জামাল জাহেদ, চট্টগ্রাম :
চট্টগ্রাম নগরীর তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ ওরফে 'বুড়ির নাতি' অবশেষে সিএমপি পুলিশের জালে ধরা পড়েছে। শনিবার (১৫ মার্চ) রাত ৮ টায় রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) একটি বিশেষ টিম। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিএমপি পুলিশের উত্তর জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) আমিরুল ইসলাম।
কীভাবে পুলিশের ফাঁদে ধরা পড়ল ছোট সাজ্জাদ?
সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজের নির্দেশনায় দীর্ঘ ৪-৫ মাস ধরে প্রযুক্তিগত নজরদারির মাধ্যমে ছোট সাজ্জাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলো পুলিশ। সাজ্জাদ কে ধরার জন্য সিএমপি উত্তর জোনের ডিসি আমিরুল ইসলাম ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে একটি টিম ঢাকায় গোপন অভিযান চালান। পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ইন্টেলিজেন্স টিম সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের সুনির্দিষ্ট অবস্থান শনাক্ত করে, যা ছিল ঢাকার পান্থপথে অবস্থিত আধুনিক শপিং মল বসুন্ধরা সিটি। সিএমপি পুলিশের সাদা পোশাকের একটি দল আগে থেকেই সেখানে অবস্থান নেয়। সাজ্জাদ যখন ঈদের শপিং করতে শপিংমলের একটি দোকানে প্রবেশ করে, তখনই তাকে গ্রেপ্তার করেন ডিসি আমিরুল ইসলাম। তাকে গ্রেপ্তারের ৩০ মিনিট পর পাশের তেজগাঁও থানায় খবর দেওয়া হলে, সেখান থেকে পুলিশের একটি টিম এসে সাজ্জাদকে থানায় নিয়ে যায়।
কে এই ছোট সাজ্জাদ?
চট্টগ্রামের হাটহাজারী, বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ। হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজিসহ ১০টিরও বেশি মামলার আসামি সে। ছোট সাজ্জাদ চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার শিকারপুর এলাকার মো. জামালের ছেলে সাজ্জাদ।
অপরাধের তালিকা
২০২৩ সালের ২৮ জানুয়ারি বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার ও মোহাম্মদ আনিসকে হত্যা। ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া এলাকায় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে গুলি করে হত্যা। ২০২৩ সালের ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় বাসায় ঢুকে গুলি চালানো। ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর চান্দগাঁও হাজীরপুল এলাকায় ঠিকাদার মো. হাসানের বাসায় গুলি। ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর অক্সিজেন মোড়ে পুলিশের ওপর গুলি চালিয়ে পালিয়ে যাওয়া।
পুলিশের ওপর হুমকি ও লাইভে আসা
২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমানকে 'পেটানোর' হুমকি দিয়ে আলোচনায় আসে ছোট সাজ্জাদ। এরপরই তার বিরুদ্ধে সিএমপি পুলিশ কমিশনার পুরস্কার ঘোষণা করেন।
দীর্ঘদিনের লুকোচুরি শেষ, পুলিশের জয়
সিএমপি পুলিশের ধারাবাহিক নজরদারি ও আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় অবশেষে ছোট সাজ্জাদ ধরা পড়ে। চট্টগ্রামে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করা হবে বলে জানিয়েছেন সিএমপির ডিসি আমিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, 'সিএমপির একটি সিভিল টিম ঢাকার বসুন্ধরা সিটি থেকে ছোট সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে চট্টগ্রামে আনা হচ্ছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।' শীর্ষ সন্ত্রাসীর গ্রেপ্তারে স্বস্তি ফিরেছে চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে। পুলিশের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০