যে বর্বরতা চালা‌চ্ছে তা ই‌তিহাসর সকল বর্বরতা‌কে হা‌র মা‌নি‌য়ে‌ছে। নির্বিচা‌রে নারী শিশু হত‌্যাযজ্ঞ, নিরীহ নাগ‌রিক হত‌্যা, হাসপাতা‌ল, স্কুল, মসজিদ, শরনার্থী‌শি‌বির,আশ্রয় শি‌বি‌রে ‌নি‌ষিদ্ধ ফসফরাস বোমা মে‌রে ই‌তিহা‌সের সব‌চে‌য়ে বর্বরতম যুদ্ধাপরাধের ভূ‌মিকায় অবতীর্ণ হ‌য়ে‌ছে। তা‌দের এ বর্বরতায় সা‌র্বিক সা‌র্পোট দি‌চ্ছে, তথাক‌থিত পৃ‌থিবীর মোড়ল সাম্রাজ‌্যবাদী আ‌মে‌রিকা, বৃট্রেনসহ ইউ‌রোপীয় ইউ‌নিয়ন। দি‌নের দি‌নের পর গাজায় তা‌দের এ বর্বরতা গোটা পৃ‌থিবীর শা‌ন্তি‌ প্রিয় অ‌ধিবাসী‌দের হতবাক ক‌রে‌ছে। গোটা পৃ‌থিবীবাসী প্রতিবাদ ‌বিক্ষো‌ভে ফে‌টে প‌ড়ে‌ছে, এমন‌কি ইসরাঈ‌ল, আ‌মে‌রিকা ও ইউ‌রো‌পের নাগ‌রিকরাও প্রতিবাদ জানা‌চ্ছে এ বর্বরতায়। ‌কিন্তু হা‌য়েনা‌দের হুশ ফির‌ছে না, তারা গাজা‌ ও হামাস কে ধ্বংস না করে যুদ্ধ থামা‌বে না। হাজার হাজার ফি‌লি‌স্তি‌নি অসহায় শিশু‌দের নির্জীব লা‌শের সা‌রি, ইউ‌কিউ‌বেট‌রে অক্সি‌জে‌নের অভা‌বে অপরিনত শিশু‌দের কান্নার রুল পৃ‌থিবীর আকা‌শে বাতা‌সে ধ্ব‌নিত হ‌চ্ছে, সে‌টি দে‌খে পৃ‌থিবীর মানবতাবাদী মানুষ থে‌কে শুরু করে আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কপ্পন সৃ‌ষ্টি হ‌লেও অ‌ভিশপ্ত ইসরাঈ‌লি‌দের বর্বরতা থে‌মে নেই, তা‌দের এ বর্বরতায় বিশ্ব নবীর সেই হাদীসটি স্মরণ ক‌রি‌য়ে দি‌চ্ছে। হাদী‌সে রাসুল (সা:) বলেছেন-কিয়ামত সংগঠিত হবে না যে পর্যন্ত না তোমরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এমনকি কোন ইহুদী পাথরের আড়ালে আত্মগোপন করে থাকলে,পাথর বলবে, হে মুসলিম আমার পেছনে ইহুদী রয়েছে,তাকে হত্যা কর।(সহীহ বুখারি পঞ্চম খন্ড হাদীস নং-২৭২৫) এটি হলো ভবিষ্যতে ইহুদী সম্প্রদায়ের করুণ পরিণতির বিবরণ। যা তাদের অপকর্মের ফল হিসাবে প্রাপ্ত হবে। বর্তমান ইহুদী বা ইসরাঈলী‌দের মানবতা বিধ্বংসী কমকান্ড সম্পর্কে রাসুল (সা:) অনেক আগেই আমাদের সর্তক করেছেন। পবিত্র কোরআন শরীফে ইহুদী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ইহুদী সম্প্রদায় পৃথিবীর ইতিহাসে একটি পুরাতন ও সম্মানিয় সম্প্রদায় ছিল। যাদের কাছে আল্লাহর অসংখ্য নবী এবং রাসুলের আগমন হয়েছে। যাদের জন্য ফোরাত নদীর মাঝখানে রাস্তা তৈরি হয়েছিল, যাদের জন্য মরুর বুকে পানির ঝরনা প্রবাহিত হয়েছিল, যাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে মান্না ও সালওয়া নামক আহার পাঠানো হতো। সেই সম্মানিত ইহুদী সম্প্রদায় তাদের অপকর্মের কারণে এক সময় পৃথিবীর সবচেয়ে নিগৃহিত সম্প্রদায়ে পরিণত হয়েছিল।যাদের আশ্রয়ের কোন ঠিকানা পর্যন্ত ছিল না। আজ সেই নিপীড়িত সম্প্রদায় বর্তমানে পৃথিবীর সুপার পাওয়ার হয়ে পৃথিবীর কুখ্যাত নিপীড়কের ভূমিকা পালন করছে। পৃথিবী ব্যাপী মানবতা ধ্বংস, মানবাধিকার লংঘন, যুদ্ধ, সংঘাত এবং পৃথিবীর সমস্ত অপকর্মের পেছনে আজ ইহুদীদের কালো হাত রয়েছে। একটা কথা প্রচ‌লিত র‌য়ে‌ছে, সাগ‌রের গভী‌রে য‌দি দু‌টি মাছও ঝগড়ায় লিপ্ত হয় তার পেছ‌নেও ইহুদী‌দের কোন কোন হাত র‌য়ে‌ছে। এ‌দের সর্বনাশা ষড়যন্ত্র এরকম সর্বব‌্যাপী বিস্তৃত। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের ধ্বংস সাধনে তারা সদা তৎপর। তা‌দের সকল প্ল‌্যান প‌রিকল্পনা মুসলিম‌দের ধ্বংস সাধ‌নে নি‌য়ো‌জিত। তাই‌তো প‌বিত্র কোরআন শরী‌ফে ইহুদী জা‌তি‌কে মুস‌লিম‌দের সব‌চে‌য়ে বড় শক্রু ব‌লে অ‌বি‌হিত করা হ‌য়ে‌ছে।

ইহুদি সম্প্রদায় বা জুইশ কমিউনিটির ইতিহাস প্রায় ৩০০০ হাজার বছরের পুরনো। পৃথিবীর ইতিহাস টেনে আনলে দেখা যায়, ইহুদিরা হলো সবচেয়ে অত্যাচারিত সম্প্রদায়, যাদের উপর শুধু বছরের পর বছর, শতশত বছর ধরে অত্যাচার করা হয়েছে। একটি নির্যাতিত ও অত্যাচারিত সম্প্রদায় কিভাবে নিজেরাই অত্যাচারী হয়ে উঠল সে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইহুদী সম্প্রদায়ের ইতিহাস:

তিন হাজার বছর আগে ইহুদি সম্প্রদায়ের যাত্রা শুরু হয়। ইহুদীধর্ম পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীনতম ধর্ম যা এখনো অনেক মানুষ পালন করছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাঈলদের আদি নিবাস ছিল। তবে তারা এখন যে জায়গা চিহ্নিত করছে তা নিয়ে বিতর্ক আছে। আল্লার নবী মুসা (আঃ) বা মোজেস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই সম্প্রদায়ের সবচেয়ে সুন্দর সময় গিয়েছে খৃষ্টপূর্ব এক হাজার বছর আগে (হজরত) সম্রাট দাওদ (আঃ) বা ডেভিডের সময়। দাবি করা হয় বর্তমান সময়ের লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান ও মিশরের বড় অংশই ছিল তখনকার কিংডম অব ইসরাঈলের অংশ। ডেভিডের ছেলে (হজরত) সলোমন বা সোলাইমান (আঃ) এর সময়ও তাদের অবস্থা ভালো ছিল। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর এ-জাতি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এ-সময় আসিরিয়ানরা ধীরে ধীরে এই অঞ্চলে ঢুকে পড়ে ও দখল করে নেয়। এরপর বিভিন্ন সময় ব্যাবিলনিয়ান, পার্সিয়ান, হেলেনেষ্টিক, রোমান, বাইজেনটাইন, অটোম্যান, বৃটিশ শাসনসহ বিভিন্ন পর্যায় পাড়ি দেয় এই অঞ্চল। আর এর প্রায় অনেকটা সময় জুড়েই ইহুদিদের তাড়া খেতে হয়।

ঈজিপশিয়ান ফারাওদের (কোরানে, ফেরাউন-মুসা আঃ এর ঘটনা) সময় থেকে শুরু করে জার্মানির হিটলারের সময় পর্যন্ত তাদের বিতাড়িত হতে হয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে। তবে এখন যেমন ইহুদিদের সাথে মুসলমানদের সংঘাত চলছে এক সময় তা ছিল কৃশ্চিয়ান ও ইহুদি সংঘাত। স্পেনে মুসলমানদের রাজত্বে ইহুদিরা খুবই ভালো ছিল। তারা এ-সময় তাদের বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা করার ব্যাপক সুযোগ পায়। মুসলমানদের এই উদারতার কথা ফুটে উঠেছে ইহুদিদের লেখা ইতিহাস বইয়ের পাতায়।

শুরু থেকেই বিভিন্ন সমাজে ইহুদিদের ঘৃণিত, অবহেলিত ও খারাপভাবে দেখা হতো। প্রায় প্রতিটি জায়গায় তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকতো। উগ্র কৃশ্চিয়ানরা তাদের কখনোই সহ্য করতে পারেনি। এদের অনেকেই যিশুর হত্যাকারী হিসেবে ইহুদিদের চিত্রিত করেছে। অনেকেই তাদের অভিশপ্ত জাতি মনে করে।

ইহুদিরা যেহেতু তাড়া খেত বেশী সেহেতু তারা যাযাবর জীবনে স্থায়ী কাজের চেয়ে বুদ্ধিনির্ভর ও কম শারীরিক পরিশ্রমের কাজ বেছে নেয়। ব্যবসার প্রতি কৃশ্চিয়ানদের অনিহা তাদের সামনে বড় সুযোগ এনে দেয়। তাদের বসবাসের পরিবেশ ছিল খুব খারাপ। ভালো খাবার দাবারও ছিল না। ফলে তারা এমন কাজে আত্মনিয়োগ করে যেখানে বুদ্ধির চর্চা বেশী। ব্যবসা, টাকাপয়সা, লেনদেন, দালালি – এসব কাজে তারা এগিয়ে যায় বেচে থাকার সহজাত প্রবৃত্তির জন্য।

ইহুদি সম্প্রদায়কে ইউরোপে কিভাবে দেখা হতো তার বড় উদাহরণ হতে পারে উইলিয়াম শেকসপিয়ারের “ মার্চেন্ট অব ভেনিস “ নাটকের শাইলক চরিত্রটি। যে শরীরের মাংশ কেটে তার পাওনা আদায়ের দাবী জানায়। সম্পূর্ণ ভিন্ন সমাজের প্রেক্ষাপটে নিয়ে লেখা রাশিয়ান লেখক নিকোলাই গোগল তার তারাস বুলবা উপন্যাসে আরেক ইহুদি সুযোগ সন্ধানী চরিত্র ইয়ানকেল-কে সৃষ্টি করে দেখিয়েছেন তাদের সম্পর্কে তখনকার শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবিদের মনোভাব।

ইংল্যাণ্ড, ফ্রান্স, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়মিত তাড়া খেয়ে তাড়া মিডল ইস্টে ঢুকতে থাকে। এর মধ্যে ইউরোপিয়ান একটি চালও ছিলো। কৃশ্চিয়ানরা যেহেতু ইহুদিদের পছন্দ করতো না তাই তারাও চাচ্ছিল মুসলমানদের এলাকায় তাদের ঢুকিয়ে দিতে। আর প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে যাযাবর জীবনের অবসানও চাচ্ছিলো ইহুদিরা।

এতোগুলো বছর তাদের ঐক্য ধরে রাখার বড় শক্তি ছিল ধর্ম। বিশ্বের বহু দেশে ছড়িয়ে পড়লেও ইহুদি সম্প্রদায়ের সব সময় স্বপ্ন ছিল তারা তাদের নিজ দেশ ইসরাঈলে ফিরে যাবে যদিও তখনো এর কোনো ভৌগলিক অস্তিত্ব ছিল না। ইসরাঈল তাদের মাতৃভূমি ও ধর্মভূমিই শুধু নয়, তাদের স্বপ্ন ভূমিও বটে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম স্বপ্ন দেখেছে ইসরাঈল নামের দেশের। “নেক্সট ইয়ার ইন জেরুজালেম” – এই শ্লোগান মাথায় রেখে বহু ইহুদি মারা গিয়েছে। ইসরাঈলের জন্য তারা সাধ্যমতো দান করেছে, ধর্ম ও বিশ্বাস দিয়ে নিজেদের এক করে রেখেছে। সংখ্যায় অত্যন্ত কম হওয়ার পরও ক্ষুরধার বুদ্ধি, কৌশল ও মেধার বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে নিজেদের বসিয়েছে।

কোনো মেধাবী ইহুদী ছাত্র বা ছাত্রীর পড়াশুনার জন্য চিন্তা করতে হয় না। এখনো বহু ওয়েব সাইটে এদের জন্য দান গ্রহণ করা হয়। তারা প্রধানতঃ মাতৃতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখে। কমিউনিটির কেউ বিপদে পড়লে তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এমন অনেক ওয়েব সাইট আছে যেখানে ইহুদি পরিবারগুলোর বংশলতিকা বা ফ্যামিলি ট্রি তৈরি করতে সাহায্য করে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধাওয়া খেয়ে ইহুদিরা বহু দেশে ছড়িয়ে পড়লেও তাদের স্বপ্নভূমির কথা কখনো ভোলোনি। এক্ষেত্রে তারা কট্টর ও চরমপন্থি। কারণ মিডল ইস্টের কোনো এক জায়গায় তাদের জন্মভূমি ছিলো তিন হাজার বছর আগে সেই যুক্তিতে একটি জায়গার দখল নেয়া একটি অবাস্তব বিষয়। কেননা এর কোনো সুনির্দিষ্ট ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। কিন্তু ইহুদিরা তা তৈরি করে নিয়েছে। তারা বিশ্ব শক্তিকে তাদের পক্ষে কাজে লাগিয়েছে।

ইরাক যখন কুয়েত দখল করে নেয় তখন সাদ্দাম হোসেন বলেছিলেন, কুয়েত ঐতিহাসিকভাবে ইরাকের অংশ। কিন্তু সে যুক্তি বাতিল হলেও ইহুদিদের যুক্তি বাতিল হয়নি। এ-কারণে ইসরাঈল রাষ্ট্রটির জন্ম হলো ১৯৪৮ সালে তখন একসঙ্গে আরব দেশগুলো আক্রমন চালিয়ে চরমভাবে ব্যর্থ হয়।

বর্তমান বিশ্বে ইহুদি সম্প্রদায়ের লোক সংখ্যা দেড় কোটির কিছু বেশী। তা-ও তারা ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন দেশে। যেমন আমেরিকায় আছে প্রায় ৬১ লাখ, ইসরাঈলে আছে প্রায় ৫২ লাখ, কানাডায় আছে প্রায় ৪ লাখ, বৃটেনে প্রায় ৩ লাখসহ ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, অষ্ট্রেলিয়া, পোল্যাণ্ড, রাশিয়া, সাউথ আফ্রিকা, ইউক্রেন, ওয়েস্টার্ণ ইউরোপ, ইথিওপিয়া প্রভৃতি দেশে।

ইহুদীর সম্প্রদায়ের অবদান:

জনসংখ্যার দিক দিয়ে ঢাকা শহরের কাছাকাছি হলেও বিশ্বে ইহুদি সম্প্রদায় থেকে যুগে যুগে বেরিয়ে এসেছে অসংখ্য প্রতিভাবান ব্যক্তি। প্রধান ধর্মগুলোর পর পৃথিবীতে যে মতবাদটি সবচেয়ে প্রভাব ফেলেছে সেই কমিউনিজমের স্বপ্নদ্রষ্টা কার্ল মার্কস ইহুদি সম্প্রদায় থেকে এসেছেন। বিশ্বের মানুষকে মুগ্ধ করে রাখা যাদু শিল্পি হুডিনি ও বর্তমানে ডেভিড কপারফিল্ড এসেছেন একই কমিউনিটি থেকে। আর আছে, মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড। লেখকদের মধ্যে আর্থার মিলার, ফ্রানজ কাফকা, জন ষ্টাইনব্যাক যেমন এসেছেন তেমনি এসেছেন সাইন্স ফিকশান জগতের সবচেয়ে আলোচিত লেখক আইজাক আসিমভ। মিউজিকে ইহুদি মেনুহিনের অসাধারণ ভায়োলিনের পাশাপাশি রিঙ্গো ষ্টার, মার্ক নাফলারের মতো বাদক যেমন এসেছেন তেমনি বব ডিলান, বব মার্লির মতো গায়কও এসেছেন।

মাত্র কয়েকজনের নাম দেওয়া হলো। এ-ধরণের নাম অসংখ্য আছে।

ইহুদি কমিউনিটির সদস্যদের হাতে মেডিসিন, ফিজিক্স, কেমিষ্ট্রি, ইকোনোমিক্স, লিটারেচার ও পিচ বিভাগে এখন পর্যন্ত ২০০ টিরও বেশী নোবেল পুরষ্কার এসেছে। এ থেকে তাদের মেধার বিস্তার সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া সম্ভব।

ইসরাঈলের প্রয়োজনে এসব বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী, মিডিয়া মুঘল, রাজনীতিবিদ সবাই মিলিতভাবে তাদের স্বপ্নভূমিকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন। তারা যে যেই মতেরই হোক না কেন, এ-বিষয়ে তাদের কোন মতভেদ থাকে না। ফলে হাজার অপরাধ করার পরও ইসরাঈলকে স্পর্শ করা যায় না। শুধু আবেগ বা অভিশাপ দিয়ে ইসরাঈলকে দমন করা সম্ভব নয়। কেননা এর ভূমিটুকু আছে মিডল ইস্টে কিন্তু এর নিয়ন্ত্রকরা আছেন বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে।

