
*পৃথিবী*
হে পৃথিবী-
তুমি 'প্রকৃতিমেলা', তুমি 'মেঘপুঞ্জ', তুমি 'স্নিগ্ধমায়া';
শীতল সমীরণে গ্লানি মোছক-সম্মুখদ্বারে ভবঘুরে অচেনা পথিক,
উষ্ণমাখা ভূ-তনু দহন পরিত্রায়নায়-জীবন্যায় শুক্ল হিমানীর প্রতীক্ষায় দ্বিকবিদিক।
হে ধরিত্রী-
তুমি 'হিমালয়া', তুমি 'জলরাশি', তুমি 'সর্বত্রআঁশ';
আকাশচুম্বী স্বপ্নছোঁয়া আপাদমস্তক প্রয়াশ-প্রতিকূলতা দূরীভূততে মহাআলয়ে অষ্টাঙ্গে প্রণিপাত,
বিশালতার অধরা জ্ঞানতৃপ্তির সংকোচন-যুগান্তরে মহামানবের পদচিহ্ন মহাবিজয়ের বাজিমাত।
হে বসুমতি-
তুমি 'কল্পনাঠাঁই', তুমি 'পদচারণভূমি', তুমি 'বিষ্ময়কর';
সময়বানে চেতনাগোচরদ্বার উদগ্রীব পালাবদলে-দর্শনমূলে জ্ঞানভাণ্ডার ইতিহাসসাক্ষ্য জোয়ারতরী জয়োসাম্য,
অবিনশ্বরের অজ্ঞাত প্রশ্নফাঁদের প্রশ্নবোধক-নির্ভীকচিত্তে মনোশক্তিতে রহস্য দূর কাম্য।
হে মেদিনী-
তুমি 'সংগ্রামখানা', তুমি 'বিলাসময়ী', তুমি 'ধ্বংসপ্রায়';
অভিযোজন সংকল্পে প্রাণীকুল টালমাটাল-আত্মমোহের চঞ্চলতায় তুচ্ছতাচ্ছিল্য চিরচেনা বাসআলয়,
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কর্মভার বাকবিতন্ডায় চূর্ণবিচূর্ণ-স্বার্থগ্রাসীদের দৈত্যভাবে উত্তাল ধ্বংসস্তূপটুকুর বলয়।
হে অবনী-
তুমি 'প্রলয়শিখা', তুমি 'রংতুলি', তুমি 'শান্তিকামিনী';
মর্ত্যলোকে মনুষ্যজাতির ন্যায়স্রোত লাভান্যায়-সর্বস্থানে দেয়ালচিত্র ঘাত-প্রতিঘাতের বাস্তবসত্তায় বহমান,
উপলব্ধিজাত নির্যাস নরজীবনের ত্রি-শক্তি-প্রকৃতিলীলায় ভূ-নিজস্বতায় সমাদৃত ভারসাম্য তান।
হে অখিল-
তুমি 'খেলাঘর', তুমি 'উদাসিনী', তুমি 'সর্বহরণকারিণী';
শিকলমুক্ত ঝাঁপটানি মরীচিকাময় রঙ্গমঞ্চ-বেখেয়ালীপনায় গন্তব্যহীন প্রেতাত্মা বিধ্বংসীরূপী অবকাশ,
আকস্মিক তৎপরতায় অবান্তর ভাঙা-গড়া-সৃষ্টিকুলহস্তে পুষ্পাঞ্জলির মঙ্গলতোরণ বিড়ম্বনাক্ষণে সর্বনাশ।
হে ধরাতল-
তুমি 'স্মৃতিমালা', তুমি 'আলোছায়া', তুমি 'জাগ্রতসত্য';
কর্মফলের বিজড়িত সন্ধিক্ষণের প্রতিচ্ছবি-'জন্ম-মৃত্যু' চিরাচরিত ব্যর্থতায় পর্যবসিত ধ্যানযোগে,
ঠুনকোশ্বাসে অহমিকার গড়িমসি জীবনশাস্ত্রে-পার্থিবযশ মূল্যহীন পরমাত্মার দেহত্যাগের সংযোগে।
**সময়ের দ্বার**
তুমি বহমান 'স্রোত'-
জীবন সংগ্রামের 'হাতিয়ার' প্রতিটিক্ষণে অবিরাম ক্ষয়জাত পন্য,
প্রাপ্যটুকু সময়কে মর্যাদাদানে অর্জিত পদচিহ্নতে 'পরিশ্রমীরা' ধন্য।
তুমি আমৃত্যু 'প্রকৃতিসত্তা'-
সময়ানুবর্তিতার হাস্যোজ্জ্বল বেলায় প্রস্ফুটিত 'ভবিষ্যৎ' ভাগ্যেদ্বারে মিলে,
বিধাতার বিধানে অবমূল্যায়ন সময়কে 'জীবনচক্র' অন্ধকারের জলে।
তুমি বৃষ্টিস্নাত 'রংধনু'-
সময়ের চঞ্চলতায় 'ঋতুর' আবির্ভাব মুক্তাকাশে নানারঙের ছবি,
চিন্তাশক্তির উপত্যকায় সৃষ্টিলগ্নহতে ছন্দরস ছড়িয়েছে 'মুক্তিকামী' কবি।
তুমি মানবজীবনের 'মহাশিক্ষক'-
ক্ষমতা-পেশীশক্তির আস্ফালনে দুর্বিপাকে মেহনতি 'মনুষ্যজাতি-সমাজ',
'পাঞ্জেরীরূপে' সময়ের দীক্ষামন্ত্রে বলবানদের মুখ-মন্ডলে বিষন্নতার ভাঁজ।
তুমি সুখে-দুঃখে 'মহারথী'-
'আয়ুকালের ক্যালেন্ডারে' অবধারিত ললাটে ভাল-মন্দ হিসাবনিকাশের 'বাটখারা',
সাফল্যের পিরামিড আহরোণে; অসহায়ত্ব বিসর্জনে 'লোচনপাতা' দিশেহারা।
তুমি জ্বলন্ত 'মঙ্গলপ্রদীপ'-
সময়ের অন্তর্জালে 'ধনী-গরিব' বাছবিচারহীন; কর্তব্যনিষ্টা হৃদয়ঙ্গমের ধারক,
সততার হিমালয়ের 'বিজয়মালা' আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের লাভাশিখার স্মারক।
তুমি ডুবন্ত 'মায়াস্মৃতি'-
ঋতুরাজে সজীবতা; কালক্ষেপণে শূণ্যপাতা; ঝলসানো খাঁটি 'হীরাপান্না',
অতীতস্বপ্ন হারিয়েছে নোনাজলে; 'সময়দ্বারে' স্মৃতির হৃদয়বিদারক বোবাকান্না।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০