সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
২০২০ সালের ১৭ মার্চ কোভিট-১৯ এর আক্রমনের কারণে দেশ ব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সকল স্থরের প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু, বিপাকে পড়ে যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীসহ সকল বেসরকারী, অর্ধ সরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মরত চাকুরীজীবিরা। তাদের জীবন জীবিকার জন্য কষ্টের যেন অন্ত নেই। বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরর চাকুরীজীবিরা বেতন ভাতাদি না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সুনামগঞ্জ পৌরসভার আব্দুল আহাদ সাহিদা চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকবৃন্দ তাদের প্রধান শিক্ষককে বেতন ভাতাদি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হলে আপনাদের বেতন নিয়ে চিন্তা ভাবনা করবো। কিন্তু, অদ্যাবধি এক বছর অতিক্রম করার পরও তিনি কোন শিক্ষকের খোঁজ খবর নেন নি। তিনি তার বেতন ঠিকই নিচ্ছেন বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। বকেয়া বেতন এর জন্য সহকারি শিক্ষক মোঃ আমিনুল হক, আব্দুল মোছাব্বির, আইরিন বেগম স্বাক্ষরিত একটি আবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে প্রেরন করেন। এ ব্যপারে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহরীয়ার বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য শিক্ষা প্রশাসনকে দিয়েছি। প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন এক সপ্তাহের মধ্যে জবাব দেবো। সহকারি শিক্ষক মোঃ আমিনুল হক বলেন ইতিপূর্বেও তিনি আমাদের সহকারি শিক্ষকদের টিউশন ফি, বিশেষ কোচিং ফি এর টাকা আত্নসাৎ করেছেন। এবার তিনি করোনার বাহানা দেখিয়ে আমাদের পুরো এক বছরের বেতন আত্নসাতের চেষ্টা করছেন। তিনি আরো বলেন দীর্ঘ ২০ বছর পর এমপি পীর ফজলুর রহমান মিসবাহর একান্ত প্রচেস্টায় বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি একটি চারতলা বিশিষ্ট ভবনও পেয়েছে। প্রধান শিক্ষক নামেই প্রধান শিক্ষক নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে থেকে মোবাইল ফোনে বিদ্যালয় পরিচালনা করেন। সহকারি শিক্ষক বৃন্দ বিদ্যালয়ের পাঠদান থেকে শুরু করে আনুষাঙ্গিক কাজ গুলো করে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একজন অভিভাবক বলেন দীর্ঘ ২০ বছর যাবত প্রধান শিক্ষক তার ইচ্চামতো পকেট কমিটি করে বিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছেন। উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে এলাকার যুব সমাজ এর প্রচেষ্টায় সম্মিলিত ভাবে এলাকাবাসীকে নিয়ে একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছিল। আজ তা উচ্চ বিদ্যালয়ে রূপ নিয়েছে। এলাকায় শিক্ষার হার কম থাকায় শিক্ষিত যুবকের সংখ্যাও কম ছিল। তাই ঐ সময় হাছন নগরের শহীদুর রহমানকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, শহীদুর রহমান শিক্ষাগত যোগ্যতায় এস এস সি ৩য় বিভাগ, এইচ এস সি ৩য় বিভাগ, বিএ ৩য় বিভাগ, বিএড ৩য় বিভাগ থাকায় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাকে দায়িত্ব দিতে অনিহা প্রকাশ করছিলেন। ঐ সময় এলাকাবাসী বিদ্যালয়ের স্বার্থে তাকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য শিক্ষা প্রশাসনকে অনুরোধ করছিলেন। সেই সময় থেকে তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান। প্রধান শিক্ষক বিএনপির আদর্শের বিধায় বিএনপির শাসন আমলে বিএনপির রাজনীতিতে একনিষ্টভাবে জড়িয়ে পড়েন। এমন কি সাংগঠনিকভাবেও পদ পদবীর দাযিত্ব পালন করেন। জেলা বিএনপির রাজনীতিতে গ্রæপিং থাকায় তিনি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান জযনুল জাকেরীনের গ্রæপিং এ অ্যাক্টিভ হয়ে যান। তখন দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি দীর্ঘ ২০ বছর উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের নামে উপজেলা প্রশাসন থেকে টিআর, কাবিকা দিয়ে প্রধান শিক্ষক শহীদুর রহমানকে পোষ্য কর্মী হিসেবে নির্বাচিত করেন। বিদ্যালয়টি পৌর এলাকার হাছন নগরে হলেও ছাত্র-ছাত্রী আসে পাশ্ববর্তী মোল্লাপাড়া, আপ্তাবনগর ইউনিয়নের পাঠানবাড়ি, হাছন বাহার, বুড়িস্থল, বাদে সাদেকপুর থেকে। এলাকার মানুষজন অসচেতন, খেটে খাওয়া, দিন মজুর বিধায় সেই সুযোগে প্রধান শিক্ষক অনিয়ম করেই যাচ্ছেন। এহেন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রান পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন মহল।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০