মুসলমান অধ্যুষিত মিডল ইস্টে ছোট একটি রাষ্ট্র হলেও ইসরাঈলকে স্পর্শ করতে পারে না কেউ। ইসরাঈল প্রতিষ্টার সময় ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫৬, ১৯৬৭ এবং ১৯৭৩ সালে আরবদের সঙ্গে ইসরেলের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধগুলোতে ইসরাঈল এগিয়ে যায়। আরবরা কিছুই করতে পারেনি বরং অনেক সময় নিজেদের জায়গা হারিয়েছে।

প্যালেষ্টিনিয়ানদের নিজ আবাস ভূমি থেকে উৎখাত করে জুইশ (Jewish) কমিউনিটি বা ইহুদি সম্প্রদায়ের নিজস্ব আবাসভূমি ইসরাঈল সৃষ্টি ও তাকে রক্ষা করার প্রতিটি পর্যায়ে পশ্চিমা শক্তি, বিশেষ করে আমেরিকা সব সময়ই সর্বাত্মক সমর্থন যুগিয়ে এসেছে।

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছিলেন, পরোক্ষভাবে ইহুদিরাই বিশ্বকে শাসন করছে। একটি সম্প্রদায়ের অল্প কিছু মানুষ কিভাবে বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আরো বলা হয়, আমেরিকা পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করে আর আমেরিকাকে নিয়ন্ত্রণ করে জুইশ কমিউনিটি।

বিশ্বের অস্ত্র, মিডিয়া, ব্যাংক থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই জুইশ কমিউনিটির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে পুরোপুরি। আর এ কারণে গত ৭০ বছরেরও বেশী সময় ধরে প্যালেষ্টিনিয়ানদের উপর যে নিপীড়ন তারা চালিয়েছে তাকে ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশন (Clash of Civilization)-এর মোড়কে ঢুকিয়ে বৈধ করে নিয়েছে পশ্চিমা সমাজ।

আমেরিকার ইসরাঈল প্রীতি:

বিশ্বের নিয়ন্ত্রক আমেরিকার সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যাক্তি আমেরিকার প্রেসিডেন্টগণ বিশেষ করে জর্জ বুশ বরাবরই প্রকাশ্যে ইহুদিদের সমর্থন করে এসেছেন। আমেরিকা সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিসা রাইস তার ইসরাঈল সফরকে বর্ণনা করেন নিজের বাড়িতে ফিরে আসা বলে।

বুশ প্রশাসনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পদেই বসে আছেন জুইশ কমিউনিটির সদস্যরা। এরা আছেন ন্যাশনাল সিকিউরিটি এডভাইজার, চীফ পলিসি ডিরেক্টর, পলিটিক্যাল মিলিটারি এফেয়ার্স কর্মকর্তা, বাজেট ম্যানেজমেন্ট কর্মকর্তা, ফরেন সার্ভিস ডিরেক্টর, হোয়াইট হাউজের স্পিচ রাইটারসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ এবং পলিসি নির্ধারণের পদগুলোতে। শুধু ভূমিতে নয়, মহাশূন্যে কাজ করার প্রতিষ্ঠান নাসার এডমিনিষ্ট্রেটর হিসেবে ডেনিয়েল গোল্ডিন ইসরাঈলের স্যাটেলাইট পাঠানোতে অনেক ছাড় দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক তাদের দখলে। বছর কয়েক আগে দি ইউনাইটেড জুইশ কমিউনিটি ঘোষণা দিয়েছিল, ২০০৭ সালে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটিতে আরে ২৫ মিলিয়ন ডলারের একটি ফান্ড দেবে।

ফলে আমেরিকার কেউ চাইলেও এদের কিছু করতে পারবে না। বরং জুইশ কমিউনিটি বা ইহুদি সম্প্রদাকে হাতে না-রাখলে ক্ষমতায় টেকা যাবে না। এসব কারণে শুধু জুইশ কমিইনিটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রশাসনের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করে যেতে হয়।

আমেরিকার রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করে মূলতঃ কর্পোরেট হাউজগুলো। তারা প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত বানাতে পারে, সরাতে পারে। এসব কর্পোরেট হাউজগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় এদের মালিক কিংবা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক‌োম্পানিগুলোর মূল দায়িত্বে থাকা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা চীফ এক্সজিকিউটিভ অফিসার, সিইও হলেন জুইশ কমিউনিটির মানুষ। এ কথা মাইক্রোসফটের ক্ষেত্রে যেমন সত্য তেমনি জাপানিজ কোম্পানি সনির আমেরিকান অফিসের জন্যও সত্য। প্রায় অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ পদে জুইশ আমেরিকানরা কাজ করছেন। জুইশ কমিউনিটির ক্ষমতাধর বিলিয়নেয়াররা মিলিতভাবে যে-কোনো ঘটনা ঘটিয়ে দিতে পারেন। সেটা হতে পারে অর্থে, অস্ত্রে কিংবা মিডিয়ায়।

ইহুদীদের বিশ্ব মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ:

বিশ্বের এবং বিশেষ করে আমেরিকার জনগনের মূল নিয়ন্ত্রক মিডিয়া। তারা টিভি দেখে, মুভি দেখে, অনলাইনে কিছু নির্দিষ্ট সাইট দেখে এবং পেপার পড়ে। স্কলারদের বাদ দিলে সাধারণ আমেরিকানদের মন এবং মনন পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে মিডিয়া, বিশেষ করে টিভি চ্যানেলগুলো।

আমেরিকার অন্যতম বড় মিডিয়া গ্রুপের নাম টাইম-ওয়ার্নার। এ গ্রুপের অধীনে পত্রিকা, অনলাইন বিজনেস, মুভি প্রডাকশন হাউজ এবং টিভি চ্যানেল সবই আছে। যারা নিয়মিত টিভি দেখেন বা মুভি সম্পর্কে খোঁজ রাখেন তাদের কাছে ওয়ার্নার ব্রাদার্স নামটা খুবই পরিচিত। প্রায় ১০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতারা ছিলেন ইহুদি এবং বর্তমান চীফ এক্সজিকিউটিভ অফিসার বা সিইও জেরাল্ড লেভিন-সহ এর গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব পদই ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণে।

টাইম ওয়ার্নারের আরেক প্রতিষ্ঠান আমেরিকা অনলাইন (AOL)। এই প্রতিষ্ঠানটি ৩৪ মিলিয়ন আমেরিকান সাবস্ক্রাইভার (Subscriber) নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে পরিচিত। টিনএজার, নারী ও শিশুদের টার্গেট করে নামা এওএল (AOL) এখন জুইশ কমিউনিটির প্ল্যাটফরমে পরিণত হয়েছে।

নব্বই এর দশকে ইরাক ওয়ার কাভার করে আমেরিকায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে CNN টিভি চ্যানেলটি। এর মালিক টেড টার্নার বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেলেও এক পর্যায়ে চ্যানেলটি চালাতে ব্যর্থ হয়ে আত্মসমর্পণ করেন টাইম ওয়ার্নার গ্রুপের কাছে। তিনি নামে থাকলেও মূল ক্ষমতা নিয়ে নিয়েছে টাইম ওয়ার্নার। ৭০ মিলিয়ন দর্শকের চ্যানেল CNN কিভাবে খবর বিকৃত করে তার একটি ছোট উদাহরণ হিসেবে আসতে পারে নাইন ইলেভেন টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর। এ সময় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের দৃশ্য দেখানো হচ্ছিলো প্রতিক্রিয়া হিসেবে। হঠাৎ দেখা গেল প্যালেষ্টাইনিরা আকাশে গুলি ছুড়ে আনন্দ প্রকাশ করছে। এতে বোঝা যায় তারা টুইন টাওয়ার ধ্বংসে খুশী। কিছুদিন পর CNN খুব গুরুত্বহীনভাবে টেলপে জানায়, প্যালেষ্টিনিয়ান ফুটেজটি ছিলো পুরনো। তা ভুল করে সেদিন দেখানো হয়। কিন্তু ততদিনে পৃথিবীতে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে এ কাজ মুসলমানদের।

আমেরিকার সবচেয়ে বড় পে-টিভি চ্যানেলের নাম এইচবিও (HBO) । যা বাংলাদেশেও খুবই জনপ্রিয়। আমেরিকায় এর দর্শক ২৬ মিলিয়ন। HBO চ্যানেলটি টাইম ওয়ার্নার-এর অর্থাৎ পুরোপুরি ইহুদি নিয়ন্ত্রিত এবং এর কথিত প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে পরিচিত CINEMAX আরেকটি টাইম ওয়ার্নারের অঙ্গ সংগঠন। আমেরিকার সবচেয়ে বড় মিউজিক রেকর্ড কোম্পানি পলিগ্রাম মিউজিকও তাদের দখলে।

বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ম্যাগাজিনের নাম এলে প্রথমেই উচ্চারিত হয় যে নামটি তা হলো টাইম। এই পত্রিকাসহ টাইম ওয়ার্নার গ্রুপে আছে লাইফ, স্পোর্টস ইলাসট্রেটেড, পিপল – এর মতো বিশ্বনন্দিত পত্রিকাসহ ৫০ টি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন। টাইমসহ এ-ম্যাগাজিনগুলোর মাথার উপরে বসে এডিটর ইন চীফ হিসেবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন নরম্যান পার্লষ্টাইন। যিনি একজন ইহুদি।

বিশ্বজুড়ে শিশুকিশোরদের মনে রঙিন স্বপ্ন তৈরি করে যে প্রতিষ্ঠানটি তার নাম ওয়াল্ট ডিজনি কম্পানি। এই কম্পানির ওয়াল্ট ডিজনি টেলিভিশন, টাচষ্টোন টেলিভিশান, বুয়েনা ভিসটা (Buena Vista) টেলিভিশনের আছে কমপক্ষে ১০০ মিলিয়ন নিয়মিত দর্শক। সিনেমা তৈরিতে কাজ করছে ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্স, টাচষ্টোন পিকচার্স, হলিউড পিকচার্স, ক্যারাভান পিকচার্সসহ আরো অনেক কিছু। ইনডিপেনডেন্ট মুভি তৈরিতে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান Miramax Films-ও কিনে নিয়েছে ডিজনি। বিকল্প ধারার মুভি তৈরিতে Miramax অত্যন্ত জনপ্রিয়। ওয়াল্ট ডিজনি কম্পানির বর্তমান সিইও একজন ইহুদি। তার নাম মাইকেল আইসনার।

আমেরিকার আরেকটি প্রভাবশালী মিডিয়া গ্রুপের নাম ভিয়াকম (Viacom)। এর প্রধান সুমনার রেডষ্টোন-সহ বড়বড় অধিকাংশ পদেই আছেন ইহুদিরা। জনপ্রিয় সিবিএস টেলিভিশন নেটওয়ার্কসহ ৩৯টি টেলিভিশন ষ্টেশন, ২০০টি সহযোগী ষ্টেশন, ১৮৫টি রেডিও ষ্টেশন, সিনেমা তৈরির বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান প্যারামাউন্ট পিকচার্স, – তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন। ভিয়াকমের আর এক ইহুদি কো-প্রেসিডেন্ট টম ফ্রেসটন-এর নিয়ন্ত্রণে আছে মিউজিক চ্যানেল এমটিভি। মুভি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাল মিলে গিয়েছে এনবিসি গ্রুপের সঙ্গে। এনবিসি খুবই প্রভাবশালী টিভি চ্যানেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এদের মূল সংগঠন সিগ্রাম (Seagram) সহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন ইহুদি মিডিয়া মুগল এডগার ব্রনফম্যান জুনিয়র। তার বাবা এডগার ব্রনফম্যান সিনিয়র হলেন ওয়ার্ল্ড জুইশ কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট।

ইরাকের বিরুদ্ধে আমেরিকার আগ্রাসনকে আমেরিকানদের কাছে বৈধ হিসেবে চিত্রায়িত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ফক্স নিউজ। বিশ্ববিখ্যাত মিডিয়া মুগল রুপার্ট মারডকের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই জুইশদের সমর্থন দিয়ে এসেছে। কথিত আছে, মারডকের মা ইহুদি ছিলেন।বাংলাদেশে জনপ্রিয় ষ্টারপ্লাস-সহ বিভিন্ন দেশে নানান ধরণের এমনকি বিপরীতধর্মী চ্যানেলও তিনি পরিচালনা করেন। ভারতের ষ্টার প্লাস চ্যানেলের লোগো এবং ইহুদিদের প্রধান ধর্মীয় প্রতীক ষ্টার অব ডেভিড এর সাদৃশ্য লক্ষ্যণীয়।

টিভি চ্যানেলগুলোর মধ্যে এবিসি, স্পোর্টস চ্যানেল, ইএসপিএন, ইতিহাস বিষয়ক হিস্টৃ চ্যানেলসহ আমেরিকার প্রভাবশালী অধিকাংশ টিভি-ই ইহুদিরা নিয়ন্ত্রণ করছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে।আমেরিকায় দৈনিক পত্রিকা বিক্রি হয় প্রতিদিন কমপক্ষে ৫৮ মিলিয়ন কপি। জাতীয় ও স্থানীয় মিলিয়ে দেড় হাজার পত্রিকা সেখানে প্রকাশিত হয়। এসব পত্রিকাসহ বিশ্বের অধিকাংশ পত্রিকা যে নিউজ সার্ভিসের সাহায্য নেয় তার নাম দি এসোসিয়েটেড প্রেস বা এপি (AP)। এ প্রতিষ্ঠানটি এখন নিয়ন্ত্রণ করছেন এর ইহুদি ম্যানেজিং এডিটর ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল সিলভারম্যান। তিনি প্রতিদিনের খবর কী যাবে, না-যাবে তা ঠিক করেন।

আমেরিকার পত্রিকাগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী তিনটি পত্রিকা হলো নিউইয়র্ক টাইমস্ , ওয়াল ষ্টৃট জার্ণাল এবং ওয়াশিংটন পোষ্ট। এ তিনটি পত্রিকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এখন ইহুদিদের হাতে।

ওয়াটারগেট কেলেংকারীর জন্য প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলো ওয়াশিংটন পোষ্ট। এর বর্তমান সিইও ডোনাল্ড গ্রেহাম ইহুদি মালিকানার তৃতীয় প্রজন্ম হিসেবে কাজ করছেন। উগ্রবাদী ইহুদী হিসেবে তিনি পরিচিত। ওয়াশিংটন পোষ্ট আরও অনেক পত্রিকা প্রকাশ করে। এর মধ্যে আর্মিদের জন্যই করে ১১টি পত্রিকা। এই গ্রুপের আরেকটি সাপ্তাহিক পত্রিকা পৃথিবী জুড়ে বিখ্যাত। পত্রিকাটির ইনটারন্যাশনাল এডিশনের সম্পাদক হিসেবে মুসলমান নাম ফরিদ জাকারিয়া দেখে বা কিছু ক্ষেত্রে এর উদারতার জন্য অনেকেই একে লিবারাল পত্রিকা বা ডেমক্রেট সমর্থক হিসেবে মনে করেন। টাইম এর পরে বিশ্বের দ্বিতীয় প্রভাবশালী এই সাপ্তাহিক পত্রিকাটির নাম নিউজউইক।

আমেরিকার রাজনৈতিক জগতে প্রভাবশালী নিউইয়র্ক টাইমস্-এর প্রকাশক প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ইহুদিরা হয়ে আসছেন। বর্তমান প্রকাশক ও চেয়ারম্যান আর্থার শুলজবার্জার প্রসিডেন্ট ও সিইও রাসেল টি লুইস এবং ভাইস চেয়ারম্যান মাইকেল গোলডেন সবাই ইহুদি।

বিশ্বের অর্থনীতি যারা নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের নিয়ন্ত্রণ করে ওয়াল ষ্টৃট জার্নাল। আঠার লাখেরও বেশী কপি চলা এই পত্রিকার ইহুদি প্রকাশক ও চেয়ারম্যান পিটার আর কান তেত্রিশটিরও বেশী পত্রিকা ও প্রকাশনা সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করেন।

আমেরিকান মুভি ইণ্ডাষ্টৃ-র শুধু নির্মাতা প্রতিষ্ঠানই নয়, এর মুভি নির্মাতা, পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যেও রয়েছে ইহুদিদের প্রাধান্য। বিশ্বখ্যাত অভিনেতা মার্লোন ব্রান্ডো কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, হলিউড চালায় ইহুদিরা। এর মালিকও ইহুদিরা।

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ট্যালেনটেড পরিচালক হিসেবে পরিচিত ষ্টিভেন স্পিলবার্গ আরো দুই ইহুদি ব্যবসায়ী ডেভিড গেফিন ও জেফরি ক্যাজেনবার্গ-কে নিয়ে গড়ে তুলেছেন তার কোম্পানি ডৃমওয়ার্কস্ এসকেজি।

হলিউডে এমন অসংখ্য ব্যক্তি আছেন যারা জুইশ কমিউনিটি থেকে এসেছেন। পরিচালক বিলি ওয়াল্ডার, স্ট্যানলি কুবরিক, রোমান পোলানস্কি, উডি এলেন যেমন আছেন এই তালিকায় তেমনি আছেন কার্ক ডগলাস, মাইকেল ডগলাস, পিটার সেলার্স, জেসিকা টেনডি, এলিজাবেথ টেইলর, পল নিউম্যান, বিলি কৃস্টাল, ডাস্টিন হফম্যান, জেরি লুইস, রবিন উইলিয়ামস্। মায়ের দিক থেকে জুইশ কমিউনিটি থেকে এসেছেন রবার্ট ডি নিরো, হ্যারিসন ফোর্ড, ড্যানিয়েল ডে লুইস এর মতো সুপারষ্টাররা। এই তালিকা অনেক লম্বা। সহজে শেষ হবে না।

