বিশেষ প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম সন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুর গ্রামে প্রভাবশালী কতৃক চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে এক মহিলার ভূমি দখলের অভিযোগ উঠেছে।
ফলে মুছাপুর গ্রামের মহিলা মোমেনা বেগমের ৮ম/১০ম শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই সন্তান (রাফি ও মুনিয়া) দেড় মাস যাবত স্কুলে যেতে পারছে না। এ বিষয়ে ভুক্তভোগি মহিলা মাননীয় শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ও উর্ধ্বতন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অপরদিকে একাধিকবার এ বিষয়ে স্থানীয় সালিশকারগণ ও গ্রাম্য আদালতের চেয়ারম্যান বন্ধ রাখা রাস্তাটি খোলে দেয়ার জন্য সুপারিশ করলেও প্রতিপক্ষরা তা কর্ণপাত করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে সন্দ্বীপের উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিলেও তা গ্রহণ না করায় গত ৩রা (ফেব্রুয়ারি) ভুক্তভোগি পরিবার পুনরায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে বলে সুত্র জানায়।
এতে অভিযোগ আনা হয়, একই এলাকায় বসবাসরত মহিলার আপন বড়ভাই আবুল কাশেম (৫২), আবুল হাশেম (৪০), আবুল কালাম (৩৭) ও মিরাজ উদ্দিন রকিদের বিরুদ্ধে। মহিলা জানান, দীর্ঘ ১০/১২ বছরের চলাচলের রাস্তা এরা হঠাৎ বন্ধ করে দিয়েছে। এমন কি রাস্তা কেটে মাটি কুঁড়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করায় মোমেনা বেগমের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না।
স্থানীয় লোকজন ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযোগকারী মহিলার স্বামী বর্তমানে প্রবাসে রয়েছে। অভিযুক্তদের কাছ থেকে ১০/১২ বছর পূর্বে দু’বারে বাড়ির পার্শ্ববর্তী এলাকায় সাড়ে পঁচিশ কড়া দশ তিল জমি ক্রয় করেন মহিলা এবং বাবার ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া জায়গা জমিতে চলাচলের রাস্তা তৈরি করে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে অভিযুক্ত ভাইয়েরা
বিক্রিত জমি পুনরায় ফেরত চায়।
এতে মহিলা মোমেনা বেগম ভাইদের কথায় রাজি না হওয়ায় নানা ভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে রাস্তা কেটে পথ চলাচল বন্ধ করে রেখেছেন। এতে মহিলা ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বিপাকে পড়েছে। এমন কি মহিলার দুই ছেলেমেয়ে প্রায় দেড় মাস যাবত স্কুলে যেতে পারছে না। অন্যের জমির উপর দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করার চেষ্টা করলেও তারা নিষেধ করছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভুক্তভোগি মহিলা মোমেনা বেগম জানান, ‘ওরা এখনো রাস্তা কুঁড়ে আমার চলাচলের পথ বন্ধ করে রেখেছে। ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। আমার স্বামী প্রবাসে থাকায় ওরা আমার চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে জমি দখলের চেষ্টা করছে। এমন কি আমার সন্তানদের পড়ালেখার ক্ষতি করছেন। আমি মাননীয় শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ও উধ্বর্তন প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।’
মহিলা অভিযোগ করে আরো জানায়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আমার ভাই হলেও স্থানীয় প্রভাবশালী তাই তারা এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যানদের বিচারও মানছেন না। চলাচলের পথ জোরপূর্বক বন্ধ করে পাকা ভবন নির্মাণ করার পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি সদস্য মোহাম্মদ বাবুল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা কয়েকবার স্থানীয় লোকজন বসে তাদের রাস্তা খুলে দেয়ার বিষয়ে মতামত জানিয়ে মিমাংসা করার চেষ্টা করেও সমাধা করতে পারিনি।’
১১নং মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবুল খায়ের নাদিম জানান, ‘দীর্ঘদিন চলাচলের রাস্তা ছিল এটি। বর্তমানে তা কেটে দখল করে রেখেছে, আমি নিজে গিয়ে সালিশী বৈঠকেও বসেছিলাম কিন্তু প্রতিপক্ষরা রাস্তায় তাদের জমি রয়েছে বলে দাবি করছে। তবে আমি তাদের সবার সাথে বসে সমাধানের চেষ্টা করছি। এগিয়েছি সমাধানে যেতে তারা রাজিও হয়েছেন। আশা করি সামনের বৈঠকে বিষয়টি সমাধান হবে। ’
অভিযুক্ত আবুল কাশেম , আবুল হাশেম ও আবুল কালাম জানান, আমরা কারো রাস্তা বন্ধ করিনি এটি আমাদের জমি। কিছুদিন আগে সন্দ্বীপ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের বিষয়টি স্পষ্ট জানিয়েছি। আপনারা এলাকায় খবর নিন, চেয়ারম্যান বিষয়টি সমাধা করছেন।’
উপজেলা চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ শাহাজাহান জানান, ‘চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না এমন কোন ঘটনা কেউ জানায়নি। তারপরেও আমি খবর নিচ্ছি ঘটনাটি আদৌও সত্য কিনা।’
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শরিফুল আলম বলেন, ‘আমার কাছে এ ধরনের কোন অভিযোগ আসেনি। যদিও দিয়ে থাকে তদন্ত করে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রভাবশালীরা মহিলার চলাচলের রাস্তা বন্ধ করেছে এমন কোন অভিযোগ পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সন্দ্বীপ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিদর্শী সম্বৌধি চাকমা বলেন, হ্যা’ এ ধরনের একটি অভিযোগ এসেছিলো কিন্তু ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি সংক্রান্ত বিষয় বলে মনে হওয়ায় আমি তাদেরকে আদালতে শরনাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না রাস্তা বন্ধ করেছে বিষয়টির খোঁজ নিয়ে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’