শাহনেওয়াজ মনির অভি, কুমিল্লা।
জ্যৈষ্ঠের দুপুরে পাকা জামের থালা যেন গ্রামবাংলার একটি অনুভব। স্কুল ফাঁকি দিয়ে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে হাতে জাম মেখে খাওয়ার স্মৃতি অনেকের। মিষ্টি আর টক- এই দুই স্বাদের অদ্ভুত মিশেলে যে ফল আমাদের শৈশবের সঙ্গী ছিল, সেই জাম এখন বৈজ্ঞানিক গবেষণাতেও প্রশংসিত।
তবে এই রঙিন ফলটি কেবল স্বাদের নয়—জামের প্রতিটি অংশেই লুকিয়ে আছে অসাধারণ স্বাস্থ্যগুণ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন আর মিনারেলে ভরপুর জামকে বলা হয় ‘গ্রীষ্মের প্রাকৃতিক ওষুধ’।
হাজার বছরের বিশ্বাস, আজকের বৈজ্ঞানিক সত্য
শুধু ফলই নয়এর বীজ, পাতা এমনকি ছাল পর্যন্ত রয়েছে ওষুধি কাজে ব্যবহৃত। শহরের বাজার থেকে শুরু করে গ্রামীণ হাট—সবখানেই জাম এখন মানুষের আস্থার জায়গা।
জাম খাওয়ার অসাধারণ উপকারিতা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়কঃ
জামের অন্যতম প্রধান গুণ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমানো। নিয়মিত খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে।
হজম শক্তি বাড়ায়ঃ
জামে থাকা প্রাকৃতিক আঁশ হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।
ত্বক ও চুলে এনে দেয় সজীবতাঃ
জামের রস ত্বক পরিষ্কার করে, ব্রণ রোধ করে এবং চুলের গোড়া মজবুত করে।
রক্তস্বল্পতা রোধে সহায়কঃ
আয়রনে ভরপুর জাম রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ
লো ক্যালোরি অথচ হাই নিউট্রিশন—জাম তাই ডায়েট সচেতনদের পছন্দের তালিকায় থাকতেই পারে।
কীভাবে খাবেন জাম?
কাঁচা পাকা জাম হালকা লবণ ও মরিচ দিয়ে মেখে খাওয়াই সবচেয়ে প্রচলিত।
জামের জুস, চাটনি কিংবা জ্যামও তৈরি করা যায়।
বীজ শুকিয়ে গুঁড়ো করে খেলে ডায়াবেটিস ও পাকস্থলীর রোগে উপকার পাওয়া যায়।
কিছু সতর্কতাও প্রয়োজন
খালি পেটে অতিরিক্ত জাম খেলে পেটের সমস্যা বা অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা থাকে। আবার খুব বেশি খেলে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যেতে পারে। তাই সবসময় পরিমিত খাওয়া উচিত এবং কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।