এসব ষ্টারের অংশগ্রহণই শুধু নয়, জুইশদের পক্ষে জনমত গঠনে হলিউড বা অন্যান্য অঞ্চলের মুভিগুলো ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। এসব মুভির নির্মাণ কৌশল, গুণগত মান, বুদ্ধির প্রয়োগ ও বক্তব্য সবই উঁচু মাপের। ইহুদিদের নিয়ে যে বিষয়টি বেশী জায়গা করে নিয়েছে তা হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদি নির্যাতন বা হলোকস্ট (Holocaust) । বলা হয়, এ সময় প্রায় ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা ও অসংখ্য ইহুদি নর-নারী ও শিশুকে নির্যাতন করে হিটলার-মুসোলিনির অক্ষ শক্তি। যুদ্ধ চলার সময়ই বিশ্বখ্যাত মুভি নির্মাতা চার্লি চ্যাপলিন দি গ্রেট ডিকটেটর নির্মাণ করে দুনিয়া কাপিয়ে দেন। হিটলার এবং গরীব ইহুদি নাপিত দুই চরিত্রে তিনি অভিনয় করেন। জুইশদের প্রতি তিনি অনুরক্ত কি-না এই ধরণের প্রশ্ন করা হলে চ্যাপলিন উত্তর দিয়েছিলেন, হিটলারের বিরোধী হওয়ার জন্য ইহুদি হওয়ার প্রয়োজন নেই।

যুদ্ধের ৬০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো হলোকস্ট নিয়ে অসংখ্য মুভি তৈরি হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছর গুলোতে এ ধরনের একাধিক মুভি অস্কার পুরষ্কার পেয়েছে। রোমান পোলানস্কির দি পিয়ানিস্ট, ইটালিয়ান মুভি ডিরেক্টর রবার্টো বেনিনির আধুনিক ক্লাসিক মুভি হিসেবে বিবেচিত লাইফ ইজ বিউটিফুল, এর আগে স্পিলবার্গের শিলডার্স লিস্ট এর অন্যতম। স্পিলবার্গ বছর কয়েক আগে তৈরি করেছেন মিউনিখ নামের একটি মুভি যেখানে প্যালিস্টিনিয়ান গেরিলাদের হামলায় ইসরেলি এথলেটদের হত্যা করার বিষয়টি এসেছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে টেন কমান্ডমেন্টস্ , ফিডলার অন দি রুফ , ফেটলেস , ডাউনফল-এর মতো মুভিগুলোতে ইহুদিদের দুর্দশার চিত্র ফুটে উঠেছে।

এসব মুভির ক্ষমতা এত বেশী যে, তা যে কোন দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যেতে পারে। তারা যেভাবে চিন্তা করতে বলবে, সবাইকে সেভাবেই চিন্তা করতে হবে। শক্তি, বুদ্ধি এবং আবেগ সবকিছুই জুইশ কমিউনিটি মুঠোবন্দী করে রেখেছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানিতে ব্যাপকভাবে ইহুদি নিধন শুরু হয়। এসময় অসংখ্য ইহুদি জার্মানি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এদের মধ্যে আছেন গত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। বিশ্ব জুড়ে ইহুদিদের উপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেছিলেন, – There are no German Jews, there are no Russian Jews, there are no American Jews …….. There are in fact only Jews.

অর্থাৎ জার্মান ইহুদি বলে কিছু নেই, রাশিয়ান বা আমেরিকান ইহুদি বলেও নয় …. আসলে ইহুদিরা সবাই এক। মাত্র ৫০/৬০ বছর পেরিয়ে এসেই কথার মানেটা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। আসলেই জুইশরা সব এক। তবে তারা এখন নির্যাতিত হচ্ছে না। আর নিয়তির পরিহাস এই যে এখন তারা নির্যাতন করছে এবং বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে। মূলতঃ ফক্স নিউজ যিনি পরিচালনা করেন তার নাম পিটার শেরনিন। অবধারিতভাবেই তিনি ইহুদি। রুপার্ট মারডকের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সারা বিশ্বের অসংখ্য পত্রপত্রিকা ও টিভি চ্যানেল। ঈজিপশিয়ান ফারাওদের (কোরানে, ফেরাউন-মুসা আঃ এর ঘটনা) সময় থেকে শুরু করে জার্মানির হিটলারের সময় পর্যন্ত তাদের বিতাড়িত হতে হয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে। তবে এখন যেমন ইহুদিদের সাথে মুসলমানদের সংঘাত চলছে এক সময় তা ছিল কৃশ্চিয়ান ও ইহুদি সংঘাত। স্পেনে মুসলমানদের রাজত্বে ইহুদিরা খুবই ভালো ছিল। তারা এ-সময় তাদের বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা করার ব্যাপক সুযোগ পায়। মুসলমানদের এই উদারতার কথা ফুটে উঠেছে ইহুদিদের লেখা ইতিহাস বইয়ের পাতায়।

শুরু থেকেই বিভিন্ন সমাজে ইহুদিদের ঘৃণিত, অবহেলিত ও খারাপভাবে দেখা হতো। প্রায় প্রতিটি জায়গায় তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকতো। উগ্র কৃশ্চিয়ানরা তাদের কখনোই সহ্য করতে পারেনি। এদের অনেকেই যিশুর হত্যাকারী হিসেবে ইহুদিদের চিত্রিত করেছে। অনেকেই তাদের অভিশপ্ত জাতি মনে করে।উপরের কথাগুলোর আলোকে ইহুদিদের প্রধানতম শত্রু খৃস্টানরা হওয়াই বাঞ্ছনীয় ছিলো, কিন্তু, মুসলমানদের সাথে তাদের দ্বন্দ্ব বা বৈরিতার কারণ কী?

আরব-ইসরাইল দ্বন্দ্বের কারণ:

ইহুদি খৃস্টানদের মধ্যে স্বজাতির প্রতি উগ্র শ্রেষ্ঠত্বের (Racism) অনুরাগ জন্মে বাইবেলের বিকৃত পাঠ হতে। দেখুন নিচে:

But he who was of the bondwoman was born after the flesh; but he of the free woman was by promise. (Galatians: 4:23): Bible, King James Version: 18 Feb 1997)

Now we, brethren, as Isaac was, are the children of promise (Galatians: 4:28): Bible, King James Version: 18 Feb 1997)

So then, brethren, we are not children of the bondwoman, but of the free. (Galatians 4:31): Bible, King James Version: 18 Feb 1997)
বাংলায় অনুবাদ ও বিস্তারিত লিখলে দাড়ায়, হজরত ইব্রাহিম (আঃ) (বাইবেলে, Abraham) – এর সারা ও হাজেরা (বাইবেলে, Sarah এবং Hagar) নাম্নী দু’জন স্ত্রী ছিলেন। বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী ইহুদিদের ধারণা এই যে, সারা ছিলেন ইব্রাহীম (আঃ)-এর স্বাধীন স্ত্রী আর হাজেরা ছিলেন তাঁর বাঁদী। উল্লেখ্য যে ইহুদিরা সারার মাধ্যমে এবং আরবরা হাজেরার মাধ্যমে ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধর। কাজে কাজেই ইহুদি-খৃস্টানদের বদ্ধমূল ধারণা এই যে, স্বাধীন স্ত্রীর ছেলে হজরত ইসহাক (আঃ) (Issac)-এর বংশধর “ইয়াহুদিরা” হল উৎকৃষ্টতর আর বাঁদীর ছেলে ইসমাইলের বংশধর “আরবরা” নিকৃষ্টতর। প্রকৃতপক্ষে, হাজেরার বংশগত আভিজাত্য কম নয়। তিনি ছিলেন মিশরের সম্রাটের কন্যা। সম্রাট নম্রতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে স্বীয় কন্যাকে খাদেমা বলে হজরত সারার হাতে তুলে দিলেও পরে তো তিনি ইব্রাহীম (আঃ)-এর স্বাধীন স্ত্রী হয়েছিলেন। (ফয়জুল বারী/ বুখারী শরীফ)

বাইবেলেও এর স্বীকৃতি আছে। দেখুন : Gen.16 (3 , 15, 16 )

[3] And Sarai Abram’s wife took Hagar her maid the Egyptian, after Abram had dwelt ten years in the land of Canaan, and gave her to her husband Abram to be his wife.

[15] And Hagar bare Abram a son: and Abram called his son’s name, which Hagar bare, Ishmael.

[16] And Abram was fourscore and six years old, when Hagar bare Ishmael to Abram.

আর হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর আদি পিতা হজরত ইসমাইল (আঃ) সম্পর্কে নকল তৌরাতে বর্ণনা এসেছে এভাবে, –

[12] And he will be a wild man; his hand will be against every man, and every man’s hand against him; and he shall dwell in the presence of all his brethren. (Gen 16:12)

(… একটি মানুষের আকৃতিতে বন্য গর্দভ। তার হাত ও কাজ পৃথিবীর যাবতীয় মানুষের বিরুদ্ধে এবং পৃথিবীর যাবতীয় মানুষের ঘৃণা ও প্রতিরোধ তার বিরুদ্ধে ………………… ) (Gen 16:12)

(ইহুদি রেসিজম এর একটি নমুনা)

কিন্তু, কোরআনে হজরত ইসমাইল (আঃ) এর চরিত্র সম্পর্কে আছে ভিন্ন বর্ণনা:

And mention in the Book (the Qur’ân) Ismâ’il (Ishmael). Verily! he was true to what he promised, and he was a Messenger, (and) a Prophet. (54) And he used to enjoin on his family and his people As-Salât (the prayers) and the Zakât, and his Lord was pleased with him. (19:54)

(এই কিতাবে ইসমাঈলের কথা বর্ণনা করুন, তিনি প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী এবং তিনি ছিলেন রসূল, নবী। তিনি তাঁর পরিবারবর্গকে নামায ও যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিতেন এবং তিনি তাঁর পালনকর্তার কাছে পছন্দনীয় ছিলেন।) (১৯:৫৪)

(86) And also some of their fathers and their progeny and their brethren, We chose them, and We guided them to a Straight Path. (6:86)

(আর ও তাদের কিছু সংখ্যক পিতৃপুরুষ, সন্তান-সন্ততি ও ভ্রাতাদেরকে; আমি তাদেরকে মনোনীত করেছি এবং সরল পথ প্রদর্শন করেছি।) (৬:৮৬)

(101) And, when he (his son) was old enough to walk with him, he said: “O my son! I have seen in a dream that I am slaughtering you (offer you in sacrifice to Allâh), so look what you think!” He said: “O my father! Do that which you are commanded, Inshâ’ Allâh (if Allâh will), you shall find me of As-Sâbirun (the patient).” (37:101)

(অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিযে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ। সে বললঃ পিতাঃ! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন। ) (৩৭:১০১)

ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে স্বজাতির উগ্র শ্রেষ্ঠত্বের (Racism) আর একটি নমুনা দেখুনঃ

Deuteronomy 11:18-25, (তোমাদের প্রভু তোমাদের জন্য তোমাদের সামনে জাতির পর জাতিকে পতন ঘটিয়ে দেবে। তোমরা তোমাদের চাইতে সংখ্যায় বৃহত্তর জাতিকে পদানত করবে, পৃথিবীর যে যে স্থানে তোমাদের পদচিহ্ন পড়বে, তোমরা সে সব স্থানের মালিকানা প্রাপ্ত হবে। তোমাদের ভূমিটির সীমানা হবে লেবাননের বনাঞ্চল হতে এবং নদী হতে ইয়োফ্রেতিশ (ইরাক) নদী পর্যন্ত। কোন জাতি তোমাদের সামনে দাড়াবে না, তোমাদের প্রভু জগৎবাসীর মনে তোমাদের সম্পর্কে ভীতি সৃষ্টি করে দেবেন ……………. ।

অন্য দিকে, হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে বাইবেল কী বলছে দেখুনঃ

[হে মুসা] আমি উহাদের জন্য উহাদের (ইহুদিদের) ভ্রাতৃ [আরব] গণের মধ্য হইতে তোমার সদৃশ এক ভাববাদী [নবী] উৎপন্ন করিব (Deut 18:18)

[18] I will raise them up a Prophet from among their brethren, like unto thee, and will put my words in his mouth; and he shall speak unto them all that I shall command him. (Deut 18:18)

একই কথা ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়ও বর্ণিত হয়েছে বাইবেলে যেমন,

[22] For Moses truly said unto the fathers, A prophet shall the Lord your God raise up unto you of your brethren, like unto me; him shall ye hear in all things whatsoever he shall say unto you. (The Acts 3:22)

[37] This is that Moses, which said unto the children of Israel, A prophet shall the Lord your God raise up unto you of your brethren, like unto me; him shall ye hear. (The Acts7:37)

অথচ, প্রায় তিন হাজার বছর যাবৎ ইহুদিরা তাদের আরব ভাইদের প্রতি ঘৃণা ও অবজ্ঞার ভাব পোষণ করে আসছে; বিশেষ করে ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থগুলোতে উল্লিখিত প্রতিশ্রুত (Promised) নবী মোহাম্মদ (সাঃ) ইহুদি বংশ হতে না-এসে আরব জাতির মধ্য হতে আসায় ইহুদি-খৃস্টানদের বৈরী মনোভাব চরমে পৌঁছে গেল। তাই ইসমাইল (আঃ) এবং তাঁর বংশধর মোহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কিত বিষয় সমূহ বিকৃত করে, আর না-হয় মুছে ফেলে বাইবেল রদবদল করতে শুরু করে দিল। উল্লেখ্য বাইবেলের অনেকগুলো ভারশান (Version) বাজারে প্রচলিত আছে। অর্থাৎ “ বাইবেল ” মুসলমানদের মত একটি মাত্র ধর্মগ্রন্থ “কোরানের ” মতো নয়। ছোট্ট একটি রেফারেন্স দিলেই ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে যাবে। খৃস্টধর্মতত্ত্ববিদ এবং প্যারিসের ক্যাথলিক ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফাদার কানেনগিয়েসার বাইবেল সংকলিত হওয়ার বিবরণ দিয়েছেন নিম্নরুপেঃ

( “ বাইবেলের কোন বর্ণনাই আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করার মতো নয়। ওইসব রচনা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে অথবা এসব রচনা বিরুদ্ধপক্ষীয়দের (মুসলমানসহ খৃস্টান-ইহুদিদের নানান দল উপদল) মোকাবেলায় রচিত……….. ”)

— বাইবেল, কোরান ও বিজ্ঞান: ডঃ মরিস বুকাইলি

রেফারেন্সঃ ইনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা)

পূর্বোক্ত কথার ধারাবাহিকতায় বলা যায়, ইহুদিরা মোহাম্মদ (সাঃ) জন্মের দিনক্ষণ সম্পর্কে অবগত ছিল; তাই তারা মক্কা ও মদীনায় ভিড় জমায়। সমস্ত মক্কা ও মদীনায় তখন আনন্দের ঝড়। এই ঘটনাটি কোরানে এসেছে এভাবেঃ বনী ইসরাইলের পণ্ডিতগণ পূর্ব হতে এ-সম্পর্কে পূর্ণ অবগত ছিল, এটা তাদের জন্য একটি নিদর্শন নয় কি? (২৬:১৯৭)

কিন্তু, যখন সময়ক্ষণ অনুসারে জন্মটি একটি “ একটি ইহুদি পরিবারে ” নয় অর্থাৎ “ জেন্টাইল ” পরিবারে ঘটেছে – তা দেখে তারা (ইহুদিরা) চরম হতাশ হয়ে পড়ে। তারা প্রত্যাবর্তন করে। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হয় মোহাম্মদ (সাঃ)-এর নবুয়ত দাবীর পরপর। কোরআন এই সত্য ও তথ্যকে এভাবে তুলে ধরেছে – “ কত নিকৃষ্ট উহা যার বিনিময়ে তারা তাদের আত্মাকে বিক্রয় করে দিয়েছে এই জন্য যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, অহংকারের বশবর্তীতায় তাকে তারা প্রত্যাখান করতো এই কারণে যে আল্লাহ তাহার বান্দাদের মধ্য হতে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। (২:৯০)

তারা (ইহুদিরা) ষড়যন্ত্রের পর ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে। সর্বশেষ ষড়যন্ত্র হয় খাইবারে নবী মোহাম্মদ (সাঃ)-কে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে। হজরত বিশর (রাঃ) ও মোহাম্মদ (সাঃ) এক সাথেই খাবার মুখে দেন। কামড় দেয়ার সাথে সাথেই বিশর (রাঃ) মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। নবী মোহাম্মদ (সাঃ) মুখ হতে খাবার ফেলে দেন। যদিও আল্লাহ তাঁকে (সাঃ) বিষাক্ততা থেকে বাঁচিয়েছন – তবু মৃত্যু অবধি এই বিষের ক্রিয়া তাঁকে (সাঃ) বহন করতে হয় যা তিনি (সাঃ) মুসলমান জাতির কাছে একটি আপীল হিসেবে রেখে যান- “ হে আমার জাতি! জেনে রেখো! খাইবারে ইহুদিদের দেয়া বিষ যেন আমার হৃদয়-শিরাকে কেটে দিচ্ছে মৃত্যু শয্যায়”।

