বিকাশ সিংহ
এক কাপ চায়ের গল্প গাঁথা হয় প্রতিদিন অর্থময় ভোরে
ঘুম ভাঙানো বুনো মুরগির উড়ালি সাজে-নাচে ও সুরে।
লাইন চৌকিদারের ডাকে , অফিসে কর্মঘন্টা বাজিয়ে,
সর্দার,বাবু আর সাহেব মিলে কাজের ডালা সাজিয়ে।
চা’য়ের নতুন চারা রোপনের সুখে কুয়াশা মাখা ভোরে,
পাহাড়ি টিলায় চা রোপন উৎসবে মাতি একই সুরে।
দূর হতে শুনা যায় ছটছটা কলম কাটার আওয়াজ,
শীতকালে চা গাছ কলম করা চা বাগিচার রেওয়াজ।
পরম যত্নে সেচের পানিতে ভরি ধূসর সবুজ প্রান্তর,
ছায়া বৃক্ষ হতে বীজ এনে পুঁতি বীজতলার ভিতর।
নতুন কুঁড়ি আঁখি মেলে কলম কাটা গাছের শাখায়,
ধীরে ধীরে ভরে উঠে চা গাছে নতুন কুড়িঁ-পাতায়।
শ্রাবণের প্রথম বৃষ্টি নতুন পাতা-কুঁড়িরে জলে ভিজায়,
নতুন কুঁড়িগুলো চা চয়নের বার্তা আমাদের পাঠায়।
চা মাতৃগাছ হতে সুপ্ত কুঁড়ির নমনীয় শাখা কেটে আনি,
সেথা হতে বেছে বীজতলার বিছানায় বুনি ডাল খানি।
জন্ম হয় শাখায় শাখায় অজস্র চায়ের নতুন কুঁড়ি,
মাপকাঠি বসিয়ে টিপিং পাতি তুলে ভরি পাতির ঝুড়ি।
চার চক্র বাহনে বড়ো সাহেবের টিলা কাজের পরিদর্শন,
লাঠি হাতে, মাথায় টুপি পড়ে পাহাড়ি টিলা পরিভ্রমণ।
চা চয়ন উৎসবে শ্রমিক পাড়ায় আনন্দের বারিধারা,
চা চয়ন সুখে বিভোর হয়ে ঝুমুর নাচে চা রমণীরা।
সিঁথিতে লাল সিধুর, হাতে কঙ্কণ, পিঠে ঝুড়ি করে,
প্রতি ভোরে ঢল নামে চা চয়ন তরে রোপণ গলি ধরে।
যে দিকে চায় সবুজের সমুদ্রের ঢেউ খেলে বাঁকে বাঁকে,
সবুজের বিছানাতে নতুন কুঁড়িগুলো চা রমণীরে ডাকে।
সুপ্ত কুঁড়িগুলো ছেড়ে দুটি পাতা একটি কুৃঁড়ি তোলে,
ঝুড়িতে ভরিতে ভরিতে সকলি বেদনা যায় যে ভুলে।
মাথায় ছুপি পড়ে বুঝে নেই নিজ নিজ পাতির গলি,
সেথায় মধু আহরণে লুটিয়ে পড়ে হাজারো অলি।
পাতি ওজনে লাইনে দাঁড়িয়ে চা রমণীদের ক্লান্তির ঘুম,
ক্লান্তির ছাপ মুছে দেখে, চলছে পাতি ওজনের ধুম।
তিন প্রহর ওজন শেষে পাতি যায় চা কারখানায়,
লিফ হাউজে কাচা পাতি, পাখার বাতাসে শুকায়।
ধীরে ধীরে নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় হয়, এক কাপ চা,
সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে শেষ হয় এক কাপ চায়ের গল্পটা।
এভাবেই এক কাপ চায়ের গল্প শেষ হয়, প্রতি সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা চা রমণীদের মিষ্টি হাসি নিয়ে আর আড্ডার টেবিলে এক কাপ চা নিয়ে।