|| মুহাম্মদ ইলিয়াস-২ সেপ্টেম্বর, রাঙামাটি ||
ঘটনার ৩ দিনের মাথায় রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল সোয়া ১০ টার সময় রাঙামাটি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার’র নেতৃত্বে প্রশাসনিক একটি টীম পাহাড়ী-বাঙ্গালীর সহিংসতায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা সমূহ পরিদর্শন করেছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ির দিঘীনালায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ -ভাঙচুর ও জ্বালাও-পোড়াও’র প্রতিবাদকারী পাহাড়ীদের সাথে বাঙ্গালীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাঁধে। শহরের বনরূপা বাজারে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর)’ র সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অনীক চাকমা নামে ১ জন পাহাড়ী শিক্ষার্থী নিহত ও নারীশিশুসহ ৫৯ জন আহত হয়। এ সময় দূর্বৃত্তরা পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ প্রধান কার্যালয়, সীমান্ত ব্যাংক, সেভরন ল্যাব,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ী-দোকানপাট পুড়িয়ে দেয় এবং ভাঙচুর, লুটপাট চালায়। দূর্বৃত্তদের আক্রমণ থেকে মৈত্রী বিহার ও মসজিদও বাদ যায়নি।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো মোশাররফ হোসেন খান ও পুলিশ সুপারর ড. এস এম ফরহাদ হোসেন’র নেতৃত্বে বিশেষ টীম ধ্বংসস্তুপ ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ী- বাঙ্গালীর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, লুটপাট ও জ্বালাও-পোড়াও পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে একজন ম্যাজিষ্ট্র্যাট নিয়োগ দেয়া হয়। ম্যাজিষ্ট্র্যাটের নেতৃত্বে বিশেষ টীম দুপুর থেকে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। কাঠালতলী, বনরূপা, কোর্ট বিল্ডিং ও রাজবাড়ীর চারিদিকে দাঙ্গার ভয়াবহতা
রোববার (২২সেপ্টেমবর) রাঙামাটিতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করেছে। কিন্তু ভীতি কাটিয়ে লোকজন এখনো বের হচ্ছে না। পাহাড়ী-বাঙ্গালীর মাঝের চরম অবিশ্বাস রয়ে গেছে। যে কারণে পাহাড়ীরা বাঙ্গালী এলাকা এড়িয়ে চলছে আর বাঙ্গালীরা পাহাড়ী এলাকা মুখো হচ্ছে না। বনরূপা ও রাজবাড়ী এলাকায় দোকানপাট বন্ধ থাকায় নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। রোববার কয়েকটি দোকান খুললেও ক্রেতা উপস্থিতি ছিলো না বলা চলে। বনরূপা আলিফ মার্কেটে অস্থায়ী কাঁচাবাজার চালু করেছে। তবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট ও ইউপিডিএফ’র ৭২ ঘন্টার অবরোধের কারণে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় শহরে পণ্য সরবরাহ কমে গেছে । চাহিদার তুলনায় মালামালের পরিমাণ খুবই অপ্রতুল। দূরপাল্লার কোন যানবাহনও চলছে না। পাহাড়ী জনপদ রাঙামাটির প্রধান বাহন সিএনজি অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের দূর্ভাগা বেড়েছে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রোববার বিকেল ৩ টায় প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে এক সম্প্রীতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মোশাররফ হোসেন খান’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সম্প্রীতি সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতাগণ, মিডিয়াকর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
সোনালী, কৃষি, ও ইসলামী ব্যাংক খোলা থাকলেও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে লেনদেন হয়নি। টাকা তুলতে না পেরে গ্রাহকরা ফিরে গেছে। কর্মসংস্থান ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংকসহ অনেকগুলো ব্যাংক-বীমা অফিস বন্ধ ছিলো। জেলা প্রশাসনে সম্প্রীতি সভার জন্য বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকলেও সরকারী-বেসরকারী দপ্তরগুলোতে উপস্থিতি ছিলো খুবই নগণ্য। শহরের স্কুল-কলেজেসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
রোববার বিকেলে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শহরের ব্যস্ততম বনরূপা বাজার, রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি বাজার, কলেজগেইট বাজার ও ভেদভেদী বাজারের ব্যবসায়ীরা ১৪৪ ধারা তুলে নেয়ায় আবারও দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। কাঁচাবাজার, ও মৎস্য মার্কেটে পসরা সাজাতে ব্যস্ত দোকানীরা। কিন্তু তেমন কোন ক্রেতা নেই। আতঙ্কিত লোকজন ঘর থেকে বের হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ জানান। #