মুসলমান জাতি ইতিহাস ভুলে গেছে – এখন নবী মোহাম্মদ (সাঃ) এর আপীলের কথাগুলো আর তার মনে নেই। কালে এই মুসলমান জাতি ইহুদিদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে যায়। এই ঘনিষ্ঠতা সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে নয় – আল্লাহ যে বস্তুকে জেহাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র কিংবা উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন- সেই স্বর্গীয় আমানত “সম্পদ” -কে দুনিয়াজুড়ে মুসলমান যেন এক মাদকাশক্তির নেশা-মত্ততায় দেদার ইহুদিদের হাতে তুলে দিতে থাকলো, যে জাতিটি তার কবর রচনার জন্য “ কিং ডেভিড এর সাম্রাজ্য ” প্রতিষ্ঠা প্রকল্পে ইতোমধ্যেই আফগানের পর ইরাক দখল করে নিয়েছে আমেরিকার হাত দিয়ে আর একই বাহন দ্বারা সমস্ত আরব রাষ্ট্রগুলোর হৃদমূলে ঘাঁটি স্থাপন করে নিয়েছে ১৯৯১ সনে। কিয়ামতের পূর্বে এ-ঘাঁটিগুলো আর উঠে আসবে না।

ইহুদিরা পৃথিবীতে মূল ছাড়া জাতি। কোরানের নীতি ব্যবহার করে তারা কোরানের ফর্মূলায় একটি জাতিসত্তায় পরিণত হয়েছে – শুধু তাই নয়, তারা সমস্ত দুনিয়ার মানুষকে এখন ভীতি প্রদর্শন করছে। বলা দরকার কোরআনের নীতি যে ব্যবহার করুক, সে উপকৃত হবে – এর জন্য ঈমান আনা জরুরি নয়। ঈহুদিরা এই নীতিটিকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে রাষ্ট্র, নেতৃত্ব ও জগৎভীতি সৃষ্টির কৃতিত্বে এসেছে তার চিত্রটি ফুটে উঠে – “ আমি ইচ্ছা করলাম – দুনিয়াতে যাদের হীনবল করা হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে এবং তাদের নেতৃত্ব দান করতে এবং তাদেরকে রাষ্ট্রের উত্তরাধিকারী করতে এবং পৃথিবীতে তাদেরকে ক্ষমতাসম্পন্ন করতে এবং ফিরআওন-হামান বাহিনীকে দেখিয়ে দিতে যাদের নিকট হতে ভীতির আশঙ্কা ছিল। ” (২৮: ৫-৬)

এই নীতি অনুসারে – যাদের হীনবল করা হয় ( ইহুদিরা এই বিপাকে পড়েছিলো ) , এবং দুর্বলতার কারণে নেতৃত্ব থাকে না, রাষ্ট্রের পরিচয় থাকে না ও পৃথিবীর ক্ষমতার মঞ্চে যাদের স্থান নেই – তারাও এই পৃথিবী শাসনের কৃতিত্বে আসতে পারে; দুনিয়ায় যারা ছিল অপরাপর শক্তির নিকট ভীত – তারা সৃষ্টি করতে পারে বিপরীত ভীতি প্রবাহ; অর্থাৎ পরিণামে তাদেরকে সকল রাষ্ট্রীয় শক্তিরা ভয় করবে- এই অবস্থা সৃষ্টি করা সম্ভব। আর এই নীতিকে কাজে লাগিয়েছে ইহুদি জাতি জেহাদেরই ফর্মূলায় – “ ওয়াতুজা হিদুনা ফি সাবিলিল্লাহি বিআমওয়ালিকুম ওয়াআনফুসিকুম ” ; বিজয়ের যুদ্ধের জন্য প্রয়োজন দু’টি বস্তু – একটি ‘ সম্পদ ’ অপরটি ‘ ব্যাক্তি ’। ১৫ মিলিয়ন ইহুদি – ১৫ মিলিয়ন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৈনিক। আর দুনিয়ার সব সম্পদের মালিক আজ তারা। তারা আমেরিকারও মালিক। কোরআনকে তারা তাদের নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার করে কৃতকার্য হয়েছে। ইহুদিরা কীভাবে কোরাআনের ফর্মূলা ধরেছে এবং তাদ্বারা একাট ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের মালিক হয়েছে এবং তথা হতে আমেরিকাকে ডিঙ্গিয়ে সমগ্র বিশ্বকে শাসন করবে তার চিত্রটি ক্ষুদ্রাকারে তুলে ধরছি।

বিশ্বব্যাপী ইহুদীদের মুসলিম বিদ্বেষী কর্মকান্ড:

ইহুদি জাতি পৃথিবীতে যে সকল রাষ্ট্রসমূহের উপর অসামান্য প্রভাব ও প্রভুত্ব বিস্তার করেছে – তাদের একটি “ অষ্ট্রেলিয়া ” । এই দেশটিতে বসবাসরত ইহুদিরা নির্দিষ্ট এলাকায় তাদের যে সংগঠন সৃষ্টি করে – তার সর্বনিম্ন সংগঠনকে তারা বলে ‘স্টেইট’। প্রতিটি স্টেইটে বসবাসকারী ইহদিরা তাদের মাসিক আয়ের ৫% অংশ অত্যাবশ্যকীয়ভাবে “স্টেইট” নিকট জমা রাখে। তবে সচরাচর অধিক আয় সম্পন্নরা বাধ্যতামূলক এই দানের বাইরেও অর্থায়ন করে থাকেন। এই অর্থ সরাসরি বিশ্বজোড়া জায়নবাদী প্রচার ও পরিকল্পনা চরিতার্থকরণের জন্য ব্যয় হয়। এই অর্থ ইসরাইল রাষ্ট্রের সংহতিকরণ ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যয় হয়। এভাবে দীর্ঘদিনের সাধনায় আজ তারা এমন একটি অবস্থানে এসেছে যে বিশ্বের তথ্য, সম্পদ, যুদ্ধ, অর্থনীতি, ইত্যাদি সবই এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। খোদ আমেরিকা একটি ক্ষুদ্র ইসরাইল রাষ্ট্রের বাধ্যতার দাস। এটা হলো কোরআনের ফর্মূলায় মুসলমানদের উপর ধার্য্য “জাহাদু বি আমওয়ালি” – এর প্রতি পূর্ণ মান্যতা; তারা কোরাআনের ফর্মূলাকে নিজেদের ফর্মূলা করে নিয়েছে। পাশাপাশি “জাহাদু বি নাফসি” বা ধর্মের জন্য ব্যক্তির সেবাকে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রেও তারা অগ্রগামী। ১৫ মিলিয়ন ইহুদি – ১৫ মিলিয়ন সৈনিক ও যোদ্ধা। কিন্তু কতটা চমৎকার পদ্ধতিতে তারা “ওয়া’তাছিমু বি হাবলিল্লাহি জামিআ” এই নীতিটিকে অবলম্বন করছে তার একটি চিত্র আমরা প্রদর্শন করতে পারি।

সাধারণতঃ ওরা চাকুরির চাইতে ব্যবসার প্রতি বেশী আকর্ষণ বোধ করে। যখনই ‘স্টেইটে’ নতুন কোন ইহুদি ব্যবসা/দোকান খোলে, তখনই ‘স্টেইট’ হতে তার সমস্ত অধিবাসীগণের জন্য এটি ধার্য হয়ে যায় যে, এই নতুন ব্যবসায়ী যে নতুন ব্যবসা শুরু করেছে, ৩ মাসের জন্য প্রত্যেক ইহুদি নাগরিক ন্যুনতম ২০০ ডলারের পণ্য কিংবা সেবা ক্রয় করবে বাধ্যতামূলকভাবে। এই বাধ্যবাধকতা প্রসূত ‘খরিদ’ নতুন ইহুদি ব্যবসায়ীকে শুরু করার মুহূর্ত হতেই একটি সাবলীল সমর্থন ও শক্তি যোগায়; পরবর্তীতে যা তাকে সফল ব্যবসায়ী হয়ে আত্মপ্রকাশ করতে সাহায্য করে। ইন্নাল মু’মিণীনা ইখওয়াতুন, ফা আছলিহু বাইনা আখাওয়াইকুম (মুমিন পরষ্পরের ভাই- একে অপরের কল্যাণ সাধনে সচেষ্ট হও) , এই ফর্মূলাটি এ যুগের কোনো মুসলমান মান্য করেনি, ইহুদিরা পরিপূর্ণভাবে মান্য করে চলছে। “ আর যারা এই পথ প্রদর্শনকে মান্য করে চলবে- তাদের ভয় নেই, তারা দুঃখিত হবে না ” (২:৩৮) । ইহুদি জাতি এই পথ প্রদর্শন মান্য করে চলছে। তারা আজ ভীত নয়; দুঃখিতও নয়। বলা বাহুল্য যে, বর্ণিত ‘স্টেইট’ এর এক হাজার ইহুদি যদি ৩ মাসে সেই নব্য ব্যবসায়ীর নিকট হতে ১০০০ x ২০০ = ২ লাখ ডলারের ব্যবসা পেয়ে যায়, যা নিশ্চিত, তা অস্ট্রেলিয়ায় পরবর্তীতে তার টিকে যাবার সম্ভাবনা যথেষ্ট।

ব্যক্তি ও সামষ্টিক সমাজে ইহুদিরা কোরআনের নির্দেশ মান্য করে চলে। তাই প্রতিশ্রুতি অনুসারে তারা ভীতির শিকার নয় এবং তারা দুঃখিতও নয়। কাফির হয়েও তারা কোরআনকে বা কোরআনের নীতিকে তাদের কল্যানে ব্যবহার করেছে।

ইহুদিরা বিপুল অর্থ ব্যয় করে ইসলাম বিষয়ক এক্সপার্ট তৈরির জন্য। ২০০২-২০০৩ সালের বাজেটে আমেরিকা “ ইসলাম বিষয়ক এক্সপার্ট ” তৈরির জন্য বরাদ্দ করেছে ৩৫ বিলিয়ন ডলার, যা গণচীনের পূর্ণ সামরিক বাজেটের সমান। এই টাকায় বাংলাদেশের একুশ বছরের বাজেট সংকুলান হয়। এতোগুলো টাকা শুধু এক্সপার্ট তৈরির জন্য এবং গবেষণার জন্য। কী গবেষণা হয় এবং কী করে এক্সপার্টগণ ? তারা তৈরি করে সুইসাইড বম্বার। তাদের সুইসাইড বম্বার হিসেবে আত্মঘাতী বোমা ফাটানোর কাজটি করছে এক “ তরুণী ”! । তরুণীরা কেন ?!

ইসরাইল সাহাক (Israel Shahak) – এর লেখা হতে জানা যায় ( তিনি জেরুজালেম পোষ্টে লিখে থাকেন; হিব্রু সংস্করণে; কমই তার ইংলিশ প্রতিবেদন ছাপা হয় )। এই লেখাটি ১৯৮৫ সনের। তরুণীদের ধরে নিয়ে যায় ইসরাঈলি সেনাবাহিনীর লোকজন। তারপর তাকে বিবস্ত্র করা হয়। ছবি তোলা হয় বিভিন্ন পোজের। তারপর তাকে গণধর্ষণ করা হয়। এ অবস্থায় তরুণীটি যখন ভগ্ন হৃদয় এবং মর্মাহত, – তখন তার পিতা, ভাই অথবা এমন কোন সম্পর্কের, যার সঙ্গে বিবাহ চলে না – এমন কোনো ব্যক্তিকে ধরে এনে কৃত্রিম উপায়ে (ইনজেকশান বা মুখে খাওয়ার ঔষুধ) প্রচন্ডভাবে যৌনাবেগ সৃষ্টি করে রাখা হয়। তারপর বাধ্য করা হয় তাকে রেপ করার জন্য। অনিচ্ছায়, অজ্ঞানতায় “ রেপ ” করার কাজটির তুলে রাখা হয় অজস্র ছবি। তারপর “ সেট করা ” নাটকের অংশ হিসেবে তাকে উদ্ধার করে নেয় ইহুদি রাবাঈদের ( Jewish Rabbi ) কেউ। নাটকের অংশ হিসেবে তৈরি হয়ে আছে এমন “ মুসলমান ” সংগঠনের কাছে করা হয় হস্তান্তর । সেই মুসলমানরূপী ইহুদিরা বুঝিয়ে দেয় – এ জীবন আর রেখে কী হবে, খোদার জন্য শত্রু ঘায়েল করে শহীদ হয়ে যাও। উপদেশটি সৎ মনে হয়। গায়ে জড়িয়ে নেয় বোমা – সেই তরুণীটি। তাকে টার্গেট দেয়া হয় কোথায় যাবে, কে সাহায্য করবে, – এইসব। টার্গেট জানানো হয় “সেনাবাহিনী ”, কারণ, তাদের প্রতিই তরুণীটির বিদ্বেষ। কিন্তু, বাসে উঠার পর কিংবা বাজার এলাকায় গমন করার পর টিপে দেয়া হয় রিমোর্ট কন্ট্রোল। কেবল সাধারণ নিরপরাধ ইহুদি জনগণই মরে সুইসাইড বোমায়, কখনও সেনাবাহিনীর একটি সদস্যেরও কিছু হয় না। দু’ঘন্টার মধ্যে “ পোট্রেট কোয়ালিটির ” ছবি চলে যায় টেলিভিশনে। পূর্বেই ছবি রাখা হয়েছিল তার; নাম, ঠিকানা সব নির্ভুল। জগৎ শুনেছে, মুসলমান তরুণীর সুইসাইড বোমায় অনেকজন ইসরাঈলি নিরপরাধ জনগণ মারা হয়েছে। এ-লেখাটি যখন রচিত হয়, তখন (অক্টোবর ০৩) ইসরাঈল সিরিয়া আক্রমন করে সুইসাইড বোমা হামলার প্রতিবাদে। ১৯ জন ইসরাঈলি নাগরিক মারা গেছে। সেখানেও ছিল এমনি দুর্ভাগ্যের শিকার এক তরুণী। “সুইসাইড বোমা ” ইসলামের আদর্শকে বিশ্বের সামনে অনেক নিচু করেছে। তার অর্থ এই নয় যে সব সুইসাইড বোমা বর্ণিত পদ্ধতিতে ঘটে। মুসলমানরা অনেক ক্ষেত্রেই স্বেচ্ছাপ্রণোদিত উচ্ছ্বাসে তা করে থাকে। এর পেছনে যে অদৃশ্য যোগান, উৎসাহ-উদ্দীপনা, অর্থ, সুযোগ, উপকরণ – এসবের পেছনে আছে, সেই ৩৫ বিলিয়ন ডলারের সমর্থন। ব্যবহৃত হয় নির্বোধ মুসলমান – যারা মূলতঃ কোরআন বিচ্ছিন্ন।

২০০২-২০০৩ সালে চীনের সামরিক বাজেট ছিল ৩৫ বিলিয়ন ডলার যার পরিমাণ মাত্রাটি বড় হয়ে গেছে বলে আমেরিকা চীনের উপর আপত্তি তুলেছিল। অথচ, আগেই বলেছি , একই বছর আমেরিকা ইসলাম বিষয়ক গবেষণা ও এক্সপার্টিজ এর জন্য যে বাজেট করেছে তার পরিমাণও ৩৫ বিলিয়ন ডলার। কি হয়েছে আমেরিকার? সারা পৃথিবীতে শত ধর্ম রয়েছে, আর কারো বিষয়ে নয় – শুধু মুসলমানদের বেলায় তাদের এতটা যত্ন নেয়ার প্রয়োজন হয় কেন? যদিও এর উত্তরটি বিশাল তবু তার মূল ” কিং ডেভিডের কিংডম অব ইসরাঈল ” প্রতিষ্ঠার সুদূরপ্রসারী জায়নবাদী ব্যবস্থার মূলে প্রোথিত। ইহুদীরা অর্থের মালিক। ইহুদীরা ইসলামের চিরশত্রু । ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ। ইরাকে আমেরিকার আগ্রাসনের অন্য অর্থ হলো ইরাকে ইহুদিদের ভাড়াটে শক্তির আগ্রাসন। জন্মগতভাবেই তাদের মধ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতা আর ঘৃণার প্রেষণা কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে। এই প্রেষণায় তাড়িত হয়ে তারা দুনিয়াময় যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে যাবে। (৫:৬৪)। মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ ঘরে বাইরে। ঘরের যুদ্ধে ইহুদীদের ভাড়াটে সৈনিক হলো আজকের শহর কেন্দিক আধ্যাত্মিক সূফী সাধকের গোষ্টি। ওরা ইহুদিদের এজেন্ট। ওরা সাধক নয়, ওরা চর (Spy) এবং চোর । ওরা সূফী নয়, ওরা অর্থলোভী ভোগসেবী, চরিত্রহীন, প্রবঞ্চনাকারী শয়তানের প্রকাশ্য পুত্র। এই ” সূফী সাধকরা ” ইসলামের সর্বনাশ ঘটায়। মুসলমানদের সাধারণ জ্ঞানেই বুঝবার কথা যে, সুফী সাধকগণ নির্লোভ, নির্জনতা-প্রিয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা তাদের একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু বর্তমান সূফী সাধকরা ডিশ এন্টেনার যাবতীয় অনুষ্ঠান উপভোগকারী, এক্সরেটেড ভিডিও (Porn Movie) দর্শক, শহর কেন্দ্রিক প্রচার বিলাসী ও ভোগপ্রিয়। ওরা যা সৃষ্টি করেছে তা হলো ফিতনা। ফিতনা হলো ফ্যাসাদের জন্মদাতা। বিলাশবহুল গাড়ীতে চড়ে নবী (সাঃ) আচার ও আদর্শের শিক্ষা দেয়। যে নবী ৮ হাত x ১২ হাতের কুঁড়ে ঘরে জীবন ব্যয় করলেন ও রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ করলেন, সে নবীর আদর্শ কাদের দ্বারা এবং কী উপায়ে প্রচার হচ্ছে?

