ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৮ মার্চ ২০২৪
  1. সর্বশেষ

নির্মান কাজে আর ইট নয় পরিবেশবান্ধব ব্লক চাই-জিয়া হাবীব আহসান

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
২৮ মে ২০২৩, ৩:১৮ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

——————————
অবৈধ ইটভাটায় পুড়ছে পরিবেশ। পুড়ছে ম্যানগ্রোভ বন। টাকা দিলে পোড়ানো যায় ইট, এসব অবৈধ নিবন্ধনহীন ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এসব বন্ধে মহামান্য উচ্চ
আদালতের নির্দেশনা ভঙ্গ হচ্ছে প্রতিনিয়ত ।প্রশাসন মাঝে মাঝে জরিমানা করে ক্ষান্ত। এ যেন ইঁদুর বিড়াল খেলা।

ফলে ফসলি কৃষি জমির টপ সয়েল ধ্বংস হচ্ছে।
হুমকির মুখে পড়ছে খাদ্য নিরাপত্তা, সাথে সংরক্ষিত বনাঞ্চল, পাহাড় নদী-নালা খাল-বিল। বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা, তিন পার্বত্য জেলা সহ সারা দেশে চলছে এ- ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ।

পরিবেশবিদ, মানবাধিকার কর্মীরা হয়ে পড়েছে উৎকণ্ঠিত। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকায় দেখা দিয়েছে নাগরিকদের চর্মরোগ, চোখ ওঠা, জ্বালাপোড়া ও শ্বাসকষ্ট ।কৃষি উৎপাদন হ্রাস হয়ে বেকার হয়ে পড়েছে দরিদ্র কৃষক কুল। অবৈধ ইট ভাটার নিউজ করতে গিয়ে প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়েছেন অনেক সাংবাদিক মানবাধিকার ও পরিবেশ কর্মী। চট্টগ্রামে চন্দনাইশ থানা এলাকায় শুধু একটি ইউনিয়নে ১৯ টি অবৈধ ইট ভাটা। পুরো থানা এলাকায় ২৫ টি অবৈধ ইনভাটা।

রাঙ্গুনিয়া, সন্দীপ, সাতকানিয়া, পটিয়া, চকরিয়া কক্সবাজার প্রভৃতি এলাকা সহ পুরো দেশে একই অবস্থা, চলছে পরিবেশ ধ্বংসের নির্মমতা। বিএইচআরএফ সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে ৩৪৫টি ইনভাটার ২৫৬ টি অবৈধ। রূপগঞ্জে এক ইউনিয়নে আছে ৬৪ টি ইটভাটা। মাগুরা জেলায় মোট ১০৭টি ইট ভাটার মধ্যে ১০৪ টরিই নেই নিবন্ধন।

কুষ্টিয়ায় মিরপুরে ১৬১টি ইটভাটার মধ্যে ১৮টি বৈধ,১৪৩ টি অবৈধ। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় এ পর্যন্ত বাঘাইছড়িতে ২টি, কাপ্তাই ১টি, রাজস্থালীতে ৩টি,
লংগদুতে ৩টি ও কাউখালীতে ১৬টি ইটভাটা স্থাপন করা হয় এসব ইটভাটায় আইন অমান্য করে অবৈধভাবে কাঁচামাল হিসাবে পাহাড় থেকে কাটা মাটি এবং জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে বনের কাঠ, ফলে সৃষ্টি হচ্ছে পাহাড় ধ্বস ও ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল। লক্ষ্মীপুরে রামগতি উপজেলায় চররমিজ ইউনিয়নে ২৮ টি অবৈধ ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে,এর মধ্যে ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডেই ১৪ টি অবৈধ ইটভাটা চালানো হচ্ছে পরিবেশে ছাড়পত্র ছাড়া। চরফ্যাশনে অনুমোদনহীন ২৮ টি ইটভাটার ২৫ টি অবৈধ।

এসব ইটভাটায় ম্যানগ্রোভ বনের কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। বিশেষ মহলকে ম্যানেজ করে এসব ইটভাটা পরিচালনা করছে প্রভাবশালী মহল ১২০ ফুট উচ্চতায় স্থায়ী চিমনি নেই এসব ইট ভাটায়।

এভাবে নেত্রকোনার ৩৮ টি ইটভাটার ৩৪টি অবৈধ, সারাদশেরে এই চিত্র। অনেকের প্রশ্ন ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেলে দেশের উন্নয়ন কাজ, নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এর বিকল্প নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু না করলে অবৈধ ইট ভাটা বিরোধী সকল অভিযান ও কর্মকান্ড ব্যর্থতায় পর্যবের্শিত হবে।

প্রচলিত ইটের এর বিকল্প পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ব্লক:- ইটভাটা জনিত বায়ু দূষণ পরিবেশ দূষণ বন্ধ করে ইটের বিকল্প ব্লক বা অটো ব্রিক্স ব্যবহার করতে ডেভলপার কোম্পানি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিতে হবে। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহ পর্যায়ক্রমে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ও তাকার্যকর করতে হবে।
এজন্যে সরকার কর্তৃক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপনের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের লক্ষ্যে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ জারি করা হয় যেটি ২০১৪ সালের পহেলা জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। কিন্তু আইনের কিছু ধারায় কিছু বিধি-নিষেধ ও শর্ত থাকায় আইনটি প্রয়োগে সমস্যা দেখা দিয়েছে।

