নিউজ ডেস্কঃ সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাহ শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম মাঠ মেলা ব্যবসায়ীদের কবল থেকে মুক্ত হচ্ছে না। দীর্ঘ এক বছর মেলা সাজিয়ে খেলার মাঠ বন্ধ রাখার পর আবারো নারী উদ্যোক্তাদের সম্মেলন ও পণ্য প্রদর্শনীর নামে শুরু হয়েছে মেলা। অনুমোদনের অধিকাংশ শর্ত লঙ্ঘন করে মেলা চলতে থাকায় দ্রুতই মেলার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে প্রশাসন। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, মেলায় স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত না করাসহ শর্তলঙ্ঘনের কারণে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেলা শেষ করার জন্য সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম আয়োজকদের জানিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে দেশে করোনা পরিস্থিতি আবারো খারাপের দিকে যাচ্ছে। যে কারণে স্কুল-কলেজ খুলে দিতেও সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগছেন সংশ্লিষ্টরা। সেখানে মেলার নামে অনেকটা করোনার চাষ হচ্ছে বলে মন্তব্য স্থানীয় সচেতন মহলের। তাদের দাবি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউন ঘোষনা করার পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। সেই পরিস্থিতিতে সিলেটে নিয়ম লঙ্ঘন করে নারী উদ্যোক্তাদের সম্মেলন ও পণ্য প্রদর্শনীর নামে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে সিলেটবাসীকে। এমন আত্বজ্ঞাতী সিদ্ধান্তে হতবাক সবাই।
দীর্ঘ এক বছর ধরে মেলার নামে সিলেট সদর উপজেলার খেলার মাঠ দখলে রেখেছেন আবদুল গফ্ফার নামে এক মেলা ব্যবসায়ী। গত বছর মার্চ মাসে মেলা শুরু হলে করোনার প্রকোপ বাড়ায় প্রশাসনের নির্দেশে ৬দিন চলার পর মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু চতুর গফ্ফার মেলা বন্ধ করলেও স্থাপনা সরিয়ে নেননি।
এছাড়া মেলায় অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীদেরও তাদের মালামাল নিতে দেন নি। মাত্র ৬ দিন মেলা চললেও মেলায় অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীদের কাছ নেওয়া অগ্রিম টাকা আটকে রাখায় মেলা ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েন। অনেকটা বাধ্য হয়ে মালামাল মেলা মাঠে রেখে নিজেদের একজন কিংবা দুইজন লোককে পাহারায় রেখে সিলেট ছাড়েন তারা। করোনায় নতুন ধরণ শনাক্ত হওয়া ও প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার খবরে উদ্বিগ্ন সিলেটের সাধারণ মানুষ।
নারী উদ্যোক্তা সম্মেলন ও পণ্য প্রদর্শনী মেলা-২০২১ নিয়ে এবার বির্তকে জড়ালেন সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স। জনসমাগমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে এমন ঝুঁকির কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গেল বছরের ১৮ মার্চ সিলেটে মেট্রোপলিটন চেম্বারের উদ্যোগে আয়োজিত ৬ষ্ঠ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা বন্ধ করে আয়োজক কমিটি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দেশের সব জায়গায় মেলা বন্ধ করলেও একটি ‘মেলা সিন্ডিকেট’ দীর্ঘ এক বছর মেলার অবকাঠামো দিয়ে সদর উপজেলা খেলার এই মাঠটি দখল করে রাখে! যাতে কওে নতুন আবেদনের মাধ্যমে মেলা শুরু করতে পারে। যখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নতুন করে মেলার আবেদন করলেও ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা’ করার আবেদন প্রত্যাখাত হন। আর প্রত্যাখাত হয়েই ‘মেলা সিন্ডিকেট’ তখনই টার্গেট করে সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্সের নেতৃবৃন্দকে।
সিলেটের স্থানীয় প্রশাসনকে নারী উদ্যোক্তাদের সম্মেলন দেখিয়ে ‘মেলা সিন্ডিকেট’ নারী উদ্যোক্তা সম্মেলন ও পণ্য প্রর্দশনী মেলা-২০২১ এর অনুমোদন বাগিয়ে নেয়। দেশের কোথাও পণ্য প্রদর্শণীতে টিকিটের ব্যবস্থা না থাকলেও শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম মাঠের পণ্য প্রর্দশনী মেলা-২০২১ গেইটে টিকিট কাউন্টার করা হয়েছে। মেলার অনুমোদনের শর্তে মেলার প্রবেশ গেইটে জীবানুনাশক টানেল করার নির্দেশনা থাকলেও মেলা শুরুর সপ্তাহদিন পার হলেও তা স্থাপন করা হয়নি। বিষয়টি নজরে এসেছে প্রশাসনের। অতিরিক্ত জনসমাগম, স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন, মেলার শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে আয়োজক কর্তৃপক্ষকে হুশিয়ার করেছে প্রশাসন।
প্রশাসন বলছে, মেলায় পদে পদে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে। এতে করে সিলেট অঞ্চলে করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে। মেলার গেটসহ বিভিন্ন স্থানে ‘নো মাস্ক, নো এন্ট্রি লেখা’ থাকলেও তার মানা হচ্ছে না। মেলার প্রবেশপথে একটি আর্চওয়ে টাইপ গেইট ও একজনের হাতে থার্মোমিটার থাকলেও শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রবেশ টিকিট পরীক্ষা করেই তারা দায় এড়াচ্ছেন। এছাড়া প্রদর্শনীর আড়ালে চলা এ মেলায় নানা ধরণের বিনোদনের রাইড বসানো হয়েছে। এ সকল রাইডে সাধারণ মানুষ মাস্কবিহীন গাদাগাদি করে বসছেন।
এক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না সামাজিক দুরত্বও। এদিকে সরেজমিনে মেলার মাঠে দেখা যায়, উদ্বোধনী মঞ্চ অনেকটা অব্যবহৃত পড়ে আছে। এ মঞ্চে নারী উদ্যেক্তাদের নিয়ে সেমিনার সিম্পোজিয়ার করার কথা থাকলেও তা হয় নি। একদিন ব্লক বাটিকের ফটো সেশন করে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠানো হয়েছে।
এদিকে মেলায় নারী উদ্যেক্তাদের পণ্য প্রদর্শণীর কথা থাকলেও তা যথেষ্ট নয়। হাতে গোনা কয়েকটি স্টলকে দুভাগ করে বিভক্ত করে স্থানীয় নারী উদ্যেক্তাদের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো বড় স্টল কিংবা প্যাভিলিয়নে নারী উদ্যেক্তাদের দেখা যায় নি।
স্থানীয়রা জানান, কখনো মেলা, কখনো পশুর হাট। এভাবে একের পর এক খেলার মাঠে চলে মেলা বাণিজ্য। আর এই মেলা বাণিজ্য বা পশুর হাটের জন্য বেছে নেওয়া হয় সিলেট সদর উপজেলার ‘শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম’। বছরজুড়ে মাঠে চলে মেলার নামে খোঁড়াখুঁড়ি। সদর উপজেলার একমাত্র খেলার মাঠটি মেলা ব্যবসায়ীদের দখলে এক বছর ধরে।
এদিকে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিলেটের জেলা প্রশাসক মেলার পরিসর সংক্ষিপ্ত করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তিনি জানান, আগের দিন মন্ত্রনালয় থেকে তার কাছে চিঠি এসেছে। যাতে জনসমাগমে নিরুৎসাহিত করা হয়।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার ও মিডিয়া অফিসার বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের বলেন, স্বাস্থ্য সচেতনতা রক্ষা না হওয়া, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা, অতিরিক্ত জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা, জীবানুনাশক টানেল না করাসহ সার্বিক কারণে জেলা প্রশাসক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মেলা সংক্ষিপ্ত করার জন্য। মেলা যাতে লম্বা পরিসরে না হয়, ১৫ দিন নয়, আরো আগে মেলা শেষ করতে হবে। দুই একদিনের মধ্যে মেলা শেষ করতে ইউএনওকেও বলা হয়েছে। তিনি বলেন, মেলা আয়োজকরা শর্ত মোতাবেক কাজ করছে না, এটা লক্ষ্য করা গেছে।আমাদের পেট্রোল পার্টিও কাজ করছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় সামগ্রিকভাবে মেলা সংক্ষিপ্ত করার জন্য বলেছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০