কাদিয়ানী মুসলিম জাতি ধ্বংসের ইহুদী হাতিয়ার:

কাদিয়ানী একটি সম্প্রদায় যারা ইসলামের পরিচয় ও পোশাকে ইসলাম ধ্বংসের জন্য এক অতি শক্তিশালী ইহুদি হাতিয়ার। কাদিয়ানীরা ইহুদিদের স্বজাতিসম। ইহুদিদের মতই তারা কোরআন বিকৃতির সার্বিক প্রচেষ্টা করেছে। ইহুদিদের সাথে তাদের পার্থক্য হলো – ইহুদিরা যেখানে তৌরাত পরিবর্তন করে নিজেদের মনগড়া বক্তব্যের সংযোজন দ্বারা তৌরাতকে “ ওল্ড টেস্টামেন্টে ” পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে, সেখান কাদিয়ানীরা তা পারেনি। ইহুদি প্রভাবে আমেরিকা মুসলমান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ তৈরি ও গবেষণায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকে। ২০০২-২০০৩ সালে তাদের এই বাজেট ছিল ৩৫ বিলিয়ন ডলার। সীমাহীন অর্থ। এই বিপুল অর্থের একটি বড় সুবিধাভোগী দলের নাম কাদিয়ানী। ইসলামের আবরণে ইসলামের ভাষায় ইসলামের সুরে ইসলামের সর্বনাশের এরা জীবন্ত প্রত্যয়। ইসলামের দেশে ইসলামের বেশে এরা মুসলমান বেশধারী ইহুদি। কাদিয়ানীরা যেভাবে তাদের মতবাদের প্রসার ঘটানোর কার্য করে বেড়ায়, খৃস্টানরা অনুরূপভাবে অর্থ, প্রতিষ্ঠান ও প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দিয়ে দরিদ্র মুসলমানকে খৃস্টান ধর্মে দীক্ষিত করে চলছে অতীত হতে।

রাসুল (সা:) কে নিয়ে ইহুদীদের আশাভঙ্গ ও বিশৃঙ্খল কর্মকান্ড:

ইসলামের ইতিহাসে অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে হিজরতের পর। ইসলামের শেষ নবী চিরাচরিত কিবলা মক্কাকে পিছনে ফেলে দীর্ঘ ১৭ মাস মসজিদুল আকসাকে কিবলা ঘোষণা করেন এবং সে অনুসারে নিজে এবং অনুসারিগণ তথা সমস্ত মুসলমান মসজিদুল আকসার দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেন। ইহুদি-খৃষ্টান মূলত মুসলমানদের এই প্রতিশ্রুত নতুন আইনেরই আওতাভূক্ত এক অভিন্ন জাতি; তাদের মূল ইসলামের আদি সত্তায় প্রোথিত এবং নামে ইহুদি ও খৃষ্টান হলেও তাদের আত্মার উৎস রয়েছে ইসলামে এবং নতুন অবতীর্ণ কোরআনের সাথে – এই সংবাদ তাদেরকে এই কেবলা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে পৌঁছে দেয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে এর মূল লক্ষ্যবস্তু ছিলো বনি ইসরাঈল। বনি ইসরাঈল অস্বীকার করেছে ঈসা (আঃ)-কে। তৌরাতের সাথে কোরাআনের সম্পর্কের বিষয়ে তারা পূর্ব হতেই অবগত এবং অপর পক্ষে খৃষ্টানগণ তাদেরই তৌরাতকে তাদের পুস্তকের অংশ হিসেবে মান্য করে। সুতরাং বনি ইসরাঈলের ঈমান আনয়ন খৃষ্টান ও অপরাপর পৌত্তলিকদের প্রভূতভাবে সাহায্য করতে পারে। বনি ইসরাঈল (এবং খৃষ্টানগণও) বিশেষভাবে হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্ম ও আগমনের বিষয়ে পূর্বাহ্নেই অবগত ছিলো। তারা নবীজী (সাঃ)-এর আগমন প্রতীক্ষায় মক্কায় ও ইয়াসরিবে (মদীনায়) দলে দলে ভিড় জমিয়েছিলো। আল্লাহপাক তাদের এই পূর্ব আয়োজন ও প্রস্তুতিকে কোরআনের বাণীতে মোহরান্কিত করে রেখেছেন – “ পূর্ববর্তী কিতাব সমূহে অবশ্যই ইহার (কোরআন) উল্লেখ আছে। (২৬:১৯৬)। বনি ইসরাঈলের পণ্ডিতগণ পূর্বাহ্ণেই ইহা অবগত আছে – ইহা কি উহাদিগের জন্য নিদর্শন নহে?” (২৬:১৯৭)

ইহুদিরা অত্যন্ত আত্মাভিমানি জাতিতে পরিণত হয়ে যায়। তারা দাম্ভিকতায় পৃথিবীতে যারপরনাই বাড়াবাড়ি করতে শুরু করে। তাদের দাম্ভিক প্রত্যাশা ছিলো – শেষ নবী তাদের বংশেই এবং ইহুদি ঔরসেই জন্ম নেবেন। বনি ইসরাঈলের এই দাম্ভিকতার কারণ ছিল যে ইতিহাসের শক্তিশালী নবীগণ তাদের মধ্যে এসেছে সুতরাং তারা পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ জাতি, আল্লাহ পাকের একমাত্র পছন্দপাত্র জাতি হিসেবে তারা পৃথিবীতে চির উন্নত। ইসরাঈলের বাইরে স্বর্গীয় দয়া নেই এবং শেষ নবী যা তৌরাতে বহুল প্রতিশ্রুত, সে নবীর জন্ম তাদের ভিন্ন অন্য কোন জাতিতে নয়।

অথচ ইতোমধ্যেই তারা হয়ে পড়েছে সীমা লংঘনকারী। যখন তারা দেখলো যে দিনক্ষণের নির্ধারিত জন্মটি ইহুদি পরিবারে নয়, একটি আরব পরিবারে, তখন তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। শেষ নবীর আগমন নিয়ে মাতামাতি কেটে যায় কিন্তু সমস্যার সূচনা হয় কেবল যখন মুহাম্মদ (সাঃ) নবুয়তের বাণী প্রচার শুরু করেন। তারা মুহাম্মদুর রসুল (সাঃ)-কে অস্বীকার করে। আল্লাহপাক ঘটনাটি কোরআনে লিপিবদ্ধ করে দেন – “ উহা কত নিকৃষ্ট যাহার বিনিময়ে তাহারা তাহাদের আত্মাকে বিক্রয় করিয়াছে উহা এই যে, আল্লাহ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন, ঈর্ষান্বিত হইয়া তাহারা তাহাকে প্রত্যাখ্যান করিত শুধু এই কারণে যে, আল্লাহ তাঁহার বান্দাদের মধ্য হইতে যাহাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। সুতরাং তাহারা ক্রোধের পাত্র হইল। (২:৯০)

ইহুদিদের রোষানল নবীজী (সাঃ)-কে বিভিন্ন হত্যা-ষড়যন্ত্রের শিকার করলো যদিও আল্লাহপাক প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে তাঁর রাসুলকে প্রয়োজনীয় তথ্য পূর্বাহ্ণেই অবগত করেছিলেন এবং নিরাপত্তা বিধান করলেন। কিন্তু ইহুদিদের প্রতি আল্লাহপাকের করুণার দরজা বন্ধ করার পূর্বে নবীজী (সাঃ) কর্তৃক কিবলা পরিবর্তন ছিল এক বিশেষ ও সর্বশেষ ছাড়। ইহুদীরা এই শেষ সুঝোগটুকু গ্রহণ করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আল্লাহপাক কিবলাকে আবার কাবা ঘরের দিকে প্রবর্তন করেন। এই ঘটনা ইহুদী জাতির প্রতি ইসলামের উন্মুক্ত দরজাকে রুদ্ধ করে দেয়। তারা হয়ে পড়ে চিরদিনের জন্য অভিশপ্ত জাতি। তাদের বিষয়ে আল্লাহপাক কোরআনে সুস্পষ্ট ফয়সালা প্রকাশ করেন- “ অতঃপর আমি বনি ইসরাঈলকে বলিলাম- পৃথিবীতে তোমরা বসবাস করিতে থাক এবং যখন তোমাদের প্রতি আল্লাহর শেষ প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হইবে তখন তিনি তোমাদের সকলকে “ফিইফা”-তে একত্রিত করিবেন”। (১৭:১০৪)

কী এই “ফিইফা”, কী এই “শেষ প্রতিজ্ঞা”? এ কী শেষ বিচারের প্রতিশ্রুতি এবং তাদের (ইহুদিদের) একত্রিকরণ, না-কি তার বাইরে অন্য কিছু?

প্রকৃতপক্ষে, এই আয়াতের সঠিক অধ্যয়ন ইহুদী সমস্যার চরিত্র বুঝতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে। আমরা আয়াতখানি বুঝতে চেষ্টা করবো।

কোরআনের কোন সূরা যেভাবে সন্নিবদ্ধ করা হয়েছে সেভাবে কখনোই অবতীর্ণ হয়নি। বিশেষভাবে বড় সূরাগুলি। সময় ও প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। বিশ্বের বিস্ময়কর গ্রন্থ আল-কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে এক অভিনব পদ্ধতিতে। আজ একটি সূরার দু’টি আয়াত, কাল অন্য একটি সূরার পাঁচটি আয়াত, অনেকদিন পর অপর একখানি আয়াত যা অন্য একটি সূরার অন্তর্ভূক্ত, অনেকদিন পর হয় তো অন্য কোন একখানি আয়াতাংশ যা অপর কোন সূরার কিংবা পূর্বের কোন সূরার অংশ। এইভাবে ঝিগ্ঝাগ্ (Zigzag), মানবীয় শৃঙ্খলা হতে অতি ভিন্ন এবং ধারণার সাধ্যের অতীত এক পদ্ধতিতে মোট ২৩ বছরের বিস্ময়কর কোরআন, বিস্ময়কর অভিনবতায়, বিস্ময়কর সত্যে বিস্ময়করভাবে বিশ্বের বিস্ময়কর পরিস্থিতিতে বিস্ময়কর মানুষ মুহাম্মদ(সাঃ)-এর উপর অবতীর্ণ হয়। যিনি এই বিশাল গ্রন্থ লিপিবদ্ধ করেছেন একবারে এবং যার কোন দ্বিতীয় খসড়ার প্রয়োজন পড়েনি এবং যাতে একটি ভুলের ঘটনা ঘটেনি সেই বিশাল গ্রন্থের (মানবীয় দৃষ্টিত) প্রণেতা কিংবা সন্নিবেশকারী মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একজন ইতিহাস স্বীকৃত নিরক্ষর উম্মী! উদাহরণস্বরূপ বলা যায় – “আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করিলাম” (৫:৩)। এই বাণীটুকু একটি পূর্ণাঙ্গ স্বতন্ত্র অবতীর্ণ বাণী যা বিদায় হজ্জে নবীজী (সাঃ) যখন উপস্থিত জনতার সাক্ষী গ্রহণ করার পর আকাশের দিকে তাকালেন- ঠিক তখনই তা অবতীর্ণ হয়েছিলো এইটুকুতেই। কিন্তু কোরআনে তা স্থান পেল এক বিস্ময়কর ভঙ্গিতে – তার পূর্বে এক সুবিশাল বক্তব্য এবং তার পর অন্য এক বক্তব্য, মাঝখানে স্থান পেল বিদায় হজ্জের এই গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা একটি বড় আয়াতের অংশ হিসেবে। আর সেই সুবিশাল আয়াত একটি সাধারণ খাদ্য আইন। কি বিস্ময়! অতএব, ১৭:১০৪ আয়াতকে পূর্ববর্তী আয়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করে যদি পাঠ করা হয়, তবে এই আয়াতের ঘোরতর ঘোষণা যেন প্রচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। প্রিয় পাঠক, The Holy Quran, A. Yusuf Ali-র ভাষ্যে এ আয়াতের টীকা কিংবা অন্যান্য তফসিরে প্রদত্ত টীকা সমূহে যে টানাপোড়েন প্রত্যক্ষ করা যায় তার দিকে দৃষ্টি রেখে ১৭:১০৪ আয়াতকে একটি স্বাবলম্বী আয়াত হিসেবে পাঠ করার জন্য অনুরোধ করছি।

কোরআন প্রতিশ্রুত ফি-ই-ফা কী? لَفِيفً۬اফি-ই-ফা-এর (fayafin) আভিধানিক অর্থ মরুভূমি। কিন্তু (faifa / faifan) শব্দটির আরো সুনির্দিষ্ট অর্থ প্রদান করেছেন F. Steingass – dangerous desert কিংবা dangerous plain. সুতরাং ১৭:১০৪ আয়াতে বনি ইসরাঈলের একত্রিকরণের প্রতিশ্রুত বিষয়টি অবশ্যই একটি বিপজ্জনক একত্রিকরণ বা মূলত ইসরাঈল জাতির শেষ সর্বনাশের সঙ্গে জড়িত। ইসরাঈলকে কেন ফি-ই-ফা -তে একত্রিত করা হবে যার একটি উপাদান তাদের ধ্বংস? এর উত্তরটি কোরআন দিয়েছে পরিষ্কারভাবে। বনি ইসরাঈল পৃথিবীতে দু’টি বড় আকারের ফ্যাসাদ সৃষ্টি করবে – এ বিষয়ে পূর্বেই তাদেরকে সাবধান করা হয়েছিলো যেন তারা সতর্কতার সঙ্গে ক্ষতি পরিহার করার সুঝোগ পায়। এর একটি ছিলো তৌরাত ব্যাপক পরিবর্তন সাধন ও তৌরাতকে পরিবর্তন করার মাধ্যমে তাদের নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধি এবং ফলশ্রুতিতে মূলত মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও একটি নতুন ধর্মের উন্মেষ “ইহুদিবাদ”। হজরত সুলায়মান (আঃ)-এর মৃত্যুর পর তাঁর দুই সন্তান জেরিবোয়া ও রেহবোয়া ইসরাঈল সাম্রাজ্যকে জুডা ও ইসরাঈল এই দু’ই ভাগে বিভক্ত করে ফেলে। জুডার অন্তর্ভূক্ত হয় জেরুজালেম। জেরুজালেম ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। এতে ইসরাঈল সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় নগর ‘সীচেম’কে খ্যাতি ও গুরুত্ব প্রদান করা ধর্মীয় খৃষ্টদের এক গুরুতর দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। তজ্জন্য তারা নিজ হস্তে তৌরাত পরিবর্তন শুরু করে এবং নকল তৌরাত বিধি অনুসারে ধর্ম ও রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ শুরু করে। এই ঘটনায় জুডা তথা জেরুজালেমকেন্দ্রিক রাবাইগণও তাদের গুরুত্ব বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় আত্মনিয়োগ করে। দুইদলে তৌরাত পরিবর্তনের চলে ব্যাপক প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় খোদায়ী আইন মুছে যায় এবং মানুষের লিখিত আইন দ্বারা সমাজ, ধর্ম ও পৃথিবী ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মূলত আজকের ইরাক দখল ও অন্যান্য ঘটনা সেদিনের সেই নকল তৌরাত মানুষের হাতে পরিবর্তন সাধনেরই এক বাস্তব ফসলের ক্ষেত্র চিত্র। যখন স্রষ্ট্রার কল্যাণময় আইন মানুষ কর্তৃক অবলুপ্ত করা হয় এবং মানবীয় আইন ও বিধান দ্বারা তা প্রতিস্থাপিত হয় – তখন এ ঘটনাগুলোকে কোরআনের ভাষায় বলা হয় ফ্যাসাদ। ফ্যাসাদ মূলত খোদায়ী আইনকে প্রতিরোধই করে না- বরং খোদার অস্তিত্বকে সৃষ্টি হতে মুছে ফেলার যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও প্রয়োগ করে।

বনি ইসরাঈল কর্তৃক দ্বিতীয় ফ্যাসাদটি সংঘটিত হয় হজরত ঈসা (আঃ)-কে অমান্যকরণ ও তাঁকে হত্যা করার ষড়যান্ত্রিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে। এই ঘটনার ফলাফল হিসেবে জন্ম নেয় একটি শির্কবাদী ব্যবস্থা – খৃষ্টানবাদ। মূলত ইহুদি ও খৃষ্টান উভয়ের সীমামন্ডল ইসলাম ভিন্ন অন্য কিছুই হবার কথা ছিল না। যতদিন পর্যন্ত তারা তৌরাত অবলম্বন করেছিলো – তারা ছিল মুসলমান। নকল তৌরাত আবিষ্কারের মাধ্যমে তারা নতুন ধর্মের জন্ম দিয়েছে -যা হলো ইহুদিবাদ। এটি ছিলো প্রথম ফ্যাসাদ। পরবর্তী ফ্যাসাদ ছিলো তাদেরই অকল্যানের স্রোত প্রবাহে সৃষ্ট খৃষ্টানবাদ। উভয়বাদই মূলত ইসলামের সাক্ষাৎ বিরুদ্ধাচারণ এবং উভয়বাদের সর্বশেষ লক্ষ্য হলো পৃথিবী হতে আল্লাহর অস্তিত্ব, তাঁর আইনের অস্তিত্ব, তাঁর বাণীর অস্তিত্বকে পূর্ণভাবে অবলুপ্ত করে তাদের নিজ হাতে তৈরি করা আইনে পৃথিবী শাষন করা। আর এই উভয়বাদের বিরুদ্ধেই হলো কোরআনের আগমন।

