——-
বিঝু সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংক্রাই, চাংক্রান, পাতা-২০২৫
|| মুহাম্মদ ইলিয়াস- রাঙামাটি ||
পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সমূহের ঐতিহ্যবাহী
প্রধান সামাজিক উৎসব বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংক্রাই, চাংক্রান ও পাতা-২৫ উদযাপন উপলক্ষে পাহাড়ের গ্রাম গুলো সেজে ওঠেছে। প্রায় ২০/২৫ দিন ধরে চলেছে কেনাকাটার পর্ব। বিশেষ কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকলে প্রতি বছরই বৈচিত্র্যে ভরপুর এই উৎসবে অংশ নিতে ও দর্শনার্থী হিসেবে বিপুল সংখ্যক দেশী-বিদেশী পর্যটকের সমাগমও ঘটে সবুজ পাহাড়ে। ৩ দিনের স্থলে এবারের অনুষ্ঠান হবে ৪ দিনে।
তিন পার্বত্য জেলা (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান)’র ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের ঐতিহ্যবাহী প্রধান এ উৎসব ঘীরে উৎসব আনন্দে মাতে সকলে। শান্তি, ঐক্য ও সম্মৃদ্ধির বার্তা তুলে ধরেন পাহাড়ি নেতৃবৃন্দ। কিন্তু উৎসব শেষ হতেই আবার শুরু হয়ে যায় ভাতৃঘাতী সংঘাত সংঘর্ষ। সবুজ পাহাড় হয়ে ওঠে রক্তাক্ত।
পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংক্রাই, চাংক্রান, পাতা-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষ্যে শুক্রবার (১১এপ্রিল) বিকেলে ৩ টায় রাঙামাটি মারী স্টেডিয়ামে বিশ্ব গণমানুষের সেবা ফাউন্ডেশন’র সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়েছে বলি খেলা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠিত বলী খেলা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলি পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ও উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ব গণমানুষের সেবা ফাউন্ডেশন’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান উ অংচিংনু মারমা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার।
“বিঝু” চাকমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী অন্যতম প্রধান সামাজিক উৎসব। বাংলা বর্ষের শেষ দুই দিন ও নববর্ষের দিন মিলে তিন দিনে ফুল বিজু, মূল বিজু, গজ্যাপজ্যা নামে এই উৎসব পালন করা হয়। শনিবার
(১২ এপ্রিল) সকালে হ্রদে ফুল ভাসিয়ে পালন করা হবে ফুলবিজু। এই দিন ভোরের আলো ফোটার আগেই ছেলে-মেয়েরা বেরিয়ে পড়ে ফুল সংগ্রহের জন্য। সংগ্রহিত ফুলের একভাগ দিয়ে বুদ্ধকে পূজা করা হয় আর অন্যভাগ জলেতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। বাকি ফুলগুলো দিয়ে ঘরবাড়ি সাজানো হয়।চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ ১৩ এপ্রিল পালন করা হয় মুলবিজু। এইদিন সকালে বুদ্ধমূর্তি স্নান করিয়ে পূজা করা হয়। ছেলেমেয়েরা তাদের বৃদ্ধ ঠাকুরদা-ঠাকুমা এবং দাদু-দিদাকে স্নান করায় এবং আশীর্বাদ নেয়। এই দিনে ঘরে ঘরে পোলাও পায়েস পাচন (বিভিন্ন রকমের সবজির মিশ্রণে তৈরি এক ধরনের তরকারি) সহ অনেক ধরনের সুস্বাদু খাবার রান্না করা হয়। বন্ধু-বান্ধব আত্নীয়-স্বজন বেড়াতে আসে ঘরে ঘরে।আগত অতিথিকে নানান পদের নাস্তা, খাবার ও পানীয় দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। সারাদিন রাত ধরে চলে ঘুরাঘুরি। বাংলা নববর্ষের ১ম দিন অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল পালন করা হয় গজ্যা পজ্যা দিন (গড়িয়ে পড়ার দিন)। এই দিনেও বিজুর আমেজ থাকে।
সাংগ্রাই হলো, মারমা নৃগোষ্ঠী ও রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব। তারা প্রতিবছর এপ্রিলের ১৩ থেকে ১৫ তারিখে উৎসবটি ঘটা করে পালন করে থাকে। মারমা সম্প্রদায় বর্ষপঞ্জি পুরনো বছরের শেষের দু’দিন আর নতুন বছরের প্রথম দিনসহ মোট তিন দিনের মধ্যে সাংগ্রাই সীমাবদ্ধ। প্রথম দিন সকালে ফুল সাংগ্রাই, দ্বিতীয় দিন প্রধান সাংগ্রাই আর শেষের পানি খেলার সাথে মারমাদের ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে এ উৎসবের।
পাহাড়ের ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোকজন বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসের শেষ দু’দিন এবং ১ লা বৈশাখ মিলিয়ে ৩ দিনব্যাপী বৈসু নামে ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব পালন করে থাকে। তারা ১ম দিন হারি বৈসু, ২য় দিন বৈসুমা এবং শেষের দিনটিকে বলে বিসি কতাল। মূলত আগামীর সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য স্রষ্টার নিকট প্রার্থনা করে এ দিনটিতে।
এভাবে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ও বান্দরবান পার্বত্য জেলার ২৫ উপজেলায় বসবাসরত ১৩ টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, পাতা, চংক্রানসহ নানা উৎসব পালনে পাহাড়ের গ্রাম গুলো সাজিয়ে তুলেছে। সময়ের স্রোতে জীবন জীবিকায় বদল আসলেও ঐতিহ্যকে লালন করছে সকলে পরম বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও ভালবাসায়।
রাঙামাটি ফুটবল একাডেমি আয়োজিত মিনি ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়। জেলা সদর থেকে রাঙামাটির সর্বোচ্চ পর্বত ফৌরমৌন পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার দূরত্বের এ মিনি ম্যারাথন।
আজ শনিবার (১২ এপ্রিল) রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে ফুল বাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হবে পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী প্রধান এই সামাজিক উৎসব।#