ঢাকাশনিবার , ২০ এপ্রিল ২০২৪
  1. সর্বশেষ

খাবার চেয়েও খাবার পাননি ; ক্ষুধার জ্বালায় মারা যায় তিন বছরের শিশুটি!

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
১৪ জুন ২০২২, ১২:২১ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

মোঃ কাওসার: ডেস্ক ইনচার্জ।

অভাবের তাড়নায় তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয় হিরসিও মোহাম্মদ।খাবারের খোঁজে পাড়ি দেয় দিগন্ত পথ। পথিমধ্যে ক্ষুধায় কাতর হওয়া সাড়ে তিন বছরের ছোট্ট শিশু আদান বাবা-মায়ের কাছে খাবার চায়, কিন্তু হতভাগা বাবা-মা শিশুকে খাবার দিতে পারেনি। এরপর শিশুটি কিছু বাড়িতে গিয়েও একটু খাবার ও পানি ভিক্ষা চেয়েছিল কিন্তু ভিক্ষা দেওয়ার মতো কেউ ছিল না, অবশেষে শিশুটি ক্ষুধায় পথিমধ্যেই মারা যায়। শিশুটির বাবা কাঁদতে কাঁদতে গণমাধ্যমকে বলেন,
” আমরা তাকে পথিমধ্যেই কবর দেই এবং আবার হাঁটতে থাকি’!

ঘটনাটি ঘটেছে সোমালিয়ায়। বর্তমানে সোমালিয়ায় চলছে অবর্ণনীয় দুর্ভিক্ষ। চরম খরাজনিত কারণে ফসল ভালো হয়নি, বিপুল পরিমাণ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও সমসাময়িক রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে সোমালিয়াসহ আফ্রিকার দেশগুলোর উপর। যার ফলে দেখা দেয় এ দুর্ভিক্ষ। মারা যায় অসংখ্য মানুষ ও পশুপাখি।

তিন সন্তান নিয়ে খাবারের খোঁজে ঘরবাড়ি ছাড়লেও পথ পাড়ি দিতে দিতে শেষপর্যন্ত হিরসিও মোহাম্মদের দুই সন্তানকে পথেই কবর দিয়ে আসতে হয়। সাড়ে তিন বছরের শিশু আদান ক্ষুধায় মারা যাওয়ার পর অপুষ্টিতে ভুগে শেষমেষ হুইপিং কাশিতে মারা যায় তার আট বছরের মেয়ে হাবিবা।

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাষায়,” ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”! আর সেই রুটি নামের চাঁদের খোঁজে সীমাহীন পথ পাড়ি দেয় হিরসিও পরিবার, পথে দুই সন্তানকে হারিয়ে স্ত্রী আর ২১ বছরের মেয়ে মরিয়মকে নিয়ে আশ্রয় নেয় একটি অস্থায়ী তাঁবুতে। এ অস্থায়ী তাঁবুতে বসে তার ২১ বছর বয়সী মেয়ে মরিয়মকে জড়িয়ে ধরে তিনি বলেছিলেন, “এই খরা আমাদের শেষ করে দিয়েছে।”

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলছে। সোমালিয়া যে গম আমদানির উপর নির্ভর করে তার বেশিরভাগই বন্ধ করে দিচ্ছে এবং জ্বালানি, খাদ্য ও সারের দাম দ্রুত বৃদ্ধি করছে।

আফ্রিকা জুড়ে ক্ষুধার হুমকি এতটাই ভয়ানক যে গত সপ্তাহে, আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রধান, সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সাল, রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে ইউক্রেনীয় শস্য ও সার রপ্তানির উপর অবরোধ তুলে নেওয়ার আবেদন করেছিলেন – এমনকি মার্কিন কূটনীতিকরা সতর্ক করেছিলেন।

সবচেয়ে বিধ্বংসী সংকট দেখা দিয়েছে সোমালিয়ায়, ইউনিসেফ দ্বারা পরিচালিত একটি ডাটাবেস অনুসারে, জানুয়ারি থেকে গুরুতর তীব্র অপুষ্টিতে কমপক্ষে ৪৪৮ জন শিশু মারা গেছে।

জাতিসংঘের আর্থিক ট্র্যাকিং পরিষেবার মতে,
যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে ১.৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন হলেও বিভিন্ন সাহায্য দাতারা সোমালিয়ার জন্য প্রয়োজনের মাত্র ১৮ শতাংশ আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন । এ বিষয়ে জাতিসংঘের সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের সোমালিয়ার কান্ট্রি ডিরেক্টর এল-খিদির ডালুম মন্তব্য করেন, “এটি বিশ্বকে একটি নৈতিক ও নৈতিক দ্বিধায় ফেলবে”।