কোরআনের বাস্তব প্রায়োগিক পদ্ধতি একজন রাসুল (সাঃ)-এর দ্বারা ব্যবহারিক বলয়ে সাধারণ মানুষের জীবন ব্যবস্থায় কিভাবে যোগ্যতা ও কৃতকার্যতার সাথে কাজ করে, তার উদাহরণ সেই রাসুল (সাঃ) ইসলামকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করতে কোন অতিপ্রাকৃতিক ব্যবস্থার আশ্রয় নেন নি। তিনি ছিলেন একজন রাসুল (সাঃ) যাঁর জীবন ছিল অন্যান্য সাধারণ মানুষেরই মত, ক্ষুধা, দুঃখ, যন্ত্রণা, অসুস্থতা, ব্যর্থতা, যুদ্ধ, শান্তি, জ্ঞান, শিক্ষা, বিনয় ইত্যাদি যা কিছু কল্পনা করা যায় অপরাপর মানুষের জীবনের জন্য- সেই সমস্ত ব্যবহারের সমষ্টিতেই। এমনি স্বাভাবিক ব্যবহার, প্রয়োজন ও সীমাবদ্ধতাকে বিবেচনা করেই উৎসারিত হয়েছিল ইসলামের জীবন ব্যবস্থা। তারপর অর্ধ বিশ্ব বিজয় করেছিলো মুসলমান তাঁরই শেখানো পদ্ধতিতে। আল্লাহ্পাক এই রাসুলের (সাঃ) পদ্ধতিতেই ইসলামের বিজয় দেবেন এই প্রতিশ্রুতি করেছিলেন- “কাতাবাল্লাহু লাআগলিবান্না আনা ওয়া রাসুলী”- এই আয়াতে। বিজয় যখন অর্ধেক- তখন মুসলমান পথচ্যুত হল, পরিণামে পদচ্যুত হল। যদি বিপর্যয় আসে, মুক্তি কোন পথে তারও পদ্ধতি দেয়া হলো- ‘জিহাদ’। কিন্তু মুসলমান আর আল্লাহর সৈনিক হিসেবে নিজ অবস্থান রক্ষায় সমর্থ হলো না। যখন মুসলমান ব্যর্থ হলো- তখন দায়িত্ব চলে আসে স্বয়ং আল্লাহর; তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পূর্ণ বিজয়ের। যদি মুসলমান ব্যর্থ হয়ে যায়, তবে পরিণতিটির গতি প্রকৃতি কী হবে, তা-ও কোরআন ও হাদীছে বর্ণিত রয়েছে নিখুঁতভাবে। তারই ক্রমধারায় নেমে আসবে দু’টি ঘটনা বা ‘ফেনোম্যানন’ বা প্রপঞ্চ যার একটি দাজ্জাল এবং অপরটি ইয়াজুজ মা’জুজ। পৃথিবী দাজ্জালের ফিৎনায় ভেসে যাবে, ইসলাম ইয়াজুজ মা’জুজের হাতে মার খাবে। ইসলাম হতে জিহাদী চেতনা যখনই বিদায় নেবে, তখনই ইসলাম আক্রান্ত হবে এ দু’টি প্রপঞ্চ দ্বারা। মানুষ উদাসীন হতে হতে চরম সীমালংঘনকারী হয়ে যাবে- যা আজকের নিত্যদিনের দৃশ্য। আর দূর্ভাগ্যজনকভাবে সীমালংঘন উৎসবে যোগ দেবে মুসলমান। প্রকৃতপক্ষে ইসলাম ও অনৈসলাম এ দুয়ের পার্থক্য বিলীন হয়ে পড়বে এ দু’টি আঘাতে। স্রষ্টার অস্তিত্ব, প্রত্যাবর্তন, স্মরণ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, আনুগত্য, ভয় ইত্যাদি বিলুপ্ত হবে। ইসলাম যতটুকু বেঁচে থাকবে – ইসলাম হিসেবে নয়, একটি স্মৃতি হিসেবে। ইসলামের মৌলিকতা হারিয়ে গিয়ে অমৌলিক বিবেচনা সমূহ হবে ঘোরতর বিবেব্য বিষয়। ইসলামের প্রকৃতি প্রাকৃতিক গতিতে হারিয়ে বসবে মুসলমান, তাকে ধরে রাখতে প্রয়াসী হবে না আর। আল্লাহ পাক স্বয়ং তাতে হস্তক্ষেপ করবেন। মুসলমানদের পরিণাম যখন অতি সংকটজনক হবে, আবির্ভাব হবে ইমাম মাহদী (আঃ) এবং তারপর হজরত ঈসা (আঃ) যিনি অকাতরে শেষনবী (সাঃ) উম্মত হবার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। হজরত ঈসা (আঃ) এর আগমন ও তাঁর পরবর্তী ঘটনার ফলাফল হবে যে পৃথিবীতে ইসলাম ব্যতীত আর কোন মতবাদ থাকবে না। আল্লাহ পাকের প্রতিশ্রুতি পরিপূর্ণ হবে।

হজরত ঈসা (আঃ) পর শত বছর কিংবা আরো অনেক বছর পার হয়ে যাবে – ততদিনে মানুষ আবার পূর্ণ গোমরাহীতে ফিরে যাবে। সে সময়টি দ্রুত ধাবিত হবে মহাঘটনার দিকে – কিয়ামত বা কারিয়া। ধ্বংস হয়ে যাবে এই সুন্দর পৃথিবী। ইতিহাস শেষ হবে এখানেই। সূরা কাহ্ফ এর ৯৪ নম্বর আয়াতে ফ্যাসাদ ও ইয়াজুজ মা’জুজ সম্পর্কে প্রস্তাব এসেছে- ‘ইয়াজুজ ও মা’জুজ পৃতিবীতে চূড়ান্ত পর্যায়ের ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে চলেছে’।একদল মুশরিক মদীনায় অবস্থানরত রাবাইদের কাছে মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে প্রশ্ন করে- তিনি আদৌ সত্য নবী হতে পারেন কি-না। উত্তরে রাবাইগণ ৩টি প্রশ্ন করার পরামর্শ দেয় যার উত্তর একমাত্র নবীগণ ব্যতীত অপর কোন মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তার একটি প্রশ্ন ছিল – গুহায় অবস্থানকারীদের সম্পর্কে, অপরটি ছিল একজন মহান বিশ্বজয়ী শক্তিশালী ব্যক্তি সম্পর্কে যার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে ইয়াজুজ ও ম’জুজ এ সঙ্গে এবং অপর প্রশ্নটি ছিল প্রাণ বা রূহ সম্পর্কে। প্রাণ বা রূহ সম্পর্কে যে প্রশ্নটি করা হয়েছিল তা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণ বিষয়ক তথ্য এবং তত্ত্ব। পৃথিবীর বিজ্ঞান এর চাইতে ভাল কোন উত্তর জানে না। গুহাবাসীগণের প্রশ্নটিতে মূল প্রতিপাদ্য বিষয়টি ছিল- সময় সংক্রান্ত। মহান দিগ্বীবিজয়ী সম্রাট যুলকারনাইন এর কারনাইন শব্দের অর্থ দু’টি শিং কিংবা দু’টি সময়কাল (epoch) ।সূরা কাহ্ফ-এ দু’টি প্রশ্নের জবাব এসেছে এবং দু’টি উত্তরেরই সংশ্লিষ্টতা রয়েছে একটি মৌলিক জিনিষের সঙ্গে – তা হলো সময়। যুলকারনাইনের ঐতিহাসিক সুস্পষ্টতা দূর্বোধ্য। যুলকারনাইনের কাহিনী অবতারণা করার পূর্বে হজরত মুসা (আঃ) জনৈক জ্ঞানী ব্যক্তিকে অনুসরণ করে চলছিলেন এবং পথিমধ্যে অনেক দুর্বোধ্য ঘটনার সৃষ্টি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত জ্ঞানী ব্যক্তি হজরত মুসা (আঃ)-কে যে ব্যাখ্যা দান করেছেন, তা হতে একটি সত্য বেরিয়ে আসে যা হলো- আপাতদৃষ্টিতে যা যুক্তিসংগত মনে হচ্ছে না এমন ঘটনার মূলে অনেক যুক্তির দৃঢতা থাকতে পারে। এই ঘটনাগুলোর পরপরই ১৮:৮৩ আয়াত হতে যুলকারনাইনের ঘটনার সূত্রপাত হয়। যুলকারনাইনকে যদি রূপক অর্থে ধরে নেয়া হয় (আমরা প্রকৃতপক্ষে এই দিগ্ববিজয়ী বাদশাহের সম্পর্কে ঐতিহাসিকভাবে কিছুই জানি না এই জন্য যে তার কোন তথ্য নেই) যুলকারনাইনের আমাদেরকে কালের একটি ‘মডেল’ প্রদান করে এবং এই মডেলে সমকাল বা বর্তমানকালকে সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়। যুলকারনাইন ছিলেন শক্তির উদারহরণ, তাঁকে সকল উপকরণ দান করা হয়েছিল বলে কোরআন উল্লেখ করেছে। উপকরণসমূহ কী হতে পারে? তার উত্তর কোরআন দিয়েছে- “তাহাকে পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের উপায় উপকরণ দান করিয়াছিলাম” (১৮:৮৪)। কালের মডেলটির উপযোগিতাও এই উপায় উপকরণের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। উভয় কালের জন্য যুলকারনাইনের ঘটনার উপযোগিতা থাকতে পারে।

যুলকারনাইনের কালের মডেলটি ছিল ৩টি বিশেষ সময়কালকে নিয়ে। “ চলিতে চলিতে সে যখন সূর্যের অস্তগমন অঞ্চলে পৌঁছিল তখন সে সূর্যকে এক পঙ্কিল জলাধারে অস্তগমন করিতে দেখিল এবং তথায় সে এক সম্প্রদায়কে দেখিতে পাইলেন। আমি বলিলাম, হে যুলকারনাইন! তুমি ইহাদিগওকে শাস্তি দিতে পার অথবা ইহাদিগের ব্যাপারে সদয় ভাব গ্রহণ করিতে পার (১৮:৮৬)। সে বলিল- যে কেউ সীমালংঘন করিবে আমি তাহাকে শাস্তি দিব, অতঃপর সে তাহার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হইবে এবং তিনি তাহাকে কঠিন শাস্তি দিবেন (১৮:৮৭)। তবে যে ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে তাহার জন্য প্রতিদান স্বরূপ আছে কল্যাণ এবং তাহার প্রতি ব্যবহারে আমি নম্র কথা বলিব (১৮:৮৮)। সূর্য সত্যের প্রতীক এবং জল স্বচ্ছতার প্রতীক। সাধারণত সূর্যকে যে জলাশয়ে ডুবতে দেখা যায়- সে হলো সমুদ্র। সমুদ্রের জল স্বচ্ছতার প্রতীক। সূর্যাস্তের সাধারণ দৃশ্যটি হলো সামনে স্বচ্ছ জলাধার এবং তাতে সূর্যের অস্তগমন। কোরআনে চিত্রায়িত যুলকারনাইনের অস্তগমন স্থানে পৌঁছা যদি কালের শেষে সময়ের চিত্র হয়, তবে ব্যক্ত তথ্যটি হলো যে – শেষকালে সত্য পঙ্কিল অস্বচ্ছতায় নিমজ্জিত হবে। সে সময়ের পৃথিবীবাসীগণের আদর্শিক অবস্থান হবে এমন যে তারা সীমালংঘনের সাথে সংশ্লিষ্ট হবে, ফলত তারা যুলকারনাইন কর্তৃক ইহকালে শাস্তি প্রাপ্ত হবে এবং যুলকারনাইনের প্রতিপালক তাদেরকে পরকালে শাস্তি প্রদান করবেন। শুধুমাত্র বিনয় নম্র ব্যবহারের উপযুক্ত হবে তারা যার সৎকর্মপরায়ণ (ইসলামী আদর্শে প্রতিষ্ঠিত)। আমরা এমন একটি সম্ভাবনা দ্রুত এগিয়ে আসতে দেখছি। সামনে আসন্ন হজরত ঈসা (আঃ)-এর প্রত্যাবর্তন। তিনি সীমালংঘনকারীদের পৃথিবীতে শাস্তি দিবেন তাঁর প্রত্যাবর্তনের পর; এ শাস্তি পৃথিবীতেই সংঘটিত ঐশ্বরিক শাস্তি। অগ্নি, ভূমিধস, ক্ষুধা, মহামারী, ধোঁয়া ইত্যাদি সকল প্রকারের শাস্তি পৃথিবীতে তাদের জন্য যারা ইসলামকে লাঞ্ছিত করেছে। আর শেষ যুগে যারা ঈমানকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে তাদের জন্য রয়েছে প্রতিশ্রুত মহা সুখ সংবাদ। হজরত ঈসা (আঃ) এসে এমন একটি শক্তিশালী সংঘের সাথে যুদ্ধ করবেন সমস্ত পৃথিবী যাদের কাছে হবে পদানত। এই পৃথিবীতে তাদের মুখোমুখি হবার শক্তি কারো থাকবে না। ইহুদি ও খৃষ্টান অধ্যুষিত এই কুফ্ফার বাহিনীর জন্য রয়েছে পৃথিবীতে ভয়ানক শাস্তি (যা হজরত ঈসা (আঃ) এর পক্ষ হতে) এবং পরকালে তারা ইসলাম নির্মূল অভিযানে আত্মনিয়োগের জন্য পাবে প্রতিপালকের শাস্তি। আমরা জানি না যুলকারনাইনের চরিত্রটি শেষযুগে হজরত ঈসা (আঃ) এর রূপায়ন কি-না।

যুলকারনাইনের অপর যাত্রাটি পূর্বদিকে। যেহেতু সূর্যোদয়কালের সৃষ্টি ও সূর্যাস্তকালের শেষ এই রূপক উপমায় ব্যবহৃত হতে পারে সেহেতু সূর্যোদয় স্থলে কালের শুরুর চরিত্রটি আমরা ১৮:৯০ আয়াতে দেখতে পাই- “চলিতে চলিতে যখন সে সূর্যোদয় স্থলে পৌঁছিল, তখন সে দেখিল উহা এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদয় হইতেছে যাহাদিগের জন্য সূর্যতাপ হইতে কোন অন্তরাল আমি সৃষ্টি করি নাই” (১৮:৯০)। কালের শেষ অংশের বিপরীতে কালের শুরুর অংশটির বৈশিষ্ট্য কি, তা এ আয়াত ব্যাখ্যা করে। কালের শুরুর অংশে সমুদয় মানবমন্ডলী সত্যের সঙ্গে (সূর্য) এর প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নিয়ে বিদ্যমান ছিল-এই সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছতে পারি। এই আয়াতের বৈশিষ্ট্য হলো যে যুলকারনাইনের এখানে কোন প্রত্যক্ষ ভুমিকা নেই- তিনি সুর্যোদয় অঞ্চলের জন্য একজন আগন্তুক বা দর্শক মাত্র- কোন প্রকার ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা নেই।

যুলকারনাইনের তৃতীয় যাত্রাটি একটি চিন্তা উদ্রেককারী ঘটনা। “চলিতে চলিতে সে যখন দুই পর্বত প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছিল, তথায় সে এক সম্প্রদায়কে পাইল যাহারা তাহার কথা একেবারেই বুঝিতে পারিতেছিল না” (১৮:৯৩) । উদয় অস্তাচলের বর্ণনার প্রেক্ষেতি কোথাও ভূমি সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়নি। দুই পর্বত প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থান দুই যুগের দুইটি সীমারেখা দ্বারা নির্ণীত! এই মধ্যবর্তী স্থানে একটি ঘটনা ঘটছে যা হলো- ইয়াজুজ ও মা’জুজ নামক দু’টি সম্প্রদায় ফ্যাসাদের জন্ম দিচ্ছে (১৮:৯৪)। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত একটি পদ্ধতি বা টেকনোলজি যা লোহা-তামা গলানোর আনুপাতিক (১৮:৯৬) সে সময় শ্রম একটি বিশেষ ভূমিকা রাখে – এ বিষয়ে আমরা সুস্পষ্ট ধারণা পাই। আমরা যদি সহজ ও সাধারণ দৃষ্টি প্রসারিত করি তবে সময়ের এ পর্যায়কে সম্ভবত ‘শিল্পের প্রকাশ প্রসার বিন্দু” বলে চিহ্নিত করতে পারি। অন্যভাবে বলা যায়- মানুষ যখন সংঘবদ্ধ শ্রমকে ইতিহাসে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহার করতে শিখেছে, সে সময়টিই হলো ইয়াজুজ ও মা’জুজ এর ফ্যাসাদ সৃষ্টিকাল, যার বিশ্বজোড়া তাৎপর্য থাকবে। চূড়ান্ততার সময়টি শিল্প বিপ্লব বিন্দু হিসেবেও হয়তো ভাবা যেতে পারে।

অন্যদিকে দুই পাহাড়ের প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থানিক মান পৃথিবীতে তাদের অস্তিত্ব ও প্রভাবের দুঢতার সমানুপাতিক করা যায়। আর শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণ দ্বারা প্রতিরক্ষার বিষয়টি তাদের সাথে সম্পর্কের বিচ্ছিন্নতার আনুপাতিক হতে পারে। যেখানে বাঁধটি হতে পারে কোরআন হাদীছের শক্তিশালী আইন ও নৈতিকতার দেয়ালের সমানুপাতিক। এটি হতে পারে সর্বকালীন দৃষ্টিভঙ্গি।

