ঢাবি সংবাদদাতা
যশোর জেলার খড়কী এলাকায় অবস্থিত আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা-র সাপ্তাহিক একটি প্রকল্পের নাম হল “আইডিয়া ফ্রাইডে মিল”। যার মাধ্যমে প্রতি শুক্রবার পবিত্র জুম’আ র নামাযের পরে শিক্ষার্থীরা নিজেদের রান্না করা পোলাউ-মাংস কিংবা বিরিয়ানি নিয়ে রাস্তায় থাকা অনাহারীদের হাতে ৪৯ সপ্তাহ ধরে তুলে দিচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় এবার ৫০ তম সপ্তাহে প্রকল্পটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, টাঙ্গাইল ও খাগড়াছড়িসহ দেশের আরো বিভিন্ন এলাকায় বাস্তবায়ন করেছে ৫০ তম ফ্রাইডে মিল। এসব এলাকায় অনাহারী-অভুক্ত মানুষের মাঝে একবেলা খাবার বিতরণ করে একটু হলেও তাদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করেছে প্রকল্পটি।
আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা-র স্বপ্নদ্রষ্টা, যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেযের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো.হামিদুল হক শাহীন এ আয়োজনের ব্যাপারে বলেন, ‘ভালো কাজে সমৃদ্ধি আসে- এর ই প্রমাণ আইডিয়া ফ্রাইডে মিল। ৫০ সপ্তাহ আগে মাত্র ১০০০ টাকা দিয়ে আমার শিক্ষার্থীদের বলেছিলাম সপ্তাহে পবিত্র জুম’আর এই একদিন আমরা সবাই মিলে ভালো খাবার এর স্বাদ নিতে চাই। এভাবেই শুরু, শোকর আলহামদুলিল্লাহ, এরপর সুহৃদ, বন্ধু পরিজন এর সাথে যুক্ত হয়েছেন এবং এর বহর বেড়েই চলেছে। এবার ৫০ তম সপ্তাহে তাই মহাসমারোহে পালিত হলো এই আয়োজন সারাদেশ জুড়ে। ইনশাআল্লাহ, কেয়ামত পর্যন্ত আইডিয়া ফ্রাইডে মিল যেন না থামে সেটায় আমাদের ইচ্ছা।’
আইডিয়া ফ্রাইডে মিল এর কোর্ডিনেটর ও আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা-র সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার ইয়াসমিন মীম বলেন- ‘প্রতি শুক্রবার আইডিয়ান স্বেচ্ছাসেবী রা নিজেরা দুপুরে খাওয়ার আগে খাবার পৌঁছে দিয়ে আসে অনাহারী মানুষের কাছে। একাধারে ৫০ তম সপ্তাহ শেষ হলো, এরমধ্যে আলহামদুলিল্লাহ কোনো শুক্রবার বাদ যায়নি। অনেকে তাদের সন্তান এর জন্মদিন পালন কিংবা প্রিয়জনের মৃত্যুবার্ষিকীর জন্যও এই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন। এই প্রকল্প পরিচালনার একটি বিশেষ আর্থিক অংশ আসে শিক্ষার্থীদের পরিচালিত আইডিয়া-র আরেকটি সেক্টর আইডিয়া পিঠা পার্ক এর লভ্যাংশের ৩৫% থেকে।
“বাংলাদেশ শিক্ষার্থী ও উদ্যোক্তা গ্রুপ” (উইনি)- আইডিয়ার ভার্চুয়াল আরেকটি প্লাটফর্ম এর নির্বাহী প্রধান মল্লিকা আফরোজ বলেন, ‘আমাদের কানেক্টিভিটি আলহামদুলিল্লাহ অনেক। উইনি গ্রুপের মাধ্যমে আইডিয়া ফ্রাইডে মিল আজ সারাদেশে একযোগে উদযাপিত হচ্ছে। খাবার পাচ্ছেন হাজারো অনাহারী মানুষ! এই প্রথম আমিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে আইডিয়া ফ্রাইডে মিল পালন করলাম।’
আইডিয়ার স্বেচ্ছাসেবক সোহরাব হোসেন বলেন, ‘এই অনুভূতি সত্যিই অভূতপূর্ব। নিজেরা বাজার করে, রান্না করে যখন হঠাৎ কোনো অনাহারীর সামনে খাবার দিই, তারা খুশিতে অনেকে কেঁদে দেয়। অনেকে হয়তো কোনোদিন এই পোলাউ মাংসের স্বাদ নিতেও পারে নি এমন-ও বলেন। আমাদের প্রত্যেকের সংক্ষিপ্ত প্রচেষ্টা মিলিত হলে, অনেকের মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব- এর প্রমাণ আইডিয়া ফ্রাইডে মিল।’
উল্লেখ্য, ৫০ সপ্তাহ ধরে একাধারে পরিচালিত “আইডিয়া ফ্রাইডে মিল” আজ যশোরের গন্ডি পেরিয়ে খাগড়াছড়ির মতো পার্বত্য অঞ্চলেও পালিত হয়েছে। প্রায় ২০০০ এর বেশি মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে গিয়েছে সারাদেশ জুড়ে।