ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৩ মে ২০২৪
  1. সর্বশেষ

“বোবার আত্মগ্লানি”

প্রতিবেদক
নিউজ ভিশন
১৩ আগস্ট ২০২৩, ১১:০৯ অপরাহ্ণ

Link Copied!

বিয়ের পর থেকে রহিমুন্নেছার আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন।স্ত্রীর প্রতি এমন ভালোবাসার দেখে প্রতিবেশি সাদেকের মা সবসময় চক্ষুশূলে মনে করতেন।রাজ ও রোজী পরিবারের দুই সন্তান।তবুও পুত্র সন্তানের আশায় স্বপ্নে বিভোর। রাজের আরেকটা বোন হয়েছে কেবল ৩মাস হলো।এখনো নাম রাখা হয়নি। মায়ের ইচ্ছে ছিলো পেটের সন্তানটি যদি ছেলে হয় তাহলে ধুমধামে একটা আয়োজন করে ছেলের নাম রাখবে।পাশের বাড়ির আমেনার তিন-তিনটা ছেলে সন্তান।তাদের পরিবারে যেন সর্বদা আনন্দ চর্চায় হয়ে থাকে।আমেনার ভাব দেখলে মনে হয় তার পা দুটো মাটিতে পড়ে না।স্বামী ছেলেদের জন্য কিছু কিনবার পূর্বে ভেবে নেন আমেনার জন্য কি কেনা দরকার। মাত্র ৫দিন হলো: তার ছোট ছেলের খতনা করাতে কত বৈচিত্র্যময় আয়োজন করেছে। বড় বড় সাউন্ড বক্স, কাওয়ালি গান ও সাতদিন ধরে নাচানাচি। রাজ প্রতিবন্ধি তাই রাজের মা রহিমুন্নেছার ইচ্ছে ছিল এবার ছেলে সন্তান হলে পাশের বাড়ির আমেনাকে দেখিয়ে দিবে তারাও পারে মস্ত বড় অনুষ্ঠান করতে।টাকা নাই কি হয়েছে প্রয়োজনে ছাগল দুটি বিক্রি করে দিবে।রাজ ঠিকঠাক চলাফেরা করতে পারলেও সে ছিল একাধারে বোবাও বধির। কিছু ভিন্ন স্বভাবের কারনে প্রতিবেশিরা তাকে ভালোবাসতো।কিন্তু আত্মীয়স্বজন থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন ছিল। গরীবের আত্মীয় একমাত্র খোদা তায়ালা।স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে সেই আগের সম্পর্ক রইলো না।রোজীর বাবা লিয়াকত সবসময় তার মাকে মারধর করতো।অভাব অনাটনের মাঝে সংসার চলে কিভাবে?অভাব যেন মনের শান্তিতে দুর্ভিক্ষ নিয়ে আসে।লিয়াকত কাজকর্ম করে না,বসে বসে খায়।দিনে বাজারে গিয়ে কার বাড়িতে কি হচ্ছে, কার বউ ঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে সেগুলো হিসাব করে।বিড়ি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিলেও নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করা ছাড়তে পারে নি।।ররিমুন্নেছা গ্রামের বাড়িতে ঘুরে ঘুরে কাজ করে।কখনো ধান ভানে,কখনো বা পানের বরশে কাজ করে। এখন আর আগের মতো কাজকাম করতে পারে না।এমনকি অসুস্থতার কারণে বিছানা থেকে উঠতে পারে না। টাকার অজুহাতে লিয়াকত তার বাল্য বন্ধু নসিমনকে জায়গা জমি বিক্রি করে দেয়। হঠাৎ ভিটেটুকু পর্যন্ত বিক্রি করে শহরে পাড়ি জমায়। এবং পাশের বাড়ির মুস্তাকিমের থেকে জানতে পারে সেখানে আরেকটা বিয়ে করেছে।মুস্তাকিম শহের মস্ত বড় কলেজে লেখাপড়া করে।সংসারের খরচ চালাতে না পেরে ছোট মেয়েকে দত্তক দিয়ে দেন।সংসারের অভাব ঘোচাতে রাজ এখন ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নিয়েছে। নিয়তির ভুলে রাজের জন্ম এমনই। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন হওয়ায় তার ভিক্ষা করতে কষ্ট হয়। ভিক্ষার সময় নাজিরগঞ্জের পুকুরপাড়ে মসজিদের ইমামের সাথে দেখা হয়।হুজুর একটু আগ বাড়িয়ে এসে কিছু ভাব বিনিময় করলো। বললো, ” তুমি লিয়াকতের ছেলে না”? নির্বাক মনে হ হুজুর! রাজ বিনীত স্বরে জবাব দিল। ঐদিন মসজিদের উঠোনে কে যেন বলছিল,লিয়াকতের সংসারটা বেশ সাজানো ছিল।তোমার বাবার কি খোঁজখবর পেয়েছ?রাজ ইশারায় বোঝাতে চেষ্টা করলো বাবা একমাত্র আমাদের জীবনের অসহায়ত্বের প্রতীক। হুজুর উপদেশের সহিত বললেন আহারে জীবন!বাবা জীবন একটা মরিচীকার মতো।মানুষ কেবল তার পেছনে পেছনে অন্তহীন ছুটছে। যখনই ধরতে যাবা তখনই উধাও হয়ে যাবে। তাদের মাঝে কথপোকথন প্রায় শেষ।হুজুর মসজিদে ঢোকার সাথে সাথেই রাজ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে থমকে গেল। তার পৃথিবীর প্রতি একটা আকন্ঠ মনোভাব জন্মাল।