---------
বড়বাবু
সেই দিন গিয়াছিনু, বিমর্ষ বদনে, লইয়া আমি বিচার,
বুঝি নাই কখনও হইবে তাঁহার, অমানবিক এইরূপ আচার।
তিনি ছিলেন ব্যস্ত, বলিলেন, গৌরি, সন্ধ্যার পরে আয়,
মুখখানা আঁচলে ঢাকিয়া, মাথা নাড়িয়া বলিলাম, আজ্ঞে মহাশয়।
তখন তিনি ব্যস্ত থাকিলেও ঠোঁটের কোণায় দেখিলাম তাঁহার গুপ্ত হাসি,
বুঝি নাই তখনও ভালো হইতো ঢের, এই অভাগিনীর ফাঁসি।
আশ্বস্ত হইয়া, আসিলাম চলিয়া, আমার পতির কুঁড়েঘরে,
আসিবার সময় কানে আসিলো, সে যে বারবণিতা, জানে সর্বলোকে।
যে যাহা-ই বলুক না কেন, লইতে হইবে আমাকে মানিয়া,
শৈশবে দেখিয়াছি মাকে আমি, জলন্ত চিতায়, জানে শুধু এই দুনিয়া
সেই সব কথা শুনিয়া আমি, ফেলিলাম আমি আমার নোনতা অনেক জল,
আমার পূর্বে রঘুর পিসিও, পায় নাই কোনো ফল।
অনেক গ্রহণ করিলাম আমি অপবাদযুক্ত হাওয়া,
শুধু হয় না পূরণ আমার মতো, কাঙ্গালিনীর চাওয়া।
সন্ধ্যার আজান হইলো, মুসলিমদের ঘরে আলো জ্বলিলো, জ্বলিলো না আলো শুধু আমার রুক্ষ মনে,
আমি যে ব্যথিত, নিষ্পেষিত যুগলাঙ্গুরীয়, বলিবো আর কত জনে..!!
অবশেষে দিলাম আমি রওয়ানা তখন, দত্তবাবুর বাড়ি,
যদিও এখন পথে থাকিবে অনেক হায়েনা, আমি যে বিজয়া নারী।
বাবু বলিলেন, আয় গৌরি, বস দিকিনে আমার পাশে,
তোর বিচারের শাস্তির রায় রহিয়াছে আমার কাছে।
মলিন বদন পুলকিত হইলো, বড়বাবুর কথা শুনিয়া,
পরক্ষণেই বাড়লো মলিনতা দ্বিগুণ, দিলেন বাবু শর্ত জুড়িয়া।
ভাবিলাম আমি, বামন ঘরে হইয়া জন্ম, এইটা বুঝি আমার দোষ..!!
ভগবানের কাছে মিনতি জানায়, এই ঘরে যেন আর হয় না, সুগঠিত একটিও মাত্র কোষ।
বাবুর শর্ত শুনিয়া, আসিতে লাগিলাম চলিয়া, অনাবৃত পদযুগল ফেলিয়া,
বাবু বলিলেন, কোথাও পাবি না বিচার, আমাকে অভিযুক্ত করিয়া।
মনে পড়িল যৌবনের সেই নিরু মাসির কথা,
বলিয়াছিল মাসি, বাবুদের বুঝি থাকে না নীতি-নৈতিকতার লতা।
ক্রন্দনরত গৌরি আমি, আসিলাম অগত্যা,
নিলুম সিদ্ধান্ত, যদি হয় সন্তান কন্যা আমার, তৎক্ষণাৎ করিব আমি হত্যা..
আরাফাত মিঠু
শিক্ষার্থী, মার্কেটিং বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০