ঢাকাশুক্রবার , ১৯ এপ্রিল ২০২৪
  1. সর্বশেষ

পরিবেশ সুরক্ষা ও অর্থনীতি সচলে টেকসই অর্থায়ন

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
১৬ আগস্ট ২০২২, ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

জাহিদুল ইসলাম আকাশ

বিশ্বব্যাপী ভয়ানক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থাও সংকটাপন্ন। এই অবস্থা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বিশ্ব প্রতিনিধিরা। চলমান করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাব, ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত, মুদ্রার অবমূল্যায়ন এই সকল সংকটের মূল কারণ।

আমরা যা-ই করি তার প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ প্রভাব পরিবেশের উপর পড়েই। মানবসমাজ প্রকৃতির উপর যে নির্যাতনের স্টিম রোলার চালায় তা ঘুরে ফিরে তাঁদের ঘাড়েই এসেই চাপে। প্রচন্ড দাবদাহে উত্তপ্ত গোটা বিশ্ব। বিশেষ করে ইউরোপ ভীষণ ক্ষত-বিক্ষত। বনভূমি, পশু-পাখি,মানুষের আবাসস্থল পুড়ে ছাই করে দিচ্ছে দাবানল।

সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ দাবানল এবং দাবদাহে এক হাজারেরও অধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে স্পেন ও পর্তুগালে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২০৬০ এর দশক অবধি ইউরোপে দাবানলের এ প্রবণতা বজায় থাকবে। এদিকে বিভিন্ন দেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধির নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে।

বাংলাদেশেও তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। অসহ্য গরমে মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। এরই মধ্যে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওড়ে কিছুদিন আগে শক্তিশালী জলজ টর্নেডো আঘাত হানে। ভাগ্যিস এটি ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়েনি। নইলে মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যেত। কেননা এর কেন্দ্রে বায়ুর গতিবেগ ছিল ৩০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এ ধরণের প্রাকৃতিক বিপর্যয় বেশি ঘটছে। এখন দেশে বন্যা লেগেই আছে। সিলেটের ভয়াবহ বন্যার কথা কারও ভুলে যাওয়ার কথা না। দেশের স্বাভাবিক ঋতু বৈচিত্রতারও এখন ভিন্ন রূপ দেখা যাচ্ছে। শীতকালে শীত নেই, বর্ষাকালে বর্ষা নেই।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দেশে দেশে খাদ্য ও জ্বালানীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সারাবিশ্বে
দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধার ঝুঁকিতে ৮০ কোটি এবং না খেয়ে মরার ঝুঁকিতে রয়েছে ৩২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ
(বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর তথ্য)। একদিকে প্রকৃতির তান্ডব অন্যদিকে অর্থনৈতিক দৈন্যদশা। সব মিলিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ছে বিশ্বব্যবস্থা। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে বিশ্বের সকল দেশেই। বড় বড় অর্থনীতির দেশগুলোও ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতির কবলে পড়েছে। স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রেই ৯ দশমিক ১ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশেও ৯ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতি (৭ দশমিক ৫৬
শতাংশ) ঘটেছে। দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সকল দ্রব্যের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ।

বৈশ্বিক বাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তেলনির্ভর বিদ্যু কেন্দ্রগুলোর উ পাদন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চাহিদার সাথে সমন্বয়ের জন্য এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং চলছে। শুধু বাংলাদেশেই যে এমনটা ঘটেছে তা নয়। ইউরোপীয় কমিশন ইউরোপের দেশগুলোতে ১৫ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার হ্রাসের আহবান জানিয়েছে।

