পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এদিন সারা দেশের লাখো মানুষ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। তবে ঈদের আনন্দের পাশাপাশি গুরুত্ব পায় একটি গুরুতর বিষয়—কুরবানির পর সৃষ্ট বর্জ্য সঠিকভাবে অপসারণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুরবানির পশুর বর্জ্য যদি সঠিকভাবে নিষ্পত্তি না করা হয়, তবে তা হতে পারে নানা রোগের উৎস। দুর্গন্ধ, মশা-মাছি, কীটপতঙ্গ, এমনকি পানিবাহিত রোগের বিস্তারও ঘটে এসব অপরিষ্কৃত বর্জ্যের মাধ্যমে। এজন্য নাগরিকদের সচেতনতা এবং স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন।
নাড়িভুঁড়ি, রক্ত, হাড়, চামড়া ইত্যাদি ঠিকভাবে না সরালে তা পরিণত হয় রোগজীবাণুর উৎসে। ফলে স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ে।
জীবাণুবাহিত রোগের বিস্তার:
অপরিচ্ছন্নভাবে ফেলে রাখা বর্জ্যে জন্ম নেয় নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস,ফাঙ্গাস। এসব থেকে ছড়াতে পারে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই। যেমন:
• ডায়রিয়া ও আমাশয়
• টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড
• হেপাটাইটিস-এ ও হেপাটাইটিস-ই
• চর্মরোগ ও ঘা
• শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ (ফলিত দুর্গন্ধ ও ধুলা থেকে)
তাছাড়া,বর্জ্যজনিত জলাবদ্ধতায় কিউলেক্স মশাও বিস্তার লাভ করে, যা থেকে হতে পারে ফাইলেরিয়া বা হস্তী রোগ।
জরুরি করণীয়:
[ ] পশু জবাই শেষে দ্রুত ও সঠিকভাবে বর্জ্য অপসারণ।
[ ] নাড়িভুঁড়ি ও হাড়-চামড়া নির্ধারিত গর্তে মাটিচাপা দেওয়া।
[ ] জীবাণুনাশক ছিটানো ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা।
[ ] নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দিন:
সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার নির্ধারিত জায়গায় কোরবানি দিলে দ্রুত পরিষ্কার করা সম্ভব হয়।
[ ] পরিচ্ছন্ন পদ্ধতিতে বর্জ্য সংরক্ষণ:
পশুর অবশিষ্টাংশ পলিথিনে না ফেলে ব্যবহার করুন জৈব-বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যাগ। এতে পরিবেশ দূষণ কমে।
[ ] সিটি কর্পোরেশনের সহায়তা নিন:
শহরে রয়েছে ঈদকালীন হটলাইন, অ্যাপ ও অতিরিক্ত পরিচ্ছন্নতা কর্মী। দ্রুত সেবা পেতে এগুলোর ব্যবহার জরুরি।
[ ] নিজে পরিষ্কার করুন, অন্যকেও উদ্বুদ্ধ করুন:
ব্যক্তি উদ্যোগে নিজের বাসাবাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি প্রতিবেশীদেরও সচেতন করুন।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্ব:
ইসলামে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন: “পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক।” তাই কোরবানির পরপরই বর্জ্য অপসারণ করে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা একটি ধর্মীয় দায়িত্বও বটে।
ঈদের আনন্দ শুধু পশু কোরবানিতে নয়, তা হতে হবে সমাজ ও পরিবেশ সচেতনতার মাধ্যমও। আসুন, আমরা সবাই মিলে ঈদুল আজহার পর বর্জ্য যথাযথভাবে অপসারণ করি। পরিচ্ছন্ন নগরী, সুস্থ জীবন—এটিই হোক আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকার।
লেখক: মীর মোহা: ফয়সাল হোসাইন
শিক্ষার্থী,ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর।