ঢাকারবিবার , ১৫ জুনe ২০২৫
  1. সর্বশেষ

একুশে পদকপ্রাপ্ত (মরণোত্তর) শ্রী বিদিত লাল দাস’র বর্ণাঢ্য কর্মজীবন

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
১৪ জুন ২০২৫, ৬:৪৩ অপরাহ্ণ

Link Copied!

ওবায়দুল মুন্সী

গুরুজী, বিদিত লাল দাস। জন্ম ১৫ জুন,১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ এবং মৃত্যু ৮ অক্টোবর, ২০১২ খ্রিস্টাব্দ। আমার গীতিময়ী জীবনের একজন অভিভাবক। যার সাথে প্রায় একযুগ কেটেছে। আমার গানের প্রেরণা মরমি কবি গিয়াসউদ্দিন পরামর্শক্রমেই তাঁর সংস্পর্শে আসা। ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক, বিশিষ্ট লোকসংগীতশিল্পী, সুরকার, লোকগবেষক এবং সঙ্গীত পরিচালক তথা সংগঠক। সিলেটে জন্ম নেয়া এই লোকসংগীতের মুকুটহীন সম্রাট, সিলেটের সুরমা নদীকে খুব বেশি ভালোবাসতেন। সুরমার তরঙ্গের মতোই যেনো দূলায়িত তাঁর সুরের ভূবন। প্রিয় এই নদীর বুকে ভেসে ভেসে অসংখ্য গান তিনি সুর করেছেন।

বিদিত লাল দাস বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে চীন, সুইডেন, নরওয়ে, হংকং, ডেনমার্ক এবং ইংল্যান্ড সফর করেন। ” বিদিত লাল দাস ও তার দল” নামক সেই দলটি সত্তরের দশকের এক জনপ্রিয় দল ছিলো। সেই দলে ছিলেন আকরামুল ইসলাম, সুবীর নন্দী, রামকানাই দাশ, হিমাংশু বিশ্বাস, হিমাংশু গোস্বামী, দুলাল ভৌমিক প্রমুখ অনেকেই। বিদিত লাল দাসই ছিলেন সেই দলের দলনেতা। বাংলা লোকগানের কিংবদন্তী এই সুরকার হাছন রাজা, রাধারমণ দত্ত, শীতালং ফকির ও গিয়াস উদ্দিনসহ অনেক গীতিকবিদের গানে সুর করেছেন। তার সুরকৃত উল্লেখযোগ্য গানসমূহ হল “মরিলে কান্দিসনে আমার দায়”, “সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী”, ” প্রান কান্দে মন কান্দে রে”, “কারে দেখাবো মনের দুঃখ গো “, ” বিনোদিনী গো তর বৃন্দাবন কারে দিয়ে যাবি”, ও “আমি কেমন করে পত্র লিখি”।

বিদিত লাল ১৯৬০ এর দশকের একজন অন্যতম বেতার গায়ক। বনেদী পরিবারের এক সন্তান বিদিত লাল দাস। জমিদারীর জমিজামা দেখে হেসে খেলেই যাঁর জীবন কাটতো অনাবিল স্বাচ্ছন্দ্যে। সোনার চামচ মুখে নিয়ে যাঁর জন্ম তাকে কি আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়? কিন্তু বিদিত লাল দাস জমিদারীকে তুচ্ছজ্ঞান করে এক গানবাজনার প্রতি এক উদাসী সত্ত্বায় লীন হয়েছিলেন ছোট বেলা থেকে। সিলেট শেখঘাটস্থ ‘লালব্রাদার্স’ বাড়িটি সেই আমল থেকে আজো এক ঐত্যিহিক বাড়ি হিসেবে এতদাঞ্চলে সুবিদিত। বিদিত লাল দাস এই পরিবারেরই এক যোগ্য সন্তান। পারিবারিকভাবে গানের চর্চা ছিলো। যেহেতু বনেদী পরিবার, সেহেতু গানবাজনা রক্তের সাথে মিশে যাওয়া এক প্রকার নেশাই ছিলো অনেকের কাছে সে আমলে। সৌখিনতাই হোক আর বেঁচে থাকার রসদই হোক, বিদিত লাল দাসও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। গানের প্রতি তীব্র আসক্তি তাঁকে গান বাজনার প্রতি বিশেষ দূর্বল করে তোলে। সুরের মানুষ হিসেবে তাঁর ভূবনজোড়া পরিচিতি থাকলেও ডাক নাম,‘পটল বাবু’ নামে সিলেটে সবাই চেনে। তিনি যখন ৯ বছরের শিশু, তখন সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভাগ হয় ভারতবর্ষ। কিন্তু দাস পরিবারের সদস্যরা সাম্প্রদায়িকতাকে উপেক্ষা করে থেকে গেলেন জন্মমাটিতে। দেশকে ভালোবাসার অমোঘ মন্ত্রে তখনই দীক্ষিত হন বিদিত লাল দাস। বেড়ে উঠার সময়ে তিনি প্রত্যক্ষ করলেন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সাংস্কৃতিক বৈরীতা; অনুভব করলেন পরাধীনতার বৃত্তে বন্দি থাকার যাতনা। সেই পরিস্থিতিই তাঁর শিল্প সত্বাকে জাগ্রত করে। অন্ধকার দূর করার মাধ্যম হিসেবে তিনি বেছে নেন সঙ্গিতকে। ব্রাতী হন নিজস্ব সংস্কৃতিকে বিশ্ব পরিমন্ডলে পরিচিত করার। এগিয়ে যেতে থাকেন আপন প্রত্যয়ে।মাত্র ৭ বছর বয়সে সংগীতকে জীবনসাথী করে নিয়েছিলেন বিদিত লাল দাস। সেই থেকে সংগীত ও সুরসাগরে ভেসে ভেড়ানো। হাসনরাজা, রাধারমন, গিয়াস উদ্দিনসহ অনেক গীতিকারের গান তিনি সুর করেছেন। মরমী কবিদের গান ছাড়াও তিনি সিলেটের বিলুপ্তপ্রায় লোকসংগীত সংগ্রহ ও প্রচারে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেন। জারী, সারী, ভাটিয়ালী ও ধামাইল গান সংগ্রহে নিয়োজিত ছিলেন আজন্ম। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তিনি ছিলেন সোচ্চার। সেই সময়কার জনপ্রিয় শিল্পীদের নিয়ে তিনি ভারতে একটি সংগীত দল গঠন করেন। এই দল বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ উপর্জন করে তা মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাহার্য্যার্তে ব্যয় করে। ১৯৪৬ সালে আসামে চলে যান। সেখানে তার শিক্ষা শুরু হয়।তার সংগীত শেখার গুরু তাঁর ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদ। বিখ্যাত শিলং সেইন্ট অ্যাডভান্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। ১৯৫৯ সালে বাবার অসুস্থতার খবর শুনে সিলেট ফিরে আসেন। তারপর আর শিলংয়ে যাওয়া হয়নি। বাবা বিনোদাল মাসের রেন্টাম ক্যান্সার ধরা পড়ায় তিনি সিলেটে চলে আসেন। সঙ্গে উনার ওখানে ফুল মোহাম্মদ খানও আসেন। দীর্ঘ তিনি ফুল মোহাম্মদ খানের কাছে উচ্চাঙ্গসংগীতের তালিম নিয়েছেন। শেখঘাটের লাল ব্রাদার্স ঠিক সামনেই খুলিয়াপাড়ায় থাকতেন ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদ খান। ১৯৫৬ সালে যখন বিদিত লাল দাস মুসলিম সাহিত্য সংসদে যোগ দেন তখন মরহুম নুরুল হক উনাকে একটি খাতা বের করে দিলেন। ১০-১২টি গান, হাতে লেখা। এই গান সুর করে তিনি আমাদের দেশের বিশিষ্ট শিল্পী আরতি ধরকে শিখিয়ে দিতেন। আর এগুলো ঢাকাতে বিভিন্ন প্রোগ্রামে পরিবেশন করতেন। তখনও বিদিত লাল দাগ রেডিওতে গান করার সুযোগ পাননি। ১৯৬১ সনে রেডিওর সাবেক পরিচালক মনোয়ার আলম উনাকে ঢাকাতে লোকসংগীত বিষয়ে এক প্রতিযোগিতায় নিয়ে যান, সেখানে ওস্তাদ আয়াত আলী , ওস্তাদ আবুল কালাম আজাদ বিচারক ছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে উনার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেছিলেন রথিন্দ্রনাথ রায়ের বাবা হরলাল রায়, এছাড়াও দিনাজপুরের আফতাবউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। এ প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম হয়ে যান। তখন বিচারক উনাকে পরের দিন রেডিওতে যোগদানের ফরম আনতে বললেন। পরেরদিন সকালে তিনি ঢাকা রেডিওতে গিয়ে যোগদান করেন। এভাবেই ১৯৬১ তে উনার ঢাকা রেডিওতে যোগ দেওয়া প্রারম্ভে রেডিওতে হাসন রাজার গান সংগৃহীত হিসেবে গাওয়া হতো। তিনি ও আরতী ধরই হাসন রাজার গানগুলো রেডিওতে গাওয়া শুরু করেন। ১৯৭১ সালের সেই রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চলে যান আসামে। সেখানে তিনি, সুজেয় শ্যাম, আরতী ধর, হেমচন্দ্র ভট্টাচার্যসহ অনেকে মিলে শিলচরে বাংলাদেশ গণমুক্তি শিল্পী গোষ্ঠী’ নামে একটা সংগঠনে যুক্ত হন। তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে সীমান্তে নির্মিত প্রশিক্ষণ শিবিরে দেশপ্রেমের গান শুনিয়ে উদ্বুদ্ধ করতেন। ভারত জুড়ে গান গেয়ে প্রাপ্ত সব অর্থ অসুস্থ ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য নিতেন তারা।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে লোকসংগীতের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে গঠন করা বিদিতলাল দাস ‘বিদিতলাল দাস ও সঙ্গীরা’ নামের সংগীত দলটি সেই সময় বাংলাদেশ ও ভারতে বিভিন্ন সময় সংগীত পরিবেশন করে সংগীতপিপাসুদের অকুণ্ঠ প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়। তাঁর দলের অংশগ্রহন করা উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানগুলো হচ্ছে-প্রথম সার্ক সম্মেলনে সঙ্গীত পরিবেশন, কলকাতার লোকভারতী আয়োজিত অনুষ্ঠান (১৯৮৮), কাছাড়ে অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে সংগীত পরিবেশন (১৯৮৯) প্রভৃতি। এই দলের সদস্যদের মধ্যে অন্যতমরা হচ্ছেন, সুবীর নন্দী, হিমাংশু গোস্বামী, একে আনাম, আরতী ধর, হিমাংশু বিশ্বাস, ফজল মাহমুদ, দুলাল ভৌমিক, জামালউদ্দিন হাসান বান্না। গানের দল বিদিত লাল ও তার দল গঠন করেন। তার সেই দলে ছিলেন সুবীর নন্দী, রাসবিহারী চক্রবর্তী, রামকানাই দাশ, আকরামুল ইসলাম, হিমাংশু গোস্বামী, দুলাল ভৌমিক, রাখাল চক্রবর্তী, একে আনাম, জামালউদ্দিন হাসান বান্না, হিমাংশু বিশ্বাস, সুবল দত্ত প্রমুখ অনেকেই। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার দলকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।