ঐ অঞ্চলে নদী কম থাকায় সেচের পানির উৎস বন্ধ হয়ে গেছে, কূপগুলো শুকিয়ে গেছে এবং পানির অভাবে অসংখ্য গবাদিপশু মারা গেছে। মানুষ যে যেভাবে পারছে ঘরবাড়ি ছেড়ে শতসহস্র মাইল পাড়ি দিয়ে চলছে অন্তহীন গন্তব্যে শুধু ‘রুটি-রুজির’ খোঁজে। কেউবা পায়ে হাঁটছে ,কেউ বাসে বা গাড়িতে যাচ্ছে আবার কেউ গাধার পিঠে উঠছে। শুধু খাবার, পানি বা জরুরি চিকিৎসা সেবা খোঁজার জন্য ছুটছে মাইলের পর মাইল।

অপুষ্টিতে ভুগে নানা রোগে মৃত প্রায় শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা ছুটছে রাজধানী মোগাদিশুতে। রাজধানীর অন্যতম একটি হাসপাতাল বেনাদির হাসপাতালের একটি পেডিয়াট্রিক স্ট্যাবিলাইজেশনে পরিদর্শনে শিশুদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল অপুষ্টিজনিত কারণে নানান রোগে আক্রান্ত। অনেক শিশু হামের মতো অসুস্থতায়ও অসুস্থ ছিল এবং তাদের নাকের টিউবের মাধ্যমে খাওয়ানো হচ্ছিল এবং শ্বাস নেওয়ার জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন ছিল।

আরো দেখা যায়, হাসপাতালের কলেরা ট্রিটমেন্ট ইউনিটে, আদান দিয়াদ নামের এক লোক তার ৪ বছর বয়সী ছেলে জাকারিয়ার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন, ছেলেটির পাঁজর ছিঁড়ে গিয়েছিল। দিয়াদ ছিল একজন কৃষক। তার ভুট্টা এবং শিমের চাষ ছিল। উপসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নদীর পানি কমে যাওয়ার পর তিনি নিরুপায় হয়ে কৃষি কাজ ছেড়ে দেন।

রাজধানী মোগাদিশুতে, জাকারিয়া তার স্ত্রী এবং তিন সন্তানের জন্য বাস্তুচ্যুত লোকদের সাথে একটি শিবিরে বসতি স্থাপন করেছিলেন, যেখানে তাদের কোন টয়লেট ছিল না এবং পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি ছিল না। কাজকর্ম না থাকায় সংসারের ভরণ পোষণ করা অসাধ্য হয়ে ওঠে তার কাছে।

দক্ষিণ ও মধ্য সোমালিয়া জুড়ে খুব প্রত্যন্ত অঞ্চল, রাস্তা-ঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ, যারফলে সাহায্য সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের কাছে পৌঁছানোও কঠিন হচ্ছে। দক্ষিণ গেডো অঞ্চলের ডেপুটি গভর্নর মোহাম্মদ আলী হুসেন স্বীকার করেছেন যে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ প্রায়শই তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোতে যেতে পারে না।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার বেপরোয়া পরিবর্তন, আকস্মিক বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, পঙ্গপালের উপদ্রব যা ফসল ধ্বংস করেছে এবং এখন পরপর চারটি বর্ষা মৌসুমে তেমন কোনো বর্ষা হয়নি,যার ফলে দুর্দশা আরো চরম পর্যায়ে পৌঁছে।

খাদ্যাভাবের এ মহামারী চলতে থাকলে সোমালিয়া সহ ঐ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য দিনদিনই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে, প্রাণ হারাবে আরো অসংখ্য মানুষ। করোনা পরবর্তী বর্তমান বিশ্বের সকল দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাই শোচনীয়, তবুও ধনী দেশগুলোসহ বিশ্বনেতাদের জরুরি ভিত্তিতে নজর দেওয়া উচিত এই অঞ্চলে। সাথে সাথে গড়ে তোলা উচিত এমন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন,যা বিশ্বের মানুষকে খাদ্যের অভাব থেকে রক্ষা করবে। প্রযুক্তির উন্নয়নের এই মহাজোয়ারে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক বিশ্ব, আর একটি মানুষও খাদ্যের অভাবে মারা না যাক, এমনটাই প্রত্যাশা পৃথিবীবাসীর।

203 Views

আরও পড়ুন

রাবিতে গ্রীন ভয়েস এর ১৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

লেখক জুবায়েদ মোস্তফার নতুন কবিতা–“খরার দিনে আগমন”

নাগরপুরে প্রাণীসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত 

শেরপুরে কুড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদককে কুপিয়েছে প্রতিপক্ষ

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত পরিদর্শনে বিজিবি মহাপরিচালক !!

মহেশখালীর পঙ্গু নুর আলমের ভাতা হ্যাকারদের পেটে!

বুটেক্সে আন্ডারগ্রাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি শুরু ৮ মে

মেহেরপুরে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উদযাপন

লোহাগাড়ায় বহুতল ভবন থেকে পড়ে শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যু

বগুলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির নির্বাচন সম্পন্ন

মহেশখালীতে ভাইচ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জহির উদ্দিনের প্রার্থীতা স্থগিত

দেওড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘এক্স স্কাউট রি-ইউনিয়ন’ আয়োজিত