মোস্তাকিন হোসেন,হিলি স্থলবন্দর সংবাদদাতা
“মা” এক অক্ষরের একটি শব্দ। পৃথিবীতে মা এর সাথে কারো তুলনা করা যায় না। কিন্তু সেই জনমদুখিনী মা ও বাবা বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া, রাস্তায় ফেলে আসা,বনে জঙ্গলে ও নদীতে ফেলে দেওয়ার ঘটনা ফেসবুকে ও পত্রিকায় পাতায় অলৌকিক বা নতুন কিছু নয়। যে মা দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করেছেন সেই মা কে ছেলে এবং ছেলের বউ গাড়িতে (বাস) উঠায়ে দিয়ে বলেছে আর কোন দিন এই বাসায় আসবে না।
এমন একটা ঘটনা প্রত্যক্ষ দেখলাম দিনাজপুরের হাকিমপুর হিলি স্থলবন্দর এলাকার সি পি মোড়ে। কথা হয় সেই বৃদ্ধা মা এর সাথে। দেখে অনুমান হচ্ছে বয়স ৮০ ছুঁই ছুঁই! বয়সের ভাড়ে গায়ের চামড়া জড়ে গিয়েছে এবং মাংসের সাথে লেগে যাওয়ায় এমনিতেই বুঝা যাচ্ছে তাঁর অনেক বয়স।
শনিবার (২২ জুলাই) দুপুর ১ টায় সি পি মোড়ের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম সুইট এর বাসার বারান্দায় নিশ্চুপ নিথর্ব বসে থাকা বৃদ্ধা মা শাকিলা বেগম এর কথা হয়।
বৃদ্ধা মহিলা বেশি কিছু বলতে পারছে না।জিজ্ঞেসা করলে শুধু বলছেন বাসা ঢাকায়। তার নাম শাকিলা বেগম, তার মেয়ে নেই এক ছেলে নাম জামিল হোসেন। ছেলের চার মেয়ে আছে তার মধ্যে তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছে। কান্না স্বরে বলে গত কয়েক দিন আগে আমার ছেলে এবং আমার ছেলের বউ একটি কাপড়ের ব্যাগ হাতে দিয়ে বাসে উঠিয়ে দিয়ে বলেছে আর যেন তাদের বাসায় না ফিরি। চোখ যেদিকে যায় সেদিকে তুমি চলে যাও। বৃদ্ধা মহিলা ও বাসের লোক তার ছেলের কাছ থেকে মোবাইল নাম্বার চাইলে তার ছেলে মোবাইল নাম্বারও দেয়নি। পরে বাসের ড্রাইভার তাকে হিলি সিপি মোড়ে নামিয়ে দেয়।
হিলি স্থলবন্দর এলাকার সি পি মোড়ে হিলি-বিরামপুর রোডে সিএনজি চালক শাহিনুর ইসলাম বলেন, কয়েক দিন থেকে বৃদ্ধা মহিলাকে এই বিল্ডিং এর বারান্দায় থাকতে দেখতেছি। কখনো বসে থাকে আবার কখনো দাড়িয়ে থেকে শুধু রাস্তার দিকে চেয়ে চেয়ে থাকে। বাসার কথা বললে বলে ঢাকায়, নাম শাকিলা। আর কিছু বললে শুধু কান্না কাটি করে বলে ছেলের বাড়িতে যামু। কারো কাছে কিছু চায় না। কেউ কিছু দিলে সেটি নিয়ে খায়।
হিলি সি পি মোড়ের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম সুইট বলেন,আমি গত সাত দিন ধরে আমার বাসার বারান্দায় এই বৃদ্ধ মহিলাকে থাকতে দেখতেছি। একপর্যায়ে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি নাম ছাড়া কিছুই বলতে পারছেন না। শুধু বলছেন তার ছেলে এবং ছেলের বউ তাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন। আমি মাঝে মাঝে তাকে খাবারও কিনে দিয়েছি। তার বয়স প্রায় ৮০ বছর ছুঁই ছুঁই হবে। গতকাল আমি তার ছবিসহ ফেসবুকে পোষ্ট দিয়েছি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায়কে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি গত রাতে মুঠো ফোনে আমাকে বলেছেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে অবগত করা হয়েছে তারা খুব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এরপর সমাজসেবা অফিস থেকে তামান্না নামের একজনের সাথে আমার মুঠোফোনে কথা হয়, তিনি বলেন, আমার আপনার বাসায় গিয়ে ওই বৃদ্ধার সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আজ দুপুর ২ টা পর্যন্ত সমাজসেবা অফিসের কেউ আসেনি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় বলেন,আমি বৃদ্ধ মহিলার বিষয়ে জানতে পেরেছি। ইতোমধ্যে আমাদের উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে বিষয়টি জানিয়েছি। খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরবর্তী নিউজ :
অবশেষে সেই বৃদ্ধা মায়ের ঠাঁই হলো বৃদ্ধাশ্রমে