আমরা ‘ফ্যাসাদ’-এর কোরআন হতে ব্যাখ্যা নিতে চাই। সাধারণভাবে ফ্যাসাদের অর্থ হলো Corruption, False report, Mischief ইত্যাদি। কোরআন তার ভাব বলয়ে ফ্যাসাদের ব্যাখ্যা ভিন্নরূপে দেয় যার অর্থ দাঁড়ায় – যে কাজ শুধু আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণই করে না, কার্যত যা আল্লাহর অস্তিত্বকে মুছে দেবার লক্ষ্যে এগিয়ে যায় তার নাম ফ্যাসাদ। ফিরাউন যখন হজরত মুসাকে (আঃ) সমূলে ধ্বংস করার জন্য নীলনদে তৈরী হওয়া অলৌকিক রাস্তায় পিছু নিয়েছিলো, ঠিক তখনই দু’দিক হতে বিপুল পানি এসে ফিরাউন ও তার দলবলকে গ্রাস করে। ঐ সময় তার চোখের সম্মুখে সত্য উদ্ভাসিত হয়। সে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করার পূর্বে বাস্তবতা উপলব্ধি করে যে- “আমি বিশ্বাস করিলাম বনি ইসরাঈল যাঁহাতে বিশ্বাস করে। তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নাই এবং আমি আত্মসমর্পনকারী মুসলমানের অন্তর্ভূক্ত হইলাম। (১০:৯০)। এর প্রত্যুত্তরে আল্লাহপাক কোরআনে জগৎবাসীকে ফ্যাসাদের সংজ্ঞা জানিয়ে দেন। “ইতোপূর্বে তুমি ছিলে সীমালংঘনকারী এবং ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভূক্ত” (১০:৯১)। ইতোপূর্বে ফেরাউন যে কাজ করেছিলো তা ছিল – আল্লাহর অস্তিত্বের প্রচারকারীকে সমূলে বিলুপ্ত করার জন্য নিজের সর্বময় শক্তি প্রয়োগ ও নিজে সশরীরে অংশগ্রগণ এবং তার মাত্রাটি ছিল এমন পর্যাযের যে মৃত্যু ঝুঁকি ভুলে গিয়েও যাবতীয় শক্তি দিয়ে আল্লাহর অস্তিত্বের দাবিকে পৃথিবী হতে মুছে ফেলার আগ্রহ ও বাস্তবিক অংশগ্রহণ। তাই হলো ফ্যাসাদ। “নিশ্চয় ইয়াজুজ ও মা’জুজ দেশে (বা পৃথিবীতে) ফ্যাসাদ সৃষ্টি করিতেছে।” (১৮:৯৪)। এর অপর অর্থ হতে পারে- ইয়াজুজ ও মা’জুজ পৃথিবীতে আল্লাহর অস্তিত্বকে বিলুপ্ত করে দেবার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের যাবতীয় কাজই হলো ফ্যাসাদ। ফলত ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী ইয়াজুজ-মা’জুজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে আর দুটি ঘটনার; একটি হলো সংঘটিত শ্রমের বিবেচনা ও অন্যটি হলো ধাতু শিল্পের বৈপ্লবিক ব্যবহার। এ ক্ষেত্রে বোঝার সুবিধার জন্য যদি আমরা শিল্প বিপ্লবকে সেই ক্ষণকাল হিসেবে স্থির করি তবে বিস্ময়করভাবে দেখতে পাই যে একটি “খেজা সম্প্রদায়” ককেসাস পার্বত্য অঞ্চলে শিল্প বিপ্লবের কিছুকাল পূর্বে সহসা ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করে। একই অঞ্চল হতে এবং একই গোত্র হতে আর একটি দল খৃষ্টান হয়ে যায়। এরপর এই দুই গোত্রের লোকজন তদানীন্তন ইউরোপের প্রায় সর্বত্র ধর্মীয় প্রেষণায় ছড়িয়ে পড়ে এবং সর্বশেষে শিল্প বিপ্লব বলতে যা বোঝায় তা উক্ত খেজা সম্পদায়ের ইহুদী দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। ইহুদীদের নিকটবর্তী অপর দলটি ছিল এই ‘খেজা’ সম্প্রদায় হতে উৎসারিত খৃষ্টান। শিল্পের প্রভাব ও মালিকানায় সেই খেজা সম্প্রদায়ের ইহুদী প্রাধান্য (Dominance) সেই শুরুর কাল হতে বিদ্যমান ছিলো। এবং সে হতেই ইহুদী জাতি শিল্প ও বাণিজ্যে শীর্ষস্থান অধিকার করে নেয়। ধন্যবাদ ডঃ ইমরান নূর হোসেন – প্রাপ্তিটির জন্য। এই খেজা বংশোদ্ভূত ককেশিয় ইহুদি এবং খৃষ্টানরা বনি ইসরাঈলের সাথে কিভাবে সম্পর্কিত?তারা কেউই আদি ইহুদি / খৃষ্টান নয় যাদের মূল ছিল বনি ইসরাঈল সম্প্রদায়ে। তারা বনি ইসরাঈলের সাথে কোনভাবেই সম্পর্কিত নয়। কিন্তু পরিণামে ইতিহাসে তারা বনি ইসরাঈলের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বনি ইসরাঈলরা কেউই পৃথিবীতে সম্পদের পাহাড় সৃষ্টি করেনি। সম্পদ ও বাণিজ্যের অসীম ক্ষমতা ধরা দিয়েছে শিল্প বিপ্লবে যাদের নের্তৃত্বে সেই খেজা সম্প্রদায়ভূক্ত ইহুদি ও খৃষ্টানদের হাতে। ইহুদী ও খৃষ্টানে ধর্মান্তরিত একটি গোত্র পরিণামে দু’টি পৃথক গোত্রে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গিয়েও কার্যত সেই বনি ইসরাঈলদের পৃথিবীতে ইসরাঈল সাম্রাজ্য গড়ে দেয়ার বিষয়ে শুধু সহযোগিতাই করছে না- তারা পবিত্রভূমি বাইতুল মুকাদ্দাসে অবস্থিত ইসলামের গৌরব ও দ্বিতীয় কিবলা মসজিদুল আকসাতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তার ধ্বংস সাধনের দৃঢ় প্রত্যয় প্রমাণ করেছে একদিকে; অন্যদিকে বনি ইসরাঈল, যাদেরকে আল্লাহপাক পবিত্রভূমি হতে বহিষ্কৃত ঘোষণা করেছেন, তাদেরকে সেই ভূমিতে নকল তৌরাতের (Old Testament) কুফরী নির্দেশ প্রতিষ্ঠা দেয়ার সকল আয়োজন প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছে সফলভাবে। তাদের এই কাজটি খোদায়ী আইনের বিলুপ্তি ঘটানোর সহস্র চিহ্ণের একটি। অতএব আমরা সিদ্ধান্ত পেতে পারি যে শিল্প বিপ্লবের প্রধান দুটি ধারা খেজায়ী ইহুদী ও খেজায়ী খৃষ্টান সম্ভবত ইয়াজুজ মা’জুজের ভূমিকায় আত্মপ্রকাশ করেছে। বলাবাহুল্য তারাই কার্যত ইউরোপ এবং বিশেষভাবে যুক্তরাজ্য ও আমেরিকার অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে শীর্ষে বিখ্যাত জায়নবাদী ইহুদী ও জায়নবাদী খৃষ্টান হিসেবে চিহ্ণিত। কোরআনের কোন কোন অনুবাদে/তাফসীরে ইয়াজুজ-মা’জুজকে অতিপ্রাকৃতিক জীব হিসেবে রূপ দেয়া হয়েছে। সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীছ অনুসারে ইয়াজুজ হলো বনি আদমেরই একদল উম্মত এবং মা’জুজ হলো বনি আদমেরই একদল উম্মত। ইয়াজুজ ও মা’জুজ আমাদের মতোই রক্তমাংশের মানুষ। অর্থাৎ তারা মানুষ।

ডঃ ইমরান নযর হোসেনের (Imran Nazar Hosein) সাড়াজাগানো গবেষণা হতে জানা যায় যে ‘ক্বারিয়াত” বিষয়ক হাদীছের প্রতি যদি দৃষ্টিপাত করা হয়, তবে শেষকাল, ইয়াজুজ-মা’জুজ ইত্যাদির সাথে সংশ্লিষ্ট মোট ৫৮টি হাদীছের বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য বিখ্যাত হাদীছ গ্রন্থে চিহ্ণিত করা যায়। সমস্ত হাদীছ সমূহেই ক্বারিয়াত দ্বারা নির্দেশ করা হয়েছে জেরুজালেম শহরকে। কিন্তু কোরআন ক্বারিয়াতকে নির্দেশ করেছেন বৈশিষ্ট্যের দ্বারা- “ওয়ামালাকুম লা-তুক্বাতিলুনা ফী সাবিলিল্লাহি ওয়াল মুসতাদ’আফিনা মীনার রিজালী ওন্নেসায়ি ওয়াল বিলদানীল্লাযিনা ইয়াক্বেলনা রাব্বানা মীন হাযিহিল ক্বারইয়াতিয যালিমী আহ্লুহা” (৪:৭৫) অর্থাৎ যেখানে জেহাদ তোমাদের পৃথিবী জীবনের পরিচিতির অংশ, সেখানে তোমাদের কি হয়েছে যে তোমরা সে অভিযানে নিজেকে সম্পৃক্ত করবে না যখন একটি ক্বারিয়াত হতে বুকফাটা চিৎকার দিয়ে প্রার্থনা করছে একদল পুরুষ, নারী ও মানুষের শিশু আর বলছে হে আমাদের প্রভু আমাদেরকে এই যালিম-অত্যাচারের ক্বারিয়াত হতে মুক্ত করে দাও।

পৃথিবীর ইতিহাসে এমন উদাহরণ কেবল একটি। একটি ক্বারিয়াত বা শহরের নাম সমস্ত পৃথিবীর মানুষ জানে যেখান এত দীর্ঘসূত্রী তীব্র অত্যাচার ইতিহাসের কোনকালে ইতোপূর্বে ঘটেনি। সেখান পুরুষ ও যুবকরা শক্তিময় হয়েও নিরুপায়, নারীরা তীব্রতম অত্যাচারের ও পাশবিকতার শিকার আর অকাতরে ছেলেমেয়েদের জীবন ধূলির মূল্যে উড়ে যাচ্ছে। এই শহরের অত্যাচারের একদিকে তুলনা নেই ইতিহাসে; অন্য দিকে এই অত্যাচার ও চোখ ধাঁধানো অন্যায়ের বিরুদ্ধে নেই কোন বিচারের সম্ভাবনা কিংবা বিশ্ব বিবেকে প্রতিবাদ। এই ক্বারিয়াতকে আমরা চিহ্ণিত করতে পারি -যে জেরুজালেম তথা প্যালেষ্টাইন। বনি ইসরাঈল সারা পৃথিবীতে বিক্ষিপ্ত হয়ে ২ হাজার বছর অভিশপ্ত জীবন কাটিয়েছে। জাতি হিসেবে তারা শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার ছিল এক সময়। সেই শ্রেষ্ঠত্ব ও উন্নত অবস্থান হতে বনি ইসরাঈল পরিচয়হীন জীবন কাটিয়েছে এবং পৃথিবীতে অত্যাচার ও অবিচারের শিকার হয়েছে। তারপর অবলীলাক্রমে তারা জেরুজালেমকেন্দ্রীক জাতিগত সত্তা সৃষ্টি করেছে এবং তার প্রক্রিয়ায় স্থানীয় জনসাধারণ ও অধিবাসীগণকে (মুসলমান) তারা ইতিহাসের সবচাইতে জগন্যতম পদ্ধতিতে নিপীড়ন করে চলেছে। ইতিহাসের সবচাইতে বড় চিহ্ণিত নিপীড়ন হিটলার ইহুদীদের ওপর করেছিলো তাদের জার্মান জাতিসত্তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার কারণে। তারা জার্মানিতে বসে জার্মানি হতেই ষড়যন্ত্র করেছিলো ইংরেজদের পক্ষে এবং জার্মানির বিপক্ষে। হিটলার তাদেরকে বর্বরতম পদ্ধতিতে হত্যা করে। এই নাৎসী বর্বরতা হতে সম্যক অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা লাভ করা হলেও এই ইহুদি জাতি সেই ক্বারিয়াত বা শহর অর্থাৎ জেরুজালেমে একত্রিত হবার সুঝোগ পায়- তখন তারা নাৎসী অত্যাচারকে হার মানায় এমনি পদ্ধতিতে তারা প্যালেষ্টাইনে অত্যাচার আরম্ভ করে। এই অত্যাচার পৃথিবীর অন্যান্য স্থানকালের অত্যাচার হতে বৈশিষ্ট্যে আলাদা। ইসরাঈলের বিরুদ্ধে ন্যায়-অন্যায় বোধ নেই, থাকতে নেই কিংবা প্রয়োজন নেই- পৃথিবীর সমস্ত বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে এ যেন এক গ্রহণযোগ্য বিষয়। ইতিহাসে ইতোপূর্বে এই প্রকৃতির অত্যাচার কখনো মানবজাতি প্রত্যক্ষ করনি। অত্যাচারের গতিমাত্রা ও অনন্যতার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করার জন্যই এই অত্যাচারের প্রকৃতি দ্বারা কোরআন এই ক্বারিয়াত বা জনপদকে চিহ্ণিত করেছে- তা সন্দেহাতীতভাবে প্যালেষ্টাইন। কোরআন এই জেরুজালেমকেন্দ্রীক প্যালেস্টাইকেই আবার শেষকালে ইয়াজুজ-মা’জুজের সনাক্তকরণ মানদন্ড হিসেবে জগদ্বাসীর কাছে পরিচয় করে দিয়েছে। বলা দরকার যে ইয়াজুজ-মা’জুজ সম্পর্কে ইবনে খালদুন হতে প্রাপ্ত শিক্ষায় জ্ঞানী সম্প্রদায়ের সুবিশাল অংশ একে একটি হজরত ইসা (আঃ) পরবর্তী ঘটনা মনে করেন। মূলত এমন কতিপয় হাদীছ আছে যে, সব হাদীছসমূহকে ভুল বোঝা হয়েছে এই কারণে যে এখন থেকে মাত্র ১০ কিংবা ৫ বছর পূর্বেও ঐসব হাদীছের আবেদন সুষ্পষ্ট ছিল না। কারণ হিসেবে ঘটনার সাদৃশ্যহীনতা এবং আকস্মিক বৈচিত্র্য এবং যুক্তিযুক্ততা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্তের অভাব। বর্তমানে বিবিধ ঘটনাসমূহ ঘটার কারণেই কেবল ঐ হাদীছগুলোর নিখুঁত সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়েছে। হাদীছ সমূহ মূলত দাজ্জাল, ইয়াজুজ-মা’জুজ ও শেষকালে খৃষ্টান-ইহুদি আক্রমন ও মুসলমানদের নির্ঘাত পরাজয় সক্রান্ত।

কিন্তু কোরআন যে পদ্ধতি অবলম্বন করে তাতে কোনপ্রকার সহায়ক ছাড়াই সময়ের চরিত্র এবং শেষকালের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পরিষ্কার জ্ঞান পাওয়া সম্ভব এবং এ যুগে মুসলমানের কী কর্তব্য সে বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়। এ যুগে শেষকালের বিষয়ে নিশ্চিত জ্ঞান হওয়া একটি অতীব জরুরী বিষয় এই জন্য যে তা কর্তব্য ও কর্মপদ্ধতিকে নির্বাচন করতে সাহায্য করে।

ইতোপূর্বে আমরা ফিইফা সম্পর্কে অবগত হয়েছি যে আল্লাহপাক বনি ইসরাঈলের বংশধরদের শেষ শাস্তির জন্য অভিশপ্ত ভূমি ফি-ই-ফা তে সকলকে একত্রিত করবেন। যখন বনি ইসরাঈল ফি-ইফাতে একত্রিত হয়ে যাবে- পৃথিবীতে আর কখনো ‘আরদুল মুকাদ্দাস’ অবশিষ্ট থাকবে না। কারণ পূর্বে যাকে আরদুল মুকাদ্দাস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিলো ভালো সম্প্রদায়ের জন্য, তাকে এখন দুষ্ট প্রকৃতির বনি ইসরাঈলের জন্য ফিইফা-তে রূপান্তরিত করা হয়েছে। সুতরাং বনি ইসরাঈলের একত্রিত হওয়ার ঘটনাটি দুটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যার একটি হলো- তাদের একত্রিত হওয়ার দৃশ্যটি তাদেরই ধ্বংস হবার একটি বলিষ্ট প্রত্যয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর তারা প্যালেষ্টাইনে একত্রিত হয়েছে এবং এই ভূমিতে এক বিশেষ পদ্ধতিতে অত্যাচারের গিরিমালা তৈরি করেছে পৃথিবীর ইতিহাসে যার দ্বিতীয় নজির নেই। বৈশিষ্ট্যে ও উপাদানে এই অত্যাচার প্রক্রিয়াটি এমন যে তাদের অনন্য অমানবিক অত্যাচারের চক্রটিক ধারণ করে রেখেছে একটি শক্তি যা পৃথিবীর মানবতা, কল্যাণ, শান্তি ও ন্যায় বিচারের শিক্ষা দেয় এবং সমস্ত বিশ্বের পুলিশ হিসেবে কাজ করে। অন্যান্য জাতি কোন অন্যায় কিংবা সীমালংঘন করলে তাৎক্ষণিকভাবে শক্তি প্রয়োগ দ্বারা সে দেশটি তথাকথিত শান্তি ও ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু সে জাতিটি বনি ইসরাঈল তথা ইসরাঈল রাষ্ট্রের সীমালংঘনকে নির্লজ্জভাবে সাহায্য করে। ইরাককে আক্রমন করার সর্ববৃহৎ কারণসমূহের একটি ছিলো ১৪টি ইউএন রেজুলেশন ভঙ্গ করা। একই সময় ইসরাঈল ৯৬টি ইউএন রেজুলেশন অমান্য করেছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে পৃথিবীর একটি শব্দও উচ্চারিত হয়নি। ফিইফা-তে আগত ও জমায়েত হওয়া জাতিটি সমস্ত আরব ইতিহাসের সবচাইতে জগন্য পদ্ধতির হত্যা, পাশবিক অত্যাচার, লুন্ঠন, জবরদখল, আবাসিক অঞ্চলসমূহ জীবন্ত মানুষ সমবেত ডেমোলিশন ইত্যাদি জাতীয় অন্যায় করেও সামান্য সমালোচনার সামনে আসছে না। এই নিশ্চিত নিরাপত্তা ও হত্যা এবং ধ্বংসের লাইসেন্স যদিও আপাত দৃষ্টিতে একটি নিরাপদ পদ্ধতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তথাপিও সৃষ্টির নিয়ম অনুযায়ী আর একটি নিশ্চিত সমাপ্তি রয়েছে এবং তার নিশ্চিত প্রতিফলনও রয়েছে। যেহেতু অত্যাচারের মাত্রাটি অতিশয় বর্বর, সেহেতু তাদের ভাগ্যও আশা করা যায় একটি পরিণতি যা হবে অতি নির্মম এবং ইতিহাসে উপমা হবার যোগ্য। আমরা বনি ইসরাঈলের একত্রিত হবার দৃশ্য দেখেছি, অস্বাভাবিক অত্যাচারের ঘটনাটি দেখছি এবং এই অস্বাভাবিকতা হতেই প্রতিক্রিয়াটি এখন কিংবা পরবর্তীতে আশা করা যায় তাদের জন্য অকল্যাণের আকাশ উন্মূক্ত করে ধরবে।

