ঢাকাশনিবার , ১৪ জুনe ২০২৫
  1. সর্বশেষ

ঈদুল আযহা : আত্মসমর্পণের এক জ্বলন্ত শিক্ষা

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
১৪ জুন ২০২৪, ২:১৭ অপরাহ্ণ

Link Copied!

বছর ঘুরে আমাদের মাঝে আবারো ফিরে আসছে পবিত্র ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহা মুসলমানদের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব [আবূ দাউদ ১১৩৪; নাসায়ী- ১৫৫৬]।
সারা বিশ্বে মুসলমানরা হিজরী বর্ষের দ্বাদশ মাস তথা জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদ উদযাপন করে থাকেন। আরবের অনেক দেশে একে বড় ঈদ বা ঈদুল কুবরাও বলা হয়ে থাকে। অন্যান্য দেশেও এর নিজস্ব ভিন্ন নাম রয়েছে তবে এর অর্থ ও তাৎপর্য অভিন্ন।

মহান আল্লাহ তায়ালার আদেশে হযরত ইবরাহীম (আ.) নিজ পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে আল্লাহর জন্য কুরবানী করার ইচ্ছা ও ত্যাগের কারণে সারা বিশ্বের মুসলমানেরা আল্লাহর কাছে নিজেদের সোপর্দ করে দেওয়ার লক্ষ্যে পবিত্র হজ্বের পরের দিন ঈদুল আযহা উদযাপন তথা পশু কুরবানী করে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা ইবরাহীম (আ.)-এর আনুগত্যে সন্তুষ্ট হন এবং পুত্রের পরিবর্তে তাকে পশু কুরবানী করার নির্দেশ দেন (সূরা সাফফাত: ৩৭/১০৭)। আজকে এখানে “ঈদুল আযহা : আত্মসমর্পণের এক জ্বলন্ত শিক্ষা” শীর্ষক প্রবন্ধটি নিম্নোক্ত আলোচ্যসূচীর মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো।

১. ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদের পরিচয়:
শাব্দিক অর্থ: উর্দু, ফার্সি ও বাংলা ভাষায় ‘কুরবানী’ শব্দটি আরবী ‘কুরবান’ শব্দের স্থলে ব্যবহৃত হয়। ‘কুরবান’ শব্দটি ‘কুরব’ মূলধাতু থেকে নির্গত, যার অর্থ হচ্ছে নৈকট্য। পারিভাষিক অর্থ: পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে জিলহজ্জ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শরয়ী তরীকায় নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তির পশু যবাই করাকে কুরবানী বলা হয়।

২. মানব ইতিহাসের সর্বপ্রথম কুরবানী:
মানব ইতিহাসের সর্বপ্রথম কুরবানী হযরত আদম (আ.)-এর দু’পুত্র হাবিল ও কাবিলের কুরবানী (সূরা মায়েদাহ: ৫/২৭)। হাবিল ও কাবিলের কুরবানীর ঘটনা পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতগুলোতে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে (সূরা মায়েদাহ: ৫/২৭-৩১)।

৩. কুরবানীর ধারাবাহিকতা ও বাধ্যবাধকতা:
কুরবানীর ইতিহাস ততোটাই প্রাচীন যতোটা প্রাচীন মানবজাতির বা ধর্মের ইতিহাস। মহান আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, “আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কুরবানীর এক বিশেষ রীতি পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছি, যেন (সে উম্মতের) লোকেরা সে পশুদের ওপর আল্লাহর নাম নিতে পারে যে-সব আল্লাহ তাদেরকে দান করেছেন” (সূরা হাজ্জ: ২২/৩৪)।

৪. আমাদের কুরবানী সুন্নাতে ইবরাহীমী:
আমাদের উপর যে কুরবানীর নিয়ম নির্ধারিত হয়েছে, তা মূলত হযরত ইবরাহীম (আ.) কর্তৃক শিশু পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে আল্লাহর রাহে কুরবানী দেওয়ার অনুসরণে ‘সুন্নাতে ইবরাহীমী’ হিসেবে চালু হয়েছে। হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর সেই মহত্ব ও মাকবুল কুরবানীকে শাশ্বত রূপদানের জন্যেই আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল (সা.) এই দিনে মুসলমানদেরকে ঈদুল আযহা উপহার দিয়েছেন।

