ঢাকামঙ্গলবার , ২৩ এপ্রিল ২০২৪
  1. সর্বশেষ

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মাদকমুক্ত সমাজ গঠনই হোক আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ৯:১২ অপরাহ্ণ

Link Copied!

মোহাম্মদ মন্‌জুরুল আলম চৌধুরী।

গত ৮ আগষ্ট’২২ প্রথম আলো মাদক বিরোধী ট্রাষ্টের এক আলোচনায় চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের একজন দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জানতে চায়, রাস্তায় হাঁটতে-চলতে অনেকই ধূমপান করেন। কেউ কেউ বলেন, ধূমপানের ফলে দুশ্চিন্তা কমে যায়। এ কথা কি সত্য? “দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ধূমপান করে বা মাদক নিয়ে মানসিক চাপ মোকাবিলা করা একটি ভুল পদ্ধতি। দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য অন্য অনেক ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। ধূমপান করলে দুশ্চিন্তা কমে না। বরং নিকোটিন দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দেয়”{সূত্রঃ প্র/ আলো, ৯ আগষ্ট’২২}। উল্লেখ্য, প্রথম আলো ট্রাস্টের আয়োজনে মাদকবিরোধী এক সভা গত ৮ আগষ্ট’২২ চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কয়েক শ শিক্ষার্থীকে মাদকের ভয়াবহতা, মাদক থেকে দূরে থাকার উপায় নিয়ে তাঁরা কথা বলেন। নায়ক সাজার জন্য বা হতাশার জন্য ধূমপানে মুক্তি বা সমাধান কিছুই নেই। বরং পরিশ্রম লেখাপড়া অধ্যাবসায় মননশীল এবং সৃষ্টিশীল কাজে আত্মনিয়োগ করে জীবনে নিজেদেরকে নায়ক হয়ে উঠতে হবে। কোন বন্ধু যদি ধূমপানে আহ্বান জানায় তবে প্রথমেই না বলার পাশাপাশি দেশের প্রচলিত ধূমপান বিরোধী আইনের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। অথবা কৌশলে স্থান ত্যাগ করে অন্য বন্ধুদের সঙ্গে বা খেলাধুলায় ব্যস্ত হয়ে যেতে হবে। বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ধূমপান করা যাবে না কেননা মাদকের প্রতি আসক্তি ধূমপান দিয়েই শুরু।
ক্যানসার হওয়ার বিভিন্ন কারণের মধ্যে ধূমপান অন্যতম। ধূমপান করলে শরীরে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় এবং ঝুঁকি তৈরি করে। নিকোটিনের মাধ্যমে অনেক ধরনের ক্যানসার হলেও ফুসফুসে ক্যানসার বেশি হয়। আবার কারো মুখে ও মুখ গহ্বরেও ক্যানসার হতে পারে। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে ধূমপানের কারণে শরীরে নানা রোগ ব্যাধি বাসা বাঁধে। ক্যানসার নিয়ে এক শিক্ষার্থীর জবাবে একজন চিকিৎসক বলেন, “নিকোটিন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়; এটি সরাসরি কারণ নয়। এ ঝুঁকি কারও জন্য ২০ শতাংশ, আবার কারও জন্য ১০০ শতাংশ। শুধু সিগারেট নয়, গাঁজা, অ্যালকোহল ইত্যাদি মাদকের ফলে ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি হয়। এসব মাদক শরীরে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমিয়ে দেয়”। ধূমপান ছাড়াও আমাদের দেশে হিরোইন, ইয়াবা, ম্যাজিক মাশরুম, নিউ সাইকো-অ্যাকটিভ সাবস্টেনসেস (এনপিএস) বা খাট, ডায় মিথাইল ট্রিপ্টামিন (ডিএমটি) লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাই-ইথালামাইড (এলএসডি), ক্রিস্টাল মেথ আইস, এস্কাফ সিরাপ ও ডিওবি’র মতো ভয়ঙ্কর আরও অনেক উচ্চমাত্রার ক্ষতিকর মাদক সুলভ এবং সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। জানা যায়, “এসব মাদক, হেরোইন, গাঁজা, ফেন্সিডিল, ইয়াবার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। যা সেবনকারীর মধ্যে সাময়িকভাবে সুখকর অনুভূতির সৃষ্টি করে। পাশাপাশি সেবনকারীকে দ্রুত মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে”।
