মোঃ আবু সঈদ,স্টাফ রিপোর্টারঃ
সুনামগঞ্জ-৩ শান্তিগঞ্জ-জগন্নাথপুর আসনে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন বিএনপি’র সদ্য বিলুপ্ত
সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সহ সভাপতি ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন।
বুধবার সকালে শান্তিগঞ্জ উপজেলার উজানীগাঁও গ্রামে নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার ভাষণা নিয়ে নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা করেন। এ সময় সুনামগঞ্জ ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশ-বিদেশে পড়া শুনা, রাজনীতি কিংবা পেশা গঠনের পরও আমার নিজ এলাকার ভালবাসা প্রতিনিয়ত আমাকে বিভিন্ন ভাবে নাড়া দেয়, স্পন্দিত করে এবং জাগ্রত করে। মাটি এবং এ এলাকার মানুষের মায়া আমাকে বারবার ফিরে এনেছে এই ভূমিতে। ফলে ১৯৮৬ সালে এসেক্স ইউনিভার্সিটিতে (University of Essex, England) পড়াশুনা করার সুযোগ পেয়েও মাত্র ৬ মাস পড়াশুনা করে দেশে ফিরে এসে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। এই দেশ, মাটি আর মানুষের মায়ায় বিগত ১১টি বছর ধরে সকল লোভ-লালসার উর্ধে উঠে আমি কাজ করে যাচ্ছি আমার এই নির্বাচনী এলাকায়।
বিলাতে আমার বাড়ি-গাড়ি উপার্জনের সব উপায় থাকা সত্ত্বেও এতটি বছর ধরে আমি পরে আছি এক নেশায় আর তা হচ্ছে আমার এই নির্বাচনী এলাকার মানুষের প্রতিনিধিত্ব করা। সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক কর্তৃক আমার বিরুদ্ধে লন্ডনে একটি এবং বাংলাদেশে একটি সহ দুটি মামলা হয়েছিল। দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কে সমর্থন করে “আমার দেশ অফিসে প্রতিবাদ সভায় অংশ গ্রহণ এবং বিচারপতি মানিকের অপ-কাজের কিছু দলিল “আমার দেশ” সম্পাদককে প্রদান করার কারণে আমি ২০১২ সালের নভেম্বরে আমার দেশ অফিস থেকে গ্রেফতার হয়েছিলাম। বিগত ১১ টি বছর ধরে এত সব প্রতিকূল অবস্থা সত্ত্বেও স্ত্রী-সন্তান বা নিজের আরাম আয়েশের কথা না ভেবে যেভাবে আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের পাশে ছিলাম আগামীতেও থাকতে চাই-এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে আজকে আমার নির্বাচনী এলাকার সকল স্তরের নেতৃবৃন্দ, মুরব্বিয়ান, যুবকদের সাথে নিয়ে এবং আপনাদের উপস্থিতির মাধ্যমে সুনামগঞ্জ-৩ আসনের আমি আমার প্রার্থীতা ঘোষণা করছি। আমি আশা করছি এবং সবিনয় নিবেদন করছি যে, আমার নেত্রী ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান আমাকে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ তথা বিএনপির একজন প্রার্থী হিসাবে সক্রিয় বিবেচনার দৃষ্টিতে দেখবেন।
তিনি আরো বলেন, আমি ব্যারিস্টার এবং এক জন রাজনৈতিক কর্মী। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি বিষয়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (International Relations) বিভাগ থেকে বিএসএস অনার্স সহ মাস্টারর্স ডিগ্রী অর্জন করেছি। তারপর বিলাতের লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি (London Metropolitan University) থেকে এলএলবি অনার্স, উল্ডারহ্যাম্পটন ইউনিভার্সিটি (Wolverhampton University) থেকে ডি এইচ ইন ল’ (DHE in Law) এবং সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন (City, University of London) থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন লিগ্যাল স্কিলস ডিগ্রী অর্জন করে সর্বশেষে বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান লিংকনস ইন থেকে বার-এট-ল’ অর্থাৎ একজন ব্যারিস্টার হিসেবে ঘোষিত হয়েছি। আমি আইনজীবী পরিবারের একজন সদস্য। আমি ছাড়াও আমার আপন ছোট