ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৪ নভেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ

ভিলেজ পলিটিক্স; অশান্তির দাবানলে পুড়ছে গ্রামবাসী

প্রতিবেদক
নিউজ ভিশন
১৩ জুলাই ২০২২, ৬:০৬ অপরাহ্ণ

Link Copied!

বিজ্ঞজনের মতে গ্রামের মানুষ সাদাসিধে, সহজসরল। ধারণাটা আমিও পোষণ করতাম। এবং অদ্যাবধি করি কিছু বোকা ও ঠোঁটকাটা টাইপের মানুষের কারণে। অথচ সামগ্রিকভাবে চিন্তা করলে গ্রামের মানুষের মতো জিলাপির প্যাঁচ টাইপের মানুষ শহর নগরে কম আছে বলা চলে। ভিলেজ পলিটিক্স শব্দটার সাথে যারা প্র‍্যাক্টিক্যালি পরিচিত নন তারাই বলবে গ্রামের মানুষ সাদাসিধে, রাজনীতি বুঝে না।

জাতীয় রাজনীতিবিদরা ঘোষণা দিয়ে এবং ফুলের ঢালা দিয়ে অভিনন্দন জানিয়ে দল পাল্টায় আর গ্রামের মানুষেরা মুখ মুছে টিস্যু পরিবর্তন করার মতো গ্রুপ পরিবর্তন করে। এখানে গ্রুপ পাল্টাতে ঘোষণা দেয়া লাগে না। যার সামনে যায় তার দলে ভেড়েন ভিলেজ পলিটিক্সের নেতারা।

জাতীয় রাজনীতিবিদেরা প্রত্যক্ষ আক্রমণ, কটাক্ষ ও মিথ্যা কটুক্তির মাধ্যমে একদল অন্যদলকে আক্রমণ করে থাকে। আর ভিলেজ পলিটিক্সের নেতারা পরোক্ষভাবে, মিত্র বেশে আক্রমণ করে থাকে। তারা সাপ হয়ে কাটে আবার ওঝা হয়ে ঝাড়ে। জাতীয় রাজনীতে শত্রু চেনা যায়, কিন্তু ভিলেজ পলিটিক্সে শত্রু চেনা দায়।

জীবজন্তুর কৃত্রিম বাচ্চা ফুটানোর জন্য বিজ্ঞানীরা নানাভাবেই বীর্য সংগ্রহ করে এবং সেসব বীর্য যথাযথ প্রক্রিয়াজাতকরণ করে নতুন একটা জীবের জন্ম দেয়, তারপরই তারা সফল হোন। অনুরূপ ভিলেজ পলিটিক্সের প্রভাবশালী নেতারা এর মুখ থেকে কিছু, ওর মুখ থেকে থেকে কিছু, আরেকজনের পেট থেকে কিছু এভাবেই কথা সংগ্রহ করে সেখানে কিছু মিথ্যা রসকষ মিশিয়ে, হিংসা ও ক্ষোভের তাপ দিয়ে নতুন একটা ঝগড়া, মারামারি, হানাহানি ও খুনাখুনির সৃষ্টি করে। আর তাতেই তারা সফল।

গ্রামের মানুষের হানাহানি, মারামারি, হিংসা, বিদ্বেষ এসব কৈ মাছের প্রাণের মতো। সহজে মিটমাট হয় না। ভিলেজ পলিটিক্সের প্রভাবশালী নেতারা ঝগড়াঝাটি সহজে মিটমাট হোক সেটাও চায় না। কারণ, শয়তানের অবসর হয় না। শয়তান অবসর চায়ও না। মিটমাট হয়ে গেলে তাদের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যাবে। শয়তান অবসরে চলে যাবে।

ভিলেজ পলিটিক্সের মহিলা নেত্রীরা আরও মারাত্মক। তাদের ভয়ানক প্রচেষ্টা থাকে ঘর ভাঙ্গার। একটা সুখী সমৃদ্ধ পরিবার তছনছ করার জন্য তারা ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করে যায়। সেই পরিশ্রম- ‘ইদুর বেড়া কাটা’র মতো। সহজে দৃশ্যমান হবে না।

তারা কখনও শ্বাশুড়ির শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে বউয়ের বিপক্ষে বলবে। নানান উপমা দিয়ে বউকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ছাড়বে, আবার কখনও বউয়ের অন্তরঙ্গ সহযোগী হয়ে শ্বাশুড়ির বিরুদ্ধে বউয়ের মামলা সাজাবে। নানান কর্মকাণ্ডের দৃষ্টান্ত দিয়ে শ্বাশুড়ির বিরুদ্ধে বউয়ের চোখ রাঙিয়ে তুলবে। বউ-শ্বাশুড়ি লাগলেই পরে তারা শান্তি। তখন তাদের দুহাত একত্রিত হয়ে সাফল্যের তালি বাজে। এই হলো গ্রামের সহজসরল মানুষের ভিলেজ পলিটিক্স।

গ্রামে নির্বাচনের প্রভাব থাকে বেশি। অথচ, নির্বাচন অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে কিন্তু তার প্রভাব এখনও কাটেনি। আরও কতদিন থাকবে আল্লাহ মালুম। এখনও রেষারেষি, হানাহানি, মারামারি। হয়তো খুনাখুনিই হবে শেষ পরিণতি।

নেতা যখন নির্বাচনে দাঁড়ান তখন পোস্টারের ভাষায় তিনি শান্তিকামী, জনদরদী, গরিব দুঃখী ও মেহনতী মানুষের পরম বন্ধু, সৎ ও ন্যায়ের কণ্ঠস্বর, তার চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র কিন্তু ভিলেজ পলিটিক্সে তিনি খলনায়ক এবং পালের গোদা।

ইমাম সাহেব যখন মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে ওয়াজ করেন, তখন তিনি সমাজের আইডল, তিনি আল্লাহর রাসুল সাঃ এর সুন্নতের অনুসারী, সৎ কাজের আদেশ দাতা এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দাতা কিন্তু ঝগড়া বিবাদের মাঠে ইমাম সাহেব হুজুরও পাঞ্জাবির উল্টো গোছ দিয়ে, হাতল বটতে বটতে বলে, হেড়াম থাকিলে আয়, হ্লারপ্লা তুর মারে….! হ্যাঁ এটাই ভিলেজ পলিটিক্স।

ভিলেজ পলিটিক্স করা গ্রামের সহজসরল মানুষগুলো চায় না তার প্রতিবেশির মেয়েটির ভালো ঘরে বিয়ে হোক। পাশের ঘরের ভাইপো ভালো ঘরের কোনো মেয়েকে বউ করে ঘরে তুলুক। যদি ভাগ্যক্রমে বিয়ে ঠিকফর্দও হয়ে যায় তাহলে তারা – ‘নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রা ভঙ্গ করা’র মতো বিভিন্ন কৌশলে সেই বিয়ে ভাঙবেই। ভাঙতে না পারলে তাদের ঘুম হারাম।

ভিলেজ পলিটিক্স করা গ্রামের সাধাসিধা মুরব্বিরাও অনেক সময় শয়তানের ভূমিকায় অভিনয় করে থাকেন। তারা বাপকে বলবে, তোমার এতো বড় ছেলে থাকতে তোমাকে কেন কষ্ট করতে হবে? ছেলেপুলে আমাদেরও আছে, তোমার একার নয় তো! আমরা এতো মাথাব্যথা কপ্রি? ছেলেপুলেদের এতো প্রশ্রয় দেওনা কিন্তু। আবার ছেলেকে বলবে, এসব কি তুই ছেলে মানুষের কাজ? আমরা তো কোনোদিন আমাদের ছেলেপুলেদের এসব নিয়ে মাথাব্যথা করতে দিইনি! এতে করে একদিকে বাবা ছেলের উপর অভিমান, আবার ছেলে বাবার উপর। শুরু হয় সম্পর্কচ্ছেদ। হ্যাঁ, শয়তানের গুরুত্বপূর্ণ এ দায়িত্ব পালন করে গ্রামের সহজসরল মানুষগুলো।

ভিলেজ পলিটিক্সে এরকম অসংখ্য ঘটনা আছে। ভিলেজ পলিটিক্সে আবার নির্বাচনের শেষ নেই। জাতীয় নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন, দলীয় কাউন্সিলর, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ কমিটি নির্বাচন, সমিতি ও ক্লাবের নির্বাচন। নির্বাচনের মৃত্যু নেই। সুতরাং দ্বন্দ্ব বিদ্বেষ, মারামারি হানাহানিরও ক্ষান্তি নেই। নির্বাচন মানে হার-জিত। বাঙালি জিততে জানে, হার মানতে জানে না।

আমার সবচেয়ে অবাক লাগে মসজিদ কমিটির নির্বাচন নিয়ে। কমিটির সভাপতি, সেক্রেটারি ও সদস্য হওয়ার জন্য যে প্রতিযোগিতা এবং দ্বন্দ্ব, বিদ্বেষ চলে সেভাবে যদি প্রথম কাতারের মুসল্লী হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা, প্রচেষ্টা চলতো তাহলে মসজিদ কমিটির দরকার পড়তো না বলে মনে করি। গ্রামের সহজসরল মানুষগুলোর ভিলেজ পলিটিক্স থেকে আল্লাহর ঘর মসজিদও মুক্ত নন। যেখানে পলিটিক্স, সেখানেই অশান্তি। সুতরাং অশান্তি কোনোমতেই গ্রাম ছাড়ছে না।

প্রবন্ধকারঃ মুহাম্মদ রমিজ উদ্দিন,
ramizu127@gmail.com

210 Views

আরও পড়ুন

নকলায় পিকআপ সিএনজি সংঘর্ষে নিহত ৪

ইউ‌নিট সভাপ‌তিকে মামলাসহ হয়রানীর প্রতিবা‌দে সমা‌বেশ অনু‌ষ্ঠিত

কাপাসিয়ায় নবাগত ইউএনও’র সাথে মাদরাসা শিক্ষক পরিষদ নেতৃবৃন্দের মতবিনিময়

অপহৃত কলেজ শিক্ষার্থীর মরদেহ মিললো প্রেমিকার প্রেমিকের বাড়ি, গ্রেফতার ৩

শান্তিগঞ্জ উপজেলা সুজন’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

পলাশে রাস্তার ইট তুলে দেয়াল নির্মাণ

উখিয়ায় শাহপুরী হাইওয়ে থানার উদ্যোগে কমিউনিটি পুলিশিং সভা ও ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত

জেলা খাদ্য কর্মকর্তার তালবাহানা  : জামালপুরে ২০ টন সরকারি চাল জব্দ

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সচিব লাঞ্ছিত,দুই কর্মকর্তা বরখাস্ত।

তোমার আলোয় আলোকিত হোক সকল মুসলিম

জামালপুর সমিতি ঢাকার সাবেক মহাসচিব শফিকুল ইসলাম গ্রেপ্তার

অনিয়মের তথ্য চাওয়ায় হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক কর্তৃক হামলার শিকার সময় টিভির দুই সাংবাদিক