ঢাকামঙ্গলবার , ২৩ এপ্রিল ২০২৪
  1. সর্বশেষ

বেকারত্ব থেকে বাঁচতে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের গুরুত্ব ও বন্ধু বান্ধব নির্বাচন প্রসঙ্গ।

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
২৮ অক্টোবর ২০২২, ৬:৩২ অপরাহ্ণ

Link Copied!


পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হওয়ার পর থেকে মাতৃক্রোড়ে বসে মায়ের ভাষা শিখতে শিখতে প্রায় তিন-চার বছর কেটে যায়। এরপর শুরু হয় স্কুল জীবন। স্কুল জীবন পার করার পরে শুরু হয় মাধ্যমিক জীবন। মাধ্যমিক জীবন শেষ হলে কলেজ জীবন। কলেজ জীবনের পরে আসে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণের আগ পর্যন্ত অর্থাৎ স্কুল জীবন থেকে কলেজ জীবন পর্যন্ত এ সময়টা প্রত্যেকেরই বাবা- মায়ের শাসনের মধ্যেই কাটাতে হয়। এ সময়টা তে পড়াশোনা না করলে বাবা-মায়ের কাছে জবাবদিহিতা করতে হয়। পরীক্ষায় ফেল করলে বাবা মায়ের কটু কথা শুনতে হয়। এ সময়টা তে কোনো অপকর্ম করার আগে শতবার ভাবতে হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় জীবন এমন একটা জীবন যেখানে থাকে না কোনো শাসন কিংবা জবাবদিহিতা। মনে হয় এ যেনো অন্য এক জীবনে পদার্পণ করা। এক কথায় স্বাধীন একটা জীবন পাওয়া যায়। যেটার আনন্দ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পদার্পণ করার আগে কোনো শিক্ষার্থী ই অনুধাবন করতে পারে না। আলিম/ এইচএসসি পাশ করার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার লক্ষ্যে এক এক জন শিক্ষার্থী বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে চলে যায়। বাবা মায়ের থেকে হাজারো মাইল দূরে থাকতে হয়। তখন সবকিছু সাধারণত বন্ধু-বান্ধব দের ঘিরেই হয়ে থাকে। বন্ধু বান্ধবরা ই তখন ঘুমানোর সাথী, চলার সাথী, খেলার সাথী, সুখে- দুঃখে সব সময়ে বন্ধু বান্ধবরা ই থাকে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সবার সাথে বন্ধুত্ব হয় না এবং বন্ধু নির্বাচন সবার এক রকম হয় না। কেউ বন্ধু নির্বাচন করে গ্রুপ স্টাডি করার জন্য পড়ুয়া বন্ধুকে , কেউ নির্বাচন করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনকে উপভোগ করার জন্য অর্থাৎ মজা মাস্তি করে, নেতামি করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে মাথায় তুলে রাখে এমন বন্ধুকে। আবার কেউ প্রেমিক / প্রেমিকাকে নিয়ে আড্ডায় মজে থাকে। গ্রাম বাংলায় একটা বুলি রয়েছে যে, ফুলের সান্নিধ্যে গেলে ফুলের ঘ্রাণ পাওয়া যায়। কিন্তু গোবর থেকে কখনো ই ফুলের ঘ্রাণ আশা করা যায় না। ঠিক তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিত্যদিনের চলার সঙ্গীরা অর্থাৎ বন্ধু বান্ধবরা যদি স্বপ্নবাজ হয়। যদি তাঁদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য অনেক বড় থাকে। তখন সেই সমস্ত বন্ধু বান্ধবদের ছোঁয়ায় নিজের লক্ষ্য উদ্দেশ্যও বড় হতে থাকে। কিন্তু স্বপ্নহীন, লক্ষ্য উদ্দেশ্যহীন বন্ধু বান্ধবরা নিত্যদিনের সঙ্গী হলে তাঁদের ছোঁয়ায় পড়াশোনার প্রতি নিজের আগ্রহ হারাতে থাকে ও নিজেকে উন্নতি করার চিন্তা – ভাবনা তেমন আসে না। এবং তাঁদের থেকে ভালো কিছু পাওয়ারও আশঙ্কা থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করার পরে অধিকাংশ মেধাবী মুখ ই স্বপ্নহীন, লক্ষ্য উদ্দেশ্য হীন বন্ধুবান্ধবদের ছোঁয়ায় ভুলে যায় নিজেদের গন্তব্যস্থল। স্বপ্নহীন, লক্ষ্য উদ্দেশ্যহীন বন্ধু বান্ধবরা সর্বদা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনকে উপভোগ করতে শেখায়৷ ” এত পড়াশোনা করে কী হবে আগে জীবনকে উপভোগ করতে হবে ” এ স্লোগানে বিশ্বাসী হয়ে ভুলে যায় নিজের ক্যারিয়ার গড়ার কথা , বাবা- মায়ের স্বপ্ন পূরণের কথা।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করার পরে যখন চাকরির পরীক্ষায় ব্যর্থ হয় এবং পরিবারের ভাড় মাথায় আসে তখন আর সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মতো হাসিমাখা বদন খানি দেখা যায় না। ব্যর্থ হয় বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে। তখন চারিদিকে নেমে আসে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। স্নাতক /স্নাতকোত্তর শেষ করার পর চাকুরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হতে পেরে ও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত না করতে পেরে তখন নিজেকে নিজে ধিক্কার জানায়। ” আহ! আমি কী করলাম যদি পড়াশোনা করতাম” বলে শুধু আফসোস করে। তখন সহ্য করতে হয় পরিবারের অবহেলা, শুনতে হয় কটুকথা। পরিবারের হাল ধরার জন্য দিশেহারা হয়ে কেউ ছোটোখাটো একটা কোম্পানিতে জব করে। কেউবা সামাজিক পরিস্থিতিকে মেনে নিতে না পেরে আত্মহত্যাকে বেছে নেয়। জরিপ অনুযায়ী গত বছর মোট ১০১ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। যারা আত্মহত্যা করেছে তাদের মধ্যে ৬২ জন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, যা মোট আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর ৬১.৩৯ ভাগ৷ আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ২৩ জন, যা মোট শিক্ষার্থীর ২২.৭৭ শতাংশ৷ বাকিরা মেডিকেল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন৷ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন আত্মহত্যা করেছেন৷ এসব শিক্ষার্থীদের অধিকাংশের ই আত্মহত্যার কারণ ছিলো চাকরি না পাওয়া। বেকারত্ব তাঁদের গ্রাস করেছিলো। চাকরির ক্ষেত্রে সফল না হওয়ার পিছনে অনেকগুলো কারণ থাকে। তন্মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো- বিশ্ববিদ্যালয় জীবনকে গুরুত্ব না দেয়া অর্থাৎ স্বপ্নহীন লক্ষ্য উদ্দেশ্যহীন বন্ধু বান্ধবদের ছোঁয়ায় নিজের এবং বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণের কথা ভুলে গিয়ে ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে ভালোভাবে গড়ে না তোলা৷ বর্তমান সময়ে চাকরির বাজারে ব্যাপক প্রতিযোগিতা। এ ফ্লিল্ডে নিজেকে ভালোভাবে তৈরী করতে না পারলে টিকে থাকা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ে। বিসিএস কিংবা ব্যাংক বা অন্যান্য সরকারি /বেসরকারি জব এর ক্ষেত্রে ব্যাসিক ভালো না থাকলে সফল হওয়া অনেকটা কষ্টকর হয়ে পড়ে। চাকরি প্রার্থীদের যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন দক্ষতা অর্জন করে তাঁদের জন্য সফল হওয়া অনেকটা সহজ হয়ে যায়। আর যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন দক্ষতা অর্জন করে না তাঁদের বড় একটা অংশের কারণে বেকারত্বের হার বর্ধিঞ্চু। মহামারির আগে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৮টি দেশের মধ্যে ‌উচ্চশিক্ষিত বেকারত্বের দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।