শ্রী বিদিত লাল দাস (১৯৩৬-২০১২)

সেখানে তার দলের গান শুনে তিনি অভিভূত হয়ে পড়েন। তখন বিদিত লাল দাস “আমি কেমন করে পত্র লিখি রে” এই গানটি যখন গাইছিলেন, তখন মঞ্চে উঠে দর্শকের সারিতে বসে থাকা পল্লীকবি জসিম উদ্দিন, তিনি বিদিত লাল দাসের গানের কন্ঠে শাশ্বত সুন্দর রূপ খুঁজে পান এবং নিজের গলার ফুলের মালা খুলে তাঁর গলায় পরিয়ে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেন।

রাণী এলিজাবেথ’র স্বামী এডিনবার্ক ডিউকের বাংলাদেশ আগমন উপলক্ষেও তিনি এবং তাঁর দল সংগীত পরিবেশন করেন। বিদিতলাল প্রসঙ্গে সেই দলের অন্যতম এক সদস্য দেশনন্দিত কণ্ঠশিল্পী সুবির নন্দীর ভাষ্য –

‘মরমি সাধক কবিদের গানে সুরারোপ করে এবং অন্য সুরকারের গান নিজে গেয়ে তিনি যেমন বাংলাদেশের সংগীত আকাশে জনপ্রিয় হয়েছেন ঠিক তেমনি অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীকে নিজ হাতে শিখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত। আমাকেও তিনি নিজ হাতে লোকগীতির কবিও সমও টেকনিক এবং উপস্থাপনা শিখিয়েছেন। তাঁর কাছে এ বিষয়ে আমি চিরজীবন ঋণী। লোকগানে তিনিই আমার সংগীতগুরু।’৪

বিদিত লাল দাস বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে চীন, সুইডেন, নরওয়ে, হংকং, ডেনমার্ক এবং ইংল্যান্ড সফর করেন। একজন সংগীত শিল্পী হিসেবে যেভাবে মঞ্চ কাঁপিয়েছেন ঠিক সেভাবেই তিনি শত শত গানে সুর করে সাধক কবিদের সৃষ্টিকে পড়িয়েছেন অমরত্বের তিলক। তাঁর সুরা করা গানগুলো সব বয়সের মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয়। তাঁর সুর করা অসংখ্য জনপ্রিয় গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৬ টি গানের প্রথম পংক্তি এখানে উল্লেখ করা হলো-

১. সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী ২. মরিলে কান্দিস না আমার দায় রে যাদুধন ৩. সিলেট প্রথম আজান ধ্বনি বাবায় দিয়াছে ৪. কারে দেখাবো মনের দুঃখ গো ৫. বিনোদিনী গো তোর বৃন্দাবন কারে দিয়ে যাবি ৬. আমি কেমন করে পত্র লিখিরে বন্ধু ৭. প্রাণ কান্দে মন কান্দেরে ৮. ভ্রমর কইয়ো গিয়া ৯. প্রেমের মর জলে ডোবেনা ১০. হাসন রাজা বলে ও আল্লা ১১. আমি যাইমু গো যাইমু আল্লারি সঙ্গে ১২. সোনা দিদি ১৩. মরণ কথা স্মরণ হইলো না তোর ১৪. তুমি রহমতের নদীয়া ১৫. প্রেমের মর জলে ডুবে না ১৬. শেষ বিয়ার সানাই ইত্যাদি ছাড়াও কিছু নবীন গীতিকারদের গানও তিনি সুর করেছেন এবং তাঁর ছাত্রছাত্রীদের শিখিয়ে গেছেন।

ওবায়দুল মুন্সী নামে পাইকাপন, দরগাপাশা,শান্তিগঞ্জ, সুনামগঞ্জের এক তরুণ গীতিকারের অনেকগুলো গান সুর করেছেন এবং সেগুলো সংগ্রহে রেখেছিলেন ড. মৃদুল কান্তি চক্রবর্তীকে দিয়ে স্বরলিপি সহকারে আরেকটি গানের বই বের করার জন্য। সেটা আর হলোনা! তার পূর্বেই তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। ওবায়দুল মুন্সীর লেখা যেসব গান তিনি সুর করেছিলেন- ‘বাউল দেশের মানুষ আমি’, ‘এই দেশ এই মাটি’, তোমরা দেখরে আইয়া দেখরে চাইয়া’, নীলাকাশ চাঁদেরে হারায়ে কাঁদে’, ‘আঁধার মনের ভরসা তুমি’, ‘আল্লাহ তুমি মেহেরবান’, ভাইরে সুবল কইও রাধারে’, পঞ্চমির এই পূণ্য প্রভাতে’, ইত্যাদি।

বিদিত লাল দাসের সুর করা কবি গিয়াস উদ্দিনের লেখা ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়’ গানটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কথা সাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ূন আহমদের বদৌলতে আকাশছোয়া জনপ্রিয়তা অর্জন করে। হুমায়ূন আহমেদ অসম্ভব ভালোবাসতেন গানটিকে। জীবদ্দশায় গানটি প্রসঙ্গে হুমায়ূন আহমদ বলেছিলেন, ‘সময় আসবে। আমি মারা যাব। আমার পরিবারের সবাইকে বলে রেখেছি, আমি মারা যাওয়ার পরপরই কোরান শরীফ, সূরা ইউনুছের আগেও যেন বাজানো হয় ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়…’ গানটি।’

বিদিত লাল দাস বেশ কয়েকটি নাটক ও নৃত্যনাট্যের পরিচালনা করেছেন। তন্মধ্যে ‘সিরাজ-উদ-দৌলা’, দিপান্তর’,‘তাপসী’, ‘প্রদীপ শিখা’, ‘বিসর্জন’, ‘সুরমার বাঁকে বাঁকে’ উল্লেখযোগ্য। চলচ্চিত্রেরও সংগীত পরিচালনা করেছেন। তিনি ‘সোনার কাজল’ ছবির পরিচালক এবং ‘হাসন রাজা’ চলচ্চিত্রের সংগীত উপদেষ্টা ছিলেন। চলচ্চিত্র শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতায়ও নিবেদিত ছিলেন বিদিত লাল দাস। তাদের পারিবারিকভাবে প্রতিষ্ঠিত লালকুঠি ও রংমহল সিনেমা হল দুটি সিলেটের প্রথমদিককার প্রেক্ষাগৃহ, বিদিত লাল দাসই পারিবারিকভাবে এই প্রেক্ষাগ্রহদুটির মালিক ছিলেন। তিনি একজন সূর সংগ্রাহকও ছিলেন। সিলেট অঞ্চলের সাতানব্বই জন মরমি কবির গান তিনি সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যখনই সুযোগ পেয়েছেন তখই আত্মনিয়োগ করেছেন সংগ্রহের কাজে। প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে বেড়িয়েছেন। পাঁচদশকের প্রচেষ্টায় তিনি গড়ে তুলেছেন সংগীতের এক অমূল্য ভান্ডার। বাড়ির সামনে ঘরেই ‘নীলম লোকসংগীতালয়’ নামে একটি সংগীতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন তিনি। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে ক`জন শিল্পী দীর্ঘদিন ধরে লোকসঙ্গীত চর্চা করছেন এবং লোকসঙ্গীতের ওপর গবেষণা চালিয়ে গেছেন তাদের মধ্যে বিদিত লাল দাস ছিলেন অন্যতম। হাসন রাজার গানে অনুপ্রানিত হয়ে সঙ্গীতের ভূবনে অভিযাত্রা শুরু করা এই শিল্পীর সঙ্গীত চর্চাও শুরু হয় হাসনের গান দিয়েই। যে সময়টাতে হাসন রাজার গান পাওয়া দূরহ ছিল সেই সময়টাতে তিনি তার গান সংগ্রহ করে নিজে গেয়েছেন, অন্যকে দিয়েও গাইয়েছেন। হাসন রাজার গানকে জনপ্রিয় করতে দেশের যে ক’জন শিল্পী অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন বিদিত লাল দাস তাদের মধ্যে অন্যতম। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার স্বপ্ন ছিলো সিলেটে হাসন রাজার উপর একটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় অথবা মরমীকবিদের নিয়ে একটি সংগ্রহশালা করা। সুরমা পারের গান নামে তার একটি বইও বেরিয়েছে। জাতীয় পুরস্কার না পেলেও জনমানুষের ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন ঠিকই। সম্মানিতও হয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর গুণীজন সম্বর্ধনা ছাড়াও তিনি দেশে-বিদেশে অসংখ্য পুরস্কার, সংবর্ধনা ও সম্মাননা লাভ করেছেন।

তথ্যসূত্র :

১/ শ্রী বিদিত লাল দাস গুরুতর অসুস্থ,
যায়যায়দিন, ৩ অঅক্টোবর ২০১২।
২/ বিদিত লাল দাস আর নেই!
দৈনিক প্রথম আলো, ৮ অক্টোবর ২০১২।
৩/ কিংবদন্তিতুল্য সুরস্রষ্টা বিদিত লাল দাস আর নেই”,
দৈনিক কালের কণ্ঠ, ৯ অক্টোবর ২০১২।
৪/ উইকিপিডিয়া।

লেখক: কবি, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক
পাইকাপন, শান্তিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ।

62 Views

আরও পড়ুন

দোয়ারাবাজারে মাদ্রাসার প্রিন্সিপালকে স্থায়ীভাবে বহিস্কারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

তিন বিমানঘাঁটিসহ ইসরায়েলের ১৫০ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত, হামলা চলবে: ইরান

চকরিয়ায় মোহনা শিল্পী গোষ্ঠীর ফল উৎসব উদযাপন

রাইফেল থাকলেও পুলিশের কাছে থাকবে না ভারী ‘মারণাস্ত্র’: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ডায়াবেটিস থেকে হজম এবং জামের যত উপকারিতা

ইরানের হামলায় ক্ষতবিক্ষত ইসরাইল, দেখুন ছবিতে

দোয়ারাবাজারে নরসিংপুর ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সমাবেশ

৩১ দফা বাস্তবায়ন ও পদবঞ্চিত নেতাদের আহ্বায়ক কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে মিছিল

সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হাসিম-আনছার-মাসুদ প্যানেল

মায়ের কাছে পড়ে ৯ মাসে কোরআনের হাফেজ ৭ বছরের শিশু

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন, ইউনূস-তারেক বৈঠকে সিদ্ধান্ত

আম্মা আপনাকে সালাম জানিয়েছেন: তারেক রহমান