আমাদের পরিবেশ আইনও অকার্যকর হয়ে পড়েছে, এছাড়া দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত কল্পে ফসলি জমির মাটি ব্যবহার বন্ধের লক্ষ্যে ইটের বিকল্প হিসেবে ব্লক ব্যবহার উৎসাহিত করতে বর্তমান আইনে কিছু ধারায় পরিবর্তন আনা দরকার। এটি হলে কৃষির জন্য অত্যন্ত দরকারি টপ সয়েল রক্ষা ছাড়াও ইটভাটাজনিত পরিবেশ দূষণ কমবে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে ইটভাটা গুলোতে প্রতি বছর ২০ লক্ষ টন জ্বালানি কাঠ ও ২০ লক্ষ টন কয়লা পোড়ানো হয়। তাদের হিসেবে এ থেকে বছরে গ্রীন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ হয় প্রায় ৯০ লক্ষ টন। অথচ দেশে পড়া ইটের কোন প্রয়োজনে নেই নদীর থেকে ড্রেজিং করে যে বালি ও মাটি উত্তোলন হয় তা দিয়ে ইটের চাহিদা শতভাগ পূরণ করা সম্ভব।সরকারের একটি অঙ্গীকার ছিল ২০২০ সালের মধ্যে পোড়া ইট শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা, কিন্তু সেটি প্রশাসন তা পারেনি। সভ্য দেশগুলোতে নির্মাণ কাজে এমন পোড়া ইট ব্যবহার করা হয় না পরিবেশ ও জনস্বাস্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই। রাস্তাঘাট বা ভবনের দেয়ালে পোড়া ইট ব্যবহারের আর কোন প্রয়োজন নেই সব কাজে ব্লক দিয়ে করা সম্ভব। ইট হলো মাটি পুড়িয়ে তৈরি করা আর আগুনে না পুড়িয়ে মাটি বালি বা সিমেন্ট বা অন্য কোন ম্যাটারিয়াল দিয়ে হবে ব্লক।

ইট তৈরির স্থান ইটভাটা আর ব্লক তৈরি হবে কারখানায়। প্রতিবছর নদীতে পলি আসে, তা ড্রেজিং করতে হয় প্রতিবছর। এগুলো নদীর তীরে রাখে। এই মাটি কাজে লাগিয়ে ব্লক তৈরি হবে। পর্যাপ্ত না হলে তখন সরকার বের করবে নদীর কোন জায়গার মাটি নেয়া যাবে আর কোন জায়গার মাটি নেয়া যাবে না। দেয়ালে ইটের বদলে অনেক বিকল্প আছে রাস্তায় যেমন অনেক ইট লাগে কিন্তু সেটিও দরকার হবে না মাটির সাথে সিমেন্ট
মিশিয়ে কমপ্যাক্ট করে আরো ভালো ও টেকসই জিনিস করা যায়। আগেই বলেছি কোন উন্নত দেশে পোড়া মাটি ব্যবহার হয় না।তাই আমরাও পারবো না কেন? আমাদের মানুষ বেশি ও কৃষি জমি কম তাই কৃষি জমি যেন নষ্ট না হয় সেজন্য আমাদের এই নীতিতে (পোড়া ইটের বদলে ব্লক) যাওয়া উচিত ছিল বহু আগে। ইটের বিকল্প পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ব্লক সাশ্রয়ী ও তুলনামূলক ভূমিকম্প সহনীয় হওয়ায় দেশের নির্মাণ খাতে
বাড়ছে ব্লকের চাহিদা। উদ্ভাবিত এই ব্লক ব্যবহার করলে ভবনের নির্মাণ ব্যয় ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব, তবে এখনও পর্যন্ত এই প্রযুক্তি সারাদেশে
ছড়িয়ে দেওয়া যায়নি বলে দেশবাসী এর সুফল এখনো পাচ্ছে না। ইটের বিকল্প পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ব্লকে ঘর বানানোর চর্চা বাড়ায় দেশে ইট ভাটার কারণে
পরিবেশের ক্ষতি বন্ধে নতুন আশা সৃষ্টি করেছে। কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি দিয়ে বানানো ইট পোড়াতে কয়লা ও গাছ ব্যবহার করায় পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে।এ পর্যন্ত বিকল্প নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে ৩০ ধরনের কংক্রিট ব্লক উদ্ভাবন করা হয়েছে।এগুলো পরিবেশবান্ধব, মূল্যসাশ্রয়ী, ওজনে হালকা, ভূমিকম্প, আগুন ও
লবণাক্ততা প্রতিরোধী, অতি উষ্ণ বা অতি শীতল আবহাওয়ার বিপরীতে নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশ দেয়।এগুলো দীর্ঘস্থায়ী ও ব্যয়সাশ্রয়ী।এসব ব্লক তৈরিতে কৃষি জমির
উপরিভাগের মাটি ব্যবহারের পরিবর্তে নদীর তলদেশের মোটা বালি ও সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। কখনো ফ্লাই অ্যাশ,পাথরের ধুলো বা অন্যান্য সামগ্রীও ব্যবহার করা হয়।