৫. ইবরাহীম (আ.)-এর ঈমানের অগ্নি পরীক্ষা ও স্বীয় পুত্র কুরবানীর জীবন্ত ইতিহাস:
মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম (আ.)-কে মহান আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের কঠিন থেকে কঠিনতর পরীক্ষা করেছেন। তিনি প্রত্যেকটি পরীক্ষায় পূর্ণ সফলকাম প্রমাণিত হয়েছেন। এর স্বীকৃতি স্বরূপ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে তাঁকে মুসলিম জাতির পিতা হিসেবে সম্মান ও মর্যাদায় ভুষিত করা হয়েছে (সূরা হাজ্জ: ২২/৭৮)। আল কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতগুলো পর্যালোচনা করলে হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর ঈমানের অগ্নি পরীক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। (সূরা মুমতাহিনাহ: ৬০/৪; সূরা সাফফাত: ৩৭/৯৯ – ১০৯; সূরা আম্বিয়া: ২১/৬৯, ৭১; সূরা ইবরাহীম: ১৪/৩৭)।

৬. আল কুরআনে কুরবানীর গুরুত্ব:
ঈদুল আযহা তথা কুরবানীর গুরুত্ব অপরিসীম। কুরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে যথেষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। (সূরা মায়েদাহ: ৫/২৭; সূরা হাজ্জ: ২২/৩৪ – ৩৮; সূরা সাফফাত: ৩৭/১০২ – ১১০; সূরা কাওসার: ১০৮/২; সূরা আনআম: ৬/১৬২-১৬৩)।

কাজেই কুরবানী ইসলামের একটি ‘মহান নিদর্শন’ যা ‘সুন্নাতে ইবরাহীম’ হিসেবে রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে মদীনায় প্রতি বছর আদায় করেছেন এবং সাহাবীগণও (রা.) নিয়মিতভাবে করেছেন। অতঃপর অবারিত ধারায় মুসলিম উম্মাহর সামর্থ্যবানদের মধ্যে এটি চালু আছে। এটি কুরআন, সুন্নাহ এবং ইজমায়ে উম্মত দ্বারা সুপ্রমাণিত।

৭. ঈদুল আযহার প্রকৃত তাৎপর্য:
ঈদুল আযহা হযরত ইবরাহীম (আ.), বিবি হাজেরা (আ.) ও ইসমাঈল (আ.)-এর পরম ত্যাগের স্মৃতি বিজড়িত উৎসব। তাই ঈদুল আযহার দিন সমগ্র মুসলিম জাতি পশু কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রাণপণ চেষ্টা করে থাকেন। পশুর রক্ত আর গোশত যেমন আল্লাহর নিকট যায় না তেমনি গ্রহণযোগ্যতা পায় না এগুলোর কুরবানীও। মূলত আল্লাহর রাহে জীবন উৎসর্গ করার জাযবা সৃষ্টি করা, ইবরাহীম (আ.)-এর পুত্র কুরবানীর ন্যায় ত্যাগ ও পূত আদর্শকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করা ও তাঁর বড়ত্ব প্রকাশ করাই ঈদুল আযহার প্রকৃত তাৎপর্য।

৮. ঈদুল আযহার চিরায়ত শিক্ষা:
মানুষ মহান আল্লাহর জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করবে, এই শিক্ষাই ইবরাহীম (আ.) আমাদের জন্য রেখে গেছেন। ঈদুল আযহার মূল শিক্ষা হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্য প্রকাশ করা। সকল দিক হতে মুখ ফিরিয়ে এক আল্লাহর দিকে রুজু হওয়া। সম্পদের মোহ, ভোগ-বিলাসের আকর্ষণ, সন্তানের স্নেহ, স্ত্রীর মুহাববত সবকিছুর উর্ধ্বে উঠে আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রতি আত্মসমর্পিত হয়ে যাওয়া। স্বামী, স্ত্রী ও শিশুপুত্রের গভীর আত্মবিশ্বাস, অতলান্তিক ঈমানী প্রেরণা, আল্লাহর প্রতি নিশ্চিন্ত নির্ভরতা ও অবশেষে আল্লাহকে খুশি করার জন্য তাঁর হুকুম মোতাবেক জীবনের সর্বাধিক প্রিয় একমাত্র সন্তানকে নিজ হাতে যবেহ করার কঠিনতম পরীক্ষায় উত্তরণ—এসবই ছিল আল্লাহর প্রতি অটুট আনুগত্য, গভীর আল্লাহভীতি এবং নিজের তাওহীদ ও তাকওয়ার সর্বোচ্চ পরাকাষ্ঠা। ইবরাহীম (আ.) আল্লাহর হুকুমে পুত্র কুরবানী করার মধ্য দিয়ে মূলত পুত্রের মুহাববতকে কুরবানী করেছিলেন। আল্লাহর ভালোবাসার চাইতে যে পুত্রের ভালোবাসা বড় নয়, এটিই প্রমাণিত হয়েছে তাঁর আচরণে। ইবরাহীম (আ.)-এর নিকট থেকে আল্লাহ এটাই চেয়েছিলেন। আর এটাই হলো প্রকৃত তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি।

