বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেছে পদ্মা বহুমুখী সেতু। নিঃসন্দেহে এটি বাংলাদেশের বিশাল বড় গৌরবময় অর্জন! বিশেষ করে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষদের নিকট অনেক কাঙ্ক্ষিত এবং আবেগের এই ‘পদ্মা সেতু’। কেননা, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ নদীপথ যাতায়াতের ক্ষেত্রে নৌপরিবহনের সময় অনেক নেতিবাচক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে। কখনো দেশের বৈরী আবহাওয়ার ফলে ফেরি চলাচল, লঞ্চ চলাচল এবং স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকার কারণে যাতায়াত সংকটের সম্মুখীন হতে হয়েছে। এমন অনেক রাত কেটেছে যখন অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে কেউ নির্দিষ্ট সময়ে ফেরিতে উপস্থিত না হতে পারতো; তাকে অসহায়ের মতো দীর্ঘ সময় ফেরিঘাটেই বসে থাকতে হয়েছে। কখনো বা নদী পারাপারের জন্য কোনো মাধ্যম না পেয়ে অপেক্ষারত অবস্থায় বহু শিক্ষার্থীর জীবনের অনেক মূল্যবান সময় এবং সুযোগ নষ্ট হয়েছে! কাউকে আবার অ্যাম্বুলেন্সে থাকা প্রিয় মানুষটির যথা সময়ে চিকিৎসা না হওয়ার কারণে ফেরিঘাটে বসেই নিজ চোখে প্রিয় মানুষটির শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার মুহূর্ত দেখতে হয়েছে!
নদী পার হতে গিয়ে আর যেনো কাউকে স্বজন হারা না হতে হয়; তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী যথারীতি পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয় ৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে। তারপর ধীরে ধীরে এই নান্দনিক পদ্মা সেতু তৈরি করার যে যাত্রা তা নিজ দেশের অর্থায়নের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে নতুন এক অবয়বে উপস্থাপন করেছেন জননেত্রী ‘শেখ হাসিনা’।
দ্বিতল বিশিষ্ট এই পদ্মা সেতুটি ৬.১৫ কি.মি. দৈর্ঘ্যের এবং ২১.৬৫ মি. প্রস্থের। এটি ২৪ ঘন্টায় প্রায় ৭৫,০০০০(পচাত্তর হাজার) যানবাহন চলাচল করতে পারবে। এই সেতুর আয়ুষ্কাল ১০০ (একশত) বছর। রিক্টার স্কেলে ৮ (আট) পর্যন্ত ভূমিকম্প সহনশীলতা রয়েছে পদ্মা সেতুর। এবং ইতিপূর্বে গোটা বিশ্বে এর চেয়ে অধিক শক্তিশালী কোনো সেতু নির্মাণ করা হয়নি। তাই কাল বৈশাখী ঝড়ের ভয়াল থাবার নৌকাডুবি থেকে বেঁচে যাবে অনেক অমূল্য প্রাণ!! আমাদের পদ্মা সেতু আমাদের অর্জন, আমাদের গর্ব।
এই বিষয়ে অনেক বিশ্লেষক এবং বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে জনপদের এক ধরনের ছোঁয়া লাগবে এবং পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে যে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগ তৈরি হবে। তাতে জনগণ এবং রাষ্ট্রের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে, ইনশাআল্লাহ!
অতএব, স্বপ্নীল এই পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে ২৫ জুন ২০২২ সালে। সবকিছুর পর যখন এই পদ্মা সেতু আমাদের চোখের সামনে দৃশ্যমান। তখন এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে! তাই সর্বসাধারণের পক্ষ হতে এমন যুগান্তকারী কাজের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
শারমিন আক্তার
শিক্ষার্থী, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা।