-------
প্রাকৃতিক এলার্ম ----সেঁজুতি মুমু
মলিন আলো পুস্তকের পাতায় পড়েছে।
নয়ন মেলেই দেখি বিভাবসু গগনের হৃদমাঝারে উঁকি দিচ্ছে।
নিদ্রার রেশ কাটতেই বুঝলাম রাত্রিতে আরাম কেদারায় উপবেশন করে উপন্যাসের কিতাব হস্তে তাতে মগ্ন হয়ে কখন নয়নযুগল নিদ্রার কোলে ঢুলে পড়েছে বোঝার অবকাশ পাই নি।
দিবার দীপ্তি আরো উজ্জ্বল হলে আয়েশের ভঙ্গিতে তনু দুলিয়ে বাতায়নের পর্দা সরিয়ে দিয়ে বাহিরে দৃষ্টি রাখলাম।
পক্ষীগণ একত্রিত হয়ে যাচ্ছে খাবারের খোজে।
মৃদু প্রভঞ্জন বইছে।
হঠাৎ এক ভাবনা মস্তিষ্কের নিউরনে বৈদ্যুতিক শক দিতে লাগল।
এই যে মোর দেখা হয়ত প্রথম কিংবা দ্বিতীয় ব্রাহ্মমুহূর্ত!
শেষ কবে প্রকৃতি দেবীর এই রুপ দর্শন করেছি তা আমার স্মৃতিতে আসে না।
শুধু এইটুকু বলতে পারি শেষ যখন মুখমন্ডলে গুটি গুটি কতক ব্রণ উঠেছিল তখন একবার সূর্যোদয় প্রত্যক্ষ করেছিলাম।
তারপর ব্রণ খসে পড়ে দাগও মিটে গেছে কিন্তু আর সূর্যোদয় দেখা হয়নি!
উপন্যাসের প্রকৃতি বর্ণনায় ব্রাহ্মমুহূর্তে কুক্কুট তার প্রাকৃতিক এলার্ম দিয়ে সবাইকে সময়ের জানান দিয়ে যায়।
কোথায় কুক্কুটের "কুক্কু রুক্কু " রিংটন আমার কর্ণ অবধি পৌছাল না কেন?
পুস্তকের পৃষ্ঠায় যে স্পষ্ট হরফে হরফে লেখা আছে এসময় প্রভাকর অম্বরের বুকে প্রজ্জ্বলিত হয়, মোরগ তার প্রাকৃতিক এলার্মের সহায় ধরণীবাসীকে তা জানিয়ে দেয়!
আজ হলো না কেন?
হঠাৎ মোটরগাড়ির বীভৎস হর্ণ কর্ণগোচর হলো।
কি বিদঘুটে সেই শব্দ!
সেই শব্দে যেন আমার কিতাবের মদিরার ঘোর কেটে গেল।
আমি বুঝলাম আমি নগর সভ্যতার অংশ এক নির্জীব দালানের বাতায়ন পাশে দাঁড়িয়ে আছি।
এখানে কুক্কুটের প্রাকৃতিক এলার্ম শোনা যায় না এখানে শোনা যায় গণিতের সংখ্যাগুলোর গোল বৈঠকের মাঝে উপবেশনকারী কতক ব্যাটারি চালিত লাঠির নির্দিষ্ট শব্দ, যাকে নাকি এলার্ম বলে!
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০