ঢাকাশুক্রবার , ২৯ মার্চ ২০২৪
  1. সর্বশেষ

১৬ নভেম্বর ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে.;
চবি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নেপথ্যে নায়ক অধ্যাপক আহমদ হোসেন স্মরণে-জিয়া হাবীব আহ্সান

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
১৬ নভেম্বর ২০২২, ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!


চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক, সাবেক উপধ্যাক্ষ অধ্যাপক আহমদ হোসেনের ১৬ই নভেম্বর ২০১৬ইং ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী ।

মরহুম অধ্যাপক আহমদ হোসেন দীর্ঘ ৩৫ বৎসর একনাগাড়ে সরকারী সিটি কলেজে অধ্যাপনা করেন । তিনি চট্টগ্রাম শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত চট্টগ্রাম সিটি কলেজ- জন্মলগ্ন হতেই এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । যে কয়েকজন ব্যক্তির নিরলস পরিশ্রমে চট্টগ্রাম সিটি কলেজ গড়ে উঠেছিল তন্মধ্যে তিনি অন্যতম । এক সময় সিটি কলেজটি আন্দরকিল্লার মোড়ে ছিল । পরে স্থানান্তরিত হয়ে আইস ফ্যাক্টরী রোডে চলে আসে । এই কলেজ-এর সূচনা লগ্নে অধিকাংশ শিক্ষকই প্রায় বিনা বেতনে শিক্ষা দান করতেন । শিক্ষকতা জীবনের প্রতি গভীর ভালবাসার কারণে তাঁরা এ কাজটি করতেন । আহমদ হোসেন শিক্ষকতা জীবনে ব্রতী হয়েছিলেন এই বৃত্তির প্রতি গভীর অনুরাগের বশবর্তী হয়েই । আমৃত্যু শিক্ষাই ছিল তাঁর প্রথম ভালবাসা ।

ছাত্র জীবনে তিনি মুসলিম ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন । পরে ১৯৫১ সালে চট্টগ্রামে নিখিল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন । এই সম্মেলনের প্রধান অতিথি ছিলেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক । ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে ইকবাল হলের আবাসিক ছাত্র থাকা অবস্থায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং কয়েকদিনের জন্য কারারুদ্ধ হয়েছিলেন । চট্টগ্রামে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রয়াত বাদশা মিঞা চৌধুরীর অবদান অবস্মিরণীয় । চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা তরান্বিত করার দাবীতে এবং মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সদর দফতর বিভাগীয় হেডকোয়ার্টার চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা না করিয়া কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে লালদিঘীর ময়দানে সর্বপ্রথম জনসভার ডাক দেন । অধ্যাপক আহমদ হোসেন বাদশা মিঞাকে এসব কাজে নানাভাবে সাহায্য করেছেন ।

বিশেষত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে । ছাত্রদের নিয়ে আন্দোলন করা, স্মারকলিপি দেওয়া প্রভৃতি নানাকাজ তিনি করেছেন বাদশা মিঞার সুযোগ্য সহকর্মী হিসেবে । অধ্যাপক আহমদ হোসেনের সবচেয়ে বড় কাজ আইস ফ্যাক্টরী রোডে চট্টগ্রাম সরকারী সিটি মহিলা হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করা । পূর্ব পাকিস্তানের চট্টগ্রামে তৃতীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবিতে যে সংগ্রাম কমিটি হয় তাতে অধ্যাপক আহমদ হোসেনকে আহ্বায়ক নির্বাচিত করা হয় । সেই সময় এই পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিকে তিনি জনপ্রিয় করে তোলেন । চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের সংগঠক অধ্যাপক আহমদ হোসেন স্যারের বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সংগ্রাম আন্দোলনে সহকর্মী ছিলেন আলাদীন আলীনূর । তিনি তাড়াহুড়ো করে মিটিং স্থলেই এঁকে দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনের প্রকৃত কারণ দেখিয়ে এর মানচিত্র ও এর স্থান নির্দেশনা । চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সংগ্রাম আন্দোলনে তিনি ছিলেন সামনের কাতারের নেতা । তিনি ছিলেন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক । বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবিতে লালদীঘি মাঠে চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত সব এসেম্বলি মেম্বারদের নিয়ে জনসভা করেছিলেন ।

প্রথমদিকে এ বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট, কুমিল্লা ও নোয়াখালিতে স্থাপনের পরিকল্পনা করা হলেও ১৯৬৩ সালের ১২ ডিসেম্বর, রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের অনুপস্থিতিতে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে সভাপতিত্বকালে ফজলুল কাদের চৌধুরী কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী এ.টি.এম মোস্তফাকে বিশ্ববিদ্যালয়টি কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামে স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন । কুমিল্লায় জনগণ চেয়েছিলেন এটা কুমিল্লায় হোক, কিন্তু তিনি যে আপোসহীন ভূমিকা নিয়েছিলেন এটা চট্টগ্রামে স্থাপনে, তা দৃষ্টান্ততুল্য হয়ে থাকবে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে । অধ্যাপক আহমদ হোসেন সিটি কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের সম্পৃক্ত করেছিলেন এই আন্দোলনে । আশ্চর্যের কথা বিশ্ববিদ্যালয় হবার পর কোনোদিন ঐ মুখি হয়েছিলেন কিনা জানা যায়নি । এতোটাই প্রচারবিমুখ ছিলেন- জাহির করতেন না নিজেকে । তিনি এই পরিষদের আহবায়ক হিসেবে তিনি চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিকে সেই সময় জনপ্রিয় করে তোলেন । সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে তিনি নিজে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, গভর্নর ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যদের স্মারকলিপি প্রদানের জন্য বেশ কয়েকবার করাচি, রাওয়ালপিন্ডি ও লাহোর সফর করেন ।

তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলনের মূল সংগঠকদের একজন । কিন্তু কেন জানি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, সরকার অথবা কোনো মহল তার এই অবদানটুকু সেভাবে মূল্যায়ন করেনি । পরবর্তীতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার আর ক্ষমতা, অর্থের জোয়ারে ভেসে গেছে এইসব নিরব কর্মবীরের কীর্তি । ভুলে গেছে মূল নেপথ্য নায়কদের কথা । এখন বিশ্ববিদ্যালয় বলতেই চট্টগ্রামের কিছু মানুষ বোঝে এটা তৎকালীন স্পিকার মরহুম ফজলুল কাদের চৌধুরীর কলমের এক খোঁচায় হয়েছে, অথচ এইটা কারো একক কৃতিত্ব নয়, বাস্তবে এর পিছনে রয়েছে সংগ্রাম আর আন্দোলনের ইতিহাস । মরহুম অধ্যাপক আহমদ হোসেন আমাদের মাঝে নেই, তার চাওয়া পাওয়ারও কিছুই নেই । জীবিতকালেও আমরা এই কাজের জন্য তাকে সামান্য স্বীকৃতি দেইনি, তিনি চানওনি । বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হয়েছে মেধাচর্চার তীর্থকেন্দ্র, দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ । বিশাল এই স্থাপনার একটি অংশে একটা ইট এর স্তম্ভ দিয়ে আমরা কি এদের সম্মানিত করতে পারি না ? আমরা যদি নিজেরা নিজেদের প্রচারে মত্ত থাকি তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রকৃত গুণীদের সম্বন্ধে কিছুই জানবে না- দায়বদ্ধ থাকবে না দেশের ও মাটির প্রতি । বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে চাইলে উদ্যোগ নিতে পারে । তিনি ১৯২৮ সালের ৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার গড়দুয়ারা গ্রামে জন্য গ্রহণ করেন ।

অধ্যাপক আহমদ হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ পাশ করেন । ছাত্র জীবনে তিনি মুসলিম ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে ছাত্র আন্দলনে যুক্ত ছিলেন । পরে ১৯৫১ সালে চট্টগ্রামে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র সম্মেলনে অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন এই সম্মেলনের প্রধান অতিথি ছিলেন শেরে বাংলা একে ফজলুল হক । ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যায়ন কালে তিনি সরাসরি ভাষা আন্দোলনে অংশ গ্রহন করেন । মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাককালে ১৯৬৯-৭০ এর উত্তাল গণআন্দোলনের সময় তার রচিত ও পরিচালিত গীতি নাট্য ‘আমাদের মুক্তি সংগ্রাম’ দেশের বিভিন্ন স্থানে মঞ্চায়িত হয় । যা মুক্তি পাগল বাঙ্গালীকে মুক্তি সংঘামে উজ্জীবিত করে । তিনি কলেজে ও বিশ্ববিদ্যায়ের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রন্থ রচনা করে । প্রন্থাবলীর মধ্যে ছন্দ ও অলক্ককারের কথা বাংলা ব্যাকরণের রূপরেখা, সাহিত্য আলোচনা, আধুনিক বাংলা রচনা ও পাক উচ্চতর বাংলা রচনা সমগ্র উল্লেখযোগ্য । তিনি চট্টগ্রাম সিটি মহিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা । এই ছাড়া তিনি তার স্ব-গ্রাম গড়দুয়ারায় তার শিক্ষা গুরু জ্ঞানতাপস ড. মো. শহিদুল্লাহ নাম অনুসারে একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন । চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে মহৎপ্রাণদের অবদান পূর্ণিমার চাঁদের মতো চিরকাল উদ্ভাসিত থাকবে । আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন তাঁদের প্রত্যেকের এ ত্যাগ ও কুরবানি কবুল করুন, আমিন । আজ অধ্যাপক আহমদ হোসেন এর ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আমরা অধ্যাপক আহমদ হোসেনের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি ।

লেখক :
আইনজীবী, কলামিস্ট, গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী।

204 Views

আরও পড়ুন

চমেক হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে ওঝার কাছে, সাপে কাটা যুবক

নওগাঁর পত্নীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী সেবা প্রদানের জন্য এ্যামবুলেন্স প্রদান

র‍্যাবের ২৪ ঘন্টা অভিযানে ধর্ষন মামলার আসামী সেলিম গ্রেফতার

নকলায় পৃথক ঘটনায় দুই জনের মৃত্য

কক্সবাজারের রামুতে ছুরিকাঘাতে নিহত কৃষকলীগ নেতা নাজেম হত্যাকান্ডের ঘটনায় আটক ২

গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স’র কর্ণধার নূর মোহাম্মদ গ্রেপ্তার

চকরিয়ার নবাগত সহকারী কমিশনার ভূমি এরফান উদ্দিন

চকরিয়া প্রেসক্লাবের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন
সাংবাদিকরাই পারে মানুষের আশার প্রতিফলন করতে- সাংসদ সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম 

“বদর দিবস” এর ইতিহাস, শিক্ষা ও তাৎপর্য

মাইশা আক্তার নিশিলার কবিতা “আসক্ত মেঘকণ্যা”

বোয়ালখালীর ৬টি দুস্থ পরিবারে এম এ হাশেম ফাউন্ডেশনের ঘর হস্তান্তর

” আনজুমনে নওজোয়ান ” বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসা শাখার অনুমোদন