বর্ষণ ভারাক্রান্ত দিনের অবসানে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভাসিয়ে আসে শরৎ রানী। স্বচ্ছ রোদের শিশিরভেজা সকাল, ঘাসের শিখরে মুক্তো বিন্দু, শিউলি ফোটা গন্ধ, শুভ্র কাশবন, শাপলা ফোটা সরোবর, আমন ধানের সবুজ সতেজ বিস্তার ; শরতের এই অনুপম সৌন্দর্য তুলনাহীন। সহজ অনাড়ম্বর সৌন্দর্যের মাঝে ফুটে ওঠে তার মোহনীয় রুপ। কালের পরিক্রমায় তৃতীয় ঋতু শরৎ। থাকে ভাদ্র ও আশ্বিন মাস জুড়ে। খ্রিষ্টীয় পঞ্জিকা অনুসারে মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত এ ঋতুর পথচলা। শরৎ-কে বলা হয় শুভ্রতার প্রতীক। শরৎ শুধু প্রকৃতিতেই পরিবর্তন নিয়ে আসে না, বদলে দেয় মানুষের মনও! নীলাম্বরে ভাসমান শিমুল তুলার মতো সাদা মেঘের ভেলা আমার মতো প্রতিটি মানুষকেই কিছুটা ভাবুক করে তোলে। ভাসতে ভাসতে মেঘ হঠাৎ আকাশের এক কোণে জড়ো হচ্ছে। স্তুপ হয়ে উঠছে অদ্ভুত সব আকৃতি নিয়ে। পরক্ষণেই আবার এলোমেলো। কখনো সাদা,কখনো ধূসর, কখনোবা মন খারাপের কালো রং মাখা শরতের এ আলো ছায়ার খেলা দিনভর চলতে থাকে; যেন এই মেঘ রৌদ্রছায়া! নদীর উপর সেই মেঘের ছায়া স্বচ্ছ পানির ঢেউয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যোগ করে এক নুতন শোভা। তার সাথে সঙ্গ দেয় বাতাসে দুলতে থাকা এলোমেলো কাশফুলের দল। বর্ণের স্নিগ্ধতা আর সৌন্দর্যের মুগ্ধতাকে অতুলনীয় করে তুলতে শরতের জোৎস্নার ভুমিকাটিও কিন্তু কোনো অংশে কম নয়। শুক্লা রজনীর শুভ্র জোৎস্নাধারা সুবিস্তীর্ণ শ্যামলের বুকে ঢেলে দেয় রুপালি আভা। সেই সাথে মৃদুমন্দ বাতাসের আন্দোলন, দূর থেকে ভেসে আসা কামিনীর সুবাস- যে কারোর মনই কেড়ে নেবে। বাংলাদেশে শরৎকাল সামান্য কিছুদিন স্থানী। এ অল্প সময়েই সে প্রকৃতিতে নিয়ে আসে নতুন ছন্দ, নতুন সৌন্দর্য।
অতএব, প্রকৃতির এ অপরুপ ছন্দিত ছন্দের সাথে তাল মিলিয়ে মানুষের মন আকাশেও শরতের পেঁজা তুলোর মতো নানান স্বপ্নেরা ভেসে বেড়াক, নরম কাশফুল তার চিরচেনা পরশ বুলিয়ে যাক সেই স্বপ্নে। এটাই প্রত্যাশা।
তাসনীম জাহান
শিক্ষার্থী, দশম শ্রেণি, বিন্দুবাসিনী মহিলা উচ্চ বিদ্যালয়, টাংগাইল।