বিআইডিএস এর এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বেকারত্বের হার ৩৪ শতাংশ আর স্নাতক পর্যায়ে এই হার ৩৭ শতাংশের মত। আমাদের দেশে হাজার হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে যারা নামেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পড়াশোনা না করে জীবনকে উপভোগ করে সময় অতিবাহিত করে। আর সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য একাডেমিক পরীক্ষার আগে মোটামুটি পড়াশোনা করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে না গড়ে অর্থাৎ দক্ষতা অর্জন না করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে এসব শিক্ষার্থীরা যখন চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তখন দেখা যায় চাকুরির পরীক্ষায় সফল হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যাঁরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে দক্ষ করে তুলেছে একমাত্র তাঁরা ই চাকরির পরীক্ষায় সফল হয়। ফলে বেকারত্ব তাঁদের গ্রাস করতে পারে না। তাই বেকারত্ব দূর করতে নামেমাত্র পড়াশোনাকে না বলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং লক্ষ্য অনুযায়ী ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে এগিয়ে নিতে হবে। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কর্মমুখী নয়। তাই একাডেমিক অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবজেক্ট অধ্যয়নের পাশাপাশি আমাদের চাকুরির জন্যও পড়াশোনা করতে হবে। যাতে বেকারত্ব গ্রাস করতে না পারে। নিজের জন্য ও পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কিছু টা উপভোগ করার পাশাপাশি নিজেকে নিয়ে যেতে হবে অনেক দূরে। অন্যদিকে বন্ধু নির্বাচনে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে। এমন বন্ধুকে বন্ধু হিসেবে নির্বাচন করতে হবে যাঁর স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়া এবং যে ভবিষ্যতে নিজেকে ভালো একটা অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বদা লড়াই করে। স্বপ্নবাজ বন্ধু বান্ধবদের কারণে নিজের সফল হওয়ার পথ অনেকটা সহজ হয়ে যায়। আর স্বপ্নহীন, লক্ষ্য উদ্দেশ্যহীন বন্ধু বান্ধবদের ছোঁয়ায় স্বপ্নগুলো মরতে থাকে। তাই স্বপ্নগুলোকে জীবন দান করতে স্বপ্নহীন, লক্ষ্য উদ্দেশ্যহীন বন্ধু বান্ধবদের বর্জন করতে হবে। নিজেকে এগিয়ে নিয়ে বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারলেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন সফল ও সার্থক হবে।

মো. আল-আমিন
ঢাকা কলেজ।

158 Views

আরও পড়ুন