আকুতির বশিভূত হয়ে কিছু করতে না পারার আফসোস ব্যর্থ করলো।তার মাঝে মাঝে পাতাল হাওয়ায় উড়ার স্বপ্ন জাগে।মাঝেমধ্যে কল্পনা করে বাবাকে মায়ের সামনে হাজির করে মাকে চমকিয়ে দিবে। ছোট বোন রোজীর স্বপ্ন পূরণ করবে।রোজীর একটা স্বপ্ন ছিল নসিমনের কন্যা রুমানার মতো চাকচিক্য ফ্রক পড়বে, জড়োয়া গহনা জড়িয়ে ঘুরে বেড়াবে সবখানে।স্কুলে বন্ধুদের দেখিয়ে বোঝার চেষ্টা করবে তাদের মা-বাবা স্বর্গতুল্য ও তাকে অনেক ভালোবাসে। অভাব ঘোচাতে ঘোচাতে মুটামুটি ১০ বছর পার হয়ে গেলো।মা বিছানা থেকে উঠতে পারে না।বর্ষাকালে বাড়ির ভিতর অনবরত বৃষ্টি পড়ে।রাতে বৃষ্টির ঝনঝনানি তীব্র বিরক্তিকর মনে হয়।বিরক্তিকর ভঙ্গিতে রাজের মনে হয় সব বৃষ্টি যেন তার বাড়িতে পড়ছে।মায়ের দেখাশোনা করতে হয় বলে রোজী ঘরের বাইরে কাজ করতে পারে না।রোজীর বয়সও মুটামুটি হয়েছে।এবার বিয়ের বয়সটা পার হওয়ার পালা।বাইরের গুন্ডারা বাড়ির পেছন থেকে উঁকি দেয়।পাড়াপড়শির নানা রকম মন্তব্যের কোনো সীমাপরিসীমা নেই।এদিকে মায়ের অসুস্থ দিনদিন বেড়ে যেতে লাগলো। টাকার অভাবে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।ঘরে পানি ঢুকে যেন চৌকি ছু্ঁই ছুঁই করছে।রহিমুন্নেছার মনে পড়ে গেল সেই ছোট্ট শিশুটি। যাকে সে দত্তক দিয়েছিল। কতো বড় হয়েছে সেই তাদের ছোটমনি।সে তার জন্মদায়িনী মাকে চিনতে পারবে তো?অবশ্যই এবার দেখা হলে তার নামটা রেখে দিব। কি নাম রাখা যায়! কথা বলতে পারছেন না, তবুও ইশারায় তাকে দেখার ইচ্ছে বর্ণনা করলেন। প্রতিবন্ধি ছেলেটা দূর থেকে মায়ের আকুতি দেখছেন।মনে মনে স্বপ্নের মতো ভাবতে লাগলেন তাকে মায়ের কাছে এনে দিবেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন জিনিস।মানুষ চাই এক হয় আরেক। তার ছোট বোন এখন বড় ঘরের মেয়ে।তার বোন অন্য ঘরের পালিত মেয়ে হলেও তাকে বোন বলার অধিকার রাজের নাই। রোজী তার মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে আকুতি-মিনতি করছে।নিভু নিভু প্রদীপ।চাঁদের জ্যোৎস্নায় যেন কলঙ্কের দাগ।এখন শুধু সময়ের প্রার্থনা করছে।সময়ের সাথে সাথে রাজের বাবার এক বাল্যকালের বন্ধু নসিমন হাজির যাকে তার বাবা তাদের ভিটেয় বিক্রি করে দিয়েছিল।এখন তাদের ভিটায় দুই তলা বিল্ডিং তুলবে তাই বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে।রাজের নিস্তব্ধ চোখ,বোনের আকুতি।তাদের দেখে কিছু বোঝার উপায় নেই।হঠাৎ শহর থেকে রাজের সৎ মায়ের ফোন এলো।

রফিক উদ্দিন
২য় বর্ষ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জেলা:কক্সবাজার

715 Views

আরও পড়ুন

যেকোনো সময় সৃষ্টি হবে লঘুচাপ : বেড়েছে তাপপ্রবাহ

মাইশা আক্তার নিশিলার কবিতা “বীর রাইসি”

আদমদীঘিতে রাজু খান আবারো উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত

পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী যারা

বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত রাজু তৃতীয়বার পেকুয়া উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত

কুতুবদিয়ায় ইউনিয়ন পর্যায়ে ওসিসি কার্যক্রম অবিহিত করণ সভা

চরবাঘুন গণপাঠাগারের পুরষ্কার ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাচন
জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে দুই যুবক আটক

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন) ৩ প্রার্থীকে প্রকাশ্যে সমর্থন, নাগরপুর ভোটের মাঠে তোলপাড়

চেয়ারম্যান প্রার্থী আরিফুল ইসলাম জুয়েলকে নিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদ

ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ সফরসঙ্গী কেউ বেঁচে নেই

শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নে চার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা।