ঢাকাসোমবার , ৩০ জুনe ২০২৫
  1. সর্বশেষ

আখরের জামান’র লেখা — আধা ঘন্টার ছুটি

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
২৩ মার্চ ২০২৩, ১২:৪৬ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

———

গ্রামবাসী ও বাবার কাছে শুনেছি আমাদের নাকি একসময় অগাধ ধন-সম্পদ ছিল।আমার দাদার গ্রামে বেশ খ্যাতি ও প্রভাব ছিল।দাদা আমার বাবার বিয়ে দেন একই গ্রামের এনাতউল্লার মেয়ে ময়না বেগমের: (আমার মা) সাথে। সেই সুবাধে আমার দাদার বাড়ি ও নানার বাড়ির দূরত্ব প্রায় দুইশ মিটার। দৌড় দিয়ে এ বাড়ি ও বাড়ি যাওয়া যায়। আমার মায়েরা নয় ভাই বোন। ছোটবেলা থেকেই সব খালাদের ভাল করে চিনি। আমার মা সবার থেকে বড় হওয়ায় বোনদের অভিযোগ, আবদার আমার মার কাছেই বর্তায়। সব খালাদের আর্থিক অবস্থা ভাল হলেও যার অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরাবার মতো তিনিই ছিলেন আমার প্রিয় একজন। আমায় খুব আদর করতেন। উনার নাম নাম্মিন।

খালার সব থেকে যে আচরনটা আমার ভাল লাগতো তা হলো তিনি কথায় কথায় খুব হাসতেন যেন শব্দের থেকে হাসির মাত্রা বেশি। খালার স্বামীর নির্দিষ্ট কোন পেশা ছিল না। কখন রিকশা চালাইতেন আবার কখনো হোটেলের কারিগর হয়ে কাজ করতেন। মানুষ হিসেবে ভালোই ছিলেন। খালার শ্বশুর বাড়িতে স্বয়সম্পত্তি না থাকায় খালার স্থান হলো বাপের বাড়িতে। নানী তার বাড়ির পেছনে পরিত্যক্ত জমিতে ঘর তুলে দিলেন।

সবকিছু ঠিক থাকলেও যেটা মোটেও ঠিক নয় সেটা হচ্ছে খালার হঠাৎ ফিট হয়ে যাওয়া। মাটিতে লুটিয়ে পরে অজ্ঞান হয়ে যায়।খালার এ রোগে খুব কষ্ট হয়। ধীরে ধীরে আমি এ রোগ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করলাম। এই রোগটাকে বলা হয় মৃগী বা নিউরোলজিকাল ডিজিস।

বছরের পর বছর যায় খালার অবস্থা করুণ হতে থাকে। আগে নাকি সপ্তাহে দু-একদিন হতো।কিন্ত এখন দিনে দু-তিনবার হয়। এই মৃগী রোগের নাকি প্রতিষেধক নেই।তারপরও ডাক্তারের কাছে দেখিয়ে ঔষধ নিতে লাগল।

আমি তখন একাদশ শ্রেনিতে পড়ি।খালার প্রেসক্রাইব করা ঔষধ আমি এনে দিতাম। উনার দুই মেয়ে এক ছেলে সন্তান ছিল। বড় মেয়ে ক্লাস ফাইভে এবং ছোট মেয়ে ওয়ানে পড়ে। আর ছোট ছেলেটার দুই বছর হবে। খালাকে এক হাতে সংসার সামলাতে হতো অন্যদিকে মস্তিষ্কে চেপে বসা মৃগী রোগ। খালা পুরোপুরি ফিট হওয়ার আগে শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠত যেমনটা বিদ্যুৎ শকে হয়। অসুখ ভাল করার জন্য খালা কত যে মানুষের দেয়া গাছপাতা, শাকপাতা,পোড়া পানি খেয়েছে। কবিরাজ, ডাক্তার দেখানো সবই করেছে নিজেকে বাঁচানোর জন্য। পাড়া -প্রতিবেশী ভিন গ্রামের মানুষ এসে খালাকে যে পরামর্শই দেক না কেন তা অন্ধের মতো বিশ্বাস করে গ্রহণ করেছে। হয়তো ভেবেছিল এই বুঝি মুক্তির দূত।

সেসময় আমি নানীর বাড়িতে টিউশন করাতাম। বড়মামার দুই মেয়েকে এবং আরিনকে (খালার বড় মেয়ে) পড়াতাম। প্রতিদিন সকালে সাইকেল চালিয়ে আরিনদের বাড়ির পিছন দিয়ে যেতাম। যাওয়া আসার সময় খালাকে দেখতাম বাড়ির পেছনে রোদে বসে থাকত।এটা ছিল আমার প্রতিদিনের চিত্র।

খালাকে যখন দেখতাম আমি বড্ড কষ্ট পেতাম। তিনি আমাক শুধু দেখতেন ডাকতেন না। মনে হতো তিনি চাইতেন না তার কষ্টের ভাগিদার আর কেউ হউক। এভাবে কয়েকমাস যাওয়ার পর খালার কোলে আরো এক মেয়ে সন্তান এলো। এই মুমূর্ষু অবস্থায় যখন নিজেকে সামলানো ্কঠিন তখন এই নবাগত সন্তানের লালন -পালন কে করিবে? কিন্তু মা তো মাই হয়। শত যন্ত্রণার মাঝেও ছেলেমেয়েদের নিয়ে খালা সুখে থাকার অভিনয় করে গেল। অল্প হলেও সেই দুঃখকে নিজের করে নিয়েছে খালার বড় মেয়ে। যার কিনা প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার কথা, সে স্কুলতো দূরের কথা বইগুলোও প্রাইভেট ছাড়া খোলার সময় পায় না সংসার ব্যস্ততায়। ভাত রান্না করা, ছোট ভাই-বোনদের গোসল করানো, মাকে ঔষধ খাওয়ানো আরো কত কি! বয়সে ছোট হলেও তাতে কি সে যে পরিবারের বড় মেয়ে। দায়িত্ব কি আর বয়স দিয়ে হয়।

একদিন সকাল ৬:৩০ মিনিটে আমি প্রাইভেট পড়ানোর উদ্দেশ্য বাড়ি থেকে বের হলাম। দেখলাম খালা সেই চিরচেনা পথে বসে নিজের অসুখের সাথে সংলাপ করছে।আমি থমকে গেলাম, দেখলাম খালা একবার হাসতেছে যে হাসি আমার খুব চেনা কিন্তু হঠাৎ আবার গোঙায় গোঙায় কাঁদতে লাগল। আমি বিলম্ব না করে পড়াতে এলাম। মনে মনে খুব ভয় পেলাম। এসে দেখি নানীর বাড়িতে খালার সব ছেলেমেয়েরা। আমি আরিনদের পড়ানো শেষ করার আধা ঘন্টা আগে সে বলল, ভাইয়া আম্মু বাসায় একা আছে, আমায় ছুটি দাও আম্মুর কিছু লাগতে পারে। বললাম থাক আধাঘন্টা পরতো ছুটিই দিব। তাকে যেতে দিলাম না।

ছুটির পর আরিন চলে গেল বাসায়। ছুটি দিয়ে নানীর আবদারে খেতে বসলাম। এক মুষ্টি ভাত খেয়েছি কি খাইনি এর মধ্যেই কে জানি এসে বলল খালা ফাঁসি দিয়েছে। বাড়ির সবাই চিৎকার দিয়ে ছুটে চলে গেল। আমি হতভম্ব হয়ে ভাতের প্লেটটি নিয়ে বসেই রইলাম। এই প্রথম আপনজন হারানোর ব্যথা অনুভব করলাম।

এভাবেই খালা পোষা রোগকে আর পুষতে না পেরে নিজেকে শেষ করে দিল। বিষাদ সিন্ধুতে ভাসিয়ে দিল আমাদের। খালাকে মাটি দেওয়ার সময় আমার হঠাৎ মনে হলো আরিনকে আধা ঘণ্টা আগে ছুটি দিলে হয়তো খালা বেঁচে থাকতো। বারংবার মনে হচ্ছিল কেন আমি আধা ঘন্টা আগে ছুটি দিলাম না।

আমি অনুতাপ করতে লাগলাম। অনুশোচনা হয় আধা ঘণ্টা আগে ছুটি না দেয়ার। আজ ছয়টি বছর চলে যায় কিন্তু ছুটি না দেয়ার অনুশোচনা মনে হয় তার অদৃশ্য আত্মা হয়ে আমায় আজও তাড়িয়ে বেড়ায়।।

—–
শিক্ষার্থী
আখরের জামান
লোক প্রশাসন বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।

406 Views

আরও পড়ুন

হকি খেলতে চীনে যাচ্ছেন শান্তিগঞ্জের নাদিরা তালুকদার ইমা

শেরপুরে ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া নবজাতক উদ্ধার : আটক-১

শিক্ষার আলোকবর্তিকা মরহুম মোঃ আব্দুল মজিদের স্মরণসভা

দোয়ারাবাজারে আ:লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রবাসীর জমি দখলের অভিযোগ

শান্তিগঞ্জে পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়ন বিএনপি’র কর্মীসভা: সময় এসেছে কর্মীদেরকে মূল্যায়ন করার

কেউ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে–শাহ রিয়াজুল হান্নান

টেকনাফে ৬টি হত্যা মামলার পালাতক আসামি রোহিঙ্গা ইসমাঈল গ্রেফতার

ঋণ বাতিল করে জলবায়ু অর্থায়নের দাবিতে...
চকরিয়ায় ধরার উদ্যেগে সাইকেল র‌্যালি ও মানববন্ধন

বোয়ালখালীতে খায়ের মঞ্জিল দরবার শরীফ পরিচালনা কমিটি গঠিত

রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিতে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ আজ

পেকুয়ায় সড়ক সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন

ঢাকা আলিয়ায় ‘তরুণ’-এর নতুন নেতৃত্বে তাশফিকুল ও মিফতাহ: মূল্যবোধে উজ্জ্বল প্রজন্মের প্রত্যয়