ভাই, নজরুল হোসেনও একজন ব্যারিস্টার এবং আমার ৪ মেয়েদের মধ্যে ২জন ব্যারিস্টার, এক মেয়ে ট্রেইনি চার্টার্ড একাউন্টেন্ট এবং এক মেয়ে কর্পোরেট জগতে ট্রেডিং অপারেশন কন্ট্রোলার। আমার স্ত্রী একজন গৃহিনী। আমার বড় মেয়ে ব্যারিস্টার অর্পা ইবনাত হোসেন ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিস এ হিজ ম্যাজেস্টিস রেভিনিউ এন্ড কাস্টমস (His Majesty’s Revenue & Customs) এর একজন ক্রিমিনাল প্রসিকিউটর। স্কুল জীবন থেকেই আমি সক্রীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও পদ-পদবি গ্রহণ করে রাজনীতিতে আমার হাতে-খড়ি সিলেট সরকারি এমসি কলেজ থেকে, যেখানে আমি হোস্টেল শাখার সভাপতি ছিলাম। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে ছাত্রদলের এস.এম হল শাখার সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্ববায়ক কমিটির সদস্য এবং পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক হিসাবে ছাত্র রাজনীতিতে নেতৃত্বের আসনে ছিলাম।
বিলাতে থাকা কালীন সময়ে আমি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম যুক্তরাজ্য শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলাম এবং সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সদ্য সাবেক সহ-সভাপতি। ৯০ এর সামরিক শাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শাখার একজন নেতা হিসাবে আমি যেমনি সক্রিয় আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম তেমনি যুক্ত ছিলাম ২০২৪ এর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনেও। সেই আন্দোলনে হাইকোর্ট এর বিচারপতি জনাব ফয়সল ফয়েজীকে আহ্ববায়ক করে “গার্ডিয়ান্স ফর জাস্টিস”
(Guardians for Justice) নামে যে সংগঠনটি গঠিত হয়েছিল সেই সংগঠনের সদস্য সচিব ছিলাম আমি নিজে! ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের রক্ত-চক্ষু উপেক্ষা করে বুলেটের সামনেও আমি সেদিন আন্দোলন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিলাম।
আমি স্বাধীনতার ঘোষক ও গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে নিয়ে ‘প্রেসিডেন্ট জিয়া ইন দ্যা টাইমস’ (President Zia in “the Times”) নামে আমার লেখা একটি বিশ্লেষণধর্মী বই শীঘ্রই বাজারে আসবে বলে আশা করছি। বইটি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বিলাতের ‘টাইমস’ পত্রিকায় প্রকাশিত ২৬টি আর্টিকেল কে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তৎসময়কার ‘টাইমস’ পত্রিকার সাংবাদিক ট্রেভর ফিশলক (Trevor Fishlock) যিনি এই রিপোর্ট গুলো করেছিলেন তার সাক্ষাৎকার আমি গ্রহণ করেছি। লন্ডন ইউনিভার্সিটির (LSE) অধ্যাপক ডেভিড লুইস (Professor David Lewis) ও আমস্টার্ডাম ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক উইলিয়াম ভ্যান শেন্ডেল (Professor William Van Schendel) যারা বাংলাদেশ নিয়ে বই লিখেছেন তাদের সাক্ষাৎকারও গ্রহণ করে আমি আমার বইটিকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেছি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রবীন মুরুব্বী অলিউল কাইয়ুম এর সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি সলিব নূর বাচ্চু, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি ফরিদ আহমদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য এসএম রাবেদ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নজমুল হোসেন। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জমিল হোসেন, আব্দুল কাইয়ুম, রিয়াদ, সাইফুল মুল্লুক, শের আলম শিশু, বিধান রবিনূর,সেলিম, আলী নেওয়াজ, মুর্শেদ আহমদ হৃদয় প্রমূখ।