এ ধরনের ব্লকের মধ্যে রয়েছে কম্প্রেসড স্ট্যাবিলাইসড আর্থ ব্লক (সিএসআইবি), ইন্টার লিংকিং সিএসইবি, কংক্রিট হলো ব্লক,থার্মাল ব্লক (টিবি),ফেরো সিমেন্ট
স্যান্ডউইচ প্যানেল,সেলুলার ব্লক, ফ্লাই অ্যাশ ব্রিক ও অন্যান্য।পরিবেশ বান্ধব ইকো ব্লকের নানান সুবিধা ও প্রচলিত ইটভাটা থেকে সৃষ্ট পরিবেশের ক্ষতি রোধের
দায়বদ্ধতা থেকে মানুষ ক্রমশ পরিবেশবান্ধব ঘর তৈরিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তবে তার গতি আরো বাড়াতে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়াকে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে হবে, শহর-নগর গ্রামে-গঞ্জে জন সচেতনতা সৃষ্টিতে সরকার ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে যুগোপযোগ কাজ করতে হবে। গত ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে ২০২৫ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সব সরকারি নির্মাণ কাজে প্রচলিত ইটের পরিবর্তে শতভাগ পরিবেশ বান্ধব ব্লক ব্যবহারে নির্দেশনা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব ব্লকের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। এর মধ্যে কনকর্ড গ্রুপ অব কোম্পানি বিশেষ করে পেভমেন্ট, দেয়াল ও ছাদের জন্য ব্লক তৈরি করছে।মীর সিরামিক মেঝে, দেয়াল, সিড়ির জন্য তৈরি করছে পরিবেশবান্ধব টাইলস।এ ধরনের ব্লক নির্মাণে ৭০ শতাংশ নদীর তলদেশ থেকে নেওয়া মোটা বালি, ১০ শতাংশ সিমেন্ট ও ২০ শতাংশ শুকনো মাটি মিশিয়ে
মেশিনে উচ্চমাত্রায় চাপ দেওয়া হয়। গাথুনির জন্য সিমেন্ট, বালু ও পানি কম লাগে। রাজমিস্ত্রির খরচও কম। দেয়ালে প্লাস্টারের প্রয়োজন না হওয়ায় সরাসরি রং
করা যায়। পরিবেশবান্ধব উপকরণ নিয়ে নির্মাণ কাজের দক্ষ জনশক্তি তৈরীর জন্য তারা প্রতি মাসে ৫০ নির্মাণ কর্মী ও অন্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। পরিবেশ বিভাগ
সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রচলিত ইটভাটা সংখ্যা সাড়ে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজারের মতো।এসব ভাটায় বছরে প্রায় ২২.৭১ বিলিয়ন পোড়া ইট হয়।এজন্য ২৫ বিলিয়ন
কিউবিক ফুট টপ সয়েল পোড়াতে সাড়ে ৩ মিলিয়ন টন কয়লা ও ১.৯ মিলিয়ন টন জ্বালানি কাঠ পোড়ানো হয়। যা থেকে মারাত্মক ক্ষতিকর ৯.৮ মিলিয়ন টন গ্রিন হাউস গ্যাস হয়। এ-সব বিষয় বিবেচনা করে এখনই সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং অবৈধ ইট ভাটা সম্পূর্ণ বন্ধ করে এর বিকল্প পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ব্লক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, নইলে ভয়াবহ পরিবেশ বির্পযয়ের দিকে এগুচ্ছে দেশ।

লেখকঃ আইনবিদ, মানবাধিকার সুশানকর্মী।

259 Views

আরও পড়ুন

নওগাঁর পত্নীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী সেবা প্রদানের জন্য এ্যামবুলেন্স প্রদান

র‍্যাবের ২৪ ঘন্টা অভিযানে ধর্ষন মামলার আসামী সেলিম গ্রেফতার

নকলায় পৃথক ঘটনায় দুই জনের মৃত্য

কক্সবাজারের রামুতে ছুরিকাঘাতে নিহত কৃষকলীগ নেতা নাজেম হত্যাকান্ডের ঘটনায় আটক ২

গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স’র কর্ণধার নূর মোহাম্মদ গ্রেপ্তার

চকরিয়ার নবাগত সহকারী কমিশনার ভূমি এরফান উদ্দিন

চকরিয়া প্রেসক্লাবের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন
সাংবাদিকরাই পারে মানুষের আশার প্রতিফলন করতে- সাংসদ সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম 

“বদর দিবস” এর ইতিহাস, শিক্ষা ও তাৎপর্য

মাইশা আক্তার নিশিলার কবিতা “আসক্ত মেঘকণ্যা”

বোয়ালখালীর ৬টি দুস্থ পরিবারে এম এ হাশেম ফাউন্ডেশনের ঘর হস্তান্তর

” আনজুমনে নওজোয়ান ” বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসা শাখার অনুমোদন

শান্তিগঞ্জে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত