ঘড়ির কাঁটার টিক টিক আওয়াজ হচ্ছে। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। সেই সন্ধ্যা থেকে আকাশটারও আজ মন খারাপ। হঠাৎ মেইন দরজায় কারো ঢোকার শব্দ পেলাম। আমি উঁকি দিয়ে দেখি আব্বু এসেছে। গঞ্জে গিয়েছিল বাজার করতে। হয়ত বৃষ্টিতে আটকে পড়েছিল কোথাও। ভিজে একদম একাকার। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত বারোটা পনেরো বাজে তখন। তোয়ালাটা এগিয়ে দিলাম আব্বুর দিকে। তোয়ালাটা হাতে নিয়ে মাথাটা মুছতে মুছতে বললো।
-কি রে মা ঘুমাসনি এখনো?
এই প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম কিছুটা।
কি বলবো আব্বুকে? তার মেয়ের চোখে যে এখন ঘুমের বদলে কান্নারা লুকোচুরি খেলে! আমি যে ঘুমের সাথে আড়ি দিয়েছি অভিমান করে। আমারই বা দোষ কোথায় ? আঠারো বছরের স্মৃতিগুলো সঙ্গে নিয়ে সবাইকে ছেড়ে নতুন এক জগতে পা দিতে যাচ্ছে তার মেয়ে। চেনা মানুষগুলোকে না দেখে থাকতে হবে বছরের পর বছর। আমার দীর্ঘশ্বাস ভরা কষ্টগুলো কি করে বুঝাবো তাকে?
কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে এলাম আব্বুর ডাকে।
-কি রে জবাব দিলি না যে!
-না মানে আব্বু! এমনি ঘুম আসছিল না। মাথা ব্যথা করছিল তো!
-আচ্ছা বাজারের ব্যাগটা ঘরে নিয়ে রাখ। কাল বাদে পড়শু তোর বিয়ে। এভাবে রাত জাগলে শুকিয়ে যাবি রে মা। মাথাব্যথার ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।
-তুমি ভাতটা খেয়ে নাও, তারপর ঘুমাবো।
-ঠিক আছে। আমি হাত মুখ ধুয়ে আসি।
আব্বু খাচ্ছে আমি দেখছি মন ভরে। না জানি আর কবে এমন করে দেখার সুযোগ পাবো! আব্বুর খাওয়া যখন শেষের দিকে তখন মনের অজান্তেই বলে ফেললাম,
-আব্বু আমায় একটু খাইয়ে দিবে?
আমার কথায় কিছুটা চমকে উঠলো আব্বু। কি যেন ভেবে ভাতের নলা আমার দিকে এগিয়ে দিলো। আমি খাচ্ছি আর অঝোরে চোখের জল পড়ছে। মনকে কিছুতেই বোঝাতে পারছি না। হাউমাউ করে কেঁদে দিলাম আব্বুকে জড়িয়ে ধরে। আব্বুও কাঁদছে। বাইরে আকাশটাও কাঁদছে। মেঘগুলো বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে এই দু্র্লভ মুহূর্তটাকে ক্যামেরা বন্দি করতে আর..!
কিছু অনুভূতি হয়ত অভিমান জমিয়েই পাহাড় গড়ে- কোনো এক ক্লান্ত ক্ষণে ঝড়বে বলে।
উম্মে হাবীবা রুমি
জামাতীর বাজার গ্রাম, নীলফামারী।