বিশ্বব্যাপী উদ্ভূত এ সংকটগুলো নিরসনে দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে টেকসই অর্থায়ন। আর্থিক ক্ষেত্রগুলোতে বিনিয়োগের সময় পরিবেশগত, সামাজিক ও সুশাসন বিবেচনায় নিয়ে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রণয়নের প্রক্রিয়াই টেকসই অর্থায়ন। অর্থা পরিবেশবান্ধব প্রকল্প করতে হবে যা একইসাথে পরিবেশ সংরক্ষণ করবে আবার অর্থনীতিকেও সচল রাখবে। বিশ্বের ৮৫ শতাংশ বিদ্যু
উ পাদন হয় জীবাশ্ব জ্বালানী থেকে। যা ব্যাপক কার্বন নিঃসরণ ঘটিয়ে জলবায়ুতে তীব্র নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অবশ্য কার্বনের মাত্রা শূন্যের কোটায় আনতে বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে নানা পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয়।
আমাদের নবায়নযোগ্য উ সের সন্ধান করতে হবে। সৌরশক্তি, বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রের ঢেউ, জলপ্রবাহ প্রভৃতি নবায়নযোগ্য উ স ব্যবহার করে আমরা বিদ্যু উ পাদন করতে পারি। এতে করে খনিজ জ্বালানীর উপর চাপ কমবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সবার আগে প্রয়োজন বৈশ্বিক জলবায়ুর সুরক্ষা নিশ্চিত করা। আর এক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার অপরিহার্য।

বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য উ সগুলো ব্যবহারের জন্য অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। যথাযথভাবে কাজে
লাগাতে পারলে বিদ্যু উ পাদনে আমরা অনেক ধাপ এগিয়ে যেতে পারবো ফলে খনিজ জ্বালানী সাশ্রয় হবে। টেকসই জ্বালানী পরিকল্পনা বৈশ্বিক সংকট অনেকাংশেই লাঘব করবে। খাদ্য উৎপাদনে প্রচুর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহৃত হচ্ছে। এর পরিবর্তে জৈবসারের ব্যবহার বাড়িয়ে দিতে হবে।

প্রত্যেক দেশে টেকসই উপায়ে অভ্যন্তরীন খাদ্য উ পাদন বাড়িয়ে দিলে এবং মজুদ না করে খাদ্য সরবরাহ বৃদ্ধি করা হলে খাদ্য সংকটও কেটে যাবে। ফলে কমে যাবে মুদ্রাস্ফীতিও।

প্রত্যেকটা শিল্পের যথাযথ কর্পোরেট সোশ্যাল রেস্পন্সিবিলিটি মেনে চলতে হবে। কেবল উ পাদন
বাড়ানো কিংবা জিডিপি সম্প্রসারন করলেই হবে না। উ পাদন বাড়ানোর সাথে পৃথিবীর মাটি, জল, বনভূমি, জলাধার বিপর্যস্ত হচ্ছে কিনা তা বিবেচনায় নিতে হবে। অর্থনীতির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও জরুরী। বিশ্বব্যাপী যে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা বন্ধ করা অত্যাবশ্যাক।

যুদ্ধক্ষেত্রে জীবন বিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহারের ফল কিন্তু প্রকৃতিকেই বহন করতে হচ্ছে। যা গোটা বিশ্বের মানবসভ্যতার জন্যই ক্ষতিকর। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে টেকসই অর্থায়ন বেগবান হবে। অবশ্য বাংলাদেশেও টেকসই প্রকল্প বাস্তবায়নে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ব্যাংক ঋণের ১০ শতাংশই এখন টেকসই অর্থায়নে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী এই ধারণা ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কেননা পরিবেশকে সুস্থ রাখা গেলে অর্থনীতি স্বাভাবিকভাবেই সচল হয়ে উঠবে।

লেখক
সাবেক শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

122 Views

আরও পড়ুন

লেখক জুবায়েদ মোস্তফার নতুন কবিতা–“খরার দিনে আগমন”

নাগরপুরে প্রাণীসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত 

শেরপুরে কুড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদককে কুপিয়েছে প্রতিপক্ষ

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত পরিদর্শনে বিজিবি মহাপরিচালক !!

মহেশখালীর পঙ্গু নুর আলমের ভাতা হ্যাকারদের পেটে!

বুটেক্সে আন্ডারগ্রাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি শুরু ৮ মে

মেহেরপুরে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উদযাপন

লোহাগাড়ায় বহুতল ভবন থেকে পড়ে শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যু

বগুলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির নির্বাচন সম্পন্ন

মহেশখালীতে ভাইচ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জহির উদ্দিনের প্রার্থীতা স্থগিত

দেওড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘এক্স স্কাউট রি-ইউনিয়ন’ আয়োজিত

শেরপুরে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কলেজ ছাত্রের আ’ত্ম’হ’ত্যা