ইবরাহীম (আ.) তাঁর প্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে কুরবানী করে এক বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, যাতে অনাগত ভবিষ্যতের অগণিত মানুষ আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণের বাস্তব শিক্ষা লাভ করতে পারে। আর ইসমাঈল (আ.) নবীন বয়সেই বিশ্ববাসীকে আত্মসমর্পণের এক বাস্তব ও জ্বলন্ত শিক্ষা প্রদান করে গেছেন। মূলত আল্লাহর রাহে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দেওয়ার নামই হলো আত্মসমর্পণ। পিতা-পুত্র আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণের যে অনুপম আদর্শ স্থাপন করে গেছেন, তা যেমন অতুলনীয়, তেমনি চির অনুকরণীয়। আজকে ইবরাহীমী আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পশু কুরবানীর সাথে সাথে আমাদের দৃপ্ত শপথ নিতে হবে যে, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজেদের জান-মালসহ যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা প্রস্তুত আছি। আর এটিই হলো কুরবানীর শিক্ষা। এই স্বর্ণোজ্জ্বল আদর্শ যুগে যুগে বিশ্ববাসীকে বারবার এই পরম সত্যটিকেই হৃদয়ঙ্গম করাতে চেয়েছে যে, আল্লাহই একমাত্র সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক, তাঁর ইচ্ছা ও সন্তুষ্টির প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনই প্রকৃত মুমিনের কাজ এবং তাতেই নিহিত রয়েছে অশেষ কল্যাণ ও প্রকৃত সফলতা।

পরিশেষে বলা যায়, হযরত ইবরাহীম (আ.) সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করেছিলেন, হয়েছিলেন স্বয়ং আল্লাহ ঘোষিত মানবজাতির ঈমাম। তিনি মানবজাতির আদর্শ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা যারা আল্লাহ ও পরকালের ভয় করো তোমাদের জন্যে ইবরাহীম ও তাঁর সাথীদের মধ্যে একটি উত্তম আদর্শ বিদ্যমান” (সূরা মুমতাহিনা: ৬০/৪)।

আলী ওসমান শেফায়েত
লেখক ও গবেষক

902 Views

আরও পড়ুন

তিন বিমানঘাঁটিসহ ইসরায়েলের ১৫০ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত, হামলা চলবে: ইরান

চকরিয়ায় মোহনা শিল্পী গোষ্ঠীর ফল উৎসব উদযাপন

রাইফেল থাকলেও পুলিশের কাছে থাকবে না ভারী ‘মারণাস্ত্র’: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ডায়াবেটিস থেকে হজম এবং জামের যত উপকারিতা

ইরানের হামলায় ক্ষতবিক্ষত ইসরাইল, দেখুন ছবিতে

দোয়ারাবাজারে নরসিংপুর ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সমাবেশ

৩১ দফা বাস্তবায়ন ও পদবঞ্চিত নেতাদের আহ্বায়ক কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে মিছিল

সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হাসিম-আনছার-মাসুদ প্যানেল

মায়ের কাছে পড়ে ৯ মাসে কোরআনের হাফেজ ৭ বছরের শিশু

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন, ইউনূস-তারেক বৈঠকে সিদ্ধান্ত

আম্মা আপনাকে সালাম জানিয়েছেন: তারেক রহমান

বিমান দুর্ঘটনায় প্রিয় মানুষ হারালেন ‘টুয়েলভথ ফেল’ খ্যাত অভিনেতা বিক্রান্ত