মোঃ শিবলী সাদিক রাজশাহী।
রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. অলীউল আলমের অশিক্ষকসুলভ আচরণের নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং ৭ দিনের মধ্যে তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ মে) সন্ধ্যায় রাজশাহী প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সভায় এসব দাবি জানানো হয়। অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদ এ সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি সাইদুর রহমান। সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মো. আসলাম-উদ-দৌলার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সভায় সংগঠনের সহঃ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বরজাহান ও সালাউদ্দীন মিন্টুসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং অতিথিরা বক্তব্য রাখেন।
সভায় বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ বলেন, গত ২৮ এপ্রিল রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. অলীউল আলম মাস্তানি আচরণ করেছেন। রাজশাহী প্রেসক্লাব সভাপতি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সদস্য সাইদুর রহমানকে মারতে উঠেন তিনি। ওইদিন বেলা ১১টার সময় সাইদুর রহমান পেশাগত দায়িত্ব পালনে শিক্ষাবোর্ডে যান। তাকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রেখে একপর্যায়ে বিদ্যালয় পরিদর্শক জিয়াউল হক ও কয়েকজন কর্মচারীকে নিয়ে মারতে উঠেন প্রফেসর অলীউল। এসময় প্রেসক্লাব সভাপতিকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজও করেন তিনি। বক্তারা আরও বলেন, প্রফেসর অলীউল মালয়েশিয়ায় গিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অপরাধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শাস্তি পান। তিনি কীভাবে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে প্রেষণে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেলেন, তা রাজশাহীবাসীর বোধগম্য নয়। তাকে নিয়োগের ফলে শিক্ষাবোর্ডে নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজ করছে। তিনি শিক্ষাবোর্ডকে নিজের সম্পত্তি মনে করছেন। তার আচরণ মোটেও শিক্ষকসুলভ নয়। তিনি চেয়ারম্যানের পদে থাকা তো দূরের কথা, পাঠদানের যোগ্যতাও হারিয়েছেন। গত ২৮ এপ্রিলের ঘটনার তদন্ত হওয়া দরকার। সাত দিনের মধ্যে প্রফেসর অলীউলকে অপসারণ না করলে লাগাতার আন্দোলনের হুশিয়ারিও দেন তারা। একইসঙ্গে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের সাবেক দুই চেয়ারম্যান প্রফেসর মোকবুল হোসেন ও প্রফেসর আবুল কালাম আজাদের মত তার পরিণতি হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন বক্তারা। রাজশাহী প্রেসক্লাব সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর হাইকোর্টের এক নির্দেশনা মোতাবেক সাংবাদিকরা সরকারি বেসরকারি যেকোনো অফিসে দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহে যেতে পারবেন। আমিও পেশাগত দায়িত্ব পালনে শিক্ষাবোর্ডে গিয়েছিলাম। কিন্তু বোর্ড চেয়ারম্যানের আচরণে আমি হতাশ। ঘটনার পর শিক্ষাবোর্ড থেকে বেরিয়ে বিষয়টি তাৎক্ষনিকভাবে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক) জানাই। তাপদাহের কারণে আপাতত লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা হয়নি। তবে শীঘ্রই শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামা হবে। উল্লেখ্য, সিনিয়র সাংবাদিক সাইদুর রহমানের নানা মাদার বখশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বর্তমান মেডিকেল কলেজ ও রুয়েটসহ ১৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। উত্তরাঞ্চলে শিক্ষাবিস্তারে তার অবদান প্রথম সারিতে। এছাড়া সাইদুর রহমানের বাবা আতাউর রহমান ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বাকশাল সরকারের রাজশাহী জেলা গভর্নর। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে কারাগার থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত এমএনএ। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠন, ভাষা সংগ্রামী ও তেভাগা প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পুরোধা। আর সাইদুর রহমানের মা মনোয়ারা রহমান ছিলেন ভাষাসৈনিক। ঐতিহ্যবাহী এ রাজনৈতিক পরিবারের সদস্যের সঙ্গে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের এমন আচরণে রাজশাহীবাসী লজ্জিত, মর্মাহত ও বিক্ষুব্ধ।