দ্বিতীয় তথ্যটি হলো একটি সমীকরণের মত। এই সমীকরণটি সময়কে বুঝতে সাহায্য করে, চিহ্ণিত করে দুটি জাতি সত্তাকে যারা এই পৃথিবীতে ফ্যাসাদ আবাদ করে বেড়ায়। এই সমীকরণটি চিহ্ণিত করে প্রকৃতই ইয়াজুজ-মা’জুজ নামক জাতি দুটিকে – “হারামুন ‘আলা ক্বারইয়াতিন আহলাক্বনাহা আন্নাহুম লা ইয়ারজিয়ো’ন (২১:৯৫) হাত্তা ইয়া ফুতিহাত ইয়াজুজ ওয়া মা’জুজ ওয়াহুম মীন কুল্লি হাদাবিন ইয়ানসিলূন” (২১:৯৬) অর্থাৎ ঐ ক্বারিয়াত (যার কেন্দ্রীয় ভূমি জেরুজালেম) হারাম করা হয়েছে তাদের জন্য যারা এখানে বসবাস করতো, আর তারা সেথায় প্রত্যাবর্তন করার সুযোগ পাবে না (২১:৯৫); ততদিন পর্যন্ত যতদিন না ইয়াজুজ-মা’জুজ নামক দুটি সম্প্রদায় তাদেরকে ঐ ক্বারিয়াতে আবার পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করবে; আর ইয়াজুজ-মা’জুজ এই সম্প্রদায়সমূহ পৃথিবীর সকল শীর্ষ অবস্থানে অধিষ্ঠিত রয়েছে যার কারণেই স্রষ্টার নিয়মের লংঘন ঘটিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে কেনান বা প্যালেষ্টাইনে প্রতিষ্ঠা দেবে তারা।

এই আয়াত সমূহের সমীকরণ সৃষ্টি করা হলে তা এই দাঁড়ায় জেরুজালেমই একমাত্র শহর যার অধিবাসীগণকে আল্লাহপাক ধ্বংস করেছেন এবং দুই বার তাদেরকে ঐ পূণ্যভূমি হতে বহিষ্কার করেছেন যার দ্বিতীয় নজির ইতিহাসে নেই। খৃষ্টপূর্ব ৫৮৭ বেবিলনীয়ান সেনাবাহিনী বুখতে নসর (Nebuchadnezzar) ইহুদীদের পদানত করে, তাদের মসজিদ ধ্বংস করে (এই মসজিদুল আকসা তাদেরও মসজিদ ছিল, সিনাগগ নয়) ও জেরুজালেম বিধ্বস্ত করে ইহুদীদের দাসে পরিণত করে। পারশিয়ানরা পরে বিজেতা হিসেবে আসে এবং তাদেরকে পুনর্গঠনে সাহায্য করে। খৃষ্টপূর্ব ৭০ অব্দে আবার তারা রোমান সেনাবাহিনী হাতে বিপর্যস্ত হয় (Titus); তারা ইহুদীদের আবার দাসে পরিণত করে কতিপয়কে এবং বিতাড়িত করে অন্যদের, তাদের উপাসনালয় ভেঙ্গে দেয় এবং সারা দুনিয়ায় তারা ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়। পৃথিবীর ২০০০ বছরের পূর্ব ইতিহাসে একমাত্র ইহুদী জাতির ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে যে তারা তাদের মাতৃভূমি হতে বিতাড়িত হবার পর সেখানে আর প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হয়নি। জেরুজালেম নগর যেন তাদেরকে বহিষ্কার করেছে এবং দ্বার রুদ্ধ করে দিয়েছে। আমরা এখন দেখছি সেই বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়া ইহুদীরা আবার সমবেত হয়েছে একটি অখন্ড রাষ্ট্রীয় সত্তার একটি ভূমি খণ্ডে (প্যালেষ্টাইন) একটি সুনির্দিষ্ট ইতিহাস সৃষ্টিকারী ব্যবহার পদ্ধতিতে (গণ-অত্যাচার যার তুলনা নেই)। সুতরাং সমীকরণ করা হলে তা দাঁড়ায়-

বনি ইসরাঈল একত্রিকরণ ইয়াজুজ-মা’জুজের দুনিয়া জোড়া নিয়ন্ত্রণ।

অর্থাৎ ইয়াজুজ-মা’জুজ = দুনিয়ার শীর্ষতম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে যারা (রাষ্ট্র, জাতি, সম্প্রদায়, ব্যক্তি)

প্রচলিত তফসীরসমূহের কতকে ইয়াজুজ-মা’জুজ সম্পর্কে এমনও ধারণা দেয়া হয়েছে যে উঁচু উঁচু পাহাড় হতে লাফিয়ে লাফিয়ে নেমে আসবে একটি বিশেষ জীব যার লক্ষ্যবস্তু হবে মুসলমান। তারা এসে একসঙ্গে পৃথিবীর সমস্ত পানি চুষে খেয়ে ফেলবে। কোরআন এমন সব ব্যাখ্যায় কোন দায়িত্ব বহন করে না।

ইয়াজুজ-মা’জুজ সম্পর্কে সহীহ মুসলিমে পরিষ্কার ধারণা দেয়া হয়েছে যে- ইয়াজুজ-মা’জুজ বনি আদম বৈ কিছুই নয়। মূলত এরা কোন জীব নয়- ওরা মানুষেরই সম্প্রদায় একটি বিশেষ জাতি – বিশেষ প্রক্রিয়ায় সুচিহ্ণিত। আমরা ইয়াজুজ-মা’জুজ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত আলোচনা করবো। এ পর্যায়ে শুধু একটি বিষয়ে আমরা পরিষ্কার হতে চাই যে কোরআনে উল্লিখিত আয়াত দু’টিতে আমাদেরকে একটি সুষ্পষ্ট তথ্য দেয় সময়ের বিষয়ে- এই সময়টির মাপকাঠি হলো ‘ক্বারিয়াত-এ’ বনি ইসরাঈলের একত্রিত হওয়ার সময়টি। সেই সময়ে পৃথিবীর বুকে একটি উপসর্গ প্রাধান্যসহ কাজ করবে। এই উপসর্গটির নাম হলো ইয়াজুজ-মা’জুজ। অর্থাৎ যখন ২০০০ বছর পর ইহুদীরা একটি রাষ্ট্রের পত্তন করেছে- সে সময়টিতে পৃথিবী ইয়াজুজ-মা’জুজের নিয়ন্ত্রেণে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।

অর্থাৎ নভেম্বর ১৯৪৭ সনের পর হতে (Balfour Declaration) পৃথিবী ক্রমাগতই ইয়াজুজ-মা’জুজের নিয়ন্ত্রণের জালে আবদ্ধ হয়ে যায়। যারা ইহুদী জাতি সত্তাকে প্যালেষ্টাইনের ভূখণ্ডে প্রবেশ করিয়েছে তারা হলো ইংরেজ জাতি (যার মূলে ইউরোপিয়ান ইহুদী) এবং যারা এই জাতির অস্তিত্বকে ক্রমাগত শক্তিশালী করে তুলেছে তারা হলো আমেরিকা। অতএব গ্রেট ব্রিটেন ও আমেরিকার সাথে সংশ্লিষ্ট জাতিসত্তাই হবে কোরআনের উপসর্গ অনুযায়ী ইয়াজুজ-মা’জুজ। যেহেতু (২১:৯৬) আয়াতে ইয়াজুজ-মা’জুজের শক্তির প্রবাহ পৃথিবীর সমস্ত শীর্ষস্থানসমূহ হতে প্রবাহিত হবার প্রস্তাব এসেছে। হাত্তা ইয়া ফুতিহাত ইয়াজুজ ওয়া মা’জুজ ওয়াহুম মীন কুল্লি হাদাবিন ইয়ানসিলূন” (২১:৯৬) তখন ইয়াজুজ-মা’জুজ যুগের সূচনা ঘটবে এবং তারা শক্তির প্রবাহ পাত ঘটাবে পৃথিবীর ক্ষমতা শীর্ষ বিন্দুসমূহ হতে। আর এ শর্তটি পূরণ করবে বনি ইসরাঈলের সেই ক্বারিয়াত-এ প্রত্যাবর্তনের কিংবা প্রতিষ্ঠিত করা দ্বারা। আর মুসলমানদের ভূমিকা হবে- স্বয়ং আল্লাহপাক ক্বারিয়াতের অত্যাচার প্রতিহত করার জন্য মুসলমানদের ৪:৭৫ আয়াতে সুস্পষ্ট সনাক্তকরণ নিদর্শন/নির্দেশনা? দিয়ে দেয়া সত্ত্বেও দুনিয়ার মুসলমান জাতি এই অত্যাচারের প্রশ্নে থাকবে অনভিপেক্ষ ও নীরব। [ তার সাথে জায়নবাদীরা পৃথিবীর শীর্ষ শক্তি বিন্দুগুলো নিয়ন্ত্রণ করে, সেই শক্তি প্রয়োগ দ্বারা অন্যায়ভাবে ইসরাঈলকে প্রতিষ্ঠিত করবে এমন একটি সময় যখন সেই ‘আরদুল মুকাদ্দাস’ পরিণত হয়েছে নরক অগ্নি বা ফি ই ফা-তে। এ সময়ের অপর বৈশিষ্ট্য হলো যে- পৃথিবী শান্তি হারিয়েছে। কারণ পবিত্র ভূমি এখন ফি-ই-ফা। আর এই পবিত্র ভূমি সকলকালে পৃথিবীর শান্তির মানদণ্ড- তাতে শান্তি থাকলে, বিশ্বে থাকবে শান্তি, তাতে অশান্তি বিরাজ করলে বিশ্ব ডুবে যাবে অশান্তিতে। আল্লাহপাক যাকে পবিত্র ভূমি ঘোষণা করেছেন- সহস্র সহস্র নবীকুলের পদধূলিতে ধন্য, সে ভূমিই ইসলামের সূতিকাগার। আজ সে ঐতিহ্যের মাটিতে জ্বলছে আগুন – এখন সে ফি-ই-ফা ] বলা বাহুল্য যে বৃটিশ সাম্রাজ্যের সর্বময় শক্তি দ্বারা ইসরাইলকে প্রতিষ্ঠা দান করার পর আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এখন প্রবল শক্তি প্রয়োগের দ্বারা কেবল ইসরাঈলের প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তার প্রশ্নে জায়নবাদীদের ইচ্ছায় পূজা করে যাচ্ছে। ২১:৯৫ আয়াতের সঙ্গে ২১:৯৬ আয়াত অতিশয় সুদৃঢ়ভাবে সম্পর্কিত। মূলত আয়াত ৯৬ পূর্ববর্তী ৯৫ নম্বর আয়াতেরই ক্রমবিকাশ বা ফলোআপ। সাধারণ যুক্তিযুক্ত কারণেই অনুমেয় যে বনি ইসরাঈলদের ক্বারিয়াত নিষিদ্ধকরণ (২১:৯৫) ও পরে তা বনি ইসরাঈলদের প্রত্যাবর্তনের জন্য উন্মুক্ত হওয়া (২১:৯৬) – এ দুটি ঘটনার সাথে কোন অতিপ্রাকৃতিক জীবের উচ্চ পাহাড় হতে লাফালাফির প্রয়োজন নেই। আমরা যা দেখেছি- ক্বারিয়াত ২০০০ বছর বনি ইসরাঈলদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল এবং সে ক্বারিয়াতে আবার তাদের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। কোরআন যা বলেছে তা হলো- এ ক্বারিয়াতে প্রত্যাবর্তনকে যারা সম্ভব করে তুলবে তারা হলো ইয়াজুজ-মা’জুজ। (জায়নবাদী ইহুদী ও জায়নবাদী খৃষ্টান)।

তাদের প্রকৃতি সম্বন্ধে যা বলেছিলাম, তা হবে – তারা উচ্চতর অবস্থানে অধিষ্টিত থাকবে। “ওয়াহুম মীনকুল্লী হাদাবিই ইয়ানসিলূন” – এবং তারা সমস্ত উচ্চতর অবস্থান হতে উৎসারিত হবে। কী উৎসারিত হবে? ইয়াজুজ-মা’জুজের ‘ফুতিহাত’ কিংবা ইয়াজুজ-মা’জুজের প্রকাশ ও প্রভাব। পৃথিবীতে এই দৃশ্যটি এখন খুব সুস্পষ্ট। যারা বনি ইসরাঈলকে একত্র করেছে, সাহায্য করেছে, প্রতিরক্ষা প্রদান করেছে, তাদের প্রভাব সমস্ত উচ্চতর অবস্থান হতে উৎসারিত হচ্ছে- এ বিষয়টি বর্তমানে আমেরিকা ও গ্রেট ব্রিটেনের দিকে তাকালে আয়নার প্রতিফলনের মত দেখা যায়। অতএব উঁচু পাহাড় হতে লাফিয়ে লাফিয়ে নেমে আসা ইয়াজুজ-মা’জুজের দৃশ্য একটি কাল্পনিক চিত্র মাত্র। এর দায় কোরআন বহন করে না। পক্ষান্তরে পৃথিবীতে অর্থনৈতিক প্রভুত্বে, ক্ষমতায়, বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে, নিয়ন্ত্রণে ইত্যাদির সর্বত্র শীর্ষ বিন্দুগুলোকে তারাই নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে যারা ইসরাঈলের ত্রাণকর্তা। তারাই ইয়াজুজ-মা’জুজ। একের সহযোগী অন্যজন।

হাদীছ বলেছে- তাদের সাথে থাকবে সাহায্যকারী- ‘আহলে ইয়াজুজ-মা’জুজ’। দুনিয়ার অপরাপর জাতিদের সমাবেশ। “কোয়ালিশন অব্ উইলিং” এবং “কোয়ালিশন ফোর্স”। এইসব ইসলাম বিধ্বংসী নেশামত্ত কোয়ালিশন সমূহের হাতকে বলিষ্ঠ করে যারা, তাদের সুবিশাল অংশ মুসলমান। সুনিশ্চিত আহলে ইয়াজুজ-মা’জুজের পরিবারভূক্ত আল্লাহ বিদ্রোহী ও নবী (সাঃ)-এর সম্পর্কে বিচ্ছিন্নকারী ধর্মে মুসলিম নামীয় প্রকাশ্যে শয়তান অনুসারী কুফ্ফার- “কাইফা ইয়াহদিল্লাহু ক্বাওমান কাফারু বা’দা ঈমানিহিম” – এ জাতি (মুসলমান) নিয়ে আল্লাহপাকের এই তো সুস্পষ্ট অভিযোগ! “উলাইকা জাজা’উহুম আন্না আলাইহিম লা নাতাল্লাহি, ওয়াল মালাইকাতি, ওয়ান্নাসি আজমাঈন- (৩:৮৭)। এরা তো এমন মুসলমান যাদের প্রতি অবধারিত আল্লাহর লা’নত, ফেরেশতাদের লা’নত এবং লা’নত মানবজাতির।

উপরের আলোচনা থেকে এটা পরিস্কার হয়েছে যে,কিভাবে একটি অভিশপ্ত নিপীড়িত জাতি থেকে ইহুদী সম্প্রদায় নিপীড়কের জাতির নের্তৃত্বে পৌঁছেছে । কিন্তু এ নিপীড়কের বিশ্ব নেতৃত্বের ভূমিকায় তারা চিরদিন থাকবে না। কিছু‌দিন আ‌গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরী কিসিঞ্জার বলেছেন-এটি বলতে দ্বিধা নেই যে, ১০ বছর পর ইসরাঈল নামে কোন রাষ্ট্র থাকবে না। তার সাথে সুর মিলিয়ে বলতে চায় পৃথিবীতে ইহুদী জাতির অব্যাহত মানবতা ধ্বংস মূলক কাজের মাধ্যমে তারা প্রায় ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এসে পৌছেছে।তাই শান্তির পৃথিবী বির্নিমানে ইহুদীবাদের বিরুদ্ধে মানবতাবাদী পৃথিবীবাসীর জেগে উঠার এখনই সময় ।

236 Views

আরও পড়ুন

আইডিইবির ৫৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আধুনগর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের র‌্যালি ও আলোচনা সভা

দোয়ারাবাজারে এফআইভিডিবি’র স্বাস্থ্য সামগ্রী বিতরণ

বোয়ালখালীর নব যোগদানকৃত শিক্ষা অফিসার হারুন উর রশীদকে বরণ

জামালপুরে মৃত আইনজীবী হলেন অতিরিক্ত জিপি

তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদ্রাসা, সাইনবোর্ড শাখার বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন

সাইফুল ইসলামের কবিতা : শীতের আমেজ

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ইসলামি বক্তা আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

পাবনার হেমায়েতপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ : নিহত ১

কাপাসিয়ায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপির বিশাল শোভাযাত্রার আয়োজন

কাপাসিয়ায় ইসলাম শিক্ষা শিক্ষক পরিষদের উদ্যোগে সিরাতুন্নবী উপলক্ষে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন

কক্সবাজারের ঈদগাহতে ফুলকুঁড়ি আসরের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন

জবিস্থ শরীয়তপুর জেলা ছাত্রকল্যাণের নেতৃত্বে সৌরভ – মনির