লেখাপড়ায় হতাশা, প্রেমে ব্যর্থতা, সঙ্গদোষ, কিশোর গ্যাং কালচার, পরিবারের শাসন বা নজরদারীর অভাব, কর্মজীবী পিতামাতার সন্তানদের প্রতি উদাসীনতা, সন্তানদের হাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ আসা, পিতামাতার মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, ডিভোর্সসহ বিবিধ কারণে কিশোর বা যুবক বয়সে অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। পাশাপাশি ছেলে ও মেয়েদের অবাধ মেলামেশা বা ফ্রি মিক্সিং, পর্নোগ্রাফি, আকাশ এবং বিজাতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন যুব সমাজকে বিপথগামী করছে। বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছাত্রীরাও মাদক গ্রহণ বা সেবন করছে। এতে দেহ এবং স্বাস্থ্যের দীর্ঘ মেয়াদে বিভিন্ন জটিল রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে,“মাদক দ্রব্য গ্রহণের ফলে, ফুসফুস ও মস্তকের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে থাকে। হৃদয় স্পন্দন ও নাড়ির গতি বৃদ্ধি পায়, চোখ রক্ত বর্ণ হয় এবং মুখ ও গলা শুকিয়ে আসে। কিডনি, লিভার, শ্বাসতন্ত্র, পরিপাকতন্ত্রসহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অকেজো হয়ে যায়। অনেকে দৃষ্টিশক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে। পাশাপাশি হজম শক্তি বিনষ্ট হয়, খাদ্যস্পৃহা কমে যায় মানবদেহে ক্রমাগত অপুষ্টি বাসা বাধতে থাকে। ” শিক্ষার্থীর পক্ষ হয়ে প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়কারী মাহবুবা সুলতানা দুই চিকিৎসকের কাছে জানতে চান, “কীভাবে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়াতে পারবে? এ বিষয়ে দুই চিকিৎসক বলেন,“মনোযোগ নষ্ট হওয়ার কারণ আগে খুঁজে বের করতে হবে। এখন শিক্ষার্থীরা মোবাইলে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। নিয়মিত খাওয়াদাওয়া করছে না। খেলাধুলাতেও অনেকের আগ্রহ নেই। এসব কারণে মনোযোগ কমে যায়”। প্রকৃতপক্ষে মোবাইল এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আসক্তিও মাদকের চেয়ে কম ভয়াবহ নয়। যা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগ নষ্ট ও অনীহার পাশাপাশি খাওয়া দাওয়ার প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মাচ্ছে। মোবাইল ল্যাপটপসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস মাটে খেলাধুলা, শারীরিক চর্চা বা ব্যায়ামে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। ফলে শরীর মোটা বা স্থূল হয়ে শারীরিক ও মানসিক অবসাদের সৃষ্টি করছে। বই পড়া, গল্প বলা, গল্প ছড়া কবিতা লেখা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতাসহ বিভিন্ন মননশীল এবং সৃষ্টিশীল কাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ না করার ফলে মাদক এবং মোবাইল আসক্তি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের এসব অশুভ আসক্তি পরিহারে সচেষ্ট হওয়ার পাশাপাশি লেখাপড়া, সুস্থ বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় অভ্যস্ত এবং মনোযোগী হওয়ার বিকল্প নেই। পাশাপাশি নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম লেখাপড়ায় মনোযোগ বৃদ্ধি করে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য ভয়াবহ ভয়ংকর বিধ্বংসকারী মরণব্যাধি হচ্ছে মাদক। তাই মাদকাসক্তি নিরোধে ব্যাক্তি পরিবার সমাজ জাতি এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে যা প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সুষ্ঠু নির্মোহ এবং কঠোরভাবে পালনে বদ্ধপরিকর হতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মাদকমুক্ত সমাজ গঠনই হোক আমাদের সকলের দৃঢ় প্রত্যয় এবং অঙ্গীকার।

